মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখতাম
লেখাপড়া শেষ করার পর আমার আব্বু সব সময় চেষ্টা করে গেছেন, যাতে আমার লেখা-পড়া কন্টিনিউ থাকে, কিন্তু আমার আম্মু তাতে কখনো রাজি হন নি।
আম্মু কখনো চাননা যে আমার লেখাপড়া চালু থাকুক। তার কারণ হলো আমি গ্রামের মেয়ে, গ্রামের মেয়েদের একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।কারণ পাড়াপড়শি তাদেরকে নিয়ে কত আজেবাজে মন্তব্য করে। এই ভয়ে মনে হয় আম্মু সবসময় বাঁধা দিতেন।
আব্বু যখন সবসময় চাইতেন লেখাপড়া করি, আম্মুর বাঁধার কারণে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন নি বা আমার নিজের ও কোন ইচ্ছা ছিল না লেখাপড়ার প্রতি।আমি তো তখন কোন স্বপ্ন দেখতাম না তাই আমার চাওয়াটা ভিন্ন ছিল।তখন অনেক ছোট ছিলাম, হয়তো এটা আমার বুঝার ভুল ছিল।আব্বুর অনেক পিড়াপিড়িতে একবার দাখিল মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হই, আম্মুর বাঁধা থাকা সত্যেও, কিন্তু পরবর্তিতে আর পড়তে পারিনি। না পড়ার কারণ হলো, আমি গণিত এবং ইংলিশ একদম বুঝি না। গণিত। আমার মাথায় ডুকে না, তাই আর পড়তে গেলাম না।
তারপর তো আর লেখাপড়া করিনি,অনেক ছোট ছিলাম বলে ঘরের কোন কাজ আমাকে করতে হতো না, সব কাজ আম্মু নিজে করতেন, আর পাশের বাড়ির যে কেউ আম্মুর সাথে কাজে সাহায্য করত। এভাবে আমার দিন যাচ্ছিল,লেখাধুলা আর আড্ডা দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
আমি যখন নানাবাড়ি বা আন্টিদের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম,সবাই বলতো দেখো তোমার মেয়েরা লেখাপড়া করছে, তুমিমি বেকার বসে আছ,আমার খালাতো ভাই -বোনদের লেখাপড়া করতে দেখে আমারও অনেক উৎসাহ উটতো মাঝে মাঝে, যখন উৎসাহ হইতো তখন আব্বুকে বলতাম আমি আবার ভর্তি হব,তখন আব্বু বলতেন ঠিক আছে, পড়তে চাইলে পড়ো।আম্মু মানা করতেন, তখন দেখা যেতো অনেক সময়। পারিবারিক দন্ধ লেগে যেতো, তখন আর আব্বু ভর্তি করতেন না, বা ভর্তির বিষয়ে কোন কিছু বললে আর পাওা দিতেননা।
তারপর এভাবে চলতে চলতে প্রায় ৩ বছর বেকারত্ব জীবন শুরু হয়,তখনতো আমার চোখে কোন স্বপ্ন নেই,মাঝে মাঝে স্বপ্নদেখতাম, যখন হসপিটালে যেতাম নার্সদের ডাক্তারদের দেখতাম তখন আমার মনে হতো আমিও যদি লেখাপড়া কন্টিনিউ করতাম তাহলে আমিও ডাক্তার হতাম,তখনতো শুধু ডাক্তার হওয়ার চিন্তা মাথায় থাকতো, মাঝে মাঝে নার্সদের সাথে কথা বলতাম,এবং জিঙ্গেস করতাম আপুরা আমি কি চাইলে আপনাদের মত নার্স হতে পারব।নার্স আপুদের সাথে প্রায় আমার ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিল।
২০১৭সালে আমার আব্বুর ব্রেইন স্টোক হয়, একা এক রুমে, তারপর আব্বুর রোগ ধরা পড়লো যে আব্বুর নিউরো সমস্যা, তখন আব্বু বেড থেকে উঠতে পারতেন না, তারপর আব্বুকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করি।আব্বুকে হসপিটালে ভর্তি করার পর, আব্বুকে দেখাশুনা করবে কে। ভাইতো একা দেখাশুনা করতে পারবে না,সে নিজেও অনেক ছোট, আর আম্মুও প্রতিদিন থাকতে পারবেন না,বিরাট একটা সমস্যা, শহরে থাকার মতও জায়গা আছে কিন্তু বাড়ি একা রেখে আম্মু থাকতে পারবেন না।কারণ বাড়িতে আমাদেরকে একা রেখে আসলে বিরাট সমস্যা, বাড়ির আশে পাশে শএুররা প্রতিনয়ত বসে থাকে আমাদের ক্ষতি কিভাবে করবে, তাও একটা টেনশন।
তারপর সিন্ধান্ত হলো আব্বুর দেখাশুনার জন্য আমি আর আমার ভাই একসাথে থাকব। তারপর আমরা ২জন মিলে দেখাশুনা শুরু করলাম। তারপর আমি প্রতিতিদিন মেয়েদের মসসজিদে নামাযে যেতাম,সেখানে এক ইন্টারনির ডাক্তারআপু প্রতিদদিন বসে থাকতো, আপু আমার আসা-যাওয়া ফলো করতেন হঠাৎ একদিন আপু নিজে থেকে আমাকে জিঙ্গেস করলেন আপু তুমি লেখাপড়া করো, আমি বললাম না। তারপর আপু বললেন তুমি লেখাপড়া করতে চাও, আমি বললাম জ্বী। তারপর আপু আমার আব্বুকে দেখতে এসে বললেন আংকেল ওরে ভর্তি করে দেন কোন প্রতিষ্টানে, আব্বু বললেন ঠিক আছে।আপনি যদি পারেন তাহলে কোথাও ভর্তি করে দেন,তারপর আপু বললেন, আমার সব সিভি দেখাতে,তারপর আপুকে সিভি দেখাইলাম। পরে আপুয়ে ট্রাই করলেন, কোন কাজ হয়নি কারণ আমাদের সিভিগুলোর মান অন্য প্রতিষ্টানে খুব কমম।
তারপর আপু আমাকে বললেন আপু তোমার সিভির কোন মান নেই, তখন আর কি করব। আর কোথাও ট্রাই করিনি,কিনতু আজও আমার লেখাপড়ার প্রতিতি খুব আগ্রহী আছে। আমি সবসময় সুযোগ খুজি কোথাও যদি আমি পড়তে পারতাম।
ইনশাআল্লাহ পরবর্তিতে বাকিসবগুলো কথা শেয়ার করব।
আমার পেইজঃজোহা ফারহা কালেকশন
কাজ করছি
হ্যান্ডপেইট পান্জাবি
হাতের কাজের পান্জাবি
মেয়েদের সব ধরণের থ্রী-পিছ
চা-পাতা
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯০
Date:- ০৪/১২/২০২১ইং
সুমা তাসনীম ফারহা
ব্যাচঃ ১১
রেজিঃ ২৯২০৫
জেলাঃসিলেট
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার