120 টাকা দিয়ে শুরু আমার ব্যবসায়িক জীবন
ছোট থেকেই আমি ছিলাম একজন বিজনেস পাগল তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি শুরু করি আমার মূলধন টিফিনের বাঁচানো টাকা থেকে 120 টাকা দিয়ে আমার ব্যবসায়িক জীবন।
গ্রামের ছোট বাজার থেকে নিয়ে আসতাম ছোট বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রকমের খাবার এনে আমি বাড়িতে একটি বাক্স তৈরি করি সেই বাসের মধ্যে রাখতাম এবং ছোট বাচ্চাদের কে বলতাম আমি এসব খাবার বিক্রি করি লাগলে নিয়ে যাস তোরা।
এভাবে আস্তে আস্তে শুরু হয় আমার লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীক হওয়ার স্বপ্ন একটা সময় গিয়ে আমার মোটামুটি 2 3 হাজার টাকার মতো হয়ে যায়
ক্যাশ।
সেটা দেখে আমার ফ্যামিলির সবাই অনেক খুশি হয় এবং আমার দাদী ও মা কিছু টাকা দেয় যা একসাথে করে চারটা টিন দিয়ে বাড়ির সামনে একটি টং দোকান তৈরি করি।
যেখানে সব ধরনের মালামাল নিয়ে আসি এবং কি আমার ব্যবসা একটু ভালই বড় করি। এভাবে চলতে চলতে যখন আমার ব্যবসার বয়স সাত মাস হয় তখন আমাদের পারিবারিক একটি ব্যবসায় অনেক লস আসে সেই লসের প্রভাব আমার দোকানে আসে তখন আমার দোকানটি শেষ হয়ে যায়।
অনেক মন খারাপ লেখাপড়া করছি কি করব মাথায় তো আছেই পাগলামি ব্যবসা করব ভেবে পাচ্ছি না প্রথমেই কিন্তু বলেছিলাম আমি ভালো ছাত্র ছিলাম না তাই লেখাপড়া আর সামনে আগাতে পারি নি।
একটা সময় লেখাপড়া আমি ছেড়ে দেই তখন আমার বাবা একটি পাওয়ার টিলার মেশিন কেনা জমি চাষ করার জন্য সেখানে বড় ভাই প্রথমে চালায় তারপরে আমি এবং আমার এক ফ্রেন্ড দুজনে সেটা চালায় চালানোর পরে মোটামুটি ভালই টাকা আসত কিন্তু টাকা একসাথে রাখতে পারতাম না তখন চিন্তা করলাম এভাবে আর কয়দিন চলবে আমাকে যেতে হবে স্বপ্নের শহর ঢাকায়।
যেই কথা সেই কাজ 2007 সালে আমি আমার এক খালাতো ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঢাকায় যাই খালাতো ভাইয়ের সুবাদে আমি একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি নাই 2200 টাকা বেতনে ভালোই চলছে চাকরি জীবন। এভাবে কেটে যায় আমার দীর্ঘ চার বছর যেখানে লাস্ট টাইম আমার বেতন হয় 8500 টাকা।
তা দিয়ে আমার যে স্বপ্নটা আছে সেটা পূরণ করা সম্ভব না তাই দেশের মায়া ত্যাগ করে মা বাবা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান সবাইকে ছেড়ে আমি পাড়ি দেই 2013 সালে প্রবাসে।
প্রবাসী জীবন যে কত কষ্টের যে কোনো দিন আসে নাই সে বুঝবে না দেশে হয়তো কম টাকা ইনকাম করেছিলাম কিন্তু ভালোই কেটেছে দিনগুলো আজ হয়তো অনেক টাকা ইনকাম করি তার পিছনে রয়েছে অনেক অনেক রহস্য অনেক কিছুই তার মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে আমি কিছু কথা বলব।
2013 সালে যখন বিদেশে আসে দেশে থাকা অবস্থায় আমাকে বলা হল 20000 টাকা বেতন দেওয়া হবে কিন্তু আমি যখন প্রবাসে আসলাম তখন দেখতেছি আমাকে বেতন দেওয়া হচ্ছে মাত্র 9 হাজার টাকা মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো মনে মনে ভাবতে লাগলাম মনে হয় আমার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না আবারও মনে হয় ব্যর্থ হয়ে গেলাম।
সবকিছু চিন্তা বাদ দিয়ে শুরু করলাম কর্মজীবন কেটে গেল দুই মাস হচ্ছে না কোন কিছু বাড়িতেও ভালোভাবে কথা বলতে পারিনা কথা বললেই শুধু কান্নাকাটি আমার পাশে থাকা এক বন্ধু আমাকে বলল ভাই আর কতদিন এভাবে কাজ করবেন অনেক কষ্টের কাজ আপনি কোম্পানি থেকে লুকিয়ে চলে যান।
তখন আমি ভাই কে বললাম ভাই আমি যে যাবো কোথায় যাবো কি কাজ করব কোন কাজ জানি না তখন সে আমাকে বলল আমার এক বন্ধু আছে একটি আইল্যান্ডে সেখানে ফাইবার গ্লাসের কাজ চলে প্রথমত একটু কষ্ট হবে কিন্তু আপনি যদি কাজটা শিখতে পারেন তাহলে আপনার জীবনে সাফল্য নিয়ে আসবে।
তার কথা শুনে মনে একটু সাহস যোগালাম যাইহোক একজন তো কিছু আশা দিল যে কথা সেই কাজ দ্বিতীয় মাসের বেতন টা হাতে নিয়েই দশ দিন পর একটি বোর্ডে করে পালিয়ে চলে যাই অন্য আরেক আইল্যান্ড সেখানে যাওয়ার পর প্রথম থেকেই আমাকে বেতন দেওয়া হল 18000 টাকা।
তখন মনটাকে একটু সান্ত্বনা দিলাম যাক এবার মনে হয় আমার স্বপ্নটা পূরণ হবে কাজ শুরু করলাম মন থেকে তিন মাস কাজ করার পর এক মাস 15 দিনের বেতন পায় বাকি এক মাস 15 দিনের বেতন কম্পানি আমাকে দেয় না আবারও ধোঁকা খেয়ে গেলাম কিছু করার নাই আমার ভিসা ঠিক ছিলনা তাই জল দিয়ে কিছু বলতেও পারতাম না যদি পুলিশকে ধরিয়ে দেয়।
মন খারাপ করে বাসায় চলে যাই কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা হয়তো আবারও যেতে হবে রাজধানীতে আর না হয় দেশে সে সময় আমার এক ফ্রেন্ড অন্য একটি কোম্পানিতে জবের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যায় আমি তার সাথে ঘুরতে যাই আল্লাহর কি কাম সেই কোম্পানির মালিক আমাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কি কাজ করবে আমাদের এখানে তখন আমি স্যারকে বললাম জ্বী স্যার আপনারা যদি কাজ দেন তাহলে আমি করব কিন্তু আমি নতুন তেমন কোনো কাজ বুঝিনা।
তখন স্যার আমাকে বলে সমস্যা নেই তুমি নতুন তোমাকে বেতন একটু কম দেব তখন আমি স্যারকে বললাম সমস্যা নেই আমার কাজ দেখে আমাকে বেতন দিয়েন শুরু করলাম আমার আবার নতুন কর্মস্থল এক মাস কাজ করার পর আমাকে ছার বেতন দিল বাংলার 25000 টাকা আলহামদুলিল্লাহ ভালই চলছে এক বছর চলে গেল বেতন বাড়ছে না কাজ করতেছি।
তখন আমাদের একটি ফিশিং বোর্ড এর কাজ শেষ হয়ে যায় সেই বোর্ড টি পানিতে নামানোর সময় অনেক পরিশ্রম হয় এবং কি আমরা সবাই অনেক কাজ করি সেটা দেখে কোম্পানির বস আমাদের সবাইকে বাসায় ডেকে একটি মিটিং করে এবং কি সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দেয় সেদিন বস আমাকে একটি 87 ফুটবলের দায়িত্ব দেয় সাথে চারজন বাংলাদেশি ভাই দেয় যে তুমি এদেরকে নিয়ে কাজ করবে আমি মনে মনে বলি আমি তো তেমন কাজ ভাল করে বুঝি না একবছর মাত্র আমার কাজের বয়স মিটিং শেষে বসের সাথে আমি পার্সোনাল কথা বলি।
বসকে বলি আমি 13 মাস হল ফাইবার গ্লাসের কাজ করছি আমি এত ভালো কাজ করতে জানিনা বস আমাকে বলে আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দেব তুমি কাজ শুরু করো আলহামদুলিল্লাহ শুরু করলাম বস এর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আলহামদুলিল্লাহ ভালই চলছে মাস শেষে বস আমাকে আরো বাংলার 5000 টাকা বেতন বাড়িয়ে বাংলার 30000 টাকা দেয়।
আমি অনেক খুশি যে বস আমাকে অনেক সুন্দর ভাবে কাজ শেখাচ্ছেন এবং বেতন বাড়িয়ে দিয়েছেন আমি নিজের মতো করে কাজ করছি এভাবে তিন বছর চলে যায় সেসময় আমি আপনাদের দোয়ায় লেখাপড়া না করতে পেরেও ভালো একজন মিস্ত্রি এভাবে আমি একই কোম্পানিতে সাড়ে চার বছর কাজ করি। যেখানে শেষ টাইম আমার বেতন ছিল বাংলার 40000 টাকা।
একটা সময় গিয়ে আমি কোম্পানির চাকরিটা ছেড়ে দেই দিয়ে আমি চলে যাই রাজধানীতে যাওয়ার পরে আমি একটি ফিশিংবোটে কাজ করি সেখানে থেকেও ভালো টাকা ইনকাম করি।
কিন্তু কেন জানি মন বসছে না তাই কাজটা ছেড়ে দেই আমি চলে যাই একটি আইল্যান্ডে যাওয়ার পর সেখানে সেম ফাইবার গ্লাসের কাজ করি এক বৎসর করার পর এই দেশের একজন আমাকে একটা প্রস্তাব দেয় কাজের পাশাপাশি তুমি একটা রেস্টুরেন্ট চালু করো মাথায় তো আছেই পাগলামি ব্যবসায়ীক হব যেইনা কথা সেই না কাজ শুরু করে দিলাম আমার স্বপ্নের ড্রিম কফি শপ।
চলছে আপনাদের দোয়ায় ভালই মোটামুটি দেড় বছর চালাই আমার কফি শপ ভালো টাকা ইনকাম হয়।
তারপর হঠাৎ কিছু অসাধু মানুষের নজরে চলে আসে আসার পর হঠাৎ করে আমার বিজনেস নষ্ট করে দেওয়ার জন্য আমার কফিশপ বন্ধ করে দেয়। কি করবো মন খারাপ তখন আমাকে কিছু বন্ধু বা এদেশের মানুষ নতুন করে আইডিয়া দেয় তুমি নতুন কফিশপ চালু কর।
এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল যে মানুষের কথায় আবার নতুন বিজনেস করতে যাই নতুন কফিশপ টি চালু করতে আমার সময় লাগে 2 মাস এই 2 মাসে চার জন মানুষের খাওয়া দাওয়া রুম ভারা সব মিলিয়ে বড় একটা অ্যামাউন্ট চলে যায় আমার হাত থেকে ব্যবসা স্টার্ট করি।
ভালোই চলছে দুই মাসে যাওয়ার পর যে মালিকের জায়গায় আমি কফিশপ টি তৈরি করি। তার সাথে আমার কথায় কাজে মিল না থাকায় কফিশপ টি আমাকে ছেড়ে দিতে হয়।
সেখানে আমার বাংলার 3 লাখ লাখ টাকা লস হয় কি করি ভেবে পাচ্ছি না আবারও সেই আগের কাজ শুরু করলাম শ্রীলঙ্কান একটা কোম্পানিতে এভাবে এক বছরের মতো সেখানে আমার চাকরি রানিং থাকে একজন বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে মালিকের ভাইয়ের সাথে অনেক ঝগড়া হয় আমরা পাঁচজন একসাথে কোম্পানি থেকে চাকরি ছেড়ে দেই আবারো সেই ব্যর্থতা মাথায় এসে চেপে গেল।
কি করি কোন দিশা পাচ্ছিলাম না এরই মধ্যে আমার এক পুরোনো ফ্রেন্ড আমাকে কল করে ভাই আপনি কাজ করেন আমি বলি আমার কাজ নেই যদি করেন তাহলে আমার কোম্পানির একটি সাফারি বোর্ডের কিছু কাজ আছে তাহলে আপনি দেখে সেটা এগ্রিমেন্ট করে করতে পারেন।
তার কথা অনুযায়ী আমি কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে দেখা করে কাজটা কনফার্ম করি।
দুই মাস 10 দিনের মধ্যে আমি কাজটা কমপ্লিট করে আমার কাছ থেকে কোম্পানির ম্যানেজার আমাকে তাদের কোম্পানিতে পারমেন্ট চাকরি দেয়।
আলহামদুলিল্লাহ বেতনও ভালো তারপরও মনে যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না হঠাৎ চোখে পড়ে আমাদের নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন সেখানে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সেশন গুলো দেখতাম আর ভাবতাম ভবিষ্যতে কিছু একটা করব কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করিনি তারপর একজন ভাইয়ের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করি 14 তম ব্যাচে সেখান থেকে শুরু হয় আমার পথচলা।
পাশাপাশি স্যারের সেশন থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রবাস জীবনের পাশাপাশি আমারা নিয়ে এসেছি ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ ছোট একটি মিনি পিকআপ আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো চলছে।
আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু মিলিয়ে এখন আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে ইনশাআল্লাহ সবাই আমার জন্য ও আমাদের ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ এর জন্য দোয়া করবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯২
Date:- ০৬/১২/২০২১ইং
মোঃ নিজাম উদ্দিন
ব্যাচ নং ১৪
রেজিস্ট্রেশন নং ৬৩৯৭৮
জেলা - পঞ্চগড়
বর্তমান অবস্থান মালদ্বীপ প্রবাসী
আমার পেইজ:-https://www.facebook.com/ভাই-ভাই-এন্টার-প্রাইজ-712220792921407/