বাবা মায়ের ভালোবাসা
পৃথিবীতে যদি আপন কেউ থেকে থাকে, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে থাকে সে একমাত্র বাবা মা। স্যার সব সময় বলেন, "বাবা মাকে ভালোবাসি কথাটা বলেন" । বাবা-মায়ের ভালোবাসার প্রতি স্যার সব সময় জোর দেন। আজ আমি আমার বাবা মায়ের কথাই, বলতে এসেছি।
🌷🌷বাবা-মায়ের ভালোবাসা🌷🌷
বাবা-মায়ের ভালোবাসা কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবুও একটু হলেও আমি বলতে চাই। আমার বাবা সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা ফুল টাইম হাউজ ওয়াইফ। আমরা পাঁচ বোন এক ভাই। ভাই অনেক কাঙ্খিত হওয়ার পরেও ভাইয়ের পরে আমরা দুই বোন। আমি সবার ছোট। ছোট হিসেবে বাবা মায়ের ভালোবাসা মনে হয় একটু বেশিই পেয়েছি। এখনো পাই।
আমার আর কোন ভাই বোন পড়ালেখার সুযোগ তেমন পায়নি। বড় হতে না হতেই বিয়ে হয়ে যায়। আমার সময় এসে কখনো চিন্তাই করে নি, ছোট মেয়েকে বিয়ে দিবো। মা বলতো - আমি আমার ছোট মেয়েকে পড়ালেখা করাবো। আর্থিক অবস্থা এতো ভালো ছিল না। কিন্তু আগ্ৰহ ছিল অনেক।
আমাকে ক্লাস ওয়ানে ঢাকাতেই ভর্তি করিয়ে দেয়। ঐ সময় টিউটর দিয়ে দেন। আমিও ভালো রেজাল্ট করতে থাকি। মনে আছে যদি ৯৮/৯৯ পেতাম তখন কোলে নিয়ে আদর করে বলতো বাবা বলতো আর একটু পড়লে ১০০ পেয়ে যেতে। আমিও বাবাকে খুশি করার জন্য আরো ভালো করে পড়তাম। ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত রোল ১ থেকে সরে নি। ক্লাস সিক্সে আরো বড় স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেখানে সেকশন ক তেই রোল ১ না হলেও ১৫ মধ্যে থাকলো। ভালো রেজাল্ট করতাম বলে আমার বোন, দুলাভাই, বাবা মা অনেক ভালোবাসতো। মা সব সময় খেয়াল রাখতেন আমার কি লাগবে, কি পছন্দ। সব বলার আগেই পেয়ে যেতাম। আর আমি দেখেছি কতটা কেঁদে কেঁদে আমার জন্য দোয়া করেছে। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আমার বাবা মা আমার জন্য প্রতিনিয়ত দোয়া করেছে। এখনো করে। প্রতিটি বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করেছেন।
আমার ভালোবাসা বাবা মায়ের জন্য
বাবা-মায়ের জন্য কিছু করতে পারলে কি যে ভালো লাগে, কি শান্তি অনুভব হয় তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।
একটা সময় এসে বোনদের বিয়ে, ভাই বিয়ে করে। আর্থিক দিক দিয়ে খুব খারাপ অবস্থায় পড়ে যাই। তখন আমি এইচএসসি পরীক্ষা দেই। এই সময়ে এসে বাবা মা আর আমি। ভাই বোনের বাসা দূরে নয়, তাদের বাসা কাছেই। পরীক্ষা শেষ করার পর টিউশনি শুরু ৪০০ টাকা দিয়ে। বাবার অবস্থা খারাপ। তাই নিজেই নিজের পড়াশোনার খরচ যোগায় করার চেষ্টা করি। আমি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হই অনার্স একাউন্টিং সাবজেক্ট নিয়ে। এখানে থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করি। এই সময়টা ছিল আমার জীবনের অনেক কঠিন একটা পথ।
শুধুমাত্র মায়ের অনুপ্রেরণা পেয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছি। অনুপ্রেরণা পেলেও টাকার সাপোর্ট ছিল না।
একেরপর এক টিউশনি বাড়াতে থাকি।
একটা কথা বলে রাখি, আমি যে স্টুডেন্ট কে পড়াতে গেছি সেসব স্টুডেন্ট এমন ছিল যে,আমার আগে তারা অনেক টিউটর রেখেছে, কিন্তু কারো কাছে পড়ে নি। আমার দিয়ে শেষ চেষ্টা যে, আমার কাছে না পড়লে কোচিং এ দিয়ে দিবে।
নিজের কথা প্রশংসা করছি না, আমি জানি আমি আহামরি সুন্দর না যে কেউ প্রথম দেখাতেই ভালো লাগবে। আমি বলেছি আমি এক সপ্তাহ পড়াবো বাকি সিদ্ধান্ত আপনাদের।
এক সপ্তাহ পড়ানোর পর না আমাকে এমন হয়েছে বছরের পর বছর পড়িয়েছি। প্রত্যেক স্টুডেন্ট এসএসসি দিয়ে সেই টিউশনি শেষ করতে হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেছি ছাড়ার জন্য। আমার সময় হচ্ছে না পড়াতে পারবো না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্টুডেন্ট নাকি আমাকে ছাড়া আর কারো কাছে পড়তে পারে না। অন্য কোন টিউটর দিতে ভয় পায়। না পড়ালে স্টুডেন্ট খারাপ রেজাল্ট করবে। এগুলো ছিল স্টুডেন্ট এর বাবা মায়ের কথা। আর স্টুডেন্ট এর কথা হলো ইতি মিস ছাড়া আমি পড়বোই না। কিন্তু এর সুবিধা আমি কারো কাছে থেকে কোনদিন নেই নি। শুধু এসএসসিতে যখন এ প্লাস পেয়ে আমার বাসায় চলে আসতো খুশিতে আমার আনন্দ, পাওয়া এতো টুকুই ছিল। আমার কাছে পড়ালে স্টুডেন্ট এর বাবা মা নিশ্চিত থাকতেন। তাদের সন্তানকে আমি সঠিক গাইডলাইন দিচ্ছি। সে কোনদিন বিপথে যাবে না। এমনি বলতেন স্টুডেন্ট এর বাবা মা। আর একটা কথা বলতেন আমার অগোচরে, তা হলো তোমরা তোমাদের মিসের আদর্শ টা নিও। এতো ভালো মেয়ে হয় না।
যাই হোক মূল ঘটনায় ফিরে আসি। আমি টিউশনি এতোটাই বাড়িয়ে দিলাম যে কলেজ সময়টা ছাড়া বাকি সময়টা কাটতো আমার অন্যের বাসায় টিউশনি করতে করতে। নিজের এবং মায়ের গহনা যা ছিল তা কলেজের একেক সময় ভর্তি ফি দিয়েই শেষ হলো।
এর মধ্যে আমার বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবাকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে দৌড়ানোর সময় টুকু পাই না। প্রাইভেট - আলোক হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই। এই টেস্ট সেই টেস্ট, ঔষধ ভিজিট অনেক খরচ। সাহায্য করার মতো কেউ নেই। বাবার চিকিৎসা করালাম এই টিউশনির টাকা দিয়ে। তারপর আর বাবা চাকরি করার মতো অবস্থা নেই। আমি পুরো সংসারের দায়িত্ব নিলাম। এই টিউশনি করে ঢাকা শহরে সংসার চালিয়ে নিজের পড়াশোনা চালাতে থাকি। আর সব সময় দোয়া করি, যেন আল্লাহ আমাকে এতিম করে আমার বাবাকে না নিয়ে যায়। এরপর আমি কলেজে যাওয়া কমিয়ে দেই। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত টিউশনি করি। আমার বাসায় পড়াই নি। বাবার কষ্ট হবে। আমি নিজেই অন্যের বাসায় যেয়ে পড়াতাম। আবার আমার একাউন্টিং সাবজেক্ট ক্লাস না করলে কিছু বুঝা যায় না। আমি এদিকে কোচিং এ পড়তাম সপ্তাহে তিনদিন আমি আমার পড়াশোনা ছাড়িনি। আমি যখন বাসায় ফিরতাম তখন অনেক ক্লান্ত থাকতাম। তখন বাবা আমার জন্য বসে থাকতেন না খেয়ে, কেউ একটা কিছু দিলে মুখে দিতেন না। বলতেন ইতি আসুক তারপর খাবো। এটাই ছিল আমার পরিশ্রমের ফল। এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কত পরিশ্রম করেছি।
কষ্ট হতো, আত্মীয়স্বজন বাসায় আসতো, অনেকেই অনেক কথা বলতো। আমি শুধু চেয়েছি আমার বাবা সুস্থ থাকুক। সারাদিন টিউশনি করে থেমে থাকিনি। আমি পড়াশোনা করতাম রাতে। সবাই ঘুমাতো আর আমি বই খাতা নিয়ে বসে যেতাম। অংক মিলাতে মিলাতে কখন ভোর হয়ে যেতো টেরই পেতাম না।
একটা কথা বলি আমার পড়াশোনা প্রতি আমি এতো ডেডিকেটেড ছিলাম যে ঘুমাতে পারতাম না। হয়তো অনেক ভালো রেজাল্ট হয় নি। তবে আমি মনে করি, আমি এই সময়ের মধ্যে যে রেজাল্ট করেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ বলি। আমি ছোট থেকেই পরীক্ষার খাতায় যা লিখেছি সবটুকু নিজের। কখনো পরীক্ষার সময় কারো কাছে জিজ্ঞেস করিনি। আমি মনে করতাম পরীক্ষা মানেই হলো নিজের পরীক্ষা। নিজে যা পারি তাই লিখবো, আর নিজে খুব সৎ থাকার কারণে আমি যা পারি তাই লিখতাম। এটাই আমার রেজাল্ট। তাই আমি আমার রেজাল্টে সন্তুষ্ট। অন্যদের দেখতাম একজন আরেক জনের সাহায্য নিতো, এমনকি খাতাও নিতো লিখে দেয়ার জন্য নকল কত কিছু। আমার এই জিনিসটা ভালো লাগতো না।
এভাবেই চলতে থাকে আমার জীবন যুদ্ধের দিনগুলো। বাবা সুস্থ হওয়ার পরেও আমি কোনো কাজ নিতে না করি। তার বয়স হয়েছে, সে কোন কাজে অনুকূল নয়। তাই তাকে বলেছি, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন।
আমি যখন মাস্টার্স পরীক্ষা দেই, একদিকে আমার স্টুডেন্টরা ছাড়তে চাইতো না। অন্যদিকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার বাবা পরীক্ষার হলে নিয়ে গিয়েছে। লিখতে পারতেছিলাম না। কিন্তু মনের দিক দিয়ে অনেক শক্ত ছিলাম। আমার চোখের পানি দিয়ে একদিকে খাতা ভিজতে থাকতো আবার যখন জানালা দিয়ে তাকাতাম বাবার চেহারা দেখতাম। তখন আবার লিখতাম। কিভাবে লিখেছি জানি না। প্রশ্ন খুব সহজ ছিল বলবো না। শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। ফুল উত্তর দিয়েই বের হয়েছি। সবাই বলতো প্রশ্ন এতো কঠিন এগুলো কি প্রশ্ন, আমি কোন কথা না বলে বাবার সাথে বাসায় চলে এসেছি। বান্ধবী পরে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছে আমি এতোটা অসুস্থ।
আমার মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। সে-ই সময় মনে হচ্ছিল আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমার সুস্থ হতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগে গিয়েছিল। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে টিউশনির পাশাপাশি চাকরির জন্য জন্য চেষ্টা করছি। চাকরির জন্য পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। আমার বাবার ইচ্ছা আমি যেন সরকারি চাকরি করি। পড়াশোনা করলাম, পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু কোনভাবেই সফল হতে পারছিলাম না। এর মাঝেই মাস্টার্সের ফল পাই। যখন দেখলাম আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। তা দেখে মনে হলো আমার চেয়ে আমার বাবা বেশি খুশি হয়েছে। তার খুশি দেখে কে।
অনেক ইন্টারভিউ অনেক মানুষের কাছে বাবা গিয়েছে শুধু আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কোনভাবেই কোন পজিটিভ কিছু পাই নি।
আমি আমার থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম প্রথমে প্রি স্কুলে টিচার হিসেবে জয়েন করি। সেখানে একবছর করে এটার সাথে একটা স্কুলে জয়েন করি। প্রি স্কুল করেছি, স্কুলে টিচার ছিলাম কিন্তু সহযোগিতা পাই নি, আমি চাইও নি সহযোগিতা করুক। নিজের মতো পরিশ্রম করে গিয়েছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন টিচার ছিল না। নিজে বড় অফিসে চাকরি করবো। নিজে কিছু করবো এই স্বপ্ন ছিল সব সময়। তাই প্রথমে সংসারের জন্য হলেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজে চাকরির জন্য চেষ্টা সব সময় চালিয়ে গিয়েছি। অনেক চেষ্টা করেও সরকারি চাকরি জোটে নি। প্রাইভেট কোম্পানিতে জয়েন করি। কিন্তু প্রথম অবস্থায় চাকরি করে টিউশনি করা সম্ভব হচ্ছিল না। আরো আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থায় পড়ে গেলাম। সন্ধ্যায় পর টিউশনি শেষ করে বাসায় আসতাম। কিন্তু এর মাঝে খেয়াল করলাম আমার বাবার শরীরটা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। মনোযোগ কোন দিকেই দিতে পারছিলাম না। মনটা খারাপ হয়ে থাকতো। দেখলাম বাবা গ্ৰামের বাড়িতে গেলে উচ্ছাস কাজ করে। তাই বোনদের ডেকে সিদ্ধান্ত নিলাম বাবা মা যদি বাড়িতে থাকতে পছন্দ করে। তাহলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।
তাহলে শরীরটাও ভালো থাকবে। তাই করলাম গ্ৰামে গেল, যদিও আমার মা যেতে চায়নি, পরিস্থিতির কারণে যেতে হয়েছিল। এতো বছরের চেনাজানা জায়গা টা ত্যাগ করতে তার কষ্ট হচ্ছিল বুঝতে পারি। তখন আমার কান্না কাউকে দেখাতে পারিনি। একা একা নির্জনে কেঁদেছি। অনেকেই আমাকে দোষারোপ করেছে কেন তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। কোন সৎ উত্তর আমার ছিল না। আমি শুধু আল্লাহকে বলেছি, তুমি যা করো তা বান্দার ভালোর জন্য করো। কিন্তু আমি চাইনি আমার বাবা মা গ্ৰামে থাকুক।
আজ যদি বড় কোন প্রতিষ্ঠান বা সরকারি চাকরি অথবা নিজে কিছু একটা করতে পারতাম তাহলে বাবা মা থেকে দূরে থাকতো হতো না। জানি না কিসে মঙ্গল। তবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্য করেন।
গ্ৰামে যাওয়ার পর গ্ৰামের মানুষ ভালোভাবে নেয় নি। কারণ আমাদের জায়গা জমিতে যে সুবিধা তারা নিয়েছে। এখন আর নিতে পারছে না বলে।
অফিসে চাকরি করলে বাবা মা কে দেখতে যাওয়া যায় না। ছুটি থাকে না। ছুটি নেয়া খুব কঠিন। এখানে তো কোনো আবেগ চলে না। তারপরও চেষ্টা করি সব সময় বাবা মায়ের পাশে থাকতে।
ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার বলেন প্রতিদিন বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে। আমি প্রতিদিন আমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে তারপর রাতের খাবার খাই। আমার বাবা প্রতিদিন রাতে এশার নামাজ শেষ করে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকে আমার ফোনের অপেক্ষায়।
আলহামদুলিল্লাহ আমার বাবা মা ভালো আছেন, এখন সুস্থ আছেন। সবাই আমার বাবা মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আমার বাবার সব সময় গাছ লাগানোর নেশা ছিল। এখন বাবা মা বাড়ির একপাশে বিশাল বাগান করেছে, সেখানে ফুলের গাছ, সবজি গাছ, নানা ফলের গাছ লাগিয়েছেন। সেই গাছ নিয়ে তাদের সময় কাটে। এবার তারা শীতের সবজি বিক্রিও করেছে। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পেঁপে ধরেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
(এরপর অনেক চড়াই উৎরাই পার করে আমার বিয়ে হয়। এই গল্প আরেকদিন বলতে আসবো। অনেক বড় গল্প)
আমার এখনো মনে হয় আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নি। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নি। সব সময় মনে ছিল একটা কিছু করবো। রাস্তা দিয়ে যখন হাটি তখন কত কিছু দেখি। শুধু একটা কিছু করবো। কিন্তু কি করবো এটাই ভেবে পাই না। ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার বলেন,
স্বপ্ন দেখুন,
সাহস করুন
শুরু করুন
লেগে থাকুন- সফলতা আসবেই।
সবশেষে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাহস করে কাপড় কিনে নিজেই লোগো, কভার পেজ বানিয়ে, হাজব্যান্ড আর আমি শুরু করে দিলাম ব্যবসায়।
বাবা সব সময় বলেন আরো পড়াশোনা করো। এখনি শেষ না। বুঝলাম বাবা আমার কাজে মনে হলো খুশি হয় নি। বাবাকে ঢাকা এনে বিজনেস দেখালাম, কিভাবে অনলাইনে কাজ করি তা দেখালাম আর বললাম, আমি সরকারি চাকরি করলে কি পেতাম, নিশ্চিত ভবিষ্যত আর সুনাম। তার চেয়ে বেশি সুনাম, সম্মান এই বিজনেস থেকে হবে। সরকারি চাকরি হয়নি, একদিন সরকারের কোন একটা কাজে আসতে পারবো, দেশের জন্য বড় পরিসরে কাজ করবো। আপনি শুধু আমাদের এই বিজনেসের জন্য দোয়া করবেন।
কিছুদিন আগে নারী উদ্যোক্তা দিবসে অংশগ্রহণ করি। আর ছবিগুলো ফেসবুকে দেই। গ্ৰামে থেকে একজন সেই ছবি দেখায় আমার আব্বা আম্মা কে। কি যে খুশি হয়েছে আমায় বাবা। পরে স্যার সম্পর্কে জানতে চায় আমার কাছে। আমি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সম্পর্কে যা জানি তাই কিছু টা হলেও বলতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। আমার বাবা মা সব সময় আমার জন্য তাহাজ্জুদের নামাজে দোয়া করেন।
বাবা মা কে যতোটা ভালোবাসি আমি আমার শাশুড়ি কেও মায়ের মতো ভালোবাসি। শুশুড়কে আমি পাইনি এটা আমার দুঃভাগ্য। এখন একটাই স্বপ্ন আমার- নিজের ব্যবসায়টা একটা উঁচু আসনে তুলে ধরা।
আমি কাজ করছি : পোশাক 👗 নিয়ে (পাইকারি ও খুচরা)
বিজনেস পেইজ: JN Fashion Zone
পেইজ লিংক: https://www.facebook.com/JNFashionZone
👉আমার প্রতিটি কাজের মধ্যে রয়েছে ইউনিক ডিজাইন:
🔰 কাস্টমাইজ কুর্তি
🔰 সুতি ও জর্জেট থ্রিপিস
🔰 বড়দের সাইজের পাঞ্জাবি
🔰 বাহারি রঙের জামদানি শাড়ি
🔰 কাস্টমাইজ বোরখা ও কটিসেট
🔰 সিজনাল বিজনেস-শীতের পোশাক
🔰 গ্ৰাফিক ডিজাইন-লোগো/বিজনেস কার্ড/ব্যানার
আপনাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম। আমার জন্য দোয়া করবেন। যাতে বাবা মা, শাশুড়িকে ভালো রাখতে পারি। ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার সব সময় বলেন," ভালো মানুষ হতে হবে।"
সর্বোপরি আমিও একজন ভালো মানুষ হতে চাই। এর জন্য যা যা করার ইনশাআল্লাহ আমি করবো।
ধন্যবাদ সকলকে কষ্ট করে পড়ার জন্য।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৪
Date:- ০৮/১২/২০২১ইং
জেসমিন ইতি
ব্যাচ:১৫
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার:৭১৭৭৯
অবস্থান: মিরপুর-১৩, ঢাকা
বিজনেস পেইজ: JN Fashion Zone
পেইজ লিংক: https://www.facebook.com/JNFashionZone
কাজ করছি : পোশাক 👗 নিয়ে (পাইকারি ও খুচরা)