অবশেষে আমার পরিশ্রম সার্থক
আমার উদ্দোক্তা জীবন শুরু করেছি মাত্র কয়েকদিন আগে।
একদিন হটাৎ আমার খালাতো বোন কল করলো।
বোনঃ- কিরে কেমন আছো?
আমিঃ- আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো, তুই?
বোনঃ- ভালো, একটা কথা আছে।
আমিঃ- বল।
বোনঃ- আমি একটা ওড়নার ছবি দিবো সেই ডিজাইনটার মতো সেইম কাজ করে দিতে পারবি?
আমিঃ- আচ্ছা দে, দেখে যানাচ্ছি।
বোনঃ- মেসেজ চেক করে দেখ পাঠায়া দিছি।
আমিঃ- হুম করা যাবে,কিন্তু কার জন্য?
বোনঃ- আচ্ছা তাহলে এই কালারের সেইম ডিজাইন করে দিবি,আমার বান্ধুবির জন্য।
আমিঃ- কবে লাগবে?
বোনঃ- ১২ই নভেম্বর।
এখন বলবো আমার সেই ওর্ডারকৃত পন্য নিয়ে কিভাবে কাজ করে কাস্টমারের কাছে পৌছাইছি তা নিয়ে।
যেহেতু আমি নতুন উদ্দোক্তা সেহেতু অনেক বেশি মেটারিয়াল বা কাপড় কিছুই আনি নাই, তবে কেউ চাইলে এনে করে দিবো। ওড়নারে যে মেটারিয়াল লাগবে তা আমার কাছে সব নাই তাই তারপরের দিন চলে গেলাম চাঁদপুর। ওহ বলা হয় নাই আমি যে উদ্দোক্তা হিসেবে কাজ করি আমার বাবা জানে না তেমন। তাই বাবাকে না বলেই গেলাম,বাবা ছাড়া সবাই জানে। চাঁদপুর গিয়ে কাপড় এবং মেটারিয়াল কিনলাম, যদিও দাম অনেক বেশি দিয়ে কিনতে হইছে তবুও জরুরি লাগবে এজন্য কিনা। কাজ প্রায় শেষ পর্যায় যখন তখন খালাতো বোন কল দিয়ে বল্লো কাপড়ের কালার এটাতে হবে না। গেলাম কি বিপদে পরে এখন কি করবো? বোন এখন যেই কাপড়ের কথা বল্লো তা আমার আশেপাশের কোথাও পেলাম না খুজে এবং কি মেটারিয়ালও আরো লাগবে। বোন বল্লো আমি কাপড় কিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি তুই বাকিটা দেখ। এদিকে এক আপু কাজ করানোর জন্য মেটারিয়াল কিনতে গেছে তাই আপুকে বল্লাম আমার জন্য যা যা লাগবে সাথে নিয়ে আসতে। কাপড় কিনা হলো, মেটারিয়াল কিনা হলো কিন্তু আমার কাছে পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না কারন তৈলের দাম বৃদ্ধির জন্য সকল যান চলাচল বন্ধ করে দিছে। চিন্তায় পরে গেলাম কিভাবে সময় মতো কাস্টমারের হাতে পণ্য পৌছাবো? অনেকেরে নক করলাম যে সেই সময়টাতে ঢাকা থেকে আসবে কিনা? কেউ কেউ বল্লো আসবে কিন্তু আমার পণ্য আনতে আগ্রহী না। এখন শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা। যান চলাচল শুরু হলো মেটারিয়াল চলে আসলো শরীয়তপুর, আমি গিয়ে আপুর থেকে নিয়ে আসলাম। কিন্তু কাপড় তো আনা হলো না। বোনকে কল দিয়ে বল্লাম যেভাবেই হোক রাতের লঞ্চে পাঠানোর ব্যবস্থা কর,আমি লঞ্চে কথা বলে দিচ্ছি। সেই কথা সেই কাজ রাতের লঞ্চে পাঠিয়ে দিলো। এই প্রথম নিজেদের লোক ছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে কোন কিছু আনতেছি,সারারাত চোখে গুম নেই,রাত ৩.৩০ এ ঘাটের লোকের কাছে কল করলাম উনি বল্লো সকালে রাখবে। সকালে ভোরে রওনা দিলাম লঞ্চ ঘাটের উদ্দেশ্যে, রাস্তায় গিয়ে গাড়ি পাচ্ছি না দেখে হাটা শুরু করলাম। আর ওই লোকেরে বার বার কল দিচ্ছি যাতে আমি যাওয়ার আগে লঞ্চ ছেড়ে দিলে যেন কাপড় টা রেখে দেয়। গাড়ি না পাওয়াতে অনেক যায়গা হেটে যেতে হইছে তাই দেরি হয়ে গেছে। ঘাটে গিয়ে কল করলাম উনি এসে কাপড় আমার হাতে দিলো আমি নিয়ে ওনার হাতে কিছু টাকা ধরায়া দিয়ে চলে আসলাম। এনেই কাজ শুরু করলাম কিন্তু সমস্যা গিয়ে দাঁড়ালো অন্য একটা বিষয়, তা হলো হাতে সময় আছে ৩ দিন এর মধ্যে আবার আমি নির্বাচনে ডিউটি নিছি সেখানে যেতে হবে, ডিউটি শেষ হলে তারপরের দিন আবার পরিক্ষা। তার মানে হাতে সময় ১ দিন আর ১ দিনে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না। বলে না যে বিপদে পরলে কাউকে পাওয়া যায় না। বোনের সাথে কথা বলার পরে বল্লো ২ দিন দেরি হলে সমস্যা নাই। যেদিন কাজ শুরু করছি সেদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত ১ টা পর্যন্ত কাজ করে তারপরের দিন আবার ডিউটিতে চলে গেলাম। ডিউটি ছিলো ২ দিন, ডিউটি শেষ করে ছোট বোনকে পাঠিয়ে দিয়ে বল্লাম যে তুই গিয়ে যতোটুকু সম্ভব কাজ করিস আমি রাতে আসতেছি। পরিক্ষা শেষে রাত ৮.০০ টায় বাড়ি এসে সাথে সাথেই কাজে বসে গেলাম। তারপরের দিন কাজ সম্পন্ন করলাম। শেষ করে চিন্তা করলাম কুরিয়ারে পাঠালে সময় লাগবে,অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। আল্লাহ্ সহায় থাকলে যা হয়। আমার এক দাদি সেদিনই ঢাকা যাবে, শুনে দাদিকে বল্লাম পরে দাদি বল্লো ঠিক আছে নিয়ে যাবো তুই বলে দিস এসে নিয়ে যেতে। দাদি নিয়ে গেছে পরে সেখান থেকে আমার বোন গিয়ে আনছে। আলহামদুলিল্লাহ্ অবশেষে আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমি কিন্তু লাভের আশায় এই কাজটা করি নাই,শুধুমাত্র কমিটমেন্ট বজায় রাখার জন্য করেছি। কারন উপরের কথাগুলো থেকে অবশ্যই সবাই বুজতে পারছেন আমার কতোটা খরচ পরছে?
আমার লেখার মাঝে কোথাও কোন ভুল-ত্রুটি থেকে থাকলে সবাই ক্ষমা সুন্দর নজরে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন আমার জন্য দোয়া করবেন।
আল্লাহ হাফেজ।।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৬
Date:- ৩০/১১/২০২১ইং
জান্নাতুল ফেরদৌসী
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
টপ ২০ ক্লাবের সদস্য
সোশাল মিডিয়া ফিডব্যাক টীমের সদস্য।
ব্যাচঃ১৩
রেজিনং-৫৪৭১১
সখিপুর,শরীয়তপুর।
কাজ করছি শাড়ি, থ্রি-পিছ, নিজস্ব ডিজাইনে নিজের হাতেই কাজ করা ওয়ান পিছ(কামিজ) এবং কাজ করা হিজাব নিয়ে।
ওনার ওফ:- Dream's Target.