জীবন গল্প তৈরির যুদ্ধ
জীবন মানেই অনেক চ্যালেঞ্জ। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া।এই ছোট্ট জীবনে অনেক ধাপ পেরিয়ে সফলতার মুখ দেখতে হয়। সফলতা খুব সহজেই ধরা দেয় না। তাকে ধরতে হয়। নিজের করে নিতে হয়।
প্রিয় মেন্টরের প্রতি কৃতজ্ঞ যিনি হতাশাগ্রস্থ ও তরুন সমাজকে র্নিস্বার্থ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যিনি তৈরী করে দিয়েছেন আমাদের এই বিশাল প্লাটফর্ম। যার কারনে আমরা এখনো স্বপ্ন দেখতে সাহস পাচ্ছি। পারছি এগিয়ে যেতে স্যারের অনুপ্রেরণা শুরু করেছে অনেক জীবন গল্প তৈরির যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের আমিও এক অদ্যম সৈনিক। আজ শুনাবো সেই গল্প আপনাদের।
আমি আবুল খায়ের,
বর্তমানে ঢাকা তেজগাঁও এ একটি ছোট মাদ্রাসায় কর্মরত আছি। ফরীদপুরের সালথায় আমার বেড়ে ওঠা, দু'চার কলমা পড়া লেখা ওখানে ই শেষ হয়। পরিবারের বড় সন্তান এবং আর্থিক দৈন্যতার দরুন লেখা পড়ার মসৃণ হাইওয়ে তে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। হিফজুল কোরআন শেষ করেই জীবিকার তাগিদে পা বাড়াতে হয় অমসৃণ ও কঙ্কটাকীর্ণ কর্মজীবনে। শুরু টা হয় ২০০৯ সালে হালাল রুজি রোজগারের জন্য পারিবারিক মায়া ত্যাগ করে। বড় সন্তান হিসেবে সংসারের হাল ধরতে।
পারি জমাই অর্থ বিত্তে আর প্রাচুর্যে ভরপুর রাজধানী ঢাকা শহরে। স্বাভাবিক গতিতে সীমিত আয়ের এর মধ্য দিয়ে সাধারণ জীবনযাপনে বেশ ভালই চলছিল আল্লাহপাকের কৃপায়।
কিন্তু এর মাঝেই সুন্দর স্বস্তির জীবনে অস্বস্তিকর করোনাভাইরাস এসে সবকিছুই লন্ডভন্ড করে দিল😭। চতুর্দিকে লকডাউন ফলে আমার কর্মক্ষেত্র ছোট্ট মাদ্রাসা টিও এর থেকে রক্ষা পায়নি নিরুপায় হয়ে চলে যেতে হয় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। লকডাউন এর সময় মাদ্রাসা থেকে সামান্য যা পেয়েছি তা দিয়ে কোনরকম দিনানিপাত করছি। কষ্টের শুরু এখান থেকে অতিতের কষ্ট গুলো মুছতে না মুছতে শুরু হলো করোনার বয়াল কষ্টের দিন। মাদ্রাসা খুলা না থাকার কারনে কোন বেতন পাচ্ছিলাম না। সংসারে আমি উর্পাজনের একমাত্র ভরসা।সেই আমি বেকারত্ব জীবন নতুন এক সমস্যা সৃষ্টি করে দিলো।
বেকারত্ব আর লকডাউন এর কারণে একটা পর্যায়ে এমন হলো যে, আমি সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত😪 হয়ে গেলাম আমার পকেটে কোন টাকা ই ছিল না। এমনকি বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার জন্য ৫ টি টাকা পর্যন্ত নেই আমার কাছে, কারো কাছ থেকে লোন নেওয়ার ও কোন পরিস্থিতি ছিল না। এভাবে প্রায়১৫ দিন কাটলো।কি করবো ভেবে তখন দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলাম, মনে মনে ভাবলাম আমাকে কিছু একটা করা উচিত,তখন মনে হলো এখন তো আমের (গত বছর) সময় তাই আম নিয়ে শুরু করবো। আমার পরিবার থেকে কিছু ধার দেনা করে আমি নিজে গিয়ে হাট থেকে আম কিনে রাস্তার পাশে বিক্রি করা শুরু করলাম।তা থেকে সামান্য কিছু আয় আসতে শুরু করলো আলহামদুলিল্লাহ।
ধীরে ধীরে তা বাড়াতে শুরু করলাম।ওখানে থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই আমার সংসার চলতে থাকলো এভাবেই করোনাকালীন সময় টা পার করি। এটা ছিল অফলাইনে ব্যবসা। কিন্তু মাঝে মাঝে ফেসবুকে চোখ যেতেই দেখতাম অনেকেই অনলাইন বিজনেস করছে, এ বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল এবং এতে আমি শিহরিত হলাম।
তারপর মাদ্রাসা খোলা হল আসলাম মাদ্রাসায়, কিছু দিন এভাবেই গেল।একসময় মনে হলো আমার অনলাইনে কিছু করা উচিত আমার মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন জাগলো দেখি আমিও কিছু একটা করতে পারি কিনা, কিন্তু আমার তো কোনো পুঁজি নাই আছে মাত্র ৫ হাজার টাকা।এই টাকা দিয়ে কি করে শুরু করবো। কিন্তু মন সেই কথা শুনছে না শুধু বার বার ভাবিয়ে তুলছিল আমার কিছু করা উচিত,না পারলে ও একবার চেষ্টা করা উচিত।মাথার ভিতরে একটায় চিন্তা ৫০০০ টাকা দিয়ে কি করতে পারব !!! অনেকের সাথেই পরামর্শ করলাম কিন্তু কারো সাথে পরামর্শ করে কোন ফায়দা পেলাম না।এক সময় নিরাশ হয়ে গেলাম হাল ছেড়ে দেয়ার অবস্থা একদমই নিরুপায় হয়ে পড়লাম কিন্তু খোদার কি কারিশমা তিনি যেন আমার নিভু নিভু প্রদীপ পেট্রোল ঢেলে দিলেন আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনঘরে তার কুদরতি প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলেন বিশাল মরুভূমিতে আমার জন্য বৃহৎ আকারের বাহন এর ব্যবস্থা করে দিলেন আমাদের শ্রদ্ধা ভাজন Iqbal Bahar Zahid স্যারের মাধ্যমে।
হুট করেই চোখ পড়ল স্যারের ফাউন্ডেশনের পেইজ এবং স্যারের প্রথম সেশনের লেখাটা পড়ে আমি বিমোহিত হলাম,মুগ্ধ হলাম সাহস পেলাম চলার,শক্তি পেলাম সেখান থেকেই আমার দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার অদম্য ইচ্ছায় পথ চলা শুরু। গত কোরবানির বেশ কিছুদিন পর , স্যারের লেখা থেকে সাহস উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শুরু করলাম নতুন এক জীবন। প্রথমে মাত্র ৫লিটার সরিষার তেল আনলাম। কিন্তু আমার সেই তৈল আর ঘর থেকে শেষ করতে পারছিলাম না। দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে এক ফোটা তেলও বিক্রি করতে পারছিলাম না , তখন আবারো হীনমন্যতার শিকার হলাম সাহস হারিয়ে ফেললাম কিন্তু পরক্ষনেই আমাকে সাহস যুগিয়েছে অভয় দিয়েছে ভেঙেপড়া জীবনকে সুসংগঠিত করে তুলেছে প্রিয় স্যারের প্রতিটি লেখা প্রতিটি কথা প্রতিটি অনুষ্ঠান আবারো ফিরে আসলাম এবং ধৈর্যের সাথে লেগে থাকলাম কিন্তু মনের মধ্যে একটা কথাই বারবার আসতো স্যার বলেছে
স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
লেগে থাকুন সফলতা
আসবেই ইনশাআল্লাহ।
স্যারের এই জাদুময় মন্ত্র কে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহ পাকের উপর বিশ্বাস ও ভরসা রেখে আবার মনটাকে স্থির করলাম। অনেক দিন পর একটা অর্ডার পেলাম,যেন পায়ের নিচে মাটি পেলাম।
তাই আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম সাহস করে শুরু করেছিলাম তারপর লেগেও থেকেছি। ধীরে ধীরে অর্ডার বাড়তে থাকলো আলহামদুলিল্লাহ
যদিও আমার অনেক কষ্ট হতো মাদ্রাসায় পড়ানোর পাশাপাশি ব্যবসা করা।।সময় যেন শুরু না হতেই শেষ হয়ে যেতো এভাবে বেশ কিছু দিন কাটতে থাকলো, আমার যেই সময়টা বিশ্রামের জন্য পেতাম সেই সময়টা ব্যবসার কাজে দিতে থাকলাম।কখনো কখনো দূরের অর্ডার থাকলে রাতের গভীরে না ঘুমিয়ে আমি পার্সেল ডেলিভারি করতাম।আমার অনেক কষ্ট হলেও আমি আনন্দের সাথে করতাম।
_এভাবে নির্ঘুম ও রেস্ট বিহীন জীবন কাটছিল বেশ কিছুদিন গ্রুপের নানা কাজে এতো ব্যস্ত হয়ে পরি যার কারনে আমার মাদ্রাসার হেফজখানার দায়িত্ব পালনে একটু হেলা চলে আসে কতৃপক্ষ এটাদে দৃষ্টি দেয়। এক পর্যায়ে আমার চাকরি আরো কঠিন হয়ে যায়।চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে খুব ভালো চলছিলো আমার। কিন্তু আবার জীবনে হতাশা চলে আসলো। চারদিকে অন্ধকার মনে হচ্ছে। কিন্তু চিন্তা করে উঠতে পারছিলাম না কি করবো। অনলাইনেও তেমন সফল পদচারণ করতে পারি নাই।হতাশায় গ্রাস করছিলো আমাকে। পরর্বতীতে স্যারের আরো একটি কথা নতুন ভাবে অনুপ্রেরণিত করছে আমাকে
চাকরি
করবো
না
চাকরী দিবো
আল্লাহ নাম নিয়ে শুরু করে দিলাম অনলাইন ও অফলাইনে দুটো যাত্রা। আমার অনলাইনে আলহামদুলিল্লাহ প্রচুর সেল হচ্ছে। কারন স্যারের শিখায় আমি চলছি পণ্য নয় বিক্রি করছি বিশ্বাস তাই আমাকে আর পিছনে ফেরে তাকাতে হচ্ছে না।আজ আমি দুজন আমার কাজ টা সুন্দর ভাবে পরিচালনা করছি।
_________________আজ আমার স্বপ্ন পূরণের পথে, একজন সফল ব্যবসায়ী হতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ শুধু দেশে নয় বিদেশেও প্রায় বহু দেশে রয়েছে আমার অনেক সম্মানিত ক্রেতা। আপনাদের সহযোগিতা ও দোয়ায় আজ আমার এই সফলতা। এভাবে করেই আপনাদের আমার পাশে চাই।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের জন্যও আমার মনের গহীনে থেকে রহিল অনেক অনেক দোয়া ও ভালবাসা।
_______________________বিশেষত নতুন দিগন্তের উন্মোচক,আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন, ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু , লাখো যুবক - যুবতীর আলোর দিশারী, সফল ও সার্থক ও উজ্জল ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকপাল আমার প্রাণাধিক প্রিয় স্যার Iqbal bahar zahid স্যারের প্রতি যার ঋণ আমার কাছে অপরিশুদ্ধ অসীমিত। যার কারনে আমি পেয়েছি আপনের চেয়েো বেশি আপন এই প্লাটফর্মের প্রিয় কিছু মুখ,ভাই বোন, বন্ধু ও সহযোদ্ধা যাদের অনুপ্রেরণা ও সাহস পেয়ে সকল হতাশ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছি। এগিয়ে যেতে যাই সবাই সাথে নিয়ে দেখা হবে বিজয়ের মঞ্চে বলবো কথা সফলতার নিজের বলার মতো গল্প।
আল্লাহপাক সবাইকে কবুল করেন সবার জন্য মঙ্গল করেন সুস্থতার সাথে দীর্ঘ হায়াত দান করেন।
________________________________ আমিন
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৪
Date:- ২৮/১১/২০২১ ইং
আবুল খায়ের
নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন গর্বিত সদস্য
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
টপ টুয়েন্টি ক্লাব মেম্বার
প্রশিক্ষক: এসো কোরআন শিখি
তেজগাঁও জোন
ব্যাচ:১১
রেজিস্ট্রেশন:৩১৬৪০
জেলাঃ ফরিদপুর
আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান:👇👇 https://www.facebook.com/insaffoodg/