কিভাবে নন্দিনী সৃষ্টি হলো।
প্রিয় বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম।
আজ আপনাদেরকে শোনাবো--'নন্দিনী'র গল্প ।
কিভাবে
নন্দিনী সৃষ্টি হলো। এখানে একটি কাকতালীয় বিষয় গল্পের ভেতর খুঁজলে পেয়ে যাবেন ইনসাল্লাহ্।
অনেক দিন আগে আমি যখন জীবনের প্রথম চাকুরী পাই। পোস্টিং নাটোর শহরে। চাকুরীতে যোগদানের এক সপ্তাহ পর ছুটিতে বাড়ি আসি। আমার বাবা-মা এবং প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব সবাই খুশি। আনন্দে আত্মহারা আমার মা,আমার জন্যে বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। আগে থেকেই আমার অভ্যাস ছিলো,পাতিল থেকে ভুনা মাংশ গরম গরম তুলে খাওয়া। মা'র পাশে বসে আছি। কিন্তু তখনও দেখছি---মা আমাকে পাতিল থেকে মাংশ তুলে দিচ্ছে না। হঠাৎ খেয়াল করি,মা'য়ের মন খারাপ! তার দিকে তাকাতেই মা বললো,আজ আমার কপালটাই খারাপ!
বললাম,কেন মা?
মা বললো, আজকের তরকারিতে দেয়া, হলুদ-মরিচ কোনোটাই ভালো না। তরকারি কেমন কালো হয়ে গেল, আর স্বাদও ভালো হয় নি। মনে হচ্ছে কিছু একটা ভেজাল দেয়া আছে।
আমি বললাম, ওতেই হবে দাও তো। তোমার হাতের রান্না আমার কাছে সব সময় অমৃত।
মা বললো, নে বাবা, আজ কষ্ট করে খেয়ে নে, কাল আর গুঁড়ো মশলা না দিয়ে নিজেই তোর জন্যে পাটাতে মশলা পিষে রান্না করে খাওয়াবো। বুঝলাম,এজন্যেই মা'য়ের মনটা খারাপ! আসলে কি, প্রতিটি মা-ই চান তার সন্তানকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে। মনে হয় পৃথিবীর সব মায়েরা এমনিই হয়।
ঠিক একই ঘটনা ঘটলো ২৬ বছর পর। কাকতালীয়ভাবে এবারও আমার পোস্টিং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায়। প্রিয়তমা বউ আমার পছন্দের ভেঁড়া'র মাংস রান্না করছেন।বউয়ের কাঁধের পেছন দিকে মাংস খাওয়ার জন্যে উঁকিঝুঁকি মারছি। কিন্তু মমো'র (আমার বউ) মন খুব খারাপ!
মন খারাপের কারণ পরে জানতে পারলাম। সামনের দোকান থেকে কিনে আনা মরিচ গুঁড়ো তরকারিতে বারবার দিচ্ছে, মাগার তরকারি ঝাল হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মরিচের পলিপ্যাকটা রাগে, ক্ষোভে খুব জোরে হাত থেকে ছুঁড়ে ফেললেন উঠোনে।
কাকতালীয় হলেও বন্ধুরা,আমার জীবনে এ দুটো ঘটনায় কিন্তু সত্যি। এরপর আমি ভাবলাম, প্রিয়তমা'কে খুশি করার জন্যে সম্রাট শাহজাহান যদি তাজমহল বানাতে পারে,তাহলে আমি কি কিছুই করতে পারবো না---আমার প্রেয়সী মমো'র জন্যে? (আরও একটি কাকতালীয় বিষয় বন্ধুরা, শাহজাহান-এর স্ত্রীর নাম মমতাজ, আমার স্ত্রী'র নামও কিন্তু মমতাজ পারভিন মমো)
তারপর স্ত্রী'র মন ভালো করার প্রত্যাশায় নেমে পড়লাম মাঠে। বানেশ্বর হাট থেকে পাঁচকেজি করে মরিচ ও হলুদ,দুই কেজি ধনিয়া এবং এক কেজি জিরে কিনে ভালো করে রোদে শুকিয়ে, পরিষ্কার করে, নিজেই গেলাম মিলে ভাঙাতে। ভাঙানো শেষে, মিলের চালুনি দিয়ে চেলে বাড়িতে নিয়ে আসলাম বউয়ের জন্যে সাধের ও স্বাদের গুঁড়ো মশলা। এরপর একদিন পাশের বাড়ির কোনো এক ভাবি তার মশলা না থাকায় আমার স্ত্রীর কাছ থেকে কিছু মরিচের গুঁড়ো ধার হিসেবে নিয়ে যায়। পরে ঐ ভাবি এই মশলার (মরিচের গুঁড়ো'র) খুব প্রশংসা করে। মশলার মূল ঘটনা জানার পর জোর করে আমার বাড়ি থেকে হাফ কেজি মরিচের গুঁড়ো টাকা দিয়ে নিয়ে যায়।
টার্নিং পয়েন্ট গল্পের ঠিক এইখানটায়। ঐ সময়টায় একদিন ইউটিভি লাইভ-এর আমাদের সম্মানিত মেন্টরের একটি ভিডিও আমার মনকে ভীষণ ভাবে স্পর্শ করে! তখন আমার মনের ভেতর শুধু একটি গানের কলি হাতুড়ি পেটাচ্ছিলো।তা হলো,
"তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়,
আমি লাজে মরে যায়
বুক চিন্ চিন্ করছে হায়
এই মন তোমায় পেতে চাই"।
এরপর আমার অভিযান শুরু হলো, প্রিয় মেন্টরকে অথবা "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনকে আমার কাছে পেতেই হবে। নইলে যে বুক চিন্ চিন্ করতেই থাকবে?
তারপর আমি ১৪তম ব্যাচে ভর্তি হলাম। এরপর শুরু হলো প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে ভাবছিলাম, কি করি, কি করি? হঠাৎ আইডিয়া পেয়ে গেলাম।
কি আইডিয়া?
ঐযে! আরে এখনও বুঝেন নি? ঐযে, পাশের বাড়ির ভাবি আমার মশলা খেয়ে খুব প্রশংসা করে ছিল? তারপর ভাবলাম, ভাবি যদি খেয়ে টাকা দিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তবে এটা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনলে ক্ষতি কী?
কি আর বলবো ভাই, যেই ভাবা সেই কাজ।
"স্বপ্ন দেখে সাহস করে কাজ করলাম শুরু
কানে কানে যেন বললেন, ইকবাল বাহার গুরু।
এই সময়টা আছি আমি লেগে আর লেগে থেকে
দোয়া করবেন গুরু সফলতা যেন পারি আমি দেখে যেতে"।।
(অর্থাৎ স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন,শুরু করুন,এবং লেগে থাকুন---সফলতা আসবেই)
প্রতিটি মশলা প্রথমে ০৫কেজি করে কিনে আনলাম।শুরু হলো প্রক্রিয়া। মরিচ আর হলুদকে শুকালাম ভালো করে, আর ধনিয়াকে দু'বার করে পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে তারপর ভাঙানো হলো।এবার প্যাকেট করার পালা। তার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি থেকে যায়।সেটা হলো, পণ্যের নামকরণ। এবার অনেক ভাবাভাবির পর শেষে ভাবলাম, মরলে হাতির পা'য়ের নিচেই পড়ে মরবো। নাম হওয়া চাই রাজকীয়।( প্রসঙ্গত একটু বলে রাখি বন্ধুরা, আমি কিন্তু অনেক নামি-দামি পত্রিকায় বেশকিছু গল্প-উপন্যাস লিখেছি। এবং আমার ৭/৮টি বইও আছে। তাই রাজকীয় শব্দের জন্যে শব্দভান্ডার ছিলো যথেষ্ট পরিপূর্ণ।) কিছুক্ষণ ভাবার পর পেয়ে গেলাম নাম। ভাবলাম,রাজার মেয়েকে তো "নন্দিনী" বলে। আর নন্দিনী মানেই তো মেয়ে, আর মেয়েরাই তো রান্নার কাজ বেশি করে। তাহলে আমার মশলার নাম হলো আজ থেকে ,"নন্দিনী গুঁড়ো মশলা "। সেই থেকে মানুষকে ভালো এবং খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তা দিয়ে পথ চলার শুরু। সেই পাঁচ কেজি দিয়ে শুরু করা,আর এখন প্রতি সপ্তাহে ০২মন করে মশলা ভাঙাতে হয়।
তো বন্ধুরা,
এভাবেই সখ থেকে নন্দিনী'র জন্ম এবং পথচলা শুরু। আমি আপনাদের কাছে দোয়া প্রত্যাশি। লিখা এবং ভাষাগত ভুল হলে আশাকরি ক্ষমা করবেন।
মাতিউর রাহমান
ব্যাচ নং চৌদ্দ
রেজিঃনং ৬৬৬৮৬
জেলাঃ রাজশাহী।
নিচে আমার নন্দিনী'র পেইজ লিঙ্ক দিলাম।আস্তে করে একটু টোকা দিলেই নন্দিনী'কে দেখতে পাবেন। খরচ করবেন, দুই মিনিট, আর স্বাদ পাবেন আজীবন।ওকে মাইডিয়ার, ধন্যবাদ।
https://www.facebook.com/Sultan-Organic-Foods-108079931546293/