আমার ঘুরে দাড়ানোর গল্প
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
প্রিয় পরিবারের সকল ভালো মানুষকে জানায় আমার অন্তরের অন্তরস্থাল থেকে সালাম ও প্রাণঢালা অভিনন্দন। আশাকরি সবাই অনেক ভালো আছেন? আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমিও অনেক বেশি ভালো আছি।
আমরা প্রতিনিয়ত অনেকের জীবন কাহিনী নিয়ে লেখালেখি করি। কিন্তু আজ আমি আমার জীবন কাহিনী অর্থাৎ আমার ঘুরে দাড়ানোর গল্প শুনাবো।
👉 আমার পরিচয়:
আমি মোঃ আসাদুজ্জামান! বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল সুন্দরবনের কোলঘেষা সাতক্ষীরা জেলার কালিগজ্ঞ থানার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চাঁচাই গ্রামে আমার জন্ম। আমার পিতার নাম মোঃ মজিবর রহমান, মাতা মোছাঃ সালমা খাতুন। ৪ ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট এবং খুব আদরের।
👉স্কুল জীবন:
২০০৪ সালে গ্রামের একটি সরকারি প্রাইমারী স্কুলে আমার পড়ালেখার যাত্রা শুরু। প্রাইমারী শেষ করে গ্রামের হাইস্কুলে ভর্তি হয়। সেখানে টানা ৫ বছর পড়ালেখা শেষ করে আবারো গ্রামের একটি কলেজে ভর্তি হয়। যেহেতু গ্রামের ছেলে তাই শহরে গিয়ে পড়ালেখার তেমন সুযোগ হয়নি। তাছাড়া তখন আমার পরিবারের তেমন সামর্থ ছিলোনা আমাকে শহরে রেখে পড়ালেখা করাবে। যাইহোক কলেজে ২ বছর পড়ালেখা করে সেখান থেকে HSC পরিক্ষা দিয়ে পাস করি।
কর্মজীবন :
আমি যখন ১০ম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার জীবনে প্রথম কোন প্রতিষ্ঠানের চাকরি করি। আমি প্রথমে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে (জীবন বীমা)
২ বছর ফিল্ডে কাজ করি। পপুলার লাইফে চাকরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো মাঠ পর্যায়ে কাজ করে সেই কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা। আমি সেখানে টানা ২ বছর কাজ করি। ২ বছর সেখানে কাজ করার পরে সেখানে কিছু কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে সেখান থেকে বিদায় নিলাম। তারপরে কিছুদিন পরে একটা এনজিওতে ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তররে প্রায় ১ বছর ওদের সাথে কাজ করেছি। ওখানে আমাকে কোন নির্ধারিত কোন বেতন দেওয়া হতো না। কিন্তু আমি আমার নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে মানুষের জন্য কাজ করতাম। তাছাড়া সবথেকে বড় বিষয় এজনিওতে কাজ করে গ্রামের আসহায় মানুষদের বিভিন্ন হেল্প করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপরে HSC তো পাস করে চলে গেলাম ঢাকা শহরে সেখানে গিয়ে একটা মেকানিক্যাল টেনিং সেন্টারে ভর্তি হলাম। সেখানে ৭ দিন টেনিং নিয়ে একটা ফ্যাক্টারিতে মেকানিক্স হিসাবে যুক্ত হলাম। আমি যেহেতু টেনিং সেন্টার থেকে কাজ শিখেছি তাই বেতন খুব কম মাত্র ৬ হাজার টাকা। কিছুদিন কাজ করার পরে ভাবতে থাকলাম আমাকে নিজে কিছু করতে হবে। আর সেই ভাবনা অনুযায়ী বাড়ি ফিরে উদ্যোগ নিলাম ফার্মেসী করার। প্রথমে আমার বাসা থেকে ফার্মেসী করার জন্য রাজী হচ্ছিলোনা। কিন্তু আমিও নাছড় বান্দা হাল ছাড়েনি সবাইকে বুঝিয়ে একটা দোকান এডভান্স করলাম। কিন্তু প্রস্তুটি শেষ করার আগে মালেয়শিয়া আসার জন্য বাড়িতে অফার চলে গেলো।তখন বাড়ী থেকে সবাই বলতে শুরু করলো আগে মালেয়শিয়া থেকে কয়টা বছর থেকে যেতে তারপরে যে টাকা জমাবো তাই দিয়ে পরবর্তীতে বিজনেস শুরু করতে। আর সেই ভেবে চলে আসলাম স্বপ্নের দেশ মালেয়শিয়াতে। কিন্তু আমার সেই স্বপ্নকে আমি একদিন বাস্তবে রুপ দিবো। সেই স্বপ্ন পুরতে আমার সামনের পথটা এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। কারণ এখন আমার পাশে আছে ২ লক্ষ সদস্যের একটি বিশাল বড় পরিবার "নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম "।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা :
আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমি নিজে এমন কিছু করতে চায় যার মাধ্যমে আমি সাবলম্বী হতে পারি এবং আরো ১০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারি। সর্বপোরি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারি।
এতো সময় তো অনেক কিছু লিখলাম এখন লিখবো আমি কিভাবে নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্মের সন্ধান পেয়েছি এবং এই গ্রুপ আমার জীবনকে কতটা ঘুরিয়ে দিয়েছে!
আমি এই গ্রুপের সন্ধান পায় ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। আমি প্রথমে একভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলার ইকবাল বাহার জাহিদ নামের একজন মহান ব্যক্তি বাংলাদেশের বেকার সমস্যা দুর করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছে নিজের বলার মত একটা অনলাইন উদ্যোক্তা ও ভালো মানুষ তৈরির প্লাটফর্ম। আর তখন আমি ইউটিউবে, ফেসবুকে সার্চ দেওয়া শুরু করি হঠাৎ আমি এই প্রিয় পরিবারকে পেয়ে যায়। আর আমি ষষ্ঠ ব্যাচ থেকে গ্রুপে যুক্ত হয়ে যায়। প্রথম প্রথম আমি গ্রুপের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানতাম না। কিন্তু আমি নিয়মিত এক্টিভ থাকতাম দেখতাম কে কি বলছে, কার আইডিয়াগুলো কেমন। এভাবে দেখতে দেখতে আমি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারলাম।
গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমার পরিবর্তন:
গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি যখন গ্রুপে যুক্ত ছিলাম না তখন ফেসবুকে অযথা সময় নষ্ট করতাম এবং বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করতাম। আমি তখন ভাবতাম আসলে ফেসবুক দিয়ে মনেহয় ভালো কাজ করা যায়না। কিন্তু যেদবন থেকে গ্রুপে যুক্ত হয়েছি সেদিন থেকে বুঝলাম না আমার ধারণা ভুল ছিলো। আমরা চাইলে ফেসবুক দিয়ে আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারি। এই গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমি পজেটিভ চিন্তা করা শুরু করেছি, সকল খারাপ কাজ থেকে দুরে সরে গেছি, কারো সাথে খারাপ আচারণ করিনা, সবাইকে হেল্প করতে চেষ্টাকরি, বিপদে মানুষের পাশে থাকি। আর আমার এই পরিবর্তনের পিছনে নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম এবং আমার প্রিয় স্যারের অবদান।
এই গ্রুপ আমাকে কি দিয়েছে:
আমার জীবনে অনেক কিছু পাওয়ার কথা ছিলোনা কিন্তু এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমি সেগুলো এখান থেকে পেয়েছি। আমি যখন গ্রুপে যুক্ত ছিলাম না তখন আমাকে হাতে গোনা কয়েকজন আমাকে চিনতো কিন্তু গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পরে আমাকে ২ লক্ষ মানুষ চিনে। তাই আমি মনে করি এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারেনা। এই গ্রুপে যখন একমাস অতিবাহিত হয়ে গেলো তখন প্রথমে আমাকে মালেয়শিয়া কান্ট্রি এম্বাসেডর করেন তারপরে আস্তে আস্তে গ্রুপের প্রতি এবং গ্রুপের প্রিয় মানুষ গুলোর প্রেমে পরে গেলাম। দেখতে থাকলাম গ্রুপের কার্যক্রম গুলো আর আমার কাজের এক্টিভিটি দেখে স্যার আমাকে কান্ট্রি এম্বাসেডর থেকে কোর ভলেন্টিয়ার এবং মডারেটরের দায়িত্ব দিয়ে আপনাদের পাশে থাকার মত সুযোগ করে দিয়েছে। আর সেই থেকে নিয়মিত এই প্রিয় পরিবারের ভালো মানুষদের সাথে ভালো কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া এই গ্রুপ থেকে সবচেয়ে বড় পাওয়া ৪ জানুয়ারি ২০২০ প্রিয় স্যারের হাত থেকে সেরা ভলেন্টিয়ার এওয়ার্ড নেওয়া। এই প্রিয় পরিবারে যুক্ত হয়ে আমি সত্যি খুবই গর্বিত। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন সারাজীবন আপনাদের সাথে থেকে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি। সমাজের অসহায় এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাড়াতে পারি।
বিঃ দ্রঃ আমি আমার জীবনের গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি এই মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি এবং কারো সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। %% ধন্যবাদ%%
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ১১৭
Date:- ২২/০১/২০২০ ইং
মোঃ আসাদুজ্জামান
ষষ্ঠ ব্যাচ
জেলা: সাতক্ষীরা
মডারেটর এন্ড কোর ভলেন্টিয়ার, নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম।
মোবাইল :+৬০১১৩৩৮১৯৭৫৯
রেজিঃ নং- ৪১