আমার নিজের গল্প
🌺 আজ আপনাদের সাথে বলবো আমার নিজের গল্প।
🌹শৈশবটা কেটেছে একেবারে গ্রামের পরিবেশে। ছোট বেলা থেকে ছিলাম বেশ চঞ্চল। কোথাও স্থির থাকা আমার একদম পছন্দের ছিল না।বাবা গ্রামের জমিদার ছিল কিনা আমি জানিনা। তবে প্রায় ১০০ বিঘার মত জমি ছিল।আমার মনে আছে বাবা মহিষ দিয়ে জমি চাষ করাতো। বাবা সরকারি চাকরি করতেন।যৌথ পরিবারে বেশ আদরেই বড়ো হয়েছি।
🌹আমি যখন পঞ্চম শ্রেণি পাশ করি তখন বাবা আমাদের পড়াশুনার জন্য থানা প্রোপারে কলেজের কাছে জমি কিনে বাড়ি করে আমাদেরকে নিয়ে চলে আসেন গ্রাম ছেড়ে।
🌹ষষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি করানো হয় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়।এর পর থেকে কোন দিন পড়াশোনার জন্য আমার মাকে আমাকে বলতে হয়নি পড়তে বসো।S.S.C পরীক্ষা দিলাম কিন্তু মনের মতো রেজাল্ট করতে পারিনি। ১০ নাম্বারের জন্য স্টার পেলাম না। H.S.C পরীক্ষার পর ভর্তি হলাম রসায়নে অর্নাসে।মাস্টার্স শেষ করলাম ২০০৫ সালে।
🌹জীবনের প্রথম চাকরি শুরু করলাম কলেজের প্রভাষক হিসাবে। কিন্তু বেশিদিন করা হলোনা চাকরিটা।প্রয়োজনের তাগিদে ঢাকা আসতে হলো।ঢাকা এসে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি জীবন শুরু হলো।
🌹চাকরি বেশ ভালোই চলছিল। ২০০৭ সালে আমার কোল আলোকিত করে চলে আসলো আমার প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান হবার পরও চাকরি চলে।আসলে পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে মেয়েদের চাকরি করাটা কঠিন হয়ে যায়।এমন সময় সিদ্ধান্ত হলো আমার মা এসে ছেলেকে দেশের বাড়ি নিয়ে যাবে।আর আমি চাকরি করবো।আমি যখন অফিস থেকে আসতাম তখন মনে মনে ভাবতাম আজ মাকে ছাদে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।তাহলে আমার ছেলেকে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে হবে না। বাসায় এসে যখন মার মুখের দিকে তাকাতাম তখন মনে হতো এইতো আমার জান্নাত। আমার জান্নাতকে কি করে মেরে ফেলবো।
🌹২০১০ সাল পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে চাকরি চলে।২০১১সালে চলে আসে আমার দ্বিতীয় সন্তান। এরপর আর চাকরিটা করা সম্ভব হয়নি।চাকরি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে ছেলেদের জন্য। আমার মনে হয়েছে একজন মা শুধু পারে সন্তানের জন্য নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে।
🌹চাকরি ছেড়ে ছেলেদের নিয়ে বেশ ভালোই আছিলাম।দেখতে দেখতে সংসার জীবনের ১৫টা বছর কেটে গেল।সংসার জীবনে কতোটা সুখী ছিলাম তা না হয় নাই বা বললাম।
🌹হঠাৎ করে নেমে আসলো এক কালবৈশাখি ঝড়।এক ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল আমাদের জীবন। চলে গেল Husband এর চাকরিটা।আজ ১৮ মাসে বুঝতে পেরেছি কষ্ট কত প্রকার।খাবারের কষ্ট ছোট ছেলেটা একদম করতে পারে না।একদিন সকালে খেতে দিয়েছি।খাচ্ছে না বলে ওর বাবা ওর পিঠের উপরে এমন ভাবে মেরেছে যে আমার ১০ বছরের ছেলে নামাজে ঠিকমতো রুকু–সেজদাহ করতে পারনি ।পরে C.R.Pতে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।
🌹এরই মাঝেই শুরু হলো শরীরের অসুস্থতা।ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার আলট্রোসনা ও এন্ডোসকপি করতে দিল।ধরা পরলো গলব্লাডারে পাথর ও গ্যাসট্রিক আলসার।
🌹এবার আসি এই প্লাটফর্মে কিভাবে যুক্ত হলাম।যখন জীবনটা ঘোর অন্ধকারের ভিতরে নিমজ্জিত ঠিক সেই সময় ইউটিভিতে ওয়ারি জোনের নার্সিন আপুর লাইফ ভিডিও চোখে পড়ে। আপুর সাথে ঐ দিন রাতেই কথা বলি। আপু আমাকে ভালোবাসার প্লাটর্ফমে যুক্ত করিয়ে দেন।আমাকে বলেন আপু আপনি এখানে লেগে থাকেন। কিছু একটা করতে পারবেন।
🌹আমি যখন ক্রিস্টালের পর্দা বানাতে বসি তখন ছোট ছেলেটা আমার সাথে পর্দা বানায় আর বলে আম্মু তোমার এই পর্দাটা সেল হলে আমাকে স্কুলের জুতা কিনে দিবে।
🌹গত ২৪/১১/২১ তাং ছেলেদের স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়।আমার কাজের জন্য ছোট ছেলেকে পরীক্ষার হলে দিয়ে বের হতে হয়। ২৭/১১/২১তাং ওদের পরীক্ষা ছিল সেই দিন ছিল ওয়ারী জোনের ১০০ তম ফিজিকাল মিটআপ। ইনায়া ইসলাম বৃষ্টি আপুর দাওয়াতে ওখানে যাওয়ার জন্য যখন রেডি হই তখন ছোট ছেলেটা এসে বুকের উপর মাথা দিয়ে বলে আম্মু তুমি যেওনা।আজ আমার অঙ্ক পরীক্ষা। ওকে বুঝিয়ে আমি চলে যাই।আর বলে যাই আমি বিকেল ৫টার ভিতরে চলে আসবো।প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওদের চা আর টোস্ট দেই।ঐ দিন ছোট ছেলেটা চা তৈরি করে নিয়ে বসে আছে আমি আসবো তার পর আমার সাথে চা খাবে।গাড়িতে ওঠার পর মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়।আমার সাথে ওদের আার কোন যোগাযোগ হয়নি।আমার আসতে রাত ১০ঃ৩০ মিনিট বেজে যায়।এসে দেখি আমার ছোট ছেলেটা সারাদিন না খেয়ে বসে আছে।বাসায় আসার পর ছোট ছেলেটা বলে আম্মু রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম তারপর ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে বলতাম আমার আম্মুকে পাওয়া যাচ্ছে না।আম্মুর মোবাইল নাম্বার ট্যাক করে আমার আম্মুকে খুঁজে বের করেন।এভাবে চলছে আমার উদ্যোক্তা জীবন। আমার জন্য ও আমার ছেলেদের জন্য দোয়া করবেন। আমি যাতে আমার সংগ্রামী জীবন নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারি। আমার বড় ছেলেটা স্যারকে অনেক পছন্দ করে। আমার ছেলেদের জন্য দোয়া করবেন যাতে ওরা স্যারের মতো অার্দশ ও একজন ভালো মানুষ হিসাবে নিজেদেরকে গড়তে পারে।আর আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন ও পাশে থাকবেন যেন আমি আমার বিজনেসটা রানিং করতে পারি। আমার এই বিজনেস দিয়েই যেন আমি আমার অপারেশন করতে পারি।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৫
Date:- ০৯-১০/১২/২০২১ইং
👉🏻আনজুমানারা কাকলি
👉🏻ব্যাচ নং-১৫
👉🏻রেজিস্ট্রেশন নং- ৭৪০৩৪
👉🏻রক্তের গ্রুপ O-
👉🏻নিজ জেলা- বাগেরহাট
👉🏻বর্তমানে থাকি- কলেজ গেট, টঙ্গী, গাজীপুর