জীবনের পরপোকারী বাস্তবগল্প
গল্পটি হলো---
🚅বিমান ভ্রমনে একদিন
⇨সেদিন ছিলো ১৫ ই জুলাই,২০২১ তারিখ। স্কয়ার হসপিটালে করোনা টেস্ট করাইতে টাকা পরিশোধ করার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।আমার সামনে ছিলো একজন অল্প বয়সী ভদ্র মহিলা,যে তার বোনের এবং বোনের ৩ সন্তানের জন্য টাকা পরিশোধ করতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
⇨একটু বলে রাখি আমি দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী। দেশে ছুটিতে এসেছিলাম।কোরিয়া প্রবেশের পূর্বে এক সপ্তাহে ২ টি করোনা টেস্ট করাতে হবে এবং ৭ দিন বোয়েসেল( বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিঃ) এর নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকতে হবে।২ টা টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট আসলে কোরিয়া প্রবেশ করতে অনুমতি পাবো।
একমুহূর্তে তাদের সাথে কথপোকথন হয়।ওই আপুর যাত্রী ছিলো তারা ৪ জন,একজন মা এবং তার ৩ জন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে।সবচেয়ে বড় বাবুটার বয়স সাড়ে ৪ বছর হবে।আর বাকি দুজন আড়াই বছর এবং এক বছর হবে।দক্ষিণ কোরিয়া বাবুদের আব্বুর কাছে যাবে।বাচ্চা গুলো ছোট হওয়াতে তারা বেশ উদিগ্ন ছিলো।কোরিয়াতে থাকা ভাইয়াটা অর্থাৎ বাবুদের আব্বুও আমাকে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বললো,যেন তাঁর পরিবার এবং বাচ্চাগুলোকে সব ব্যাপারে সাহায্য করে সাথে করে নিয়ে আসি এটা ভাইয়া এবং ঐদিন সাথে আসা ভাবির মা ও বোন আমাকে বললো।আমি তখন বুঝতে পারতেছিলাম না যে সামনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করতেছে।
⇨যাইহোক আপানারা সবাই সাথে থাকুন পুরাটা গল্প শোনার জন্য। একটু বলে রাখি আমি এখানে কারো নাম প্রকাশ করবো না,তবে গল্পের সুবিধার জন্য একটা ছদ্মনাম ব্যবহার করবো।ছোট বাবুটার নাম জিসান রেখে গল্পটা সামানে এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
⇨অবশেষে টেস্ট করে আমরা বোয়েসেল নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে তাদের ব্রিফিং শুনে বাসায় চলে যাই।সময় আছে আর মাত্র একরাত। পরেরদিন থেকে হোটেলে কোয়ারান্টাইন থাকতে হবে এবং সেখান থেকেই বিমানবন্দর। তাই আজ রাতটাই শেষ রাত মা বাবার সাথে কাটানোর।রাতটা কোন মতে কাটিয়ে সকাল ১২ টার মধ্যে নির্ধারিত হোটেলে চলে আসলাম।পরিবারের সবাই কান্না করতেছিলো।আম্মু সহ্য করতে পারবে না তাই আমার আব্বু আমার একজন ভাই ও আমার সহধর্মিণী সাথে এসেছিলো।১২ টা পর্যন্ত তারা হোটেল লবিতে আমার সাথে বসে ছিলো।১২ টার পর আমাকে আমার রুমে যেতে হলো এবং আমার আপনজনেরা কান্না করতে করতে হোটেল থেকে নেমে চলে গেলো আমাকে একা রেখে।কিছুক্ষণের জন্য আমার মনে হলো আমি যেন জেলখানায় ঢুকে পরেছি।আমি দেশে থেকেও এখন আমি আপনজন হারা।আমিও ঐদিন অনেকক্ষণ কান্না করেছিলাম।দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরেছিলো।
⇨এরপর আমাদের ৭ দিনের কোয়ারান্টাইন শুরু হলো।আমাদের ৩ বেলা খাবার হোটেল থেকই পরিবেশন করা হতো।আমাদের থাকা খাওয়া করোনা টেস্ট এবং বীমা সহ প্রায় ২৯,০০০ টাকা লেগেছিলো প্রতি জনের।
আমার পাশের রুমেই ছিলো জিসান রা ৪ জন। প্রতি রুমে একজনের খাবার দেওয়া হবে।সুতরাং ছোট বাচ্চাদের খাবারের জন্য জিসানের আম্মুকে অর্থাৎ ভাবিকে আলাদা ব্যবস্তা করতে হবে।এজন্য সে একটা বেলেন্ডার ও বাচ্চাদের খাবার সাথে নিয়ে এসেছিলো।প্রথম দিনই তাদের বেলেন্ডার নস্ট হয়ে গেলো।আরো একটি ঘটনা ঘটলো ৩ জন বাবু দুস্টমি করতে করতে হোটেলের টেলিফোন লাইন ছুটিয়ে ফেলেছে।এখন যে হোটেলের কাউকে ফোন দিবে তাও পারতেছিলো না।অতপর আমাকে ফোন দিলো এবং সমস্যার কথা বললো আমি রিসিপশনে ফোন দিয়ে বললাম।তারা বাচ্চাদের খাবার বেলেন্ডার কারার ব্যবস্তা করলো।সন্ধ্যা সময় পাশের আরো একটা রুমে ছোট বাচ্চা নিয়ে থাকা আপুর কাছ থেকে বেলেন্ডার এনে রাতের খাবার বেলেন্ডার করে দিয়ে আসলাম। কোয়ারেন্টাইন সময়ে নিজের রুম থেকে অন্য রুমে যাওয়ার নিয়ম নাই।কিন্তু বাচ্চারা খুব কান্নাকাটি করতে ছিলো এমন পরিস্থিতিতে রিসিভশনে বলে এই কাজটা করে দিতে পারলাম।ঐরাতেই ভাবির লোক এসে আর একটা বেলেন্ডার দিয়ে যায়। এরপরে আর ২ একবার রুমের বাহিরে থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে টুকিটাকি সমস্যা গুলো যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি।ভাবি তার বাচ্চাদের নিয়ে এই প্রথম দেশের বাহিরে যাবে তাই কোন কিছুই বুঝতে পারতেছিলো না।হোটেলে আর কোনো বড় সমস্যা হয়নি।
তবে ৬ দিনের দিন সকালে আবার ২ টেস্ট করাতে হসপিটালে নিয়ে যাবে সাথে পাসপোর্ট নিতে বলছে।আমরা সবাই সকালে ৯ টায় যাই।যাওয়ার পর যখন পাসপোর্ট চাইছে তখন ভাবি তার ব্যাগে পাসপোর্ট পায়না। এখন কি করবে ওখানে আমি ব্যতিত যাওয়ার কেউ নেই।আমাকে বললো, ভাই আপনি একটু রুমে গিয়ে পাসপোর্ট গুলো নিয়ে আসেন।আমি তাদের বসিয়ে রেখে আবার হোটেলে গিয়ে পাসপোর্ট গুলো নিয়ে আসি।এদিকে আমার সাথে শেষ বারের মত দেখা করতে আমার মা, ভাই, ভাগনা, ভাগনী এবং সহধর্মিণী স্কয়ার হসপিটালে আসে।কারন তার পরদিন আমার ফ্লাইট কিন্তু সেদিন থেকেই কঠোর লকডাউনের ঘোষনা আসে।
⇨২ য় টেস্ট করতে এসে জানতে পারলাম আমার সাথে শুধু ভাবিরা ৪ জন না, আমরা একসাথে ১৫ জন তারমধ্যে আমি একাই পুরুষ এবং বাকি সব মহিলা ও তাদের সাথে থাকা ছোট বাচ্চারা। সবার টেস্ট করা শেষে আমারটা করালাম।টেস্ট করা শেষে আমার আপনজনদের সাথে কিছুটা সময় কথাবার্তা করে বিদায় নিয়ে আমি চলে আসলাম হোটেলে আম্মু ভাইয়েরা চলে গেলো বাসায়।যদিও ওই ৩ জন বাচ্চাদের দেখা শুনা করতে করতে আপনজনদের সাথেও বেশি সময় কাটাতে পারিনি।আসলে ভাবি একা ৩ জন বাচ্চাদের কোনভাবেই সামলাতে পারতেছিলো না।হোটেলে থাকা অবস্থায় ও ভাবির যথেষ্ট কস্ট হয়েছে কারন বাচ্চাগুলো অনেক বেশি চঞ্চল ছিলো।
🚁বিমানে ওঠার পূর্ব মূহুর্ত---------
সেদিন ছিলো ২৩ জুলাই,২০২১ তারিখ আমরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নামাজ পরে সব কিছু নিয়ে নিচে গেলাম।হোটেলের গাড়ি দিয়ে আমাদের ✈ বন্দরে পৌঁছে দিবে।ভাবি এবং বাচ্চারাসহ আরো মহিলারা প্রথম গড়িতে চলে গেলো।আমি এবং লাগেজগুলো পিছনের গড়িতে ছিলাম।৩ টার মধ্যে আমরা ✈ বন্দরে এসে পরি।আমি এসে দেখি আরো ৩ জন আপুরা দাঁড়িয়ে আছে।তারা ঢুকতে পারতেছিলোনা। এদিকে ✈ বন্দরের কিছু লোক এসে আপুদের ভাবিদের বলতেছিলো, এখন করোনাকালীন সময়ে অনেকগুলো কাগজপত্র পূরন করতে হবে,এগুলো আমরা করে দিবো ।তারা আমার অপেক্ষায় ছিলো।আমি এসে তাদেরকে নিয়ে গেটে চলে যাই এবং ওখান থেকে ফরমগুলো সংগ্রহ করে ভিতরে চলে যাই।ভিতরে গিয়ে ভাবিকে দেখিনা,সবাই বলতেছে ভাবি নাকি আগেই চলে আসছে কিন্তু ভিতরে আসেনি।গেটের বাহিরে তাকিয়ে দেখি সে বাচ্চাদের নিয়ে আসতে পারতেছে না।আমি গার্ডদের বলে আবার বাহিরে গিয়ে জিসানকে কোলে নিয়ে চলে আসি। ঐদিকে ভাবি ঐলোকগুলোর যারা বলে যে আমরা সব পূরুন করে আপনাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেবো তাদের একজনের খপ্পরে পরে যায়।তারপর ভিতরে আসি আমাদের কোয়ারেন্টাইন একটা ফরম প্রথমেই জমা রাখে তারপর আরো ২ টা কপি টিকিট কাউন্টারে জমা নিবে এবং গেটে দেওয়া ফরম ২ টাও পূরন করতে হবে।
⇨সবাইকে নিয়ে বিশ্রামের জায়গায় বসালাম এবং আমি ফরম পূরন করতে শুরু করলাম।ওখানে ২ জন শিক্ষিত আপুও ছিলো।আমার লেখার সাথে সাথে বললাম আমি যেভাবে পূরন করি এভাবে আপনারাও পূরন করেন।এভাবে প্রত্যেকজন ৪ টা করে ফরম পূরন করলাম নিজেরটা সহ অনেকেরটা করলাম। এর মধ্যে সবার ফরম পূরন করতে করতে হঠাৎ আমার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললাম।সবাই টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে আমি তো পাসপোর্ট খুঁজি। অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পাসপোর্ট খুঁজে পেলাম।
⇨ সবাইকে নিয়ে লাইনে দাড়ালাম। আমাদের প্রায় শেষ পর্যায়,আমি বডিংপাস এবং টিকিট হাতে পেলাম।কিন্তু এরপরেই ঘটলো মর্মান্তিক ঘটনা।
⇨ভাবিরা ৪জন কিন্তু অনলাইনে টিকিট শো করতেছে ৩ জনের।এখন তো ভাবি আমাকে ঢেকে বলতেছে আপনার ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলেন এখন কি করবো।আমি ফোন দিলাম ভাইয়া বলে আমি যার কাছ থেকে টিকিট কেটেছি সেতো ছুটিতে দেশে গেছে তাকেতো ফোনে পাইনা আমিতো ৪ টা টিকিটই কেটেছি।আমি তাদের অনলাইন টিকিটের কপি নিয়ে অন্য কাউন্টারে নিয়ে দেখাই তারাও কিছুক্ষণ কম্পিউটারে চেক করে বলে ৩ জনের টিকিট শো করতেছে।এমন দৌড়াদৌড়ি করতে করতে টিকিট কাউন্টারে এর নির্দিষ্ট সময় শেষ পর্যায়। কাউন্টার বন্ধ করে দিচ্ছে।আমাদের সাথে থাকা সবাইকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। আর কোন লোক নাই সবাই ভিতরে চলে গেছে এখন আমি আর ভাবিরা ৪ জন।পরে আবার ফোন দিলাম জিসানের আব্বুর কাছে।সে বলতেছে ভাই একটু দেখেন, আমিতো টিকিট ৪ টাই কেটেছি কিন্তু এমন কেন হচ্ছে ৩জন তো আসতে পারবে না। জিসান সবার ছোট তার টিকিট ই শো করতেছে না।সবাই আশা ছেরে দিছে ভাবিতো ছোট বাচ্চা রেখে যেতে পারবে না তাহলে যাওয়াই হবেনা।ভাইয়াও ফোন দিয়ে বলতেছে না আসতে পারলে আজ আসা লাগবে না।
আমাদের সাথে থাকা সব আপুরা ভাবিরা ভিতরে চলে গেছে। আমি শুধু জিসানদের ৪ জনের জন্য এখনো যাইনা, আমি চিন্তা কারতেছিলাম আমি শেষ পর্যন্ত দেখি আল্লাহ কোন একটা ব্যবস্তা করিয়ে দিবেন।চলতিপথে এমন অবস্থায় একজন মানুষকে বিপদে ফেলে চলে যেতে বিবেক বাধা দিলো। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে হঠাৎ মাথায় আসলো একটু কাতার এয়ারওয়েজের হেড অফিসে গিয়ে কথা বলে দেখি কোনো সমাধান পাওয়া যায় কিনা। যেই ভাবনা সেই কাজ ইনফরমেশন বুথে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ✈ বন্দরের ২য় তলায় কাতার এয়ারওয়েজের হেডঅফিস।সাথে সাথে জিসানকে কোলে নিয়ে ভাবিকে বললাম আমার সাথে সাথে আসুন শেষ চেস্টাটা করে দেখি আল্লাহ কোন ব্যবস্থা করতে পারে।ভাবিতো আশা ছেড়েই দিয়েছে আর বুঝি যাওয়া হবে না।এরপর সবাইকে নিয়ে ২য় তলায় যাইতে শুরু করেছি, মাত্র অর্ধেক শিড়িতে উঠেছি এর মধ্যে দেখি একজন লম্বা আকৃতির কাতর এয়ারওয়েজের অফিসিয়াল ড্রেস পরিহিত লোক নিচে নামতেছে।আমি সাথে সাথে কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলাম কাতার এয়ারওয়েজের হেড অফিসে যাবো এটা ২য় তলায় কোনদিকে? লোকটি বললো কেন আপনাদের কি সমস্যা, আমরা আমাদের সমস্যার কথা বললাম।লোকটি আমাদের কথা শুনে ভাবিদের ৪ জনের অনলাইন টিকেট গুলো নিয়ে গিয়ে কাউন্টারের একটা কম্পিটারে বসে আবার চেক করতেছেন। আর এই লোকটিই ছিলো কাতার এয়ারওয়েজের ম্যানেজার।এদিকে আমাদের বাকি ১০জন ভিতরে চলে গেছেন,তারা আমাকে ঢেকেছে ভাইয়া চলে আসেন কিন্তু আমি যাইনি।আমাদের ৬.১৫ তে বিমান ছেড়ে দিবে।তখন সময় ৬ টা বেজে গেছে।
⇨এর কিছু সময়ের মধ্যেই আসলো আনন্দের খবর।কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটি বললো এখন আর কোনো সমস্যা নাই আপনারা সবাই যেতে পারবেন।হঠাৎ মনে হলো জীবনে এমন কিছু কঠিন মূহুর্ত সামনে আসে যা মোকাবেলা করতে মাথা এলোমেলো হয়ে যায়, যদি শেষ পর্যন্ত লেগে থাকা যায় তাহলে আল্লাহ সফলতা দান করেন আর তখন যে সুখ অনুভব হয় যার কোন দুনিয়াবি মূল্য হয় না আবার সেটা যদি হয় কারো উপকারের জন্য তাহলেতো মন টা সুখে সুখে শীতল হয়ে যায়। যারা মানুষের জন্য একটু হলেও উপকার করতে পেরেছেন তারা এই সুখ অনুভব করতে পারবেন।
একটু বলে রাখি যে লোকের খপ্পরে ভাবি পরেছিলো তারাতো হাজির, তাদেরকে ১৫০০ টাকা দিয়ে বিদায় করা লাগছে।
⇨কাউন্টারের সবকাজ শেষ করে তাদের ব্যাগ আমার ব্যাগ একজন বাবু কে কোলে নিয়ে ইমিগ্রেশনে গিয়ে ভাবির সব কাগজ পত্র আমার কাছে ঐগুলো বের করে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আমি আর একটা ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে গিয়ে আমার সব শেষ করে আমি সামনে চলে আসি।২ জনকে ২ টা কাউন্টারে পাঠায় কারন বিমানের লোক এসে ডাকতেছে আমাদেরকে। একটু পরে ভাবিদের সব কিছু চেক করে তাদেরকেও ছেড়ে দেয়।
⇨আমি সবাইকে নিয়ে আবার একটা লাইনে দাঁড়িয়ে যাই যেখানে বডি স্ক্যান করা হবে এবং হাতের ব্যাগ চেক করবে আর টিকিটের একটা অংশ ছিড়ে রাখবে।এদিকে আমার বাসা থেকে সবাই ফোন আর ফোন আমি যে একটু কথা বলবো সেই হুশও ছিলো না।পরে ওইখানের সব চেকিং শেষে বিমানে ওঠার জন্য লাইনে দাড়াই।তখন বেজে গেছে ৬.৩০ ।যদিও বিমানটি ওইদিন ৪৫ মিনিট লেইট করে ছারে।
⇨যাইহোক সবাইকে নিয়ে অবশেষে বিমানে উঠলাম এবং আমার সিটে আমি বসলাম।ততক্ষণে আমি ঘেমে ঘেমে ভিজে গেছিলাম। সিটে বসে বাসার সবাইকে আমার কথাগুলো সংখেপে বললাম তারপর তাদের টেনশন একটু দূর হলো।ভাবিরা আমার একটু পিছনে অপজিট জানালার পাশে বসেছিলো। বাচ্চাগুলো অনেক কান্নাকাটি করেছিলো আমার সাথে থাকা খাবারগুলো ওদের দিয়ে দিয়েছিলাম, তারপর বিমানবালারাও বাচ্চাগুলোর যথেষ্ট খেয়াল রেখেছিলো।এভাবেই কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান ছেড়ে দিয়েছিলো। ক্লান্ত শরীরে আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম বেশ কিছু সময়।
৫ ঘন্টা ১০ মিনিট ওরার পর আমরা দোহা (হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে) এসে পৌছি।
🌍দোহা ট্রানজিট এ ৬ ঘন্টা ৫ মিনিট
⇨তখন রাত ১০.২৫বাজে।আমারা কাতারের দোহা হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছলাম। সবাই খুব ক্লান্ত।মহিলারা এবং বাচ্চারা আরো বেশি ক্লান্ত। পরের বিমান আরো ৬ ঘন্টা পরে।সবাই নতুন কেউ কিছু বুঝে না আবার সব মহিলা ও ছোট বাবুরা। সবাইকে নিয়ে পরবর্তী বিমান যেখান থেকে ছারবে সেদিকে হাটতে শুরু করলাম।আমি ছোট একটা বাচ্চা কোলে নিলাম একটা ব্যাগ নিলাম এবং সবাইকে বললাম আমার সাথে সাথে আসেন। সবাই বলতেছে ভাইয়া আপনি না থাকলে আমাদের যে কি হতো!আর ওই ভাবিতো অনেকবার বলেছে ভাইয়া আপনি না থাকলে আমাদের কোরিয়া আসা হতো না।
🏛️যাইহোক সবাইকে নিয়ে ওয়েটিং প্লেসে এসে বসলাম।এদের মধ্যে দুজন আপু অনেক ক্ষুধার্থ কারন তারা প্লেনে কিছু খেতে পারেনি।সাথে ৭ মাসের একটা বাবু আছে। তাদেরকে নিয়ে খাবার খেতে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম।আমি বাংলাদেশে যাওয়ার দিন এখানেই খাবার খেয়েছিলাম।তাই সেখানে গিয়ে আমরা খাবার খেলাম।বাচ্চাদের জন্যও কিছু কিনেছিলাম। এভাবে ওখানে সবাই ৬ ঘন্টা রেস্ট নেই এবং আবার বিমানে উঠি।দীর্ঘ ৯ ঘন্টার যাত্রা এবার। ইনছন এয়ারপোর্টে নামার পূর্বে সবাইকে ৪ টি করে কাগজ দিলো পূরন করার জন্য ।যারা পারে তারাতো বিমানেই পূরন করে ফেলে আর যারা পারেনা তারা নেমে পূরন করে।আমারগুলো বিমানেই পূরন করে ফেলি এবং একটা ভাবির কাগজও পূরন করি।সবাই আলাদা আলাদা বসার কারনে সবারটা তখন করতে পারিনি। তবে বিমান থেকে নেমে আমরা একটা জায়গায় সবাই বসি এবং ওখানে বসে সবার তথ্য গুলো পূরন করি।আরো ৩ জন আপুও শিক্ষিত ছিলো তারও পূরন করে।ওখানে আমাদের প্রায় ৪০ মিনিট লেগে যায় সব কাগজ পূরন করতে।এখানেও সব যাত্রীর পিছনে পরে যাই আমরা।ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পূর্বে আমাদের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট জমা নেয় এবং সবাইকে চেক করে স্বাক্ষর নেয়।কিন্তু কেউ তো কোরিয়ান ভাষা বোঝেনা।সবাই ডাকে ভাইয়া কি বলে বুঝিনাতো আপনি একটু দেখেন।যাই হোক সবার উত্তর দিয়ে সবাইকে ভিতরে পাঠিয়ে আমি যাই সবশেষে। ইমিগ্রেশনে গিয়েও একি অবস্থা সব কাগজ গুছিয়ে দিয়ে সবাইকে ইমিগ্রেশন পার করে দিয়ে আমার কাজ শেষ করি।
⇨নিচে গিয়ে যখন বেল্ট থেকে লাগেজ নামই, তখন কারো কোন সমস্যা হলো না কিন্তু আমারটা আটকে দিলো।ইমিগ্রেশন অফিসার কুকুর অফিসার নিয়ে আসলো এবং কুকুর আমার লাগেজটাকেই ধরলো।এলার্ম লাগিয়ে দিয়ে আমাকে তাদের অফিসে নিয়ে গেলো।আমার লাগেজ খুললো।খুলে কিছুই পেলো না পেলো একটা আচারের বোতল, যেটা দিয়ে তেল পরে লাগেজের এক তৃতীয়াংশ ভিজে গেছিলো এবং ঘ্রাণ বের হচ্ছিল। সেটা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি যথাযথ তাদেরকে বুঝিয়ে বললাম এবং কোন সমস্যা নাই বলে আমাকে ছেড়ে দিলো।
আমি বের হতে না হতে দেখি কেউ নেই সবাই চলে গেছে,কারন সবার হাজবেন্ড গাড়ি নিয়ে বাহিরেই অপেক্ষা করতে ছিলো।আমি বের হতে পারলাম না, কারন আমাকে আমার এলাকার স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে নিয়ে যাবে।আমারা যারা ওয়ার্ক ভিসায় তাদের ১৪ দিন নিজ খরচে নিজের ব্যবস্থা করা রুমে থাকতে হবে।যারা ফেমিলি ভিসায় এসেছে তাদেরও নিজের খরচে থাকতে হবে সেক্ষেত্রে তাদের পরিবারের লোক এসে নিয়ে যেতে পারবে।
অবশেষে আমার বাস ৯.০০ টা বাজে চলে আসলো আমি সহ আর মাত্র একজন যাত্রী ছিলাম। আমাদের বিমান এসে পৌছেছিলো ৬ টা বাজে কিন্তু সব শেষ করে বের হতে ৮.৩০ বেজে গেছিলো।
⇨অবশেষে আমার বাস রাত ৯.৩০ এ স্বাস্থ কেন্দ্রে আসলো আমার সব তথ্য তারা নোট করে রেখে,আমি যেখানে রুম কনফার্ম করে রেখেছি সেদিকে রওয়ানা দিলো।স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গাড়িতে ওঠার পর আমার মনে হলো যে,আমি যার মাধ্যমে রুম ঠিক করে রেখেছি তাকে একটা ফোন দেই। আমার রুমের কি অবস্থা তা একটু জানার চেস্টা করি। বিমান থেকে নেমেই ফোন দেওয়া উচিত ছিলো কিন্তু আমার ওপর দিয়ে যে দকলগুলো যাচ্ছে, যার কারনে আমি তাকে ফোন দিতে ভুলে গেছি।আমি ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই তো সেই ভাই আচ্ছামত শুনিয়ে দিলো।অনেক কথাই বলেছিলো তার মধ্যে কয়েকটা একটু বলি যেমন- ভাই আমাকে কেন আগে ফোন দেন নি, বাসার মালিক তো এখন ফোন ধরবে না এখন কি করবেন আমি জানি না।মনটা অনেক খারাপ লেগেছিল। তবুও সহ্য করেছি কারন ভুলটাতো আমারি ছিলো।তবে এটা সত্য যে আমি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ছিলাম না। মহিলা ও বাচ্চা সহ ১৪ জন এবং সবাই কোরিয়াতে নতুন এসেছে,ভাষাও জানেনা আর প্রত্যকটি বিষয়ই তাদের জন্য নতুন ছিলো।এমন পরিস্থিতিতে আমি একমাত্র পুরুষ মানুষ কোরিয়াতে ৩ বছর থাকা।এমন অবস্থায় আমার ওই ভাইকে জানানোর বিষয়টি একটাবারও আমার মাথায় আসেনি।এখানে আমার কতটা ভুল আপনারাই বুঝতে পারবেন।এরপর আমাকে রুমের সামনে রাস্তায় নামিয়ে দিলো।আমি এই বাসা ছাড়া অন্য কোথাও ১৪ দিনের মধ্যে যেতে পারবো না, তাই যেভাবেই হোক আমাকে এখানেই অপেক্ষা করতে হবে।
⇨তখন রাত ১০.৩০ বাজে আমি একা একা দাড়িয়ে ভাইয়ার ফোনের অপেক্ষা করতেছি।সে বেশ কিছুক্ষন পর আবার ফোন দিলো এবং আবারও বেশ কিছুক্ষণ কাথা শুনালো, আমি মুখ বুঝে সহ্য করে নিলাম একটা মাত্র সুখ অনুভব হচ্ছিল যে,আমি যতই বকা শুনি না কেন আমিতো মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি।এটাই ছিলো আমার সান্তনা। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে রাত ১১ টা বেজে গেলো আমি ব্যাগ লাগেজ নিয়ে বাসার নিচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ আমার মাথায় আসলো আমি একবার বাড়িওয়ালাকে ফোন দিয়ে দেখি আমার ফোন রিসিভ করে কিনা।তারপর আমি ফোন দিলাম এবং কিছুক্ষণ পরেই ফোন রিসিভ করলো, তারপর তাঁকে বলার পর সে আমাকে অপেক্ষা করতে বলে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাড়িওয়ালা আসে এবং রুম পরিস্কার করে দেয় কোন রকম শুধু একটা খাট ছিলো রুমে।
রাত তখন ১১.৩০ বাজে যে ভাইয়াটা রুম কনটাক্ট করে দিয়েছে তার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে কোরিয়াতে সে আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে দিয়ে যায় এবং বলে কাল সব ব্যবস্থা হবে আজ রাতটা একটু কস্ট করে থাকেন। ৷
ভাইয়ার
প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করতেছি কারন সে আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমার রুম কনটাক্ট করে দেওয়া প্রতিদিন খাবার দেওয়া ইত্যাদি।
⇨পরের দিন আমাদের সাথের অনেকের করোনা টেস্ট করলো কিন্তু আমারটা একদিন পরে করলো।আমার যেদিন স্যম্পল নেয় সেদিন অনেকের করোনার রিপোর্ট দেয়।দুঃশ্চিতার বিষয় হলো আমাদের সাথে আসা ৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে যাদের সাথে বসে খাবার খেয়েছি একসাথে সবাই বসে দুই দেশের বিমান বন্দরের যাবতীয় কাজ গুলো করেছি।আমার তো টেনশন বেড়ে গেলো তাদের করোনা পজিটিভ হলেও তারা হাসপাতালে থাকবে তাদের হাসবেন্ড সবকিছু দেখা শুনা করবে।কিন্তু আমারতো পজিটিভ হলে যতদিন নেগেটিভ না হবে ততদিন কোম্পানিতে যেতে পারবো না এবং কাজও করতে পারবো না।আর আমার কাছে টাকাও নাই যে খরচ বহন করবো।
রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বেশ চিন্তিতো ছিলাম, অবশেষে সকাল ৯ টায় এসএমএস আসে আমার করোনা নেগেটিভ।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর দরবারে সমস্ত শুকরিয়া এভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন থেকে আবার করোনা টেস্ট নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে কোম্পানিতে গেলাম এবং একদিন পরই কাজে যোগদান করলাম।
⇨আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া এতকিছুর পর দীর্ঘ ২২ দিন (বাংলাদেশে ৭ দিন বিমানে ১ দিন কোরিয়া ১৪ দিন) কোয়ারেন্টাইন শেষ করে কাজে যোগাদান করতে পেরেছি।
⇨এই ঘটনাটা বলার মধ্যে আমার দুনিয়াবি কোন উদ্দেশ্য নাই। শুধুমাত্র আল্লাহর রাজিখুশির উদ্দেশ্য করেছি।এই বিমান ভ্রমনে আমি দুনিয়ায় কারো কাছ থেকেও কিছু পাবো না এবং আল্লাহ আমাকে কি দিবেন তাও জানিনা।তবে একটা বিষয় খুব বেশি উপলব্ধি করি সেটা হলো মনের দিক থেকে বেশ খুশি ও প্রশান্তি অনুভব করি। যেই অনুভুতি শুধু মাত্র মানুষের জন্য কিছু করতে পারলেই হয়।
⇨আমাদের প্রিয় স্যার একটা সেশনে বলেছেন,একটা সপ্তাহে অন্তত একজন মানুষের জন্য হলেও একটু উপকার করার চেস্টা করবেন এতেকরে আপনি মনের দিক থেকে খুবই শান্তি অনুভব করবেন।
⇨আসলেই আমরা যদি আল্লাহর রাজিখুশির জন্য এমন কাজ করতে পারি মানুষের উপকার করতে পারি তাহলে মনে অনেক প্রশান্তি পাবো।যা অনেক টাকা দিয়ে পাওয়া সম্ভব হয় না।
🌷আমার এই ঘটনার মাধ্যমে যদি কেউ কস্ট পেয়ে থাকেন আমাকে মাফ করে দিবেন।আর এই জীবন গল্পের মাধ্যমে যদি কারো মনে উপকার করার আগ্রহ জন্মে তাহলে আমার এ ক্ষুদ্র চেষ্টা স্বার্থক।
⇨সত্যিকার অর্থে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যানবাহনে চলাফেরা করি এবং আমাদের সামনে এমন অনেক অসহায়ত্ব লক্ষ করি।যদি চলতি পথে সামন্য হলেও কারো একটু উপকার করতে পারি তাহলেই আমরা মনের দিক থেকে অনেক প্রশান্তি পেতে পারি।
⇨আর পরকালেতো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করবেন।
❤️আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরোপকার করার তৌফিক দান করুক।
আমি কাজ করছি -
কোরিয়ান কসমেটিকস/বেড হিটার/কম্বল/লেপ এবং বেবি আইটেম নিয়ে।ভালোবেশে সবাই পাশে থাকবেন।
আমার বিজনেস পেইজ👎
https://www.facebook.com/Green-Heaven-107813988355066/
📱imo+ whatsapp +8201057840705
🌷আমার প্রিয় প্লাটফর্ম এর প্রাণপ্রিয় ভাই ও বোনদের প্রতি রইলো অসংখ্য দোয়া ও শুভকামনা।
🌷🌷ধন্যবাদ জানাই সকলকে যারা এতক্ষণ ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে আমার এই জীবন গল্পটি পরেছেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৪
Date:- ২৮/১১/২০২১ ইং
👔 মোঃ ইমরুল হাসান
📌ব্যাচ নং-১৩
🖊️রেজিঃ নং-৫৪৯০৭
🏛️জেলা- নারায়ণগঞ্জ
🏖️জন্মস্থান-বরিশাল
🇰🇷কর্মস্থল – দক্ষিণ কোরিয়া
🌷নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর-গর্বিত ও আজীবন সদস্য।