জীবন থেকে নেওয়া জীবনের গল্প
👱♀️আমার ছেলেবেলাঃ আমি প্রত্যন্ত অঞ্চল কুড়িগ্রাম জেলার মেয়ে। ছোটবেলা থেকে খুব জেদী,রাগি আর খুব চঞ্চল ছিলাম। যখন যাই চাইতাম তখন সেটাই লাগতো এমন অবস্থা ছিল।এরজন্য আমার মায়ের কাছে কম মাইর ঝাটুর বাড়ি খাই নি। গাছে উঠতাম অন্যের আম, বড়ই,জলপাই চুরি করে খেলাম, অন্যের বাসা থেকে ফুল চুরি করতাম। আর বিচারের শেষ ছিল না তখন৷ এ নিয়েই মা আমাকে খুব শাসন করতো।
✍️ পড়াশুনাঃ আমি ছোটবেলায় মেধাবী ছাত্রী ছিলাম। আমার নাম জাকিয়া। শুনেছি আমার দাদা আমার নামকরন করেছেন৷ যার অর্থ নাকি বুদ্ধিমতী। আমার তা বোধগম্য নয়। স্কুল কলেজ, এবং গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি আমি BSS থেকে। তারপর শিক্ষাজীবন শুরু করি LLb নিয়ে। যেটা এখন শেষ পর্যায়ে আমি অবস্থান করছি৷
👨🦳বাবার আর্থিক অবস্থাঃ আমার মা বাবার দাম্পত্য জীবনে আমার বাবা অনেক কষ্ট করে ডেকোরেশন এর দোকান দেয় মাত্র ১০ হাজার টাকাকে পুঁজি করে আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে। আমরা তিন ভাই বোন। ২ বোন এক ভাই। ভাই মেঝ আমি সবার ছোট। শুনেছি ছোটরা নাকি অনেক আদরের হয়। কিন্তু আমার বেলা ছিল ব্যতিক্রম। আমার মা প্রায় বলতো আমাকে দুনিয়ার আনতে চায় নি। আমার বাবা চেয়েছিল তাই আল্লাহ্ র অশেষ কৃপায় আজ হয়তো কথাগুলো লিখতে পারছি৷ আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব ই খারাপ ছিল। আমার মা সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের শোয়ার মতন কোন বালিশ ছিল নি। পিঁড়ি মাথায় দিয়ে রাতে নাকি ঘুমাতাম৷ গল্পগুলো আমার বড় আপুর কাছ থেকে শোনা। ধীরে ধীরে বাবা কুড়িগ্রাম শহরে স্থায়ী হলো। হার্ডওয়্যার, মবিল, সকল প্রকার গাড়ির যন্ত্রাংশ খুচরা ও পাইকারী মূল্যে বিক্রি করতে লাগলো। ধীরে ধীরে আমার বাবা কারখানা দিল। যেহেতু আমি কুড়িগ্রাম জেলার মেয়ে এই অঞ্চলের মানুষ বেশির ভাগ ই কৃষিকাজ করে। তাই আমার বাবা ধান কাটার মেশিন, ভুট্টা ভাংগা মেশিন আধুনিক ডিজাইনের তৈরি করতে লাগলো। আমাদের নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না। মা বাবা আমরা ৩০ বছর বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকি। ধীরে ধীরে বাবা গাড়ি বাড়ি নিজের দোকান সহ বেশ কিছু প্রপারটির মালিক হন।
🤦♀️ বৈষম্যঃ ছোটবেলা থেকে দেখলাম আমার পরিবারকে সব সন্তানকে এক চোখে না দেখতে। তিন সন্তানকে তিন রকম চোখে দেখতো।সবথেকে আমি ছিলাম অবহেলিত, লাঞ্চিত। সব দিক থেকে দেখলাম আমাকে অবহেলা করা হতো। খেতে গেলে পাতে হাড় হাড্ডি জুটতো, কিছু চাইতে গেলেও সেটা পেতাম না। বাবা অনেক সময় দিতে চাইলেও মা বাবাকে নিষেধ করতো। আমার নিজের মা হওয়া স্বত্বেও তা এমন করতো।
🙎♀️জীবনের বিপর্যয় গুলোঃ
তখন আমি ক্লাস টেন এ পড়ি। ২০০৯ সাল এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি।ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল আমি কিছু করবো আমাকে করতে হবে,নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
সেই স্বপ্ন ধুলিস্বাত হলো এস এস পরীক্ষা দেয়ার পর।
বাবার অবাধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করি৷ বাবা মা মেনে নেয় নি। আমার স্বামী ছিল ক্লাস এইট পাশ। কিন্তু আমাকে বলেছিল সে রংপুর কারমাইকেল থেকে লেখাপড়া করছে দর্শন বিভাগ থেকে। আমি সহজে তার সব কথাগুলোকে বিশ্বাস করি। এক পর্যায়ে বিয়ে হলো আমাদের ২০১১ এর ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে। বয়স তখন আমার ১৫/১৬ হবে। শুরু থেকে আমার স্বামি ছিল বেকার এবং মিথ্যেবাদী। সে আওয়ামী পার্টি করতো নেতার পিছনে ঘুরতো নেতা খুঁশি হয়ে ১০০ টাকা দিতো তাই এনে সংসার চালাতো। জীবনে আর যাই হোক পড়াশুনা বাদ দেই নি।ভর্তি হলাম ইন্টারে ২০১১ তে। শ্বশুর বাড়িতে কারেন্ট ছিল কিন্তু আমার জা এর ঘরে আমাকে তা দেই নি। আমি অনেক কষ্টে অনেক সংগ্রাম অনেক যুদ্ধ করে লেখাপড়া করি।কুপির আলোয় পড়তাম আর অন্যদিকে মাটির চুলায় রান্না করি অন্যদিকে কুপির তেল শেষ হলে পড়তে পেতাম না। হ্যারিকেন এর আলোয় পড়তাম৷ তেল কেনার জন্য মানুষের কাছে টাকা ধার নিতাম, আমি একদিকে চুলার ভাত রাঁধতাম অন্যদিকে বই পায়ের হাঁটুতে রেখে পড়াশুনা করতাম৷ রান্না করার জন্য ছিল না কোন লাকড়ি, আমি পাতা কুড়িয়ে ঝাড়ু দিয়ে আনতাম আর তাই দিয়ে রান্না করতাম। গোবর কুড়াতাম তা দিয়ে গ্রামের ভাষায় যাকে বলে শলা তা নিজ হাতে বানাতাম রোদে শুকাতাম। এদিকে সাংসারিক জটিলতা, কুবুদ্ধিগুলো প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকতে লাগলো। কথায় কথায় আমার শ্বাশুড়ি বাপের বাড়ির খোঁটা দিতো। এসবের ইন্দন দাতা ছিল আমার বড় জা। আমার শ্বাশুড়ি কে বুদ্দি দিতো। শুরু হলো সংসারে ঝগড়া বিবাদ। আমি যখন রাত জেগে পড়তাম আমার শ্বাশুড়ি বলছিল তুমি কি গান শুরু করে দিছো? এতো লেখাপড়া পড়ে কি করবা? বাপের বাড়িতে তো অনেক আছে, কি আনছো বাপের বাড়ি থেকে? ছোটলোকের বাচ্চা কথায় কথায় বলতো আরও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতো। বিয়ের পর শুনি আমার স্বামি আমাকে বিয়ে করেছে টাকার লোভে। আমার বাবার সম্পতির উপর। শুরু হলো সংসারে জটিলতা।এদিকে সামনে আমার ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আমি ভালো ছাত্রী ছিলাম এস এস সি তে। কোচিং এ স্যাররা আমাকে নিয়ে গর্ব করতো। স্বামির বাড়ি ছিল মোস্তফি।
সেই ২০ কিলো থেকে স্বামির জন্য রান্না করে রেখে কুড়িগ্রাম এ এসে পরীক্ষা দিতাম।
জীবনটাকে কঠিন থেকে কঠিন মনে হতো। ভাবতাম পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এতো শারীরিক মানসিক চর্চারগুলো আমার সহ্য হতো না। আমি যখন পরীক্ষা দিতে আসছিলাম আমার বান্ধবীরা শুধু আমার হাত ও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো৷ বলতো এমন চেহারা কেন হয়েছে তোর? হাতে কালি লেগেই আছে, মনে হচ্ছে হাতটাও ভালো ভাবে ধুস নি৷ ওই অবস্থায় পরীক্ষা গুলো শেষ করতে করতে আমি কনফেপ্ট করি।
তার আগে আরও একটি কথা আমি যখন শ্বশুর বাড়িতে নতুন বউ হয়ে গেলাম তখন বাড়ি দেখে মাথা ঘুরে গেল।একটা বাংলা ঘর একি ঘরে ওরা মা ছেলে থাকতো, শ্বশুর মারা গেছে অনেক আগে। আমি খুব ই লজ্জাবোধ করতাম৷ পর্দার আড়ালে আমি থাকতাম তার পাশেই ছিল নাকড়ির/খড়ির মাচা।জা তার টিউবওয়েল এ যেতে দিত না।একি বাড়ি একি উঠান ছিল। আমি আমার চাচা শ্বশুরের বাসা থেকে বালতি,বালতি পানি এনে
রান্নাবান্নার কাজ করতাম। পঁচা পুকুরে গোসল করতাম৷ কাপড় ধুইতাম৷ আমার হাসবেন্ট এর সাথে শুরু হলো দ্বন্দ্ব। সব সময় ওর সাথে ঝগড়া করতাম৷ আর ও ছিল খুব অলস। রাত তিনটায় বাসায় ফিরতো ঘুমাতো সকাল ১০ টা পর্যন্ত৷ আমার ঘরে ছিলনা কোন চাল। খাবো কি? এমন একটা টেনশন সব সময় কাজ করতো। এমন একটা ওদের ঘর ছিল ভাংগা যে ঘরে কুকুর সাপ সব সময় চলাফেরা করতো। আমি কথায় কথায় বলতাম ওকে বিয়ে করাটাই ভুল। ও গ্রামের অনেক মানুষের টাকা মেরে খেত। এটা নিয়ে কথা বললেই আমাকে মারতো আমাকে নির্যাতন করতো। একবার আমাকে এমন মাইর মারছিল যে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি৷ ভেবেছিল আমি মারা গিয়েছি পরে ডাক্তার নিয়ে এসে স্যালাইন দিলো৷ সারা শরীরে লাঠির দাগ আর ও সেগুলোতে মলম লাগাতো৷
শ্বশুর বাড়িতে ঢুকে দেখি আমার স্বামি যে ঘরে থাকতো ওখানে কোন তোষপ ছিল না, বিছানায় ছিল গরুর খড় যাকে আমরা বলি পোয়াল ওগুলো ছিল বিছানায়। খাট ছিল না ছিল চকি। একটা বালিস, ছিল না শীতের দিনে গায়ে দেয়া কম্বল।
আমার কাছে জীবনটা বিষের থেকেও ভয়ংকর কিছু মনে হতো৷ বারবার ভাবতাম এ কোন চিটার এর পাল্লায় পড়তাম৷ রিলিপের চাল চুরি করতো, জুয়ার আসরে বসতো ওখান থেকে বোর্ড থেকে টাকা তুলতো। শুধু কথায় কথায় বলতাম ওর সংসার করবো না
আবেগে চলে গিয়েছিলাম না বুঝে না শুনে। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে বুজার বাকি ছিল না অভাব দুয়ারে দাঁড়ালে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ওদিকে ইন্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার মাঝামাঝি আমি অসুস্থ হই৷ মানসিক চাপ আর ২০ কিলো মিটার থেকে এসে পরীক্ষাগুলো দেয়া পসেবল হচ্ছে না৷ আশ্রয় নিলাম বান্ধবীর বাসায় ওখান থেকে বাকি পরীক্ষাগুলো দিলাম। পরীক্ষা শেষ করে আমি আরো দূর্বল হয়ে পড়তাম। ডাক্তার দেখালাম লালমনির হাটে। ডাক্তার চেকআপ করে বললো আমি মা হতে চলছি৷ ডাক্তারের রুম থেকে বাহির হয়ে ওকে বললাম আমি বেবি নিবো না। সংসারে অভাব অনটন অশান্তি আমার কোন ইচ্ছে নেই৷ কিন্তু আমার স্বামি আমাকে ভয় দেখালো বললো, আগে একটা বেবি নষ্ট করছো এটা আল্লাহ র দান৷ এটা নষ্ট করলে তুমি যদি কখনো মা হতে না পারো তাহলে আমি আবার বিয়ে করবো৷ আমার সাথে ব্লাকমেইল করে বেবিটাকে নেয়ালো।
ওদিকে শ্বাশুড়ির অত্যাচারগুলোও বাড়তে থাকলো।
আমি ওইদিন ২০১১ সালের জানুয়ারিতে চলে আসি রাগ করে। ২০১১ তেই আমি কনসেপ্ট করি৷ বাবার বাসায় আসি এক খালাত বোনের মাধ্যমে৷
বাবা আমাকে অনেক লোভ লালসা দেখায়।
শুরু হলো আরও এক নাটকীয় জীবন। আমি কখনোই চাই নি আমাদের ডির্ভোস হোক 😭😭। ওদিলে আমার সন্তানটার পেটের বয়স দের মাস। দের মাস হলো আমি কনসেপ্ট করছি। এটা গোপন রাখি৷ আমার বাবার মতন নরপিশাচ এর ঘটনাগুলো পরে বলছি। এক ধোকা থেকে রাগ করে চলে এসে আর এক ঢোকার পাল্লায় পড়লাম।আমি যখন কন্যা সন্তানের মা হলাম বিশ্বাস করেন আমার স্বামির একটি টাকা খরচ করার মতন উপায় ছিল না। ক্লিনিক থেকে বাসায় ফিরবো ৭ হাজার টাকার দরকার ছিল।আমার মামা শ্বশুর সহ সবাই মিলে সেটা দিলো। বাড়িতে বিকালে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম৷ মেয়ের গায়ে তুলা পেঁচানো ছিল। কনকনে শীত,জন্মের পর মেয়ের বাবা একটি জামাও কিনে দিতে পারে নি৷ এভাবে মেয়ের তুলা অবস্থায় ২৪ ঘন্টা কেটে যায়। পরদিন আমার মামী শ্বাশুড়ি এসে ওইদিন ই মেয়েকে একটা গরমের পোষাক গিফ্ট করে সাথে একটা স্যান্ডল গেঞ্জি৷ নিজ হাতে পড়িয়ে দেয়। আর আমার জামাইকে অনেক রাগারাগি করে৷
তখনো মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সন্তানটাকে কেন আনলাম? 😭
১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারন করে আজকে মা হয়ে সন্তান খালি গায় 😭।
আমাকে দেখাশুনা করার জন্য আমার ভাই এর বউ আসে। আমরা একটা রুম ভাড়া নেই। একটা রুমে ২ টা খাট ছিল। আমার জামাই, আমি আমার মেয়ে আর আমার ভাবি ছিল একি বিছানায় ছিলাম।আমি লক্ষ্য করলাম আমার ভাবির গায়ে আমার জামাই হাত দিচ্ছে। আমার চোখের সামনে। আমার ভাবির সাথে ওর অন্তরঙ্গ অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে৷ কিন্তু আমাকে দেখাতো ও আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসতো।
এটা নিয়ে আমি মুখ খুলি তখন যখন ভাবি চলে যায়। পরে ওর সাথে আমার অশান্তি শুরু হয় এটা নিয়ে অশান্তির এক পর্যায়ে আমি আমার ১ মাস এর মেয়েকে ফেলে চলে যাই রেললাইনের ধারে সুইসাইড এর জন্য। আমার বাড়ির সাথেই ছিল তিসতা স্টেশন৷
কিন্তু ও সহ আমার মামা মামীরা ( শ্বশুর/শ্বাশুড়ি) আমাকে অনেক কষ্টে ফিরালো। তখন আমার মেয়েটা দুধের জন্য ২ ঘন্টা ধরে কাঁদছিল। কিন্তু মনটা এতোটাই এতোটাই ভেংগে গিয়েছিল যে আর নিজেকে সামলাতে পারি নি।
পরে কিছুদিন সংসার ভালো ভাবেই চলছিল। তারউপর দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেল। আমার মেয়ের বয়স যখন ৬ মাস তখন ওর আকিকা করা হলো। অনুষ্ঠান করা হলো অনেকটা ধুমধুমভাবে।
এর আগেও কিছু কথা ছিল আমার যখন তীব্র সন্তান হওয়ার পেইন শুরু হলো আমার বাবা ও মা কে অনেক বার একটি বারের জন্য দেখতে চেয়েছিলাম, একটি বার যাতে ওরা আসে। বারবার কল করছিল আমার বর৷ কিন্তু তারা তখন কঠিন বিপদে আমার পাশে দাঁড়ায় নি৷ সন্তানটা হওয়ার পরও তার মুখও দেখে নি। আকিকাতে মা এসেছিল কিন্তু ভরা অনুষ্ঠানে মা অপমান করে দিব্যি খেয়ে চলে আসলো।
আমি অনুষ্ঠান শেষ করে সেদিন সন্তানকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলাম আর ওইদিন থেকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছিলাম আমি এতিম। আমার বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই। 😭 দেখতে দেখতে সংসার চলছিল একটা সময় আমার বরের তিসতা টোল এর জবটা চলে গেল। তখন মেয়ের বয়স ২ বছর। আমি তখন BSS এ তে পড়ি সম্ভবত ২য় বর্ষে। সংসারে অভাব অনটন। কথায় বলে, অভাব দুয়ারে দাঁড়ালে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। সংসারে এমন অবস্থা হলো আমার বর বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে পারতো না, ২ মাস এর ভাড়া বাকি পড়ছিল৷ ঘরে চাল নেই, লাকড়ি নেই, ডাল নেই।
তখন তার রসে ভরা কথাগুলো শুনতেও ঘৃনা লাগলো। সে সব সময় মিথ্যে কথা বলতো। যা বলতো শুধু আমাকে ভুল ভাল বুঝাতো । আমিও সরল মনে তাই বিশ্বাস করতাম৷ আমার এমনো দিন গেছে আমি লজ্জা ভুলে মানুষের বাসায় কাজের লোকের কাজ করেছি দু মুঠো ভাতের জন্য। আমি তখনো ওর সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়া করেই চলছি৷ শুধু বলছি বউ করছো, মিথ্যে কথা বলে বিয়ে করছো, ঘর ভাড়া বাকি, ঘরে খাবার নেই, মেয়েটার ব্লাড ডিসেনট্রি শুরু হয়েছে।
আমি আর এক মুহূর্ত তোমার সাথে সংসার করবো না। বাবার বাসায় চলে যাবো। আমি বারবার বলতাম রিকসা চালাও, ঠেলাগাড়ি চালাও যেটাই করো বউ সন্তানকে পালতে হবে। বাসা ভাড়া দিতে পারি নি বলে বাড়িওয়ালা বাসা ছাড়ার নোটিশ দিলো৷ আর বারবার আমাকেই চাপ দিতে লাগলো। ও পালিয়ে বেড়াতো।
এভাবে আমার মেয়ের আরও ৬ মাস কেটে গেল মানে আড়াই বছর। তখনো আমি চিন্তা করি নি বা মাথায় কখনো এটা ভাবি নি যে আমি ওকে ছেড়ে দিব। কারন ভালোবেসে বিয়ে করেছি আমি ওকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি নি আর পারবো না এই চিন্তাধারা ছিল।
সময় পরিস্থিতি যে মানুষকে পাল্টে ফেলে আমি তার জলন্ত প্রমান। তবে হ্যাঁ আমি লেখাপড়া ছাড়ি নি। কলেজে সকলের প্রিয় ছিলাম৷ বন্ধু/ বান্ধব,স্যার এমনকি দপ্তরি পর্যন্ত আমাকে এক নামে চিনতো। কারন আমি ভালো ছাত্রী ছিলাম আর ভালো পেজেন্টেশন করতে পারতাম।
আমার এই অবস্থা সবাই জানতো স্যাররা আর বন্ধু/ বান্ধব সবাই বলতো এতো বড় বাড়ির মেয়ে কি করে এমন একটা লায়ারের প্রেমে পড়লো।😭
যাক সে সব কথা BSS কমপ্লিট করার আগেই রাগ করেই বাবার বাসায় চলে আসলাম৷আসার কিছুদিন পর শুনি আমার বর আবারো পরকীয়ায় লিপ্ত আমারি ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সাথে৷ তাদের ভিডিও, কথাবার্তা, একে অপরের সাথে অন্তরঙ্গ ছবিগুলো আমি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে ফেজবুকে পাই৷
তখন দেখা মাত্রই মাথার উপর আকাশ ভেংগে পড়লো।
আমার মেয়েটার যখন ব্লাড ডিসেনট্রি হলো বাঁচার উপায় ছিল না। ডাক্তার বললো রংপুর মেডিকেলে নিয়ে যেতে। কিন্তু টাকা ছিল না। একে তো বাড়ি ভাড়া বাকি তার উপর ঘরে খাবার ছিল না।আমার গলায় একটা স্বর্নের চেইন থাকে৷ সেই চেইনটায় আমার বর নজর দিলো। বললো ওটা খুলে দাও বন্ধক রাখি। আমিও নিরুপায় হয়ে দিলাম। চার হাজার টাকা বন্ধক রাখলো। বললো টাকা হলে আবার আমাকে ফিরিয়ে দিবে। সেই টাকা দিয়ে সে ঘরে খাবার কিনলো মেয়েকে আর রংপুরে নিলাম না, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা করালাম। মেয়েটা সুস্থ হলো। এভাবে আরও বেশ কিছুদিন চলতে লাগলো। কিন্তু কতদিন!!! 😭
এদিকে ওর সাথে আমার ঝগড়া লেগেই থাকতো। জুয়ার বোর্ড থেকে বাসায় ফিরতো রাত ২ টায় সকাল ১১ টা পর্যন্ত ঘুমাতো। আমরা পরে বাসা ভাড়া দিয়ে আবারো বাসা চেন্জ করলাম৷ সন্তানকে পেটে নিয়ে মানুষের বাসায় বাসায় টিউশনি পড়িয়েছিলাম, সে টাকাও আমার বর কেঁড়ে নিতো৷
অন্য বাসায় উঠলাম রুমে টিভি ছিল সেটা বিক্রি করল ৭ হাজার টাকায়।
বাসা চেন্জ করেও মনে শান্তি নেই। মেয়েকে রেখে প্রতিদিন কলেজ করলাম৷মূল সমস্যা ছিল বেকার,অলস আর আওয়ামী পার্টি করতো। শুধু মিছিল, মিটিং এসবে দৌঁড়াতো। মানুষের জন্য বরাদ্দ করা চাউল চুরি করতো,কম্বল চুরি করতো। এগুলো আমার পছন্দ ছিল না। এই সব কারন নিয়ে ঝগড়া করছিলাম প্রচুর।
আমি যখন শাড়ি পড়তাম ও নিজ হাতে আমাকে সাজাত। তখন মোটামুটি চিকন সুন্দর ছিলাম বলে ওর ২ জন বন্ধুুর নজরে পড়ি। আমার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে ওরা আমাকে ওদেরকে সময় দিতে বলে বিনিময়ে আমার সংসার চালাবে কিন্তু শর্ত ছিল বরকে বলা যাবে না।কিন্তু আমি নিজেকে বিক্রি করতে পারি নি। আর লজ্জায় বরকেও বলতে পারি নি।
মেয়ে মানুষ তো তার উপর ও জানতো আমি খুব দূর্বল ভালোবাসা ছাড়া কিছু বুজি না। কিন্তু অভাব, অবৈধ কাজগুলো ওর ওই কথাগুলোকেও বিরক্ত লাগতো।
ও যখন জুয়ার বোর্ড এ বসতো টাকা উঠানোর জন্য আমি রাতে বারবার ফোন দিলাম কিন্তু আমাকে বলতো কাজ করি দেরি আছে বাসায় ফিরা। তুমি খেয়ে ঘুমাও। আমি আমার সংসার জীবনে কখনো এক বেলা ওকে ছাড়া খাই নি৷ কি সকাল, কি দুপুর, কি রাত। সন্তান পেটে নিয়েও আমি ওর জন্য রাত জেগে ভাত নিয়ে অপেক্ষা করতাম। আমি ওকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসতাম। ও জুয়ার বোর্ড থেকে টাকা উঠাতো আর সংসার চালাত। আমি নিষেধ করতাম৷ ওই টাকাও ছিল অবৈধ। এতে আমার মেয়েটার উপরে বারবার প্রভাব পড়তো, ওর শরীর খারাপ হতো সব সময় রোগ ব্যাধি, ফ্যাসাত লেগেই থাকতো। এগুলো ওকে বুঝালাম। নামাজী হতে বলতাম৷ ও আমার কথা শুনতো না।
একটা সময় আমার ভালো কথাগুলো ওর ভালো লাগতো না। একটা সময় ওর সাথে কথা বলা ছেড়েই দিলাম৷ দুরুত্ব বাড়লো। বাসা চেন্জ করেছি ২ রুমের বাসা ছিল। এক রুমে ও ঘুমাতো অন্য রুমে আমি ও আমার মেয়ে। একি বিছানায় আর ওর সাথে ঘুমাতাম না৷ তেমন কথাবার্তাও বলতাম না। কলেজে যেতাম মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসে দেখি ও সব কাজ এলোমেলো করে রাখতো। সংসারের কোন কাজ ই করতো না কখনো৷ আমার খুব রাগ হতো। কলেজ থেকে ফিরে এসে আবার ঘর সন্তান সব সামলাতাম। মেয়েটাকেও সময় দিতো না৷ সকালে বেড়িয়ে যেত দুপুরে ওর মায়ের বাসায় ভাত খেত। রাতে জুয়ার বোর্ড এ বসতো। রাত ২ টায় বাসায় ফিরতো। জীবনটাকে অতিষ্ঠ মনে হচ্ছিল। আর যে বাসায় থাকতাম ওই বাসার এক ভাবি সব সময় ঠাট্টা করতো, কথাগুলো বলতো খুব অপমানজনক লাগতো। উনি ছিল ডাক্তারের বউ। উনি আমাকে নিয়ে বিকাল টাইমটা হাটতো এর বাড়ি ওর বাড়িতে নিয়ে যেত। একটা জায়গায় ছোট ছিলাম যখন কেউ প্রশ্ন তুললো স্বামি কি করে বলতে পারতাম না। রাগে ক্ষোভে আর আমার অন্যের চোখকে মনে হতো সমাজে আমাকে খারাপ চোখে দেখছে।
👉২০১৪ সাল, ওইদিন আমি আমার মাকে কল দেই অনেকটা রাগ করে যে ওর সাথে সংসার করবো না। কারন ওর সাথে তখন আমার অনেক দুরুত্ব চলে আসছে। রাগ করে আলাদা বিছানায় ঘুমালেও ও আমাকে কখনো ওর ঘরে ডেকে নিয়ে যেত না৷ কথাও হতো না। এভাবে তো জীবন চলে না৷ মেয়েটার কথা ভাবতাম, ওর কি আছে ফিউচার। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো জন্যেই বাসায় নিজ থেকে যোগাযোগ করি। তারপর অনেকটা রাগে জেদে ওর সন্তানকে আমি ওকে দিয়ে চলে আসি বাবার বাসায় ।তখনো আমার মেয়েটা দুধ পান করে। বাবার বাসায় ফিরে আসি৷ কখনো চিন্তা করিনি ওকে ডির্ভোস করবো।😭 ভেবেছিলাম বাবার বাসায় কয়েকদিন থাকি দেখি ও নিজেকে কর্মঠ করে কি না,মিথ্যা বলা বলা ছেড়ে দেয় কি না। ও পরিবর্তন হলেই ফিরবো। রাগ করে মেয়েকে রেখে আসলেও পরে আর মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারি না। পরে আবারো মেয়ের বাবার সাথে যোগাযোগ করি। ও শুরুতে মেয়েকে দিতে চায় নি। কারন জানতো মেয়ে আমার দূর্বলতা৷ কিন্তু দুধের শিশু তখন আমার মেয়ের বয়স আড়াই বছর। ওর সাথে রাগ করে চলে আসার পর ও আবারো অনেক মেয়েদের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
পরে তিনদিন পর অনেক কষ্টে ছলে বলে কৌশলে ওর কাছ থেকে মেয়েকে নেই৷ কথা দিয়েছিলাম ওকে বাবার বাসায় ৭ দিন এর বেশি থাকা যাবে না। ও কাজ করবে নিজেকে পরিবর্তন করবে। আমি জানতাম এসব কিছু মিথ্যে। আবারো আমার নরম মনটাকে ও ভোলাচ্ছে।
বাসায় বাসার কিছুদিন কেউ কিছু বললো না আমিও কথা বলি না৷ এক পর্যায়ে মা আমার কাছ থেকে যড়যন্ত্র করে ফোনটা নিয়ে নিলো। মানে ওরা ও আমাকে সংসার করতে দিবে না। আমি পাগল হয়ে গেলাম৷ কিছুতেই মনটাকে মানাতে পারতাম না৷ ওর সাথে আমি কথা বলতাম তারপরো গোপনে। ও আমাকে নিতে আসছিল পরপর আমার মা অনেক অপমান করে তাকে। আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে রাত দিন ২৪ ঘন্টা শুধু বুঝাতো আমার ক্যারিয়ার নিয়ে।
প্রতিদিন আমার বাবা আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বুঝাতো, তুমি সুন্দরী মেয়ে। তোমার জন্য ছেলের অভাব হবে না৷ এগুলো যা করছো আবেগে করছো, তুমি ওকে ডির্ভোস করো আমরা তোমাকে অন্য জায়গায় আবারো বিয়ে দিবো। তুমি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাও লেখাপড়া করো । আর সব সময় আমার হাসবেন্ট এর প্রতি খারাপ কথা বলতো। বাসায় ফিরে বাবা মিথ্যে কথা বলছিল আমি আজ খবর নিছি ওই ছেলে তো রীতিমত মদ গাজা খায়। ও তোমার যোগ্য না। ও তোমাকে বিয়ে করছে আমাদের এই প্রপার্টির লোভে৷ ও মিথ্যুক প্রতারক। তুমি নিজেকে তৈরি করো। তুমি একজন ভালো আইনজীবী হও, এটা সেটা অনেক কথা বলতে লাগলো আর আমার মনটাকে ভোলাতে চেষ্টা করল।
আমাকে যত কথা বলতোই আমি বিশ্বাস করতাম না আমার স্বামি মদ গাঁজা খায় এটা ও বিশ্বাসযোগ্য কথা ছিল।ওর প্রতি আমার মনটাকে এমন ভাবে বিষিয়ে দিলো। আর আমার বাবা আমাকে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তখন আমি BSS ফাইনাল পরীক্ষা দিব। এর আগে অবশ্য আমার ফোনটা দিলো আমার মা। তার আগেও আমার স্বামি বাসায় আসছিল আমাকে নিতে এটা নিয়েও বাঁধা ছিল। ওর মুখ আমাকে দেখতে দেয় নি৷ অন্য ঘরে বন্দি করে রাখছিল। এভাবে যোগাযোগ বিহীন ভাবে কিছুদিন চললো। আমি নাম্বার চেঞ্জ করলাম বাবার কথায় ততোদিনে আমার ব্রেন পুরোপুরি ওয়াস করে ফেলেছে।
পরীক্ষা শেষ করলাম কঠিন পাহাড়ায় লালমনিতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো চার ঘন্টা একটানা আমার বড় ভাই পাহাড়ায় ছিল। ভাই এর চোখকে ফাঁকি দিয়ে আবারো আমি ওর সাথে দেখা করি৷ । একটা পার্কে আমরা যাই ভাইকে মিথ্যে কথা বলে ওখানে গিয়ে এতোদিনের জমানো কষ্টগুলো না বলে ওর বুকটা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে জোরে জোরে কাঁদি৷ কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলি। মানে তখনো আমি চাই তাকে। ও আমার কান্না দেখে স্থবির হয়ে গেল। কথা বলা বন্ধ। শুধু কেঁদেইছি। কথা হলো না। পার্ক থেকে দ্রুত চলে এলাম ভাইয়ের কাছে। প্রতিটি পরীক্ষা আমি কতটা মানসিক টেনশনে আর কড়া পাহাড়ায় দিয়েছি সেটা আমিই জানি৷ খাওয়া ঘুম সব হারাম হলো। ফেজবুকটাকেও ভালো লাগতো না৷ লেখাপড়ায় মন বসতো না। আমার ভিতরে জমে থাকা কষ্টগুলো একবার এর জন্যও পরিবার বুঝতে চায় নি আর জানতেও চায় না।
অবশেষে আমাদের ডির্ভোস হলো ২০১৪ সালের জুন মাস এর ২৮ তারিখে। 😭😭😭😭
🤦♀️জীবনের ২য় মোড়ঃ একজন ডির্ভোসী মেয়ে কখনো তার পরিবারে সম্মান পায় না। আমিও পাই নি৷ মেয়েটাকে নিয়ে চরম বিপর্যয় এ পড়লাম। আমার মা আমাকে উঠতে বসতে কথা শোনাতো। কাজের লোকের যা সম্মান ছিল সেটা আমার ছিল না। বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে করাতো। জর অসুখ কিছুই বুঝতো না। বললেই বলতো অযুহাত। এভাবে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল একটানা একাকিত্ব জীবন পাড়ি দিলাম। আমার বাবা তিনবেলা খাওয়াতো আর সেই খাওয়াটাকে সব সময় খোটা দিতো। আমার বড় বোন এর ব্যবহৃত জামা কাপড় পড়তাম৷ আমার সন্তানটাও পড়তো ওর ছেলে মেয়ের জামা কাপড় দিয়ে। অসুস্থ হলে মা বা দুজন ই বলবো তুই মরিস না কেন? তুই মরলেই বাঁচি। আমি পথ খুঁজতাম কি করবো কোথায় যাবো। BCC কমপ্লিট করে ঢাকায় গিয়ে পথে পথে চাকরী খুঁজতাম৷ কিন্তু যার দুয়ারেই যেতাম তার কাছ থেকেই ফিরতে হতো। বাবার বাড়ির নিমর্ম অত্যাচার আর শাসন শোষন আমাকে মানসিক দিকে ঠেলে দিলো। শুধু বাবার বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য। পথ খুজতাম। টানা ৭ টা বছর মানসিক অস্থিরতা, বিষন্নতা, হতাশা,না পাওয়ার যন্ত্রণা আর পারিবারিক টর্চারগুলো আমাকে প্রতিনিয়ত পুড়াতো।
টানা ৭ বছর মুখ বুঝে সব অত্যাচার সহ্য করি। বুঝতে পারি ডির্ভোসী মেয়ে পরিবারের কাছে বোঝা। নানা ভাবে পারিবারিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হই আমি। বুকের পেইনটা বাড়তেই থাকলো । রাত জাগতাম এমন কোন দিন ছিল না৷ রুমের সিলিং ফ্যানটার সাথে কতবার যে ওড়না পেঁচিয়েছে নিজেকে শেষ করার জন্য কিন্তু পারি নি৷ ব্লেড দিয়ে হাত কেটে নিজেকে রক্তাক্ত করতাম৷ ঘুমের ঔষধ অনেকগুলো করে খেতাম৷ এভাবে ধীরে ধীরে আমি খুব অসুস্থ হই৷ এক পর্যায়ে অন্ধকার ঘরে থাকতে থাকতে কথা বলা বন্ধ হয়। আমি তখন বিছানায় পড়ে গেলাম৷ শরীরে হিমোগ্লোবিন সর্ট পড়লো, অনেক টেস্ট করলাম কোন রোগ ধরা পড়লো না৷ আমি বিছানা থেকে নামতে পারতাম না, মুখ দিয়ে কথাও বাহির হতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম। বলতে গেলে পুরাই পাগল হয়ে গেছি।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি তে আমার অসুস্থতা আরও বাড়তে লাগলো। পরপর কয়েকবার ডাক্তার পরিবর্তন করলাম। লাস্ট বার ডাক্তার আমার মা কে ডেকে বললো আপনি আর এক মাস পরে নিয়ে এলে আপনার মেয়েকে মানসিক হাসপাতালে পাঠাতাম। আপনার মেয়ের মানসিক অবস্থা খুব ই খারাপ৷ আমি সুইসাইড করবো ভেবে মা তিনমাস আমার ঘরে থাকলো। তারপর আবারো ডাক্তারের চেকআপের ডেট আসলো। আবারো গেলাম তখন একটু একটু কথা বলতে পারি খুব বেশি না৷ ওইদিন ডাক্তার আমাকে প্রায় ৪৫ মিনিট শুধু বুঝালো জীবনে জেগে উঠার গল্প বললো। উনি বললো, আপনি অনেক সুন্দরী মেয়ে৷ আপনি জেগে উঠুন৷ আপনাকে পড়াশুনা করতে হবে জেগে উঠতে হবে৷ আপনি আবারো বিয়ে করবেন সংসার করবেন কিচ্ছু হয় নি আপনার জীবনে৷
👍উদ্যোক্তার গল্প
ডাক্তার আমাকে উদ্দোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রানিত করলো।
তারপর আমি ওইদিন ডাক্তারের কথাগুলো শুনছিলাম মনে জোড় এলো ঠিক ই কিন্তু শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিল৷
উনি চোখে পানি দেখে বললো আইনের ছাত্রীর মনে কোন ইমোশনালের জায়গা নেই। আইন লজিক বোঝে যুক্তি বোঝে। আপনি না আইনজীবী হবেন, এতো মিষ্টি ভরা মুখে শুধু হাসবেন। নিজের যোগ্যতা অর্জন করুন সুন্দর মানুষের বরের অভাব পড়ে না।শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা জীবন।হঠাৎ করে ফেসবুকের এক বন্ধুর মাধ্যমে আমি শুনতে পারি ওমেন্স আর ওই গ্রুপের কথা সেখানে আমার বন্ধু আমাকে এড করায় এবং সমস্ত নিয়ম কারণ গুলো শিখিয়ে দেয়। আমি টানা 10 দিনের মত পোস্টগুলো পড়ে এবং বিভিন্ন আপুদের পোস্টগুলো পড়ে অনুপ্রাণিত হই। তারপর শুরু করে আমি ছোট ছোট ফুল দিয়ে কুশিকাটার ফুল। তখনো মাইনষে ঐ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল সাত হাজারের মতো। একদিন হঠাৎ করে সাহস করে আমি একটি পোষ্ট দেই রাতে আর সকালবেলা উঠে দেখি এই মিরাক্কেল এর মত আমার জীবনে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমার একটা পোস্টে ঐদিন লাইক পড়ে প্রায় ওয়ানকে এবং কমেন্ট বক্সে ভরে ওঠে। প্রায় 500 ফুলের মত আমি অর্ডার বাই ছোট ছোট ফুল গুলো আমি 20 টাকা 30 টাকা করে বিক্রি করতে শুরু করি। ওমেন্স এন্ড ওই গ্রুপে আমার পরিচিত হয় তখন ফুল আপু হিসেবে। পর্যায়ক্রমে আমি দুই তিনবার করে 500 ফুলগুলো ডেলিভারি করি। ধীরে ধীরে আমার অর্ডারগুলো বাড়তে থাকে তখন আমরা কর্মীর সংকট দেখা দেয় তখন আমি জন্য বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কর্মী খুঁজে নিয়ে আসি। 6 জন কর্মীকে আমি প্রশিক্ষণ দেয় এবং 6 জন কর্মী নিয়ে আমি আমার কাজগুলো সম্পন্ন করি। খুব ভালো পরিচিতি অর্জন করি আমি ওমেন্স ওই গ্রুপের মাধ্যমে। আমেরিকা কানাডা সহ বেশ কিছু দেশ থেকে আমার অর্ডার আসে। একদিন এক রাতে আমেরিকা প্রবাসী আপু আমাকে প্রায় 40 হাজার টাকার মতো কিছু প্রোডাক্ট এর অর্ডার দিল। আমি সময় নিলাম এক মাস কিন্তু কারো সমস্যা ছিল কার্গোর।এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে শুরু হলো কোভিদ নাইনটিন।আমার সমস্ত প্ল্যান পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।তবুও আমি মুখ থুবরে পড়ে থাকি নি আমার অর্ডার ছিল না তবুও আমি দিনরাত কাজ করতাম। এক বন্ধুর সহায়তায় আমি একটি ওয়েবসাইট খুলি ওয়েবসাইটের লিংক কি আমি একটা কাজ শুরু করে দেই সেখানে প্রায় 30 হাজার টাকা বিনিয়োগ করি।কিন্তু আমার পরিকল্পনাটা ছিল সম্পূর্ণ ভুল কারণ আমার পণ্য থাকতো না তখন করার মতো কোনো উপায় ছিল না।যার ফলে একটা সময় ওয়েবসাইট টা আমাকে বাতিল করতে হয়।কোভিড ১৯ থাকাকালীন সময়েও আমি থেমে থাকেনি আমি তারপরও রাতদিন একাকার করে কাজ করেছি কর্মীকে বাদ দিয়ে।ফেসবুকের আর এক বন্ধুর মাধ্যমে আমি শুনতে পাই নিজের বলা গল্প ফাউন্ডেশন এর কথা।সে আমাকে বলে প্রতি মঙ্গলবার করে এখানে হাট বসে তুমি তোমার প্রোডাক্টগুলো নিয়ে প্রতি হাটে হাটে এখানে সেল করতে পারো এখানে প্রচুর পরিমাণে সেল হয়। সে স্যারের কথা বলে আমাকে যে স্যার খুব ভালো একজন মানুষ যার নাম ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।আমার ওই বন্ধুর মাধ্যমে আমি 11 তম ব্যাচের রেজিস্ট্রেশন করি আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বর হচ্ছে 28 244।ধীরে ধীরে কুশিকাটার কাজ গুলো যখন চারদিকে কমবেশি সবাই কাজ করতে শুরু করল তখন আমি আমার বিজনেস পয়েন্ট টা কে একটু চেঞ্জ করলাম। আমি প্রতিদিন রাতে গুগল এ ঘাটাঘাটি করি এবং সেখান থেকে নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া খুঁজে বের করি।বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক গল্প গুলো পড়ি এবং বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের আপু এবং ভাইয়া দের জীবন কাহিনী গুলো পড়ে নিজেকে আরও অনুপ্রাণিত করি। এরপর আমি শুরু করি অর্গানিক প্রডাক্ট নিয়ে আমার প্রোডাক্ট এর মধ্যে রয়েছে অর্গানিক হেয়ার অয়েল, অলিভ অয়েল,সুপারফাস্ট হেয়ার অয়েল,নিম তেল, টিনএজদের জন্য সিরাম। সাথে যুক্ত করে উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত খাবার সিদল। আমার অর্গানিক প্রডাক্ট গুলোর মধ্যে সুপারফাস্ট হেয়ার অয়েল অর্গানিক হেয়ার অয়েল টিনএজদের জন্য সিরাম সেল করে অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি প্রায় 20 হাজার টাকা ইনকাম করি। সিদল নিয়ে প্রথম দিন যেদিন আমি পোস্ট করি ওই দিনই আমি 21 টার মত অর্ডার পাই। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৪
Date:- ২৮/১১/২০২১ ইং
Jakia Fardousy
জেলাঃকুড়িগ্রাম
বর্তমান ঠিকানাঃ কুড়িগ্রাম
ব্যাচঃ ১১
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ঃ২৮২৪৪
গ্রাম বাংলার হস্ত শিল্প, আপনাদের সবাইকে সালাম জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি " আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।