ফুটপাত থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প
Sayedur Rohman ডিগ্রী পাশ করে মাষ্টার্সে অধ্যায়নরত অবস্থায় প্রবাসে পাড়ি জমান। সৌদি আরবে কিছুদিন থাকার পর উন্নত জীবনের আশায় ছুটে যান ইউরোপের দেশ ইতালিতে। দু চোখে স্বপ্ন, বুক ভরা আশা ভালো একটি অফিসিয়াল জব করবে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতা যে এক জিনিস নয়, বিস্তর ফারাক এই দুয়ের মাঝে। ইতালিতে যাওয়ার পর সাইদুর রহমানের আর বুঝতে বাকি থাকে না, তিনি যে আশায় ইতালিতে এসেছেন তা এখন মোটেও সম্ভব নয় তবে তিনি স্বপ্নকে গালা টিপে মেরে ফেলেননি, মনের মাঝে অতি যত্মে লালন করেছে রেখেছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যিনি ডিগ্রি পাশের সার্টিফিকেট বহন করে একটি সুন্দর অফিসিয়াল চাকরির আশায় ইতালিতে এসেছেন তাকে এখন ফুটপাতে দোকানদারী করতে হবে।
যখন সাইদুর রহমান বুঝতে পারলেন এখন ফুটপাতে দোকানদারী করা ছাড়া কোন উপায় নাই তখন তিনি বিলম্ব না করে ফুটপাতে দোকানদারী শুরু করে দিলেন। তবে বুকের মাঝে কিন্তু স্বপ্নটি এখনো তিনি অতি যত্নে লালন করে যাচ্ছেন। তার বিশ্বাস কেবল তো নতুন আসলাম, কাগজ পত্রগুলো ঠিক হয়ে গেলেই একটি সুন্দর জব পেয়ে যাবো।
ইতালীর জ্বলন্ত আগ্নীগিরীর দ্বীপ শহর কাতানিয়ায় একটি পর্যটন এলাকায় ফুটপাতে তিনি একটি কার্টুনের উপর মেয়েদের কানের দুল , চুরি, ফিতা ইত্যাদী আইটেম বিক্রি শুরু করলেন। ফুটপাতে বিজনেস সাধারণত সব দেশেই নিষিদ্ধ ইতালিতেও এর বিপরিত নয়। পুলিশ ধাওয়া করলে সব মালামাল কার্টুনে ঢুকিয়ে দৌড় মারতে হয়। এভাবেই চলছে সাইদুর রহমানের ফুটপাতের ব্যবসা।
এভাবে কিছু দিন চলার পর সাইদুর রহমান খেয়াল করলেন তার অদুরেই একজন চাইনিস (চীনের নাগরিক) কি যেন বিক্রি করে তবে পুলিশ তাকে ধাওয়া করে না। তিনি খোজ নিয়ে জানতে পারলেন চাইনিস লোকটি এক ধরনের তার দিয়ে পুতুল, ঘোড়া, ঘড়ি ইত্যাদী আইটেম হাতে তৈরি করে এবং তা বিক্রি করে। এ ধরনের আইটেম হাতে তৈরি করে বিক্রি করলে পুলিশ কিছু বলে না। সাইদুর রহমান কৌশলে তার পিছু নিলেন এবং কোথা থেকে এই তার ক্রয় করেন এবং তৈরি করেন তা খুজে বের করলেন। এক পর্যায়ে তিনিও ঐ তার ক্রয় করে পুতুল, ঘড়ি, ঘোড়া ইত্যাদী পন্য হাতে তৈরি করে বিক্রি শুরু করলেন। এখন তার ফুটপাত বিজনেস কিছুটা নিরাপদ আগের মত পুলিশের ধাওয়া খেতে হয় না। কিছুদিন পর তিনি স্থান পরিবর্তন করে চলে গেলেন সমুদ্র পারে এখানে বেচাকেনা একটু বেশি। বেচাকেনা বেশি হওয়ায় লাভও বেশি। তবে বীচের তপ্ত বালু রোদ বাড়ার সাথে সাথে আরো বেশি উত্তাপ ছাড়তে থাকে। এই উত্তপ্ত বালুর মাঝে হেটে হেটে পন্য বিক্র করেন ডিগ্রি পাশ সাইদুর রহমান এবং স্বপ্ন দেখেন একটি অফিসিয়াল সুন্দর চাকরির।
এক পর্যায়ে তার কাগজ পত্র সব ঠিক হয়ে যায়। এখন তিনি একজন বৈধ প্রবাসী যদিও তিনি বৈধ পথেই এখানে এসেছেন কিন্তু কাগজ পত্র না থাকায় এতদিন ছিলেন অবৈধ। এখন অফিসিয়াল চাকরি পাওয়ার আশাটা মনের মাঝে আরো তীব্র হয়ে উঠে। তিনি সমুদ্র পাড়ে হাকারি করার পাশাপশি বিভিন্ন মাধ্যমে চাকরি খুজতে থাকেন। স্বপ্ন, আত্ম বিশ্বাস এবং প্রচেষ্টা থাকলে যে মানুষ সফল হন তার প্রমার সাইদুর রহমান। তিনি একটি সুন্দর চাকরিও পেয়ে যান।
সাইদুর রহমান এখন মহা খুশি কারণ তার স্বপ্ন এসেছে সত্য হয়ে। তপ্ত বালুর মাঝে হকারি করা ছেলে আজ একটি ভালো জব করছে। বেশ কয়েক বছর ভালোই চলছিলো তার চাকরি জীবন এর মধ্যে তিনি সন্ধান পান উদ্যোক্তা তৈরির অনলাইন প্লাটফর্ম "নিজের বলার মত একটা গল্প"র। প্রথমে তিনি না বুঝেই গ্রুপে জয়েন করেন তখন চলছিলো ২য় ব্যাচ। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারলেন এটি একটি উদ্যােক্তা তৈরির অনলাইন প্লাটফর্ম।
"চাকরি করবো না চাকরি দিবো" এই শ্লোগানটি তার মনে খুব লেগেছে। দীর্ঘ সাধনার পর যিনি চাকরি পেয়ে ভালোই আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি এখন চাকরি ছেড়ে অন্যকে চাকরি দেয়ার নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন। যেই ভাবনা সেই কাজ তিনি চাকরির পাশাপাশি সমুদ্র পাড়ে একটি বিচ একসোসারিস (সমুদ্রে গোছলের উপকরণ) এর দোকান দিলেন। তিনি অন্যের চাকরি করলেও নিজে একজনের চাকরির ব্যাবস্থা করেছেন একথা ভেবে আনন্দ অনূভব করেন। চাকরি এবং বিজনেস দুটোই চলছে পাশাপাশি। এক পর্যায়ে স্বপ্নের চাকরি ছেড়ে পূর্ন মনযোগ দেন ব্যবসায়। ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করতে থাকেন । পাশের আরো একটি দোকান নিয়ে বানান মিনি সুপার মার্কেট তৈরি হয় আরো কিছু লোকের কর্মসংস্থান। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি এই নবিন উদ্যোক্তাকে।অতপর হোম ডিস্ট্রিক মাদারীপুরে Nice Online Shopping নামে গড়ে তুলেন একটি অনলাইন শপ। মাদারীপুরে ইতিপূর্বে কোন অনলাইন শপ ছিলো না।
সাইদুর রহমান বলেন আমার প্রতিষ্ঠানে কিছুলোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তিনি ভবিষ্যতে নিজের ব্যবসার সম্প্রসারনের মাধ্যমে আরো অনেক লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান। তিনি বলেন *"স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই"* Iqbal Bahar Zahid স্যারের এই কথাটি যদি কেউ মেনে চলেন আমার বিশ্বাস অবশ্যই তিনি একদিন উদ্যোক্তা হবেন। তিনি আরো বলেন আমি এই গ্রুপে জয়েন না করলে কখনো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম না।
তাকে শুধু একজন উদ্যোক্তা বললে ভুল হবে। তিনি একজন ভালো মানুষ এবং সমাজ সেবকও। মাদারীপুরের নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রমে তিনি রয়েছেন সম্পৃক্ত। সাইদুর রহমান বাদামতলা, আমিরাবাদ, মাদারীপুর সদর এর মরহুম মৌলভী মোকসেদুল হক মুন্সী এর ছেলে। বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে ইতালিতে বসবাস করছেন। **তিনি "নিজের বলার মত একটা গল্প" প্লাটফর্মের ২য় ব্যাচের একজন সদস্য। তিনি সাবেক মাদারীপুর ডিস্ট্রিক এম্বাসেডর, বর্তমানে ইতালি কান্ট্রি এম্বাসেডরের দায়িত্ব পালন করছেন। **
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪১
Date:- ২৬/১০/২০১৯ ইং
লোকমান বিন নূর হাসেম
৩য় ব্যাচ, রেজিঃনং ১৫৪
কান্ট্রি এম্বাসেডর, সৌদি আরব।
(শিবচর, মাদারীপুর)
lokmanbd22@yahoo.com