জীবনের গল্প
আমি প্রান্ত বিশ্বাস। আমি ১৫ তম ব্যাচের একজন আজীবন সদস্য। আমার সদস্য আইডি হচ্ছে ৬৭,৪৯৪। আমার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা বরাতিয়া, ডুমুরিয়া, খুলনা। বর্তমানে আমি কাজ করছি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের নাম, লোগো, কভার, পোস্ট ব্যানার নিয়ে। আমার পেজের লিংক https://www.facebook.com/colorindesign21। আমার পরিবার মোটামুটি সচ্ছল হওয়ার পরেও পারিবারিক অশান্তির কারণে মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে আমাকে বাবা-মা'য়ের কোল ছাড়তে হয়। ঠাঁই হয় আমার সর্বশেষ আশ্রয় স্থল মামার বাড়িতে। আমার দিদা, দাদুর পরিবার ছিলো আমাদের থেকেও অসচ্ছল। তবুও আমাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে তারা আমাকে তাদের কাছে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি ১ মে ১৯৯৯ সালে জন্ম গ্রহণ করি। পড়ালেখায় মোটামুটি ভালো হওয়ার সুবাধে ১লা জানুয়ারি ২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। সেই ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী হতে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত মামার বাড়িতে থেকে পড়ালেখার সুযোগ পাই। মামার বাড়িতে পড়ালেখার সুযোগ পেলেও অযত্ন ও অবহেলার পরিমাণ ছিলো নিজের পরিবার থেকে অনেক বেশি যা লিখে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। মামার বাড়ির সদস্যদের অযত্ন ও অবহেলার পরিমাণ কম থাকলেও বেশি ছিলো পরিবেশের অন্য সদস্যদের। প্রতিদিন কারো না কারো ছোট-বড় কথার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬টা বছর অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিজেকে তৈরী করতাম তাদের কথা মোকাবেলা করার জন্য কিন্তু তখন ছোট থাকায় বড়দের মুখে মুখে তর্ক না করে চুপ থাকতাম। কারণ এটা আমার পরিবারের একটা শিক্ষা। তবে তাদের কথা সহ্য না করতে পেরে অনেকদিন চুপে সাড়ে কান্নাও করতাম ও নিজের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপেক্ষায় থাকতাম। আমার এখনও মনে আছে প্রথম শ্রেণী হতে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিদিন মাত্র ২ টাকা টিফিন খরচ পেতাম যা দিয়ে কোনো রকমে দুপুরের খাওয়া সম্পূর্ণ করতাম।
২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস অর্থাৎ সপ্তম শ্রেণী হতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকার সুযোগ হয় কিন্তু সেখানেও মামার বাড়ি থেকে আরও বেশি অবহেলার শিকার হতে হয়। কখনও ভাবতেও পারিনি নিজের বাড়িতে এইরকম অবহেলার শিকার হতে হবে। এ যেনো কল্পনাকেও হার মানিয়ে ছিলো। এতো বছর নিজের বাড়িতে এসে মনে হলো যে আমি মনে হয় এই পরিবারের কেউ না। একটা পর্যায়ে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং সেই সিদ্ধান্ত মতো একটা মেসে উঠি। জীবন যুদ্ধে যেখানেই একটু আশ্রয়ের জন্য যায় সেখানেই যেনো একটা গল্প তৈরি হয়ে যায়। মেসে উঠার কয়েক মাসের মধ্যে জীবন সংগ্রামের আরও একটা ধাপ পার করলাম। আমি যখনই খুব বেশী কষ্ট পেতাম তখনই আলাদা একটা ঘরে যেয়ে নিজের মুখের সামনে আয়না ধরে কথা বলতাম। যাই হোক এভাবে নিজেকে নিজে শান্তনা দিয়ে আবারও নতুন দিগন্তে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলাম। এরই মধ্যে প্রযুক্তিতে মনোনিবেশের শক্তি অর্জন করলাম এবং ধাপে ধাপে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রযুক্তি মনোনিবেশের ইচ্ছা সেই ছোট বেলা হতে। আমার এখনও মনে আছে আমি যখন বাড়ি যেতাম বা বাবা যখন আমাকে দেখতে মামার বাড়িতে আসতেন শুধু মাত্র তখনই মোবাইল হাতে পাওয়ার সুযোগ পেতাম। বাবার মোবাইল পরিবর্তনের সাথে সাথে আমিও প্রযুক্তির উপরে আরও বেশি আকৃষ্ট হতে শুরু করলাম। একটা পর্যায়ে কিছু টাকা জমিয়ে নিজে একটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কিনলাম এবং সেই থেকে নিজের বিচক্ষণতা দিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা শুরু করলাম।
আমি যখন দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ি তখন আমি একটা স্যারের কাছে "তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি" বিষয়ে প্রাইভেট পড়তাম। সেখানে কয়েক দিন ধরে খেয়াল করলাম আমি যে এইচটিএমএল মোবাইলে প্রদর্শন করাতে সক্ষম হতাম সেই একই এইচটিএমএল আমার স্যার ল্যাপটপে প্রদর্শন করাতে ব্যর্থ হতো। সেই সময়ই প্রযুক্তিতে প্রবেশের অণুপ্রেরণাটা আরও বেড়ে যায়। যেই কথা সেই কাজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই ডেস্কটপ কিনি নিজের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য। আমার এই সিদ্ধান্তে আমার মা রাজি থাকলেও বাবা কখনও রাজি ছিলেন না। পরবর্তীতে বাবাকে রাজি করিয়ে ডেস্কটপ কিনি এবং সাথে সাথে অফিস অ্যাপ্লিকেশনের উপর ৬ মাস মেয়াদি একটা কোর্স সম্পন্ন করি। তারপরে অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তিতে জীবন গড়ার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন পেশায় কাজ শেখার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রাফিক্স ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়ার উপর আরও একটি ৬ মাস মেয়াদি কোর্সটা সম্পূর্ণ করি। তবে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে ভূল হওয়ায় মানসম্মত কাজ শেখার সুযোগ হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়ার উপরে ৬ মাস মেয়াদি আরও একটি কোর্স করতে ইচ্ছুক হই। যার জন্য আমার একটা কোর্স চলাকালীন সময়ে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রদর্শন করে তাদের সেমিনারে অংশগ্রহণ করি। আর এই সময়ে দেখা মেলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে এমন এক প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় আরেকটি চাকরি হতে জমানো টাকা দিয়ে। এটাতো বললাম জীবন সংগ্রামের কয়েকটি ধাপের কথা। এরপর বলব কীভাবে জীবন সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে উত্তীর্ণ হলাম তার কথা।
ডেস্কটপ কেনার পর প্রথম ৬ মাসে একটা কোর্স করার সুযোগ পেলেও দ্বিতীয় কোর্স করার সুযোগ পাই প্রথম কোর্স করার ৬ মাস পর, তাও আবার কিস্তিতে। যাইহোক অনেক কষ্টে ৬ মাস মেয়াদি দ্বিতীয় কোর্সটা সম্পূর্ণ করার পর যখন তৃতীয় আরেকটি কোর্স করার সিদ্ধান্ত নিলাম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বার প্রান্তে ঘুরে যখন প্রতিষ্ঠান বাছাই করতে সক্ষম হলাম ঠিক তখনই বাড়ি হতে আসল আমাকে দমিয়ে রাখার আরো একটি ধব্বনি। তাদের কথায় কোনো রকম কর্ণপাত না করে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজে কিছু করার। আর সেই সিদ্ধান্ত মতো কিছু টাকা জমানোর উদ্দেশ্যে টিউশনি করা শুরু করলাম। টিউশনি করার সময় মাসিক খরচের পাশাপাশি একটি ডিপিএস করতে সক্ষম হয়। পরবর্তী বছরে মাত্র ১ হাজার টাকা মাসিক বেতনে একটা কোচিং এ কাজ করার সুযোগ পাই। সেখানে ৫০ দিন কাজ করার মধ্যে আগে থেকে বলে রাখা একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাই। কাজটা ছিলো সাংবাদিক পেশায় অনলাইন রির্পোটার হিসেবে। জীবনের আরও একটা ধাপ উত্তীর্ণ করি এই পেশায় কাজ করে। এই পেশায় কাজ করা কালীন পূর্ব থেকে বাছাই করে রাখা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি এবং করোনার পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে চাকরি হতে পদত্যাগ নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে আসার কিছুদিনের মধ্যে জমানো কিছু টাকা দিয়ে আবারো পারি জমায় নিজের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে।
যখনই স্বপ্ন পূরণের দ্বার প্রান্তে তখনই দেখা মেলে লক্ষ মানুষের আলোর দিশারী জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের। আর এই অবদানের মূখ্য ভূমিকায় আছেন "কালার ইনডিজাইন" প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া ভাই ও তার একনিষ্ঠ সহোধর মোঃ আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া ভাই। তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই কারণ তাদের সাথে পরিচিতি না থাকলে হয়ত এমন একটি প্লাটফর্মের সাথে পরিচয় হতে আমার আরো বিলম্ব হতো। আরও ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে আজকের এই অবস্থানে আসতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন এবং যারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন না। কারণ যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন তাদের জন্য আমি অনেক উপকৃত হয়ে ছিলাম ও যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন না তারা হাত না বাড়ানোর মাধ্যমে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করে ছিলেন। সর্বোপরী স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম আমাদেরকে উপহার স্বরুপ দেওয়ার জন্য। স্যার ও স্যারের পরিবারের সকলের জন্য মন থেকে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। সর্বশেষে যেসকল ব্যক্তিবর্গ আমার লেখাটি এতো সময় নিয়ে, এতো ধৈর্য্য সহকারে পড়েছেন তাদের প্রতি রইলো অন্তরের অন্তরস্থল থেকে দোয়া ও ভালোবাসা। উপরোক্ত লেখাটিতে কোনো রকম ভুল ত্রুটি প্রদর্শিত হলে সকলকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। সকলের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৩
Date:- ২৭/১১/২০২১ ইং
প্রান্ত বিশ্বাস।
ব্যাচ ১৫ (৬৭৪৯৪) খুলনা
কাজ করছি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের নাম, লোগো, কভার, পোস্ট ব্যানার নিয়ে। আমার পেজের লিংক: www.facebook.com/colorindesign21 ।