মানুষ চিনতে বারবার ভুল হচ্ছে
আসসালামুআলাইকুম
বিসমিল্লাহহির রহমানির রাহিম
শুকরিয়া মহান রবের নিকট আলহামদুলিল্লাহ, শান্তি ও সালাম বর্ষিত হোক মহামানব হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) উপর। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ যিনি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের আইডল, বেকারত্ব অভিশাপ থেকে মুক্তির ও সঠিক দিকনির্দেশনা কারী। আমাদের জন্য সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন।
ছোট ছেলে
পাবনা সদর থানার একটি আদর্শ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। আমাদের পরিবারে তিন ভাই ও একটি বোন ছিল।
বাবা ছিলেন একজন পরোপকারী, আদর্শবান, ধামিক অত্যন্ত বিচক্ষণ মানুষ। পেশা কৃষক পাশাপাশি ছোট একটি বিজনেস করতেন, মা গৃহিণী।
বোন বড় মাঝে দুই ভাই আমি সবচেয়ে ছোট ছিলাম। আমরা বড় হয়েছি জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা অত্যন্ত কড়া শাসনের ও আদর স্নেহ মধ্যে দিয়ে। আমি যখন খুবই ছোট আমার বড় ভাই মারা যায়। আমাদের পরিবার মোটা মুটি ভালোই সচ্ছল ছিল। বড় ভাই মারা যাওয়ার পর মেঝো ভাই কে পাবনা শহরে হোস্টেল রেখে লেখা পড়া করাতেন। আমার জীবনে কিছুটা বছর সুখে ছিলাম। সকালটা শুরু হত বাবার সাথে ফজরের সলাত দিয়ে, এরপর মক্তব যেতাম। বাড়িতে গরুর ও ছাগলের খামার ছিল। মাঠে সকালের খাবার নিয়ে যেতাম। খুব ছোট বয়সে এলাকার মুরুব্বীদের কাছ থেকে আল- আমিন উপাধি পাই।বাড়ির পাশে প্রাইমারী স্কুলে যেতাম ছাত্র হিসেবে একেবারে খারাপ ছিলাম না।অবসর সময়ে গরু, ছাগলের খামার দেখা শোনা করতাম। সন্ধ্যার সময় হারিকেনের চিকনী পরিস্কারের দায়িত্ব ছিল আমার উপর।নব্বইয়ের দশকের সোনালী জীবনের স্বাদ কিছুটা আমরা পেয়েছিলাম। আইসক্রিমের ভ্যান, বাদাম ওয়ালা, কটকটি দোকানিদের পিছনে ডাকতে ডাকতে দৌড়ানো, পুকুরে গোসল করা বড় ভাই বোনদের সাথে গোল্লাছুট, দড়ি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। বছরের দুই একবার পুসুরী করতাম(চাল, ডাল, মরিচ রান্নার সকল প্রকার উপকরণ চাদা ধরে তোলা হতো।
সন্ধ্যার পর রেডিওতে কৃষি ভিত্তিক অনুষ্ঠান দেশ আমার মাটি আমার শুনতাম নিয়মিত।লেখা পড়ার শুরু হয় বাবা- মার কাছ থেকে।অল্প বয়সেই আমাদের বাড়ির সামনে বিভিন্ন শাক- সবজির চাষ করতাম এবং আত্মীয় স্বজনদের দেওয়া পর অবশিষ্ট সবজি আমি নিজেই বাজারে বিক্রি করতাম। এত অল্প বয়স ছিল যে সবজি ডালা মাথায় নেওয়ার পর ব্যালেন্স করা ঠিক রাখতে কষ্ট হতো, এবং মানুষের আমাকে দেখে হাসাহাসি করতো( তারা হয়তো ভাবতো আমি অভাবে কারণে এই কাজ করছি) দরদাম করতো এমনো ঘটনা ঘটেছে টাকা খুচরা করে দিয়ে যাচ্ছি বলে সবজ্বী নিয়ে চলে যেত যাদের দেখা আজও পাইনি। বাবার সাথে বিভিন্ন ফসল ( ধান,সরিষা রাই,কালোজিরা,ধনিয়া,মসুর,কালাই, খেসারি,গম,পাট,তিল,) বাজারে বিক্রি করতাম।
ছোট্ট থেকেই ডে লেবার দিয়ে কাজ করাতাম।২০০০ সালে পৃথিবী ধংস হবে এরকম রিওমার দেখেছি। ঐ সময়ে আব্বা দেড় লক্ষাধিক টাকা জমিয়ে ছিলেন নানাদের সাত বিঘা জমি কেনার জন্য কিন্তূ সে সময়ে বড়ো বোন রিওমেটিভ ফেভার আক্রান্ত হন,পুরো টাকা আপার চিকিৎসা খরচ হয়ে যায়( যে জমি কেনার কথা ছিল তার প্রতি শতক জমির দাম বতমান বাজারে এক লক্ষাধিক টাকা )।পরবর্তীতে আপু সুস্থ হয়ে যায়। বাবা জমি-জমার কাগজ ও জমি মেজারমেন্ট ভালো বূঝতেন এজন্য আমাদের আশেপাশের সকল মানুষ আব্বার কাছে তাদের সমস্যার সমাধান জন্য আসতেন আমরা দেখেছি তিনি বিনা স্বাথে কোনো প্রকার বিনিময়ে ছাড়াই সঠিকভাবে কাজ করে দিতেন এর ফলস্বরূপ আমাদের জীবনে কঠিন থেকে কঠিনও ভয়াবহ হয়ে উঠে।
আমার বাবার উপর ব্ল্যাক ম্যাজিক করা হয়। আমরা বিষয়গুলো বুঝতে পারি নাই। আপু পুরোপুরি সুস্থ না হতেই আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুরো পরিবারের সকল কাজ দায়িত্ব কিভাবে যেনো এতো ছোট বয়সে আমার উপর অপিত হয়। যে দায়িত্ব গুলি সাধারণত পরিবার বড় সন্তানের কাধে পড়ে। ২০০৩/৪/৫ সালে পরপর কয়েক বছর ভয়াবহ ঝড়ের কবলে আমাদের বাড়ি সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সংসারের সকল আয় খরচ করতাম আব্বার চিকিৎসা জন্য কিন্তূ মেডিকেল সায়েন্স কোনো সমস্যা ধরা পড়েনী।ঐ বয়সেই নিজেকে মানব যন্ত্র বলে মনে হতো ভাবতাম বাবা সুস্থ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তূ ঠিক হয়নি।ঐ সময়তেই ৯-৫ ভুলে গিয়েছিলাম।
২০০৫ পর অনাবৃষ্টি হয় কয়েক বছর। সবকিছু মিলিয়ে জিবনটা বৃভিশিকাময় হয়ে উঠে। লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, পরিবার সবার কথা পড়া শুনা বন্ধ করা যাবে না। মোটিভেশন জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তির প্রথম জীবনের সংগ্রামের গল্প শোনানো হতো। সংসারের সকল আয় এতটাই কমে গিয়েছিল যা জীবনধারণ করা কষ্টকর হয়ে যায়। আমার মেঝ ভাই লেখা পড়া করার জন্য আমি প্রচুর সাপোর্ট করেছি এখন পর্যন্ত ( সেটা কোনো আথিক সাপোর্ট নয় সংসারের সকল কাজের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে )।
২০০৭ সালে পাবনা শহরের একটি মুদির দোকানে কাজ ঠিক করি কিন্তূ এই কথা শুনার পর বাবা- মা খানাপিনা ছেড়ে দেয় বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে বাড়িতে ফিরে আসি। আমাদের যারা আত্মীয় স্বজন আছে, আব্বা চাইলে তাদের সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা/ আমাদের লেখা পড়া বা সরকারি চাকরি ব্যাবস্থা করতে পারতেন তিনি জীবনে কারও কাছে হাত পাতেনি।
বাবা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কিন্তূ তিনি মুক্তি যোদ্ধার সাটিফিকেট নেন নি ( তিনি বলতেন দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছি কোনো কিছু পাওয়ার আশায় না )। এভাবেই দিন চলতে থাকে। ২০১০ সালে আমরা দুই ভাই ছোট হয়েও বড় বোন কে বিয়ে দেই। আমি লেখা পড়া মনোনিবেশ করলাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম তখনই সেম ক্লাসের স্টুডেন্ট এবং উপরের ক্লাসের স্টুডেন্ট কে প্রাইভেট পড়াতাম।
আমাদের সিনিয়র এক ভাই ছিল যিনি এস এস সি তে অল সাবজেক্টে ফেইল করে লেখা পড়া বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে আমি নিজ উদ্যোগে তাকে সহ আরেক জন( মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের ভিতরে একজন ছোট বেলায় আমি একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার হাত ভেঙে দেয় এবং আমি কোনো প্রতিশোধ নেইনি আজ অবদি) কে বিনা মূল্যে প্রাইভেট পড়াই এবং পরবর্তীতে তারা কৃতিত্বের সাথে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।একই সাথে দুইটি স্টুডেন্ট এর এস এস সি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত লেখা পড়ার খরচে আমি নিজে বহন করেছি।
২০১০ সালে এস এস সি পর পাবনা পলিটেকনিকে ভতি পরিক্ষা দেই সেখানে মেরিটে ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম কিন্তূ অথনৈতিক কারণে ভতি হতে পারি নাই। ২০১২ সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় পর ঢাকায় আসি একটি চাকরির উদ্দেশ্য এবং আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ( তারা আমাকে বললেন মাস্টার্স কমপ্লিট করে আসতে) ।একটি গামেন্টস ফ্যাক্টরি এক বড়ো ভাই তাদের কম জীবন দেখার জন্য একটি দিন ঐখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় এবং আমি তাদের খারাপ ভাষার সাথে পরিচিত ছিলাম না আমার খুব অস্বস্থি বোধ করতেছিলাম।
একজন পিতা তার সন্তানদের জন্য কতখানি মায়া থাকে সেটা আমি অনুভব করতে পেরেছি। প্রতি ৩০মিনিট পর পর আমাকে ফোন দিয়ে খবর নিতেন এবং আমাকে বলতেন বাজান পৃথিবীর যেখানেই যাও কোনো প্রতারকের হাতে যেন না পরি। আব্বার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় বাড়িতে ফিরে আসি।
২০১৩ শেষের দিকে বাংলাদেশের সুনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়। বেতন ছিল ৫৬০০ টাকা, প্রতি মাসে ওভার টাইমসহ ৭০০০ টাকা বেতন তুলতাম।পরিবার থেকে চেয়েছিলেন দুই ভাই কে বিয়ে দিতে কিন্তূ করিনি বাবার চিকিৎসা যাতে বন্ধ না হয়। পরিবার অসুবিধা থাকায় চাকরি ছেড়ে দেই। ২০১৮ সালে শেষের দিকে আব্বা আল্লাহ তাআলা ডাকে সাড়া দেন।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে অর্জন,খুব ছোট বেলা থেকেই ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিলাম এবং খুবই আবেগ প্রবন ছিলাম ।যার কারনে অনেকেই আমার আবেগ কে কাজে লাগিয়ে আমার ব্যাবসার ক্ষতি করেছে।এই প্লাটফর্ম থেকে ব্যাবস্যা ও জিবনের সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছি কারন সবসময় আবেগ দিয়ে জিবন চলে না। বিশাল একটা ভালো মানুষের পরিবার পেয়েছি। প্রতিদিন স্যারের সেশন মাধ্যমে নতুন তথ্য জানতে পারছি এবং সেশন চচা ক্লাসে মাধ্যমে নিজের মতামত প্রদান সুযোগ পাচ্ছি।
পরিশেষে
স্কুলে স্যারেরা গরুর রচনা লিখতে দিতেন তাই গরু চিনি। পাঠ্য বইয়ে মানুষের রচনা ছিল না তাই মানুষ চিনতে বারবার ভুল হচ্ছে। আমি দেখেছি কিভাবে দরবারের নামে কারবারি করে মানুষ কে ধোকায় ফেলে। সততার সাথে মানুষের কাজ সম্পন্ন করেছি তাদের মূখে শুধু সততার প্রশংসা শুনলাম কিন্তূ মুল্যায়ন পেলাম না। আমার আগে পরের স্টুডেন্টরা( কেউ ডাক্তার,প্রকৌশলী,ব্যাবসায়ী) বেশির ভাগই সরকার চাকুরি করেন।সব অবস্থাই আল্লাহর শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ।কাজের সাথে লেগে আছি, টিকে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই ইনশা-আল্লাহ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৯
Date:- ১৭/১২/২০২১ ইং
আবদুল্লাহ আল মামুন
ব্যাচ ১২
রেজিস্ট্রেশন ৩৯৭৪৫
পাবনা সদর উপজেলা