আব্বা আম্মা চিন্তা করেছিলেন আমাকে সৌদি আরব পাঠাবেন
🍀🍀 আমার জীবনের গল্প 🍀🍀
🍀পরিচয়ঃ আমি মোঃ নাজমুল করিম মনির, আমরা পাঁচ ভাই একবোন, বাবা মোঃ নবী হোসেন
🍀জন্মস্থানঃ আমার জন্ম বি,বাড়ীয়া জেলার নাসির নগর থানাধীন চাতলপাড় ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে। আতি সাধারন একটা পরিবারে জন্ম,আমার আব্বা টি এন্ড টি ওয়ার্কশপে সাধারন একটা সরকারী চাকুরী জীবী ছিলেন।
🍀আমার ছোটবেলাঃ প্রতিটা মানুষ যেমন করে একটা পরিবারে বেড়ে উঠে ঠিক তেমন করেই আমার বেড়ে উঠা তবে আমার মধ্যে একটু ভিন্নতা ছিল। ছোট বেলায় দেখেছি আমার মা কত কষ্টকরে আমাদের লালন পালন করেছেন। একটা সময় এমনও হয়েছে আব্বু বাড়িতে না থাকার কারনে বাজার করতে না পারার কারনে আমরা অনেক সময় শুধু মরিচ আর পিয়াজ এর ভাংগা ভর্তা দিয়ে খাবার খেতে হয়েছে তাই ছোটবেলা থেকেই ঝাল খাওয়াতে অভ্যস্ত এবং পছন্দও করি। ছোট বেলা থকেই চার পাশের মানুষদের কাছ থেকে অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের স্বীকার হতে হয়েছে
🍀কৈশোর এবং ছাত্র জীবনঃ ছত্র জীবনে অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে কাটলেও কখনো পড়াশুনায় পিছু হটিনি সব সময় ক্লাসের পড়াটা সঠিক ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সব সময়ই ক্লাসে দ্বিতীয় স্থানটা ধরে রেখেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার একটা ভুলের কারনে আমার আব্বু আমাকে পিটানোর জন্য তাড়া করেছিলেন যদিও জীবনে কখনো আব্বু গায়ে হাত তুলেননি আমাদের কারো উপর সেদিনই প্রথম এমনটা করেছিলেন। ভুলটা ছিল সেদিন অনেক বড় আমি রাগ করে আমার সমস্ত বই পত্র টেবিল থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম উঠোনে আমর মা সেদিন বই গুলো কুড়িয়ে আবার টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন। আমার একটা অভ্যাস ছিল কয়েকটা গাইড বই পড়ে সেখান থেকে সব কটা গাইড বই থেকে পড়ে একত্র করে নোট তৈরী করে পড়তাম সে সময় ফিনানশিয়ালি কিছু প্রবলেম থাকার কারনে গাইড কিনতে পারিনি তাই জিদ করেছি বহুবার। আমার মা তখন উনার কানের দুল দুটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন আমার জন্য। আমার গাইড কিনা হলো পড়াশোনা শুরু হলো SSC পাশও করলাম ভাল একটা রেজাল্ট নিয়ে। পরীক্ষার আগে আমার আব্বা আম্মা চিন্তা করেছিলেন আমাকে সৌদি আরব পাঠাবেন সে জন্য বাড়ির কিছু অংশ বিক্রি করেছিলেন বাট আমি রেজাল্টের আশায় কখনো হা অথবা না কোনটাই বলিনি ভেবেছিলাম ভাল রেজাল্ট হলে ভাল একটা কলেজে ভর্তি হবো সেই মাফিক বি,বাড়ীয়া সরাইল উপজেলার অরুআাইল আব্দুসসাত্তার ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হই। দুই বছর ভালই চলছিল হঠাৎ আবার পড়াশুনার মধ্যে বাধা আসে পরে ফরম ফিলাপের আগে ছেড়ে চলে যাই ঢাকাতে।
🍀জন্মস্থান থেকে কিশোরগঞ্জ স্থানান্তরঃ ২০০০ সাল সম্ভবত মে জুন মাস আমরা বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় স্থানান্তর হই। আমার আব্বা আমার কিছু সংখ্যক আত্মীয় স্বজন এর কাছ থেকে আঘাত এবং অবহেলা পেয়ে অনেক কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলেন, যদিও প্রথমে আমরা এগুলো বুঝিনি কিন্তু পরর্তী সময়ে আমার আম্মার কাছ থেকে সব কিছু জানি। তারপর থেকে আমরা ইটনাতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে থাকি,, কয়দিন আগে আঙ্গুর কিনতে গিয়ে একটা ভালো শিক্ষা লাভ করলাম দোকানদার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আঙ্গুরের কেজি কত দোকানদার বললেন ৩৫০ টাকা পাশে দেখলাম গুচ্ছ থেকে ঝরে যাওয়া কিছু আঙ্গুর একটি বক্সে রাখা আছে জিজ্ঞেস করলাম এগুলো কেজি কত করে বিক্রি করতেছে দোকানদার বললেন ১৫০ টাকা তো এগুলোর দাম এতো কম কেনো,,? দোকানদার বললেন এগুলো খারাপ না,তবে এগুলো শুধু গুচ্ছ থেকে ঝরে গিয়েছে তাই এগুলোকে তো আর বেশি দাম দিয়ে কেউ নিবে না তাই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছেআমি তখন বুঝে গেলাম যে নিজের সংগঠন, নিজের সমাজ এবং নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমাদের মূল্যও অর্ধেকের থেকেও কমে যায়,,। কি আর করা মেনে নিয়েছি আব্বুর কষ্টে ভরা গল্পটাকে জেনে।
🍀আমার চাকুরী জীবনঃ ২০০২ সাল আমি প্রথম চাকুরী নেই রিসেন্ট গ্রুপ নামে এক গার্মেন্টসে বেতন মাত্র ১৬০০শ টাকা। নাইট শিফটে কাজ করতাম। মাঝে মধ্যে মধ্যরাতে টিফিনের সময় ঢাকা শহরের ফাকা রোডে রোড লম্পের আলোতে একা একা হাটতাম আর গুনগুন করে চলতাম মনে কষ্ট ছিল পড়াশুনা কেন করতে পারলাম না আমার সুন্দর জীবনটা কি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে? এসব ভেবে আমি অনেকবার কান্নাও করেছি। দেড় বছর কেটে যায় এভাবে পড়ে যখন গাজীপুরে শিফট হই ওয়ান কম্পোজিটে সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর নতুন করে ভাবনা শুরু হয় মনে ভাবতে থাকি আমি যে ভাবে জীবনটাকে সামনে নিচ্ছি সেভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমি ভাল কোন ফেমেলীতে বিয়ে করতে পারব না তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশ চলে যাব । বিদেশ যাব কিন্তু পাসপোর্ট তো করা লাগবে ফেমেলীতে জানানোর পর বাধা আসলো কেও রাজি হচ্ছিলনা। অবশেষে আমার বোনকে রাজি করালাম। আমার আপু আমাকে ভীষন ভালবাসে আমার কান্না দেখে অনুমতি দিল পাসপোর্ট করার ।
🍀প্রবাস জীবনঃ পাসপোর্ট হাতে পাবার পর জমাদিলাম মরিশাস যাব কাজও হয়ে গেল। তখন সম্পুর্ন টাকা আমার নিজের রোজগার করা টাকা। আমি আমার আব্বা আম্মাকে কখনো টাকার জন্য প্রেশার দিতামনা বুঝতাম উনাদের কথা। আমি আমার আব্বা আম্মাকে খুব ভীষন ভালবাসি শুধু অনুমতিটা চেয়েছিলাম শুরুতে পাইনি। ২০০৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারিতে পাড়ি দিলাম স্বপনের প্রবাস জীবনে। চলে গেলাম মরিশাসে। সেখানে যতদিন ছিলাম একটা দিনও বাদ পড়েনি আব্বা আম্মার সাথে ফোনে কথা বলা। এমনও সময় গিয়েছে গভীর রাতে আমার আব্বা আমার কথা স্মরন হতেই আমাকে কলদিতেন। আমারও যখন ঘুম ভেঙে যেত আমি কলদিয়ে কথা বলতাম। প্রায় চারটা বছর পার করলাম তারপর কম্পানির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে চলে আসতে হলো। দেশে ফেরার পর আমার আব্বা আমাকে বিয়ে করানোর জন্য উঠে পরে লাগলো আমি রাজি না থাকায় আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলো আমি বিয়ে করার জন্য রাজিও হয়ে গেলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সবার বিয়েতে বাবা সঙ্গে যায় বাট আমার বিয়েতে আমার বাবা যেতে পারেন নি কারন আমার বাবার হার্টে সমস্যা ছিল সেদিন আব্বার সমস্যাটা বেড়ে যাওয়াতে যেতে পারেন নি। আর তাই আমি বরের পোশাক গায়ে জড়ানোর আগে অনেক কেদেছিলাম কারন আমি যে আমার বাবাকে খুব ভীষন ভালবাসি। আমাকে আমার বোন সহ সকল আত্মীয় স্বজন বুঝিয়েছিলেন। অবশেষে বিয়ে হলো নিজ এলাকাতেই। বিয়ের আগের কথাটা না বললেই নয় আমি যখন মরিশাস থেকে দেশে আসি তখন আমি ছোট একটা কনফেকশনারি দোকান দেই তখন ব্যবসার বিষয়ে আমার কোনই অভিজ্ঞতা ছিলনা তারপরেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।বিয়ের পর আমার অবস্থান খারাপের দিকে যেতে থাকে আমার এমনও দিন গেছে যে আমি বাজার করে এনে দিব সে টাকাটাও পকেটে থাকতোনা। বাট বাজার করে আনতে হতো কিন্তু আমার আব্বা আম্মাকে বুঝতে দিতাম না বাট আমার আম্মা সব কিছুই আন্দাজ করতে পারতেন আর তাই আমি যদি কখনো একা বসে থাকতাম আমার আম্মা আমার কাছে দাড়িয়ে থাকতেন গল্প জুরে দিতেনলতো মা প্রত্যেক মা তার নিজ সন্তানের সব কিছুই বুঝতে পারেন কোন কিছুই লোকানো যায়না। অবশেষে আবারও সিদ্ধান্ত নিলাম দোকান বিক্রি করেদিয়ে আবারও বিদেশ পাড়ি জমাব। অল্প টাকায় দোকান বিক্রি করে দিলাম। কিন্তু এই টাকায় বিদেশ যাব কি করে পরে ফেরেশতার মতন আমার দুলাভাই আমার পাশে দাড়ালেন। সমস্ত টাকা আমার দুলাভাই বহন করলেন চলে গেলাম ওমানে। আজ নয় বছর ধরে আছি ওমানে। প্রবাস জীবন একটা অভিশপ্ত জীবন এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে অনেক কিছু ভেবেছি অনেক দিকে ছুটে চলেছি কোন দিক পাচ্ছিলামনা। যখন আমি ইউটিভি একটা লাইভ দেখি তখন প্রিয় মেন্টর ইকবাল বহার জাহিদ স্যার এই নিজের বলার মতন গল্প ফাউন্ডেশন নামটা বলেন তখন থেকে ফলো করি আজ প্রায় এক বছর ধরে বাট রেজিষ্ট্রেশন করিনি। গত সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ আমার বাবা মারাগেছে আমার অভিশপ্ত প্রবাস জীবন আমার বাবাকে দেখতে দেয়নি। হারিয়ে ফেলেছি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ আমার প্রানের স্পন্দন আমার বাবাকে। এর কিছুদিন পরেই দেখি নিজের বলার মতন একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর ১৬তম ব্যাচ এর রেজিষ্ট্রেশন চালু হয়েছে। তখনই রেজিষ্ট্রেশন করে ফেললাম।
🍀রেজিষ্ট্রেশন সম্পূর্ণ করার পর 🌹
কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, কিভাবে কি করবো।কার সাথে যোগাযোগ করবো, কি করবো,সেশন কিভাবে পাব,জেলা মেসেঞ্জারে কিভাবে যুক্ত হবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।তারপর একদিন সম্মানিত মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এক আপুর সাক্ষাৎ কার নিচ্ছিলেন আমি ঐ আপুর একটা পোষ্ট দেখলাম উনার প্রোফাইলে গিয়ে মেসেঞ্জারে নক দিলাম রিপ্লে পেলাম এবং বিস্তারিত বললাম। উনার সহযোগিতায় আমাকে যুক্ত করা হলো জাগ্রত কিশোরগঞ্জ জেলা মেসেঞ্জার গ্রুপে আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের প্রিয় জাহিদ হাসান ভাই আমাকে যুক্ত করে নিয়েছেন কৃতজ্ঞতা ভাইয়ার কাছে। আর যার সহযোগিতায় আমি আজ যুক্ত হলাম তিনি হলেন আমাদের প্রিয় বোন বরগুনা জেলার মানসুরা রিনা আপু আজ আমি আপুর কাছে চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ আপুকে আরো অনেক বড় করুক মহান হৃদের অধীকারী আপুকে যেন আল্লাহ সব সময় সুস্থ রাখেন সেই দোয়া করি।আলহামদুলিল্লাহ এই ফাউন্ডেশন আমাকে দিয়েছে বিশাল বড় একটা পরিবার যেখানে ভালবাসার কোন কমতি নেই, পেয়েছি ভালমনের ভাই ও আপুদের যারা প্রতিদিন দিচ্ছেন ভাল ভাল দিক নির্দেশনা।আমি সবার ভালবাসায় শিক্ত,।আমি আমার জীবনকে ভাল একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পেয়েছি প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের মতো একজন ভাল মানুষ , পেয়েছি ভাল মানুষ হওয়ার সঠিক দিশা। আজ আমি সত্যি অনেক আনন্দিত। আলহামদুলিল্লাহ এই প্লাটফর্ম এ যুক্ত হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মনের হতাশার কালো আধার টুকু কাটতে শুরু করেছে।এখন প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ জেলার অনলাইন সেশন চর্চা করে যাচ্ছি। আমার জীবনে প্রথমবার সেশন চর্চায় যুক্ত হয়েই উপস্থাপনা এবং হোস্টিং করার দায়িত্ব পাই এবং সফল ভাবেই সম্পন্ন করি তারপর থেকে বেশ কয়েকবার সফল ভাবেই উপস্থাপনা করি এবং প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। নিজের অলস সময়টা কাজে লাগাচ্ছি। এই প্লাটফর্ম থেকেই শিক্ষা নিয়ে এক বন্ধুর মতো ভাইকে নিয়ে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি প্রবাস থেকেই ছোট খাটো একটা কিছু করব নিজেকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাব তারপর প্রবাস জীবনের ইতি টানব ইনশাআল্লাহ । তার জন্য সকল ভাই আপু এবং আমার প্রিয় মেন্টর আমাদের স্বপ্ন দ্রষ্টা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের দোয়া চাই
🍀সবশেষেঃ আমি একজন ভাল মানুষ হতে চাই, আমি আমার নিজেকে নিয়ে যেতে চাই এক অনান্য পর্যায়ে যেখানে আমি আমার পাশাপাশি আমার পাশের আরেক ভাই বা বেকার বন্ধুকে সব দিক দিয়ে সহযোগিতা করে দিতে চাই, সফলতা মাধ্যমে বদলাতে চাই সবার জীবন। ভুনিকা রাখতে চাই সমাজ ও দেশের পরিবর্তনে। তাই সকলের দোয়া কামনা করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৬
Date:- ১২/১২/২০২১ইং
🖋️মোঃ নাজমুল করিম মনির
🏘️নিজ জেলাঃ কিশোরগঞ্জ
🖋️ব্যাচ নংঃ ১৬
🖋️সদস্য নংঃ ৭৭৮৯৫
✈️আমি একজন প্রবাসী
🏘️বর্তমান অবস্থানঃ ওমান