জীবনের পাতা থেকে একটুকরো স্মৃতি
"নিজে কিছু করবো, নিজের পায়ে দাঁড়াবো!!" বলতে পারেন সাবলম্বী হওয়ার একটা ইচ্ছা থেকে ২০১৮ এর শেষের দিকে আমি ঘরোয়া পরিবেশে স্বামীর কাছ থেকে অল্প পুজি নিয়ে কাপড়ের বিজনেস শুরু করি।
বিজনেস বেশ ভালোই চলছিলো। উরা-ধুরা বিক্রি করছি। একদিন বিক্রি না করতে পারলে মাথা নষ্ট। বাকিতে বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই আমাকে বিজনেসের শুরুতে বলেছে বাকি দিতে হবে, না হলে বিক্রি হবে না। কারণ একটাই এখানে ক্রেতা সব মহিলা। এদের হাতে সব সময় টাকা থাকে না তাই তারা বাকিতে নিতো আস্তে আস্তে টাকা পরিশোধ করে দিতো। আপনাদের বলে রাখি আমি আবার বেশ উদার মনা । কেউ বাকি চাইলে না করতে পারতাম না। কত টাকার বাকি দিলাম সেটা আমার কাছে ব্যাপার মনে হতো না; কত বিক্রি করলাম? এটা আমার কাছে মূখ্য বিষয়। এখান থেকে শুরু আমার বিজনেসের ভাঙ্গন।
👉এখানে আমার ভুল ও শিক্ষাঃ
১.বাকিতে পণ্য বিক্রি করা
২.ঠিক মত বাকি আাদায় না করা
৩.বেশী আবেগী বা অধৈর্য্য হওয়া।
🌺আরেক দিন বলবো এই ব্যর্থতা থেকে কিভাবে @zahin style এর যাত্রা শুরু। 🗯️
💥💥💥💥💥💥💥💥
🌺এবার আসি মূল ঘটনায়ঃ
২০১৯ এর শেষের দিকে চিনে প্রথম করোনার শুরু। আসলে আমরা ভাবতেই পারিনি এটা আমাদের দেশেও আসবে।আমরা সবাই যেটা ভেবেছি "এটা চিনের পাপ, চিনের ওপর খোদার অভিশাপ।" আমরা কিন্তু সাধু সন্যাসি! কোন পাপই যেন করতে পারিনা!! যাই হোক এসব ঘটনা আমরা সবাই জানি এই নিয়ে আলোচনা না করি।মার্চ এর ২৬ তারিখ থেকে লকডাউন শুরু হলো আমাদের দেশে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ তার সাথে বন্ধ হলো আমার স্বপ্ন @Zahin Style এর।
🌺 ২০২০ সালে রমজানের ঈদ আমার পরিবার নিয়ে ঢাকাই ছিলাম। যেহেতু লকডাউন ছিলো তাই আর বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠে নি। চাঁদ রাতে আল্লাহ তাআ'লা আমাদের ভালোবেসে উপহার সূরুপ দান করলেন অসুস্থতাঃ আমার স্বামী চাঁদ রাতে থেকে জ্বরে আক্রান্ত হলেন। ইদের একটা! দিন সারাটা দিন জ্বরে বিছানায় পরেছিলেন। তার পরের দিন থেকে শুরু আমার জ্বর।তখন পরিস্থিতি এমন জ্বরকে মানুষ যে ভাবে ভয় পায় বাঘ কেও মনে হয় এমন ভয় পায়নি। যথারিতি আমরাও ভয় পেয়ে গেলাম। আমরা ডিসপেনসারিতে গিয়ে চিকিৎসা নিলাম। না আমরা কেউ সুস্থ্য হচ্ছি না ভয় আরও বেড়ে গেলো টেনশনে খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আপনাদের বলে রাখি যেহেতু আমি বিজনেস করি সেই সুবাদে অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছে। অনেকেই আমার অসুস্থতার মধ্যে আমার বাসায় আসা যাওয়া করতো। সবাই কিন্তু জানতো আমি অসুস্থ কারন আমি বসে কারো সাথে কথা বলতে পারতাম না শুয়ে শুয়ে কথা বলেছি। এভাবে আমারদের অসুস্থতার ক্রমেই বাড়তে থাকলো আমি ওঠে রান্না করবো এমন পরিস্থিতি ছিলো না। আবার হোটেল সব বন্ধ। শুরুর দিকের লকডাউনের অবস্থার কথা সবারই জানা। কেমন পরিস্থিতি ছিলো? আমি আমার ছেলেদের ২ দিন শুধু চানাচুর মুড়ি ও বিস্কুট খেতে দিছি। আমার সোনার টুকরো ছেলেরা তাই খেয়েছে। এখনো ওদের শুকনো মুখের কথা মনে হলে চোখের কোনে জল জমে যায়। টাকা থাকলেও সব সময় টাকা কাজে আসে না। আশেপাশে এতো মানুষের সাথে সম্পর্ক কিন্তু ঐ সময় ভয়ে কেউ খবরটুকুও নেয়নি। হয়তোবা আমারাও নিতাম না বা যেতাম না।
কথায় আছে,
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়।
সেই ভয়টায় সত্যি হলো। শুরু হলো সময়ের সাথে যুদ্ধ।
ছেলেদের খাবার দিতে পারছিনা দেখে আমার বাবা আপ- ডাউন গাড়ি রিজার্ভ করে আমার ছেলেদের নিতে আসে। ঐদিনই প্রথম আমার বাবাকে বাসা থেকে খালি মুখে যেতে দিলাম। মনে হলে আজও চোখ ছলছল করে। আমার বাবা আমার ছেলেদের নিয়ে যাওয়ার পর আমারা সিদ্ধান্ত নিলাম ডাক্তার দেখাবো। আমরা বিকেলে ডাক্তারের কাছে গেলাম পপুলারে। সেখানে ডাক্তার আমাদের দেখেই বললো আমাদের করোনা পজেটিভ!? তারপরও আত্মার তৃপ্তির জন্য কিছু টেস্ট করানো হলো। শারিরিক অবস্থা খারাপ দেখে আমাদের হসপিটালে ভর্তি হতে বলেন। ডাক্তারের কথা মত আমরা ভর্তি হলাম। কিন্তু হসপিটাল থেকে মনে হচ্ছিল বাসায় গেলে আমরা সুস্থ্য হবো। তাই আমার বাসায় আসলাম। আমাদের রিপোর্ট তখন পজেটিভ।
আমারা আমাদেরকে এক রুমে বন্ধি করে দিলাম। বাসায় আর কোন রুম ব্যবহার করলাম না। আমাদের অসুস্থার খবর শুনে আমার দেবর আমাদের কাছে আসে। ঐই সব সেবা করে আমাদের। এর মধ্যে সবাই জানে আমার অসুস্থ কিন্তু কি হয়ছে, তা জানে না! আমাদের ভুল হলো সত্যটা (করোনা পজিটিভ) সবাইকে বলা। মিথ্যেও তো বলতে পারতাম। আমি আসলে ভেবেছিলাম সবাই আমার কাছে আসা-যাওয়া করে সত্যিটা বলে দেওয়া দরকার। যাতে তারা সাবধানে থাকতে পারবে। যাইহোক অন্যের ভালো করতে গিয়ে নিজেদের বাশ দিলাম। আর শুরু হয়ে গেলো অমানবিকতা ও মানুষ চেনার পালা। বাড়িওয়ালা থেকে শুরু করে সবাই আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। অসহ্য হয়ে ওঠে চারদিকের পরিবেশ। মানসিক চাপে ও অসুস্থতার টেনশনে মনে হয়েছে আমি আর বাঁচবোনা। সুস্থ হলেও ফিরে পাবোনা স্বাভাবিক জীবন। আমাদের সুস্থ হওয়ার জন্য তো আর কিছু না হলেও তো মেডিসিনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার জন্যেও আমার দেবার বাইরে যেতে পারিনি। ওকেও বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো আমাদের so called প্রতিবেশি।। যদি তারা সহযোগিতা করত ও বলতো আপনাদের যা লাগে আমার দিবো আপনার ঘরে থাকেন।তাহলে মনে হয় এতটা যন্ত্রণা আমাদের হতনা। বাড়ি ওয়ালা ভেবেছিলো আমাদের করোনা হয়েছে আমরাতো মারা যাবো তাহলে তার বাসা বাড়া কে দিবে? কিভাবে পাবে? অনেক চিন্তায় পরে গিয়ে ছিলো! সে কারনে বারংবার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ও বাড়ার জন্যে চাপ দিচ্ছিলেন।
আল্লাহর রহমতে আমার সুস্থ হয়ে সুন্দর ভাবেই বেঁচে আছি। অনেক ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়েছিলো। আমি অবাক হই এতো ধৈর্য্য কোথায় পেলাম। আসলে আল্লাহ তাআ'লা আমাকে ঐ মুহূর্তে অনেক ধৈর্য্যশীল করেছিলেন।এর মধ্যে অনেক কষ্টের কথা স্কিপ করে গেলাম অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই অনেক সময় নিয়ে নিলাম।
এখান থেকে আমার শিক্ষাঃ
১. নিজের আত্মীয় ( বাবা-মা, শশুর-শাশুড়ী, ভাই-বোন,দেবর-ননদ) সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
২.অন্যের ভালোর সাথে নিজের ভালোর কথাও চিন্তা করা।
৩.সকল পরিস্থিতিতে ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করা।
৪.ক্ষমা করার মানসিকতা থাকা।
এখন কিন্তু সেই প্রতিবেশী আর বাড়িওয়ালা ও আমি সবাই মিলে মিশে একাকার।
আলহামদুলিল্লাহ! আবার শুরু হলো পথ চলা, নতুন গল্পের----
🌺 সবাই কে অনেক ধন্যবাদ এতো সময় নিয়ে ধৈর্য্য নিয়ে আমার লিখাটা পড়ার জন্য।
আপনারা কিন্তু পরিক্ষায় পাশ! "ধৈর্য্যের পরিক্ষায়"
#moral of the lesson#
ধৈর্য্যের চেয়ে বড় কোন গুন নেই;
ক্ষমার চেয়ে মহৎ কোন কাজ নেই।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৬
Date:- ১২/১২/২০২১ইং
নাসরিন সুলতানা
পেইজঃ Zahin Style
ব্যাচঃ১১
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ঃ৩৪৮১৪
জেলা টাংগাইল
বর্তমান অবস্থান উত্তরা।