আমি কখনো হাল ছাড়িনি
আমি আমার বাবা মার প্রথম সন্তান। আমি যখন মায়ের কোল জুড়ে জন্ম গ্রহণ করলাম তখন আবার বাবা শুনতে পেলো মেয়ে জন্ম হয়েছে তখন বাবা আর খুশি হলো না, তিনি চেয়েছিলো ছেলে হক কিন্তু মেয়ে হওয়ায় আমার মাকে কিছু দিন রেখে তার বাবার বাড়ি মানে আমার নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়, মা আমাকে নিয়ে চলে যায়, তার কিছুদিন যাবার পর বাবার ব্যবসা বাণিজ্য অনেক উন্নতি শুরু হয় তাই দেখে বাবা আবার আমাকে সহ মাকে নিয়ে আসে বাড়িতে,,এবং বাবা মা ও বাড়ির সবাই এখন আমায় খুব আদর করে, আমি অনেক আদর যত্নে বড় হই,কোন কিছুর অভাব বোধ করিনি,অনেক সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে আমার পরিবার চলতে থাকে🌹.....,
অনেক ভালো ভাবে আমি প্রাইমারি লেভেল শেষ করি,ও হাইস্কুলে ভর্তি হই, ততদিনে আমার আরেকটা ছোট বোন হয় সে ও প্রাইমারিতে পড়ে, তার কিছু দিন পরে শুনা যায় আমার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে ও তার একটা ছেলে হয়েছে এই নিয়ে আমাদের পরিবারে আবারো নানা রকম অশান্তি ও যায় ঝামেলা শুরু হয়, মা রাগ করে আমায় ও আমার ছুট বোনকে রেখে চলে যায় তার বাবার বাড়ি, বাবাও আমাদের যেতে দেয়নি মায়ের সাথে... কিন্তু বাবা আবার ঐ ছেলেকেও বাড়িতে নিয়ে আসে...😮😮
🌹আমি অনেক কান্না করি, আমি কি করবো বুঝতে পারতেছিনা,
আমি পড়ালেখা করবো না ছোট বোনকে দেখবো না সংসারের কাজ কর্ম করবো এই নিয়ে ঝামেলায় পরে গেলাম,পরে আমার দাদি ও বাবা আমায় দেখিয়ে দেয় কিভাবে রান্না করবো, ও সকল কাজ করবো.. কিন্তু কেউ কখনো কোন কাজে বা অন্য কিছুতে হেল্প করেনি,
🌺আমি যেভাবে পারতাম রান্না করতাম কিন্তু বাবা কিছু বলতো না, আমি সকালে ভোরে উঠে রান্না করে মসজিদে পড়তে যেতাম ছোট বোনকে নিয়ে, আবার মসজিদ থেকে এসে গোসল করে স্কুলে যেতাম তবে, মাঝে মাঝে স্কুল বা মসজিদে যাওয়া মিস হত, এভাবে চলতে থাকে, ২/১ মাস পর আবার বাবা মাকে নিয়ে আসে, কিন্তু ঝামেলা আর শেষ হয়না এভাবেই চলতে থাকে তার যাওয়া ও আসা, তবে ঐ মহিলার ঘরে আবারো আরেকটা ছেলে হলো এভাবে ৩টা ছেলে হলো ঐ মহিলার, কিন্তু ঐ মহিলাকে আমরা কখনো দেখিনি বাড়িতে আনেনি, তবে আমার মা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো তাহাজ্জুদ পড়তো ও সব সময় কোরআন তেলাওয়াত করতো,এবং নামাজে বসে অনেক কান্না কাটি করতো একটা ছেলে সন্তানের জন্য, অবশেষে আল্লাহ আমার মায়ের দিকে তাকিয়েছে আমার মায়ের ইচ্ছে পুরন করেছে, আমার মায়ের ছেলে হলো এই নিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ, বাবা ও আমরা অনেক খুশি, আবার আমাদের পরিবারের মনে হলো শান্তি ফিরে এসেছে, কিন্তু সেটাও বেশি দিন টিকলনা ঐ মহিলা তার ৩ ছেলেকে আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে এসে চুরের মত করে ফেলে রেখে চলে যায়, কেও বলতে পারেনা জানেনা ... পরে মা এদের ঘরে তুলে ও দেখা শুনা করে আমাদের মত করেই, কখনো তাদের মায়ের অভাব বুজতে দেয়নি,কিন্তু ফুফুরা নানা ঝামেলা করে এইসব নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ও মা আমাদের সবাইকে রেখে চলে যায়,কিন্তু এখন এতজন মানুষ আমি কিভাবে সামলাবো....
তখন আমার জীবন টা মনে হলো শেষ হয়ে গেছে
কিন্তু আমি শেষ হতে দেইনি সবাইকে মায়ের মত দেখা শুনা করতাম, রান্না বান্না সকল কাজ কর্ম করতাম,সবাইকে গোসল করিয়ে দিতাম স্কুলে নিয়ে যেতাম, আমি কখনো আমারা যে সত ভাই বোন এক সাথে আছি এমনটা কখনোই মনে করতাম না...., এবং আমি তার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যেতাম, অনেক কষ্ট করেছি রাতে পড়তে বসে কান্না করেছি, আমার পড়ালেখায় মন বসতো না তাও ২/১ ঘন্টা পড়তাম,কিন্তু আমার বাবা আমার সকল চাওয়া পাওয়া পুরন করতো, সব কথা শুনতো কিন্তু মাকে এনে দিতো না...., এমন সময় আমার এস এস সি পরিক্ষা সামনে গনিয়ে এলো, তাই বাবাকে বলি যেভাবে পারো মাকে এনে দাও নয়তো আমি পরিক্ষা দিবোনা,পরে মাকে বাড়িতে নিয়ে এলো, কিছুদিন পরে আমার পরিক্ষা শুরু হয় কোন রকমে এসএসসি পরিক্ষায় পাশ করি,.... বাকি অংশ আরেকদিন শুনাবো আমি আর লিখতে পারছিনা এতটুকু লিখতে গিয়ে দুচোখের জল গড়িয়ে পরছে...
আর অতীতের সৃতি গুলো খুব মনে পড়ছে...,
🌺🌺তবে আমি কখনো হাল ছাড়িনি,ধৈর্য্য ধারণ করে সত কষ্টেও সকল কাজ কর্ম করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি, কখনো হতাশ হইনি, কখনো ভেঙে পরিনি,শক্ত হাতে সব সামলিয়ে গেছি,এগিয়ে গিয়েছি সামনের দিকে.....।
স্যার এর সেশনের সাথে আমার জীবনের এই অংশটুকু অনেকটা মিল আছে,তাই ধৈর্য্য ধারণ করে লেগে থাকতে হবে ইনশাআল্লাহ একদিন জয় হবেই
মানুষ বলতেই ভুল, তাই আমারো ভুল হতে পারে, আমার লিখায় কোথায়ও কোন ভুল ত্রুটি হলে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, এবং সবার সহযোগিতা কমনা করছি.....,
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৫
Date:- ০৯-১০/১২/২০২১ইং
🌹 রোজিনা আক্তার
🌹 ব্যাচ নংঃ ১৬
🌹রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৭৬৫৩৩
🌹 জেলাঃ সিলেট, জাফলং
🌹 আমার এফবি আইডির নাম হচ্ছে, Rehnuma 🌹Jannat...https://www.facebook.com/rehnumajannat.rehnumajannat