♦️♦️জীবনের গল্প♦️♦️
✍️✍️ জীবন বড়ই বিচিত্র ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। কিছুটা আমাদের কর্মের ফল আর কিছুটা আমাদের ভাগ্যের নিরমর্ম পরিহাস। সুখ, দুঃখ,হাসি, কান্না মিলিয়েই জীবন।
👉👉 আমি তমিস্রা আফরিন অতি ক্ষুদ্র এক মানবী। জীবনটাকে খুব বেশি না দেখলে ও এই ছোট্ট জীবনে দুঃখ কষ্টের রং মসাল কম নাই। সবার দৃষ্টিতে আমার জীবনটা এমন হওয়ার জন্য আমি নিজেই দ্বায়ী তবে মহান আল্লাহ না চাইলে কি কিছু হয়?তিনি হয়তো আমার জীবনটাকে এভাবেই লিখছেন তবে অতীতটা খারাপ হলে ও বর্তমান ভালো করার দায়িত্ব আমার নিজের। কর্ম তার ভাগ্য কে পরিবর্তন করে দেয় এটা আজ বুজতে পারছি আমাদের সকলকে প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আমাদের শিখিয়েছেন হেরে যাওয়াটা লজ্জার না হেরে গেছি ভেবে হার মেনে নেওয়াটা লজ্জার ব্যাপার।
👉👉খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার পাশেই আমার বাসা। আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে আমার জন্ম। এজন্য অভাব কি দুঃখ কাকে বলে এটা আমার ধারনার বাইরে ছিল।বর্তমানে আমরা তিন বোন কোন ভাই নাই তবে আমার জন্ম থেকেই শুরুটা একটু অন্যরকম ছিল নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি মিলিয়ে আমিই ছিলাম একমাত্র ছোট্ট সদস্য এক কথায় সবার খুব আদরের জীবন্ত পুতুল।
🍀🍀এবার বলি জীবন্ত পুতুল কেন?? সবার হাসি আনন্দ লুকিয়ে ছিল আমার মধ্যে ব্যাপারটা এমন আমি খুশি তো পৃথিবী খুশি। যার জন্য দিন দিন অসম্ভব পরিমান জেদি হয়ে যাই।কারন না চাইতেই সব সামনে চলে আসে। এছাড়া আমার বাবা বলে জন্মের সময় আমার কপালে নাকি লাল চাঁদের মতো চিহ্ন ছিল স্পষ্ট বোঝা যেত। আমি নাকি আমার বাবার কাছে ঈশ্বর প্রদত্ত আশীর্বাদ ছিলাম। আমার জন্মের সঙ্গে সঙ্গে পুরা জীবনে পরিবর্তন চলে আসে ব্যাবসায় প্রচুর পরিমান লাভ হতে থাকে। আমার নাম করে কোন কাজে ১ টাকা দিলে চোখের পলকেই নাকি সেটা ১০০ টাকা হয়ে যায়। পুরা পরিবারের কাছে আমি সব আর আমার কাছে আমার চাচ্চুই সব।
🍀🍀 কোন বাচ্চার তার ৩ বছর বয়সের কথা মনে থাকে কিনা আমি জানি না তবে আমার কাছে সবটা স্বচ্ছ কাঁচের মত মনে আছে। ছোট থেকে প্রচন্ড মেধাবী ছিলাম সেই সুবাদে মাত্র ৩ বছর ৫ মাস বয়সে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। আম্মু চাকরি করে বাবা ব্যাবসা সবাই ব্যাস্ত আর আমার যতো আবদারের জায়গে সব থেকে কাছের মানুষ সেতো আমার চাচ্চু। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ও মাঝ রাতে আমার জন্য বাইরে যাওয়া লাগছে তার কারন যখন যা চাই সেটা ত তখনই লাগবে সামান্য পরিমান দেরি হলে আর কারো রক্ষে থাকে না।
🍀🍀যত হাসি আনন্দ রাগ জিদ সবই ছিল চাচ্চুর সঙ্গে। যাকে আমি আমার বাবার থেকে ও বেশি ভালবাসি যার কথা মনে আসলে এখনো পর্যন্ত দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসে সব ভালো লাগা খারাপ হয়ে যায় এক নিমিষেই। খুব অল্প সময় ছিল চ্চুর সঙ্গে আমার তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখার মত একটা সম্পর্ক।মাত্র ৪ বছর ২ মাস বয়সে চাচ্চু আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়।বাইক এক্সিডেন্ট স্পট ডেট ২০০১ এর ২৭ শে সেপ্টেম্বর দিনটা আমার জন্য ভয়াবহ একটা দিন ছিল। ঐ দিন সকাল বেলা আমি চাচ্চুর সঙ্গে ঘেরে যাই মাছ ধরতে যদি ও সঙ্গে আরো ৪-৫ জন ছিল। ওতোগুলো চোখের মধ্যে দিয়ে আমি পানিতে পড়ে যাই প্রায় আধ মরা অবস্তায় জাল টেনে আমাকে পানি থেকে তোলা হয়। সেটা ছিল আমার নতুন জীবন। যে জীবন নিজ হাতে চাচ্চু আমাকে দিয়ে গিছে ঐ দিনই সন্ধ্যা বেলা চাচ্চু আমাকে একা করে দিয়ে চলে যায় সারাজীবনের মত। ওতটুকু বয়সে মানুষ কেন মারা যায় কিভাবে কাফন দাফন করা হয় কিছুই জানতাম না কারন এর আগে কখনো মৃত মানুষ দেখছি বলে আমার মনে নাই। যেহেতু আমার চাচ্চুর স্পট ডেট ছিল মাথার উপর দিয়ে ট্রাকের চাকা চলে যায় তাই শেষ সজ্যায় সাজানোর পরে ও সাদা কাপড় টা পুরা রক্তে ভিজে গেছিল আর আমি কি বা বুঝি তখন মনে আছে প্রায় মধ্যে রাতে চাচ্চুকে বাসায় আনা হয় গোসল করিয়ে উঠানের মাঝে রেখে দেয় আর আমি পুরা রাত খাটিয়ার পাশে মাথার দিকে বসে ছিলাম সামান্য পরিমান ভয়ও পাই নি হাজার চেষ্টা করে ও কেউ আমাকে উঠাতে পারে নি। আমার বাবা ব্যাবসার কাজে টাঙ্গাইল গেছিল খবর পেয়ে সকালে বাসায় পৌছায়।এসে দেখে আমি খাটিয়া ধরে বসে আছি বাবা এসেই আমাকে ওখান থেকে উঠায় তার পরে আর ঠিক মনে নাই পুরা সুস্থ হতে প্রায় ১/২ মাস সময় লেগে যায়। আস্তে আস্তে পরিবারের সকলের সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। ঐ দিনোর পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার বাবার কাছে কিছু চাইছি বলে আমার মনে পড়ে না।
🍀🍀আম্মু চাকরি করে বাবা ব্যাবসা নানি চাকরি মামা খালামনি সবাই ব্যাস্ত যে যার কাজে তবে আমাকে কেউ সময় দিলেই আরো বেশি খারাপ হয়ে যাই কারো সঙ্গই যেন আমার আর ভালো লগে না।পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে মনে হয় ভালোই আছি। তবে একাকিত্ব বোধ করতাম খুব একা একা কান্না করতাম তবে কেউ আসে পাশে আসার চেষ্টা করলেই বেশি রেগে যেতাম। মেজ বোন আমার ১২ বছরের ছোট তাই নতুন কোন খেলার স্বাথী ও আমার আর হয়নি।
🍀🍀নিজেকে সব সময় ব্যাস্ত রাখতাম পড়াশোনার কাজে বা অন্য যে কোন কাজে। নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা ছিল প্রবল কারন আমার একাকিত্ব ভুলে থাকতাম নিজেকে ব্যাস্ত রেখে। এসএসসি পর অবসর সময়টা কি করব এটা ভেবে ১২ হাজার টাকা দিয়ে বিউটিফিকেশনের ফুল কোর্স কমপ্লিট করি। যদিও পরবর্তিতে যুব উন্নয়ন সহ বেশ কিছু জায়গা থেকে ট্রেনিং নেওয়া হয়।এক কথায় প্রপেশনালি কাজ করছি একটানা ৫ বছর তখন পরিচিতিটাও মোটামুটি ভালো ছিল। এক দিকে পড়াশোনা অন্য দিকে নিজের ব্যাবসা খুব ভালো চলছিল সব কিছু। ৩ টা মেয়ের কর্মসংস্থান ছিল একটা এতিম বাচ্চা দায়িত্ব ও ছিল আমার উপর। পরিবারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক না থাকলে ও বাইরের মানুষকে নিজের সবটা দিয়ে সাহায্য করি পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।প্রবল আত্মবিশ্বাসী আর কমিটমেন্ট রক্ষা করে চলি।আমি কথা রাখতে গিয়ে অনেক বার নিজে সমস্যায় পড়ছি তবুও কথার নড়চড় করি নাই।
🍀🍀 পড়াশুনায় বরাবরই খুব ভালো ছিলাম ক্লাস ১ থেকে ১০ পর্যন্ত কোন দিন রোল ২ হয়নি এসএসসি এইচএসসি তে ও গোল্ডেন প্লাস ছিল। সেই তুখর ভালো রেজাল্ট করা মেয়েটা হটাত খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছা ছিল পাবলিক ভার্সিটিতে পড়বে তবে জিদ করে এডমিশন পরীক্ষাই আর দেই নি কোথাও এমনকি নিজ জেলা খুলনাতেও দেওয়া হয় নাই। কথা ছিল পড়াশোনাই আর করব না শেষ মেষ আম্মু বাধ্য হয়ে এক ফ্রেন্ডের সহযোগিতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে রাখে না জানিয়ে।
🍀🍀আমি লক্ষ্য থেকে সরে যাই কারন আমার জীবনে যে নতুন কেউ আসছে। চাচ্চুর পরে কাওকে আপন ভাবতে পারি। যার সঙ্গে বিরক্তি কাজ করে না সব রাগ জেদ অত্যাচার মুখ বন্ধ করে মেনে নেয় এমন একজন যার জন্য পুরা পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারি আর বাবা বলে তার সঙ্গে কথা বলো না।যা কোন কিছুই আর করব না। এক কথায় নিজের পায়ে নিজেই কুরাল মারছি।
🍀🍀যদিও তার নামটা অন্য কিছু তবুও তাকে রাতুল বলে ডাকা হয় কারন তার সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল সেখান থেকেই ভাললাগা ভালবাসা আর আজ আমি তার বাচ্চার মা যদি ও সে এখন আমার সঙ্গে নাই বর্তমান সব থেকে বড় পরিচয় আমি সিঙ্গেল মাদার। একটা সময় পর নিজেই বুজতে পারছি আমি সব থেকে বেশি যে জিনিসটা চাইছি সেটাই সবার আগে আমার থেকে দূরে সরে গিছে।
🍀🍀রাতুলের কথা বলতে গেলে বলে শেষ হবে না কারন দীর্ঘ ১২/১৩ বছর পর আমার জীবনে কোন মানুষ আসে যার সঙ্গে আমি মন খুলে কথা বলতে পারি হাসতে পারি শুরুটা স্বপ্নের মতই ছিল। আজ হয়ত তার থেকে দূরি আছি তবে সেই সুন্দর মুহূর্তের কথা ভেবে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব কারন আমার ভালবাসা বিশ্বাসে বিন্দু পরিমান মিথ্যা ছিল না।
🍀🍀 দুজনেরই বয়সটা কম পড়াশোনা করি তার ইচ্ছা বিশেষ কিছু একটা হবে সেটা না হয় নাই বললাম তবে যদি কখনো সাকসেছ হয় অবশ্যই সেদিন তাকে নিয়ে লিখবো। তবে রাতুলের ইচ্ছা টা দৃঢ় সেটা ধরেই বসে আছে রাতুলের মনোবল আর স্যারের কথা স্বপ্ন দেখুন সাহস করুন লেগে থাকুন সফলতা আসবেই দুইটা মিলালেই এখন মনে হয় দেরিতে হলে ও সে তার লক্ষ্যে ঠিকই পৌছাবে। যদিও আমাদের প্লান ছিল পড়াশোনা শেষ করবো সে তার লক্ষ্যে পৌছাবে তার পর আমার বাবার থেকে চেয়ে নিয়ে যাবে আমাকে। তবে পরিস্থিতি এমনই ছিল কিছু না চাইতেই চোখের সামনে সবটা এলোমেলো হয়ে গেল। জিদ ধরে বসে থাকলেও বিবিএ ১ম বর্ষের পরীক্ষা টা দিই ১টা দিন ক্লাস না করে কলেজে না যেয়ে বই না পড়ে তবু আলহামদুলিল্লাহ এ প্লাস না পেলে ও পাস করি ভালো ছাত্রীর পতনের শুরু। ২য় বর্ষে ও সেম অবস্থা ঢাকা থেকে প্রতিনিয়ত খুলনাতে এসে ৭ টা পরীক্ষা দেওয়া হয় তবে এবার আর কপালটা ভালো হয়নি আগের মত। অনেক গুলো সাবজেক্ট এ বাধিয়ে রাখার মত রেজাল্ট আসে। বলাই তো হলো না আমি কিন্তুু এখন আর কারো মেয়ে না রাতুলের বউ যে কথাটা বলাই হয়নি এই ভার্সুয়াল জগতেই আমাদের পরিচয় দীর্ঘ ৪টা বছর কেউ কাওকে দেখি নি ১তম প্রায় ৩ বছর শুধু মাত্র এসএমএস এ কথা হতো তার পরে ফোনে তবে কেউ কাওকে দেখিনি সত্য বলতে দেখার প্রয়োজন মনে করি নি একটা অন্য রকম সম্পর্ক ছিল আমাদের যেখানে ঝগড়াঝাটি চিল্লাচিল্লি ছিল তবে কেউ এক সেকেন্ডের জন্য ও কাওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি নি।
🍀🍀কথা ছিল সে আমার বাবার থেকে আমাকে চেয়ে নিবে কিন্তুু তা আর হলো না পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ ছিল যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে অনেক কিছু মেনে নিলাম।এটাই হয়তো আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল।বাবা মা কে অনেক কষ্ট দিছি তবুও তারা আমাকে ক্ষমা করছে সব সময় পাশে আছে ছায়ার মত।
🍀🍀২০১৭ তে রাতুলের সঙ্গে আমার ২ বার দেখা হয় দীর্ঘ ৪ বছর পরে এসে। তবে ৩০ শে জানুয়ারি ২০১৮ আমার জীবনটাই বদলে গেল এটা ছিল ৩য় বারের মত দেখা যেখানে দিনের শুরুটা ভালোই ছিল তবে শেষ টা হলো অবিশ্বাস্য। নিজের চোখকে ও বিশ্বাস করতে পারি নাই কারন আমাদের বাসার দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার, তার বাসায় যাওয়ার লাষ্ট গাড়ি সন্ধ্যা ৬ টায় দুজনেই স্টান্ডে দাড়িয়ে আছি হটাত করেই সে বলে যে অবস্থাতেই আছো এভাবে আমার সঙ্গে যেতে হবে আজ তোমার পরীক্ষা হয় আমার সঙ্গে যাবা না হয় আমি তোমার সামনে সুইসাইড করব।তখন একটা কথাই বলি বাবাকে দেওয়া কথা।সে বলে সবটা আমি ম্যানেজ কনে নিব।আজ না হোক দুদিন পরে ঠিকই তোমার বাবার কাছে আমি নিয়ে যাবো। দেখ এই হাতটা আমি ধরে আছি তুমি চাইলে হাতটা ছাড়িয়ে বাবার কাছে যেতেই পারো,তবে হাতটা ছাড়লে চিরদিনের মতই ছেড়ে দাও,আমাকে আর পাবে না কখনো সামনে ও আর আসবো না। তুমি হাত ছেড়ে দিলে আমি এই গাড়ির সামনে আত্মহত্যা করব আর হাত ধরে রাখলে একটা সুন্দর হ্যাপি লাইফ হবে আমাদের।
🍀🍀রাতুলকে এতোটাই ভালবাসি যে ঐ দিন হাত ছেড়ে দেওয়ার মত সাহস আমার ছিল না। একপাশে বাবা আর এক পাশে রাতুল ঠিক ভুলের হিসাব ভুলে গিয়ে রাতুলের হাতটাই ধরছিলাম সেদিন।পাড়ি দিলাম এক অজানা জীবনে যার পুরাটাই অনিশ্চিত। শুধু মাত্র রাতুল নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলছে ততটুকুই জানি তার বাইরে কাওকে চিনি না পর্যন্ত।সে আমাকে নিয়ে গিয়ে বেঁচে দিতে ও পারে বা অন্য কোন ক্ষতি ও করতে পারে বিন্দু পরিমান এসব কিছু ভাবিই নি। তবে রাতুল আমার সঙ্গে খারাপ কিছু না করলে ও সে রাতে আমাদের সঙ্গে অনেকটাই খারাপ হয় রাত ১১ টার দিকে আমরা গাড়ি থেকে নাবি উদ্দেশ্য রাতুলের বন্ধুর বাসা সকালে আমরা ঢাকা যাবো তবে রাতুলের প্রয়োজনীয় কিছু কাগজের জন্য বাসায় জাওয়া দরকার খুব সম্ভাবত ওর বন্ধু উল্টো পাল্টা কিছু করলো আমাদের সঙ্গে আমরা মাঝ রাত্রে রাস্তার কিছু খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়ি আমার কাছে চেন কানের দুল আংটি সহ দেড় ভরি গয়না ছিল রাতুলেন আংটি দুজনের কাছে চারটা ফোন সহ রাতুলের বিকাশে থাকা ৪২হাজার টাকা নিয়ে নেয় আমরা শুরুতেই রাস্তায় দাড়িয়ে গেলাম তবে তারা এতো কিছু করলেও রাতুলের পরিবারের কাছে ব্যাপারটা জানাতে ভুললো না সবাই ঐ রাতেই সবটা জেনে গেল শুধু মাত্র আমার ক্ষতি হবে দেখে রাতুল সব অন্যায় চুপচাপ সহ্য করে নিল।যদি ও তারা বলছিল মেয়েটাকে রেখে চলে যা তোর কিছুই দেওয়া লাগবে না কোন ক্ষতি ও হবে না তবে রাতুল আমার বিশ্বাস ভাঙ্গেনি হাতটা শক্ত করেই ধরে ছিল।সর্ব হারা হয়ে দুইটা মানুষ পুরা রাতই রাস্তায় কাটিয়ে দিলাম।এতোটুকুতেই খুশি ছিলাম খারাপ পরিস্থিতিতে কেউ কারোহাত ছাড়ে নি। পরে তাদের মধ্যে থেকে সকালে এক জনকে ধরা হয় সে ২ টা ফোন আমার আংটি আর ৬ হাজার টাকা ফেরত দেয় আর বলে রাতেই সব ভাগ হয়ে গিছে তার কাছে আর কিছু নাই। এর মধ্যে আমার পরিবার অনেক ঝামেলা শুরু করল তাই ঐগুলো নিয়ে আর ভাবার সময় হয়নি। ৩১ শে জানুয়ারি রাতুলের মামা বাড়িতে আমাদের বিয়ে হয় ৩ দিন পরে আমরা ঢাকা চলে যাই ব্যারের সহযোগিতায় যদি ও আমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে আমার পরিবার তবে আমি আসি নাই বরং প্রায় ১ বছর আমার পরিবারের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। আমি ছিলাম আমার বাবার লক্ষ্মী আমি যাওয়ার পর থেকে সব ব্যাবসা একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়া অবস্তা।
🍀🍀আমাদের শুরুটা অনেকটা সমস্যার মধ্যে হলে ও আমরা কিন্তুু চোখে পড়ার মত একটা জুটি ছিলাম। যে সম্পর্কটা কখনো খারাপ হতে পারে অনেকের কাছেই সেটা দূরস্বপ্ন।তবে কথায় আছে না আমার সুখ বেশি দিন সয় না ব্যাপার টা তেমনই হলো। সবাই বলতো একটা সম্পর্ক এতোটাও ভালো হওয়া সম্ভব।আর দিনের পর দিন মাসের পর মাস সেই সম্পর্কটা কোথাও খুজে পাওয়া যায় না এখন।
🍀🍀বিয়ের ১৪ মাস পরে আমি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ি ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয় ঢাকা ইসলামি হসপিটালে ভর্তি করা হয় আমাকে অনেক গুলো টেস্টের পরে জানা যায় আমি কনসেভ করছি। তবে শীরের অবস্থা খুবই খারাপ যে কোন সময় মিসক্যারেজ হতে পারে।ডাক্তার ফুল বেড রেষ্ট দেয় কারন হটাত করেই আমি এতোটা অসুস্থ হয়ে যাই প্রতি মাসে আমাকে ব্লাড দেওয়া হয় নিয়মিত চেকাপ এক কথায় কতোবার যে হসপিটালে ভর্তি হইছি তার কোন হিসাব নাই।সবটা রাতুল একা হাতেই করত আর বলতো দেখ আমাদের মেয়েই হবে যার নাম রাখব" রুপকথা" আমি যদি বলতাম যদি মেয়ে না হয় তখন! বলত হতেই পারে না আল্লাহর থেকে চেয়ে আনবো। আমি তোমাকে যে প্রার্থনায় পাই সেই প্রার্থনায় আমার কলিজাকে ও চেয়ে আনব। হ্যা রাতুলের কথা মতোই আমাদের মেয়ে হলো যার নাম "রুপকথা"। যে আজ পৃথিবীর বুকে হাসে
খেলে।
🍀🍀তবে এই জার্নিটা খুব সহজ ছিল না পুরা নয়টা মাসেই আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হইছে মেডিসিন, ব্লাড, অক্সিজেনই ছিল সঙ্গী। তবে আমার এতোটা অসুস্থতায় ও আমি খুশি আছি দেখে আমার পরিবার সব মেনে নিল।আর নতুন করে ও সম্পর্কের মাঝে পরিবর্তন চলে আসলো।৭ মাস প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কোরবানির ঈদের ৮ দিন আগে বাবার বাড়িতে আসি।কথা ছিল বাবু একটু বড় হলে ঢাকাতে ব্যাক করব।বাবুর বয়স যখন ৫ মাস তখন ঢাকাতে যাই।যাওয়ার ১ সপ্তাহ পরে কোভিট-১৯ বাংলাদশে প্রথম ধরা পড়ে। তার ৪র্থ দিন আবার খুলনাতে ফিরে আসি। এই আসাটাই আমার জীবনে অশান্তির কারন হয়ে দাঁড়ালো।
🍀🍀আমার রুপকথার বয়স যখন প্রায় ৮মাস তখন গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম।তবে ১ মাস ৯ দিন পর চলে আসতে বাধ্য হই,পারিবারিক অশান্তির কারনে আমাদের সম্পর্ক টা ভেঙে গেল। হয়তোবা ঢাকাতে থাকলে এমন কিছুই হত না। তবে কোভিটের মহামারিতে রাতুল গ্রামের বাড়িতে আসে পরে আর যাওয়া হয় নি।অধিকাংশ পরিবারে দেখা যায় শ্বশুড়ি মা হতে পারলেও বৌমা কখনো মেয়ে হয় না।কেন জানি না স্মর্কের শুরুতে শ্বাশুড়ি বেশি আগ্রহ ছিল আমি নিজের মায়ের থেকে বেশি জায়গা তাকে দিছিলাম তার সঙ্গে সব ভালো লাগা খারাপ লাগা সেয়ার করতাম তবে একটা সময় বুজলাম তিনি আমাকে বা আমার মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। রাতুলের সামনে খুব ভালো ব্যাবহার করলে ও রাতুল সামনে থেকে সরে গেলে খুব খারাপ ব্যাবহার করে।দিনের পর দিন আমাকে খারাপ প্রমানে ব্যাস্ত তবে আমার জানা মতে তার সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করছি বলে আমার মনে হয় না।কারন ছাড়া রাতুল সহ রাতুলের পুরা পরিবার অশান্তি শুরু করল এক প্রকার তিন দিন না খেয়ে থাকায় আমার বড় চাচ্চুর ছেলে ও আম্মু যেয়ে আমাকে নিয়ে আসে।
🍀🍀আমার মেয়ের বয়স আজ ২৫ মাস।সে অনেক কিছুই বোঝে অনেক কথা বলে।এতো কিছুর মধ্যে বর্তমান সবথেকে বড় পরিচয় আমি সিঙ্গেল মাদার।এখন বর্তমান বাবার বাড়িতে আছি।অনেকটা মানসিক অশান্তি হতাসার মধ্যে না মরে বেঁচে থাকা অবস্থা। মরে যাবো সেটাও পারি নি রুপকথা কে রেখে কোথায় যাবো মরে ও যে শান্তি পাবো না। টাঙ্গাইলের ইকবাল বাহার ভাইয়া আমাকে গ্রুপে জয়েন্ট করান ১১ তম ব্যাচে তবে ঐ সময়টা আমি ফোন ব্যবহার করতাম না বাবার কড়া ভাবে মানা ছিল।তার কথা আমার জীবনটা নষ্টের একমাত্র কারন ফোন। পরে ১৩ তম ব্যাচে সিরাজগঞ্জের এক ভাইয়া আমার রেজিষ্ট্রেশন করে দেয় সরি ভাইয়ার নামটা মনে নাই। তখনও আমি একটিভ হতে পারি নাই ১৪ তম ব্যাচ থেকে নিয়মিত স্যারের সেশন পড়া শুরু করি তখন থেকেই মনে হল আমি ও পারি আমাকে পারতেই হবে তবে কিছু করব টাকা পাবো কোথায় আর বাসা থেকে তো কিছু নিই না কারন প্রয়োজনীয় সব কিছু বাসা থেকেই দেয় আমার মেয়ের পুরা দায়িত্ব আমার বাবার কিছু চাওয়ার প্রয়োজন কখনো হয় না। সত্য বলতে আমার মেয়ের চলা ফেরা রাজকন্যার থেকে ও কোন অংশে কম না সিঙ্গেল মাদার হওয়ার স্বর্থে ও মেয়ের কোন ব্যাপারে বিন্দু পরিমান চিন্তা আমাকে করতে হয় না এটা হয়ত আমার সৌভগ্য।তবে লেগে ছিলাম হাল ছাড়ি নি রিসেলার হিসাবে ২ মাস কাজ করছি এখান থেকে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে এখন নিজেই ব্যাবসা শুরু করছি।প্রায় ৫ মাস নিজের প্রয়োজন এখন নিজেই মেটাই বাচ্চার খরচ ও ৫০% বহন করি।কিছু না হোক খুব আনন্দ হয় নিজে কিছু করি মাথা উচু করে বলতে পারি আমি একদিন সফল উদ্যোক্তা হবো।যদি ও গ্রুপ থেকে আমার কোন সেল এখনো পর্যন্ত আসে নি তবে আমি জানি একটা সময় ঠিকই সফলতা আসবে।
🍀🍀স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি সাহস করছি লেগে আছি ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই। সিঙ্গেল মাদার হওয়ায় এখন বুঝি মানুষের কতোটা কষ্ট একটা অনাথ বাচ্চা কতোটা অনাদর অবহেলায় বড় হয়।ইচ্ছা আছে অসহায় নারীও শিশুদের জন্য কিছু করার। আমি এমন জায়গায় যেতে চাই অন্তন ১টা অসহায় নারীর পাশে দাড়াতে পারলেও আমার জীবন স্বার্থক।
🍀🍀সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি একজন পজেটিভ মানুষ হতে পারি ও সফল উদ্যক্তা হয়ে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৫
Date:- ২৯/১১/২০২১ ইং
🧏 তমিস্রা আফরিন
👉ব্যাচ-১৩/৫১৬৯০
👉ডুমুরিয়া, খুলনা
🌺প্রফেশনালি বিউটি এক্সপার্ট। কাজ করছি পোশাক কসমেটিক ও হোমমেড বিউটি প্রডাক্ট নিয়ে।
🍂পেজ-৷ Afrin Fashion & Beauty