শুরু হলো আমার সংগ্রাম জীবনের পথ চলা।
** বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম**
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি আমরা সুন্দর এই ভুবনে সুন্দর ভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারছি। শুকরিয়া আদায় করছি আমি সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারছি। আল্লাহ নামে শুরু করছি।
আমার নাম মো: নাদিম হাসান। জেলা বগুড়া। তবে কাজ করছি ঢাকার মিরপুর জোন থেকে।
প্রথমেই শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। স্যার আমার কাছে তারুণ্যের পথ প্রদর্শক। উদ্যমী মানুষের অন্তরে শুধু উদ্যোক্তার বীজ বপনকারী নন, বীজ অঙ্কুরিত হবার পর থেকে তা ডালপালা মেলে ফুল ফলে রুপান্তর হবাব মতো একজনকে সফল উদ্যোক্তা রুপে প্রতিষ্ঠিত করবার অনুপ্রেরণার নাম।
“নিজের বলার মতো একটা গল্প” আমার জীবনের গল্পটা বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার যখন সুযোগ পাচ্ছিলাম না, শেষ অবধি যাও পেলাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেটা আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিবিএ তে। তখন আমাদের হাতে আমার প্রকৌশলী বাবার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ছিলো না, যেদিন দিলো তার ১দিন আগে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ভর্তির তারিখ পার হয়ে যায়। এর কারণ, আমার বাবার একটাই কথা ছিলো আমি "মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিবো, এজন্য যুদ্ধ করিনি"।
শুরু হলো আমার সংগ্রাম জীবনের পথ চলা। কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পেরে শেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে ভর্তির সুযোগ পেলাম মেধা তালিকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত তেজগাঁও কলেজ এ হিসাববিজ্ঞান বিভাগে।
সেশনজটে যখন আমি হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষে ২০০৮ সাল, তখন চাকুরীর বাজারে প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাকুরীর করবার সুযোগ খুঁজি। তা পেয়েও যাই ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ, বারটি ছিলো শনিবার ‘‘গ্রামীণ ফোন’’ এ কাস্টমার ম্যানেজার হিসেবে চাকরীতে যোগদানের । পরে জানতে পারি তা ছিলো থার্ড পার্টির নিয়োগ। জীবনে বড় কিছু হতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করবার তাড়না অনুভব করি তখন থেকেই আর তার জন্য দরকার অর্থের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএস পড়বার পাশাপাশি ভর্তি হয়ে যাই ACCA তে। নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক মানের চাটার্ড এ্যাকাউন্ট হবার স্বপ্নে বিভর আমি তখন। কষ্ট করে জমানো চাকুরীর টাকা ব্যয় করি ACCA তে। কিন্তু ACCA লেখাপড়া ব্যয় বহুল হওয়ায় আমার আর করা হলো না। তখন আমার রুটিন ছিলো সকাল ৭টায় অফিসের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া আর ঘরে ফিরা রাত ১১টায়। মাঝের এ সময় অফিস করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, ACCA এর ক্লাস করা।
এরপর গ্যাজুয়েশন শেষ করবার আগে কাজ করবার সুযোগ হয় মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ‘‘৫পি‘‘ তে ক্লাইয়েন্ট রিলেশন অফিসার পদে। একাডেমিক লেখাপড়ার ইতি টানি সরকারী বাঙলা কলেজ হতে হিসাববিজ্ঞানে পোষ্ট গ্যাজুয়েশন করবার মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালে । ব্যবসা তখন থেকেই মনে উঁকি ঝুঁকি দিলেও করা হয়ে উঠেনি আমার বেড়ে উঠা চাকুরীজীবী পরিবারে। মাঝে একাধিকবার সরকারী, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেও যখন আমি ব্যর্থ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে আবারো যোগদান করি চাকুরীতে ‘‘যমুনা এলপি গ্যাস‘‘ কোম্পানীর তেল শোধানাগার সহকারী হিসাবরক্ষক পদে। এটাই ছিলো ঢাকার বাহিরে প্রথম আমার চাকুরী। আর সকল আর্থিক টানা পোড়নের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই ২০১৮ সালে ২৩শে নভেম্বর।
২০২০ সালে আমার ব্যবসায়ী জীবন শুরু করা আমারই সহধর্মিনীর বুদ্ধি ও সহযোগিতায়। ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শুরু হয় ২রা জুন ২০২০ ফেসবুকে JN Fashion Zone নামে বিজনেস পেইজ খোলার মধ্যে দিয়ে।
সূচনা হয় নতুন পরিচয় আমরা ব্যবসায়ী। তখন থেকেই অনুপ্রেরণা যখনই প্রয়োজন হতো, ইউটিউব দেখতাম আর দেখতে দেখতে শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ভিডিও দেখা। আস্তে আস্তে স্যারের মহানুভবতায়, তার মানুষের জন্য কিছু করবার যে চেষ্টা তা আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু কিভাবে স্যারের সাথে স্যারের ভালো মানুষের এ “নিজের বলার মতো একটা গল্প” প্লাটফর্মে যুক্ত হবো বুঝতে পারছিলাম না আর করোনা মহামারীর শুরু হবার পর থেকে আমার সবশেষ চাকুরীরত প্রতিষ্ঠানের যখন আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আমায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে বিনা বেতনে।
ঠিক তখনই আমার বাঙলা কলেজের বন্ধু সাইম, ওর বাড়ী টাঙ্গাইল। ১ বছরের সম্পর্ক যার সাথে আমার, সেই ম্যাসেজ এ লিংক দেয় নিজের বলা গল্প ফাউন্ডেশন এর।
সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হয় আমাদের মনের মত ভালো মানুষদের সাথে চলবার আর দেরি না করে রেজিস্ট্রেশন করে ১৫তম ব্যাচে সেশন করা শুরু করি। তারপর ভালো লাগা থেকে আমার সহধর্মিণীকেও ১৫তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেশন করাই। এক এক করে স্যারের সেশনগুলো দেখতে থাকি আর নিজেদের মাঝে ধারণ করি।
চাকুরী জীবন ছেড়ে শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও আর স্যারের গড়া প্লাটফর্মে এসে ম্যাজিকের মত পরিবর্তন লক্ষ্য করি নিজেদের মাঝে।
আস্তে আস্তে আমাদের স্বপ্নগুলো যেন বাস্তবতার রুপ পেতে থাকে। যা চাকুরী জীবনে এত তাড়াতাড়ি করবার সুযোগ হইতে পেতাম না। এতদিন যে কথাগুলো মনের মধ্যে লালন করে ছিলাম, নানা কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারি নাই। স্যার শুধু ভাবেন নাই, তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। স্যালুট জানাই স্যারকে।
আমাদের উদ্যোগের নাম JN Fashion Zone. আমাদের স্লোগান ‘‘ন্যায্য মূল্যে গুণগত মানের পণ্য”।
আমাদের প্রাথমিক পুঁজি ছিলো মাত্র ২০ হাজার টাকা আর ১ বছর অনলাইন বিজনেস এ নতুন হিসেবে বিক্রি করি প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার সমগ্র বাংলাদেশে তথা দেশের বাহিরে সৌদি আরব, মালেশিয়া, জাপান প্রবাসীদের কাছে। আমাদের কাপড়ের ব্যবসা হওয়ায় সারা বছর কম-বেশি বিক্রি হয়।
আমাদের ব্যবসার মূল্য লক্ষ্য অন লাইন বিজনেসকে জনপ্রিয় করতে গুনগত পণ্য ন্যায্য মূল্যে ক্রেতার দরজায় পৌঁছে দেওয়া। পণ্য দেখে মূল্য পরিশোধ করবার সুযোগ প্রদান। আরো অনেক মেগা পরিকল্পনা আছে আমাদের ভালবাসার, ভালো লাগার "নিজের বলার মতো একটা গল্প" প্লাটফর্মের ভালো মানুষদের নিয়ে আর সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে স্বপ্ন দেখি স্যারের মতই বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে উদ্যোক্তা গড়বার দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার সহ আরো অনেক চমক আর এ বিশাল কর্মযজ্ঞ তখনোই সফলতার মুখ দেখবে যখন ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার অভিভাবকের মতো আমাদের অনুপ্রেরণা, দিক নির্দেশনা দিবেন, আমরা সকলে একতাবদ্ধ হয়ে থাকবো। আল্লাহ আমাদের সহায়ক হোন।
চাকুরীর মুখাপেক্ষী না হয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হই, আমাদের কষ্টার্জিত হালাল বিজনেসে সফলতা আসবেই ইনশা-আল্লাহ।
প্রত্যেকটি সফলতার গল্পের পিছনে গল্পটা মসৃণ নয়। আজকে যাকে সফল ব্যাক্তি হিসেবে দেখছেন, আপনারদের অভিনন্দনে ভাসছে যে ব্যাক্তিটি ঠিক তখন এমন অনেকে আছেন যারা তার সফলতাকে হিংসা করছে। আমার এমন দিনও গেছে প্যাকেটে টাকা না থাকাই হেঁটে আসছি ঘরে, দুপুরে সিংগাড়া, পানি আর রাতে ম্যাসে নুডলুস খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি শুধু একদিন না। এরকম অবস্থায় আমার সকল অভিযোগ, মান অভিমান, আবদার, চাওয়া শুধু আল্লাহর কাছে করেছি। জন্ম থেকে দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠা আমায় আগলে রেখেছে আমার বাবা-মা। বললে ভুল হবে না আমার মায়ের ইচ্ছায় আমি হিসাববিজ্ঞানে পোষ্ট গ্যাজুয়েশন করেছি। তাদের নিয়ে গর্ব করি তাদের সততার কারণে।
কিন্তু কষ্ট তখন লাগে যখন আমার সফলতার দোরগড়ায় তখন আমার পাশে বাবা নেই। চলে গেছেন ব্রেণ স্ট্রোক করে আমাদের ছেড়ে ২০১৮ সালে। বাবার মৃত্যুর সময় আমি তার সামনে। চিকিৎসক যখন আমায় ডেকে বলছিলেন, আপনার বাবার নিঃশ্বাস নিতে পাচ্ছেন না, তার বেনটিলেটর খুলে দিচ্ছি আমরা। কোন কিছু বলবার বা ধর্ম মতে কোন কিছু করবার থাকলে করেন। আমি আমার হাজী বাবার পা ধরে ছিলাম আর দোয়া করছিলাম তার রুহের মাগফেরাতের জন্য। খালি বলবো, আল্লাহ যেন কাউকে এমন পরীক্ষায় না ফেলেন। রাতে হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সামনে নির্ঘুম রাত আর সকালে অফিস করেছি। পরিবারের অন্য সদস্যরা দিনে থাকতো বাবার কাছে হাসপাতালে, এভাবে চলতে থাকে ১ সপ্তাহ । বাবার জন্যে আর আমার কিছুই করা হয় নাই, আমার এটাই মনে হয় আর বাবার কথা মনে হলেই চোখের পানি সামলিয়ে রাখতে পারি না। বাবার সাথে ছোট ছেলে হিসেবে আমার আদরও ছিলো বেশি, ঝগড়াও করতাম বেশি আমি।
বাবা-মায়ের সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করবার পরিকল্পনা ছাড়া সন্তান যেমন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার দিক নির্দেশনা পায় না। জীবনে প্রতিটি পদে পদে ধাক্কা খেয়ে কেউ হয় বিপদগামী আবার কেউবা নিজ চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত। তাই আপনার সন্তান কি হতে চায়, তা বাবা-মা হিসেবে আপনার খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী তাকে গাইডলাইন দেওয়া, আমি দায়িত্ব মনে করি।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে মিরপুর জোনের সেশনে যুক্ত করা, অফলাইন মিটআপে করবার সুযোগ দেওয়া আজ অবধি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যত ভাইয়া আপুদের সহযোগিতা পেয়েছি ।
কষ্ট করে আমার জীবনের গল্পটা পড়ারর জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৯
Date:- ১৭/১২/২০২১ ইং
মোঃ নাদিম হাসান
ব্যাচ: ১৫
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার: ৬৪৬৬১
জেলা: বগুড়া
বর্তমান অবস্থান: মিরপুর, ঢাকা।
পেইজ: JN Fashion Zone
পেইজ লিংক:
www.facebook.com/JNFashionZone
কাজ করছি: পোশাক নিয়ে