তিল তিল করে জীবনে সঞ্চয় করা কিছু অনুভূতির সমাহার
🌼🌼🌼_____________________________🌼🌼🌼
অল্প অল্প করে জীবনের গল্প,
থরে থরে সাজানো তো থাকবেই।
কখনও সূর্য–দিন, কখনও চন্দ্র–রাত,
কখনও গ্রহণ তো লাগবেই।
☘️জ্বী, অল্প করে হলেও সবার মতো আমার জীবনেও আছে একটা ছোট্ট গল্প। সেই গল্পে অসাধ্য সাধনের কোন আড়ম্বরতা নেই, আছে শুধু তিল তিল করে জীবনে সঞ্চয় করা কিছু অনুভূতির সমাহার। তাই বরং আজকে আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করি।
☘️আমি তাম্মিনা আক্তার। আমার মায়ের একমাত্র সন্তান। এখানে শুধু মায়ের বলেছি কেন সে কথায় পরে আসছি। তো আমার যেহেতু আর কোন ভাই-বোন নেই, তাই একা একাই ছোট থেকে আমার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, লেখাপড়া এসব কিছুতে আমি একাই বড় হয়েছি। তখন মাঝে মাঝে হয়তো একটু খারাপ লাগতো, তবে তা ধীরে ধীরে নিজের মাঝে সয়ে যায়। পরিবারে আমার নিজের সমবয়সী যদিও কেউ ছিল না, কিন্তু তখন আমার নানু আর ছোট মামাই ছিল আমার বন্ধু। এ মানুষগুলোর সাথে অসংখ্য খুনসুটির মাঝে তখন কেটে যেত আমার বেলা, তাই একাকীত্বকে অনুভব করার আর সময়ই হতো না।
দিন থেকে রাত আর, রাত থেকে দিন
এরি মাঝে কেটে যায় জীবন অমলিন
☘️ছেলেবেলা থেকেই আমি শান্ত একজন মানুষ, দুরন্তপনা কখনোই আমাকে ছুঁয়ে যায়নি। তখন থেকেই ধীরে ধীরে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। যার শুরুটা হয়েছিল গান শেখার মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগিতা, বিএনসিসি 'র সাথে জড়িত হওয়া, এসব কিছুই হয়। এখন অবশ্য সব কিছুই ছেড়ে দিয়েছি, ধরে রেখেছি শুধু কবিতা।
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না-
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না-
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
☘️আমার এক স্যার বলেছিলেন, মানুষ যদি কখনো এরকম সুযোগ পেতো যে, তাকে এক বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার মাধ্যমে সে জীবনটাকে আবার নতুন করে শুরু করতে পারবে। তাহলে সে কোথা থেকে শুরু করবে? এরকম হলে সবাই আমরা আমাদের ছেলেবেলা থেকেই জীবনটাকে আবার নতুন করে শুরু করতাম।
☘️যাই হোক, ছোটবেলা থেকেই আমি একজন চিন্তাময়ী মানুষ। চিন্তাশীল না হয়ে চিন্তাময়ী কেন বললাম, তার কারণ হলো আমার মাথায় তখন থেকেই হাবিজাবি প্রচুর চিন্তা ঘুরপাক খেত। আর আমি খুবই কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ। আমি যেই গল্পটা পড়তাম মনে হয় একদম তার ভিতরে ঢুকে যাই, আর তার রেশ মাথায় থেকে যায় বহুক্ষণ। তাই আমার মতো কোন কল্পনাপ্রবণ মানুষ যদি থাকে, তাহলে তার সময় যে কোনদিক দিয়ে কেটে যায় সে নিজেও জানে না।
☘️কিন্তু কল্পনা আর বাস্তবতা যে এক হয় না, কল্পনার সেই সুয়োরাণী-দুয়োরাণী, পঙ্খি রাজ ঘোড়া, লালপরী-নীলপরী তারা যে থাকে না বাস্তবে। বরং বাস্তবে থাকে কিছু অপ্রিয় সত্য আর কঠিনতম বাস্তবতা। সত্য প্রিয়-অপ্রিয় যাই হোক তাও সে সত্য। ধীরে ধীরে আমিও তাই নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিয়েছি। আর তা হলো ছোটবেলায় আমার বাবা আমাদের সাথে থাকতেন না, তিনি তার বাড়িতে থাকতেন, সেখানে তার একটা আলাদা পরিবার আছে, সেখানেই তার সব। তাই আমিও নিজেকে সেভাবেই মানিয়ে নিয়েছি।
☘️আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমি হয়তো এখনো নিজের বলার মতো কোন গল্প তৈরি করতে পারিনি, কিন্তু আজ আমি যতটুকু হতে পেরেছি তা সম্ভব হয়েছে আল্লাহর রহমত আর আমার মায়ের আত্মত্যাগ, দোয়া আর ভালোবাসার কারণে। এক্ষেত্রে আমার বাবার কোন ভূমিকাই নেই, তিনি একজন নীরব দর্শক মাত্র।
☘️প্রথমদিকে আব্বু আমাদের সাথে না থাকলেও পরবর্তীতে একটা সময়ে এসে তিনি আমাদের সাথে থাকা শুরু করেন। কিন্তু তখনো আমরা মামাদের সাথে থাকতাম। আমার তিন মামা। ধীরে ধীরে একজন একজন করে মামারা বিয়ে করলো, তাদের আলাদা সংসার হলো, তার ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে আমরাও আলাদা হয়ে গেলাম। ব্যস তখন থেকে এভাবেই সময় কাটতে লাগলো, আর এখনো এভাবেই কাটছে।
☘️মানুষ তার ছোট্ট একটা জীবনে যা সে চায় সব পায়না, জীবনে রয়ে যায় বহু অপ্রাপ্তি। কিন্তু তাও জীবন গতিশীল, সে থেমে থাকতে জানে না, তার নিয়মে সে তার গতিতে চলবেই। তবুও এতো কিছুর মাঝে কিছু অপ্রাপ্তি জীবনে কাটার মতো বেদনাদায়ক। তবে এক্ষেত্রে এটাও বলতে হয়, আমাদের হিসেবে বহু ভুলচুক হতে পারে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার হিসেবে কখনোই তা সম্ভব নয়। তাইতো, আল্লাহ্ হয়তো আমার জীবনে একদিকে কম দিয়েছে কিন্তু অন্যদিকে উজাড় করে দিয়েছে। আমার জীবনে আমি আমার আব্বুকে সেভাবে কখনোই পাইনি সেভাবে একজন সন্তান তার বাবাকে পাওয়ার অধিকার রাখে। তিনি বরাবরই আমার এবং আমার মায়ের প্রতি ছিলেন উদাসীন। কিন্তু আমি এমন একজন মা পেয়েছি যিনি আমার জীবনে কোন কিছুর অভাব রাখেননি। তিনি একই সাথে বাবা-মা দুজনের ভূমিকা, দুজনের ভালোবাসায় সবসময় আগলে রেখেছেন আমাকে।
☘️আমার আম্মু অনেক ভালো সেলাই করতে পারে এবং এর মাধ্যমেই তিনি আমাদের সংসারটাকে, আমাকে এতোটুকুতে এনেছেন। তিনি আমার দেখা একজন সেরা মহীয়সী নারী। তাইতো বললাম, আল্লাহ্ জীবনে কাউকে একদিকে কম দিলে, অন্যদিকে উজাড় করে দেন। তেমনি আল্লাহ্ আমার জীবনে দিয়েছেন আমার মায়ের উজাড় করা ভালোবাসা। এছাড়াও আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি কিছু ভালো মানুষের সাহচর্যে আসতে পেরেছি যারা আমাকে সবসময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছেন। তাই আজকের দিনে নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে আমি সেই সকল মানুষদের স্মরণ করে সম্মান জানাতে চাই, শ্রদ্ধা জানাতে চাই আমার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, ভালোবাসা জানাতে চাই আমার প্রিয় সহপাঠীদের যারা সবসময় আমাকে কোন না কোনভাবে সাপোর্ট করে গিয়েছে - হয়তো সেটা অর্থ দিয়ে, মেধা দিয়ে, শ্রম দিয়ে, সঠিক পরামর্শ দিয়ে যেভাবেই হোক তাদের সকলের প্রতি জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে,
দহিল হৃদয় মন সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
সেথা দেখি একজন পদ নাহি তার,
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন,
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ?
☘️হুমম একদম তাই। আমাদের সবার জীবনে আছে কিছু কষ্ট, কিছু যাতনা। কিন্তু তা ভেবে হা-হুতাশ করলে জীবন এগোবে না। তাই উপরের পঙক্তির মতো আমিও অন্যের দুঃখগুলোকে অনুভব করে নিজেকে বুঝাই অন্যের জীবনের কষ্টের কাছে আমার জীবনের কষ্টগুলো কিছুই না। আল্লাহ্ আমাদেরকে তো ঐটুকুই দেন যতোটুকু সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের আছে। তাই শোককেই শক্তি করে, জীবনে সামনে এগোনোর মনোবল বানিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই। আপনারা অবশ্যই আমার জন্যে দোয়া করবেন।
☘️ছোটবেলা থেকেই জীবন নিয়ে, আমি কী হতে চাই - এসব নিয়ে আমার নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় আর আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করার পর আজ আমি জানি আমি কি চাই। আমি একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। আমার শিক্ষা জীবন যদিও এখনো শেষ হয়নি। অতি শীঘ্রই আমি মাস্টার্সে ভর্তি হবো।
☘️এখন আমার জীবন নিয়ে, আগামী নিয়ে আমার বেশ কিছু স্বপ্ন আছে, যা আমি এক এক করে পূরণ করতে চাই। জানি সব হুট করেই একদিনে সম্ভব নয়, কিন্তু এটাও মানি, লক্ষ্য অটুট থাকলে স্বপ্ন জয় করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সেই লক্ষ্য নিয়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সহিত অতি সম্প্রতি আমি শুরু করেছি আমাদের প্লাটফর্মেরই আমাদের চাঁদপুর জেলার সুপার এক্টিভ ভাইয়া অল ক্যামিকেল টেকনোলজির সত্ত্বাধিকারী নয়ন ভাইয়ার ফ্যামিলি কেয়ার ব্যান্ডের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ, যা গুণে-মানে অত্যন্ত ভালো।
☘️তাই আশা করছি আমার আগামী পথচলায় আমার প্রিয় ভাই-বোন আপনাদের সবাইকে আমার পাশে পাবো। তাছাড়াও আমি একজন ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তাই আপনাদের গ্রাফিক্স রিলেটেড যেকোন কাজে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আমি আমার যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করবো। আমার পেইজের নাম গহনিকা।
https://www.facebook.com/Gohonika333/
আশা করি আপনারা সবাই একটা লাইক দিয়ে আমার পাশে থাকবেন।
☘️গল্পের এই প্রান্তে এসে আমি একটা কথা বলতে চাই স্যার, আমি এটা বলতে পারবো না যে, আমার মাঝে সব ভালো। আমি মানুষ, আমার মাঝেও অনেক কমতি আছে। কিন্তু আমি এটা বলতে পারবো যে, আমি একজন ভালো মানুষ কারণ স্যার আমি আপনার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত একজন ভালো মনের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি সবসময় এটা বিশ্বাস করি যে, নিজে পারলে অন্যের সাহায্য করা, নয়তো চুপ থাকা কিন্তু কখনোই যেন আমার দ্বারা অন্যের ক্ষতি না হয়। আপনারা সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন যেন আমি আমার জীবনে আমার এবং আমার মায়ের দেখা স্বপ্নগুলো সত্যি করতে পারি। এছাড়া আমার মা-বাবার জন্যেও আপনারা দোয়া করবেন। একজন সন্তান হিসেবে আমি যেন তাঁদের সেবা করে যেতে পারি।
💦💦সবশেষে যে কথা না বললেই নয়, তা হলো: আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মেন্টর, আমাদের সকলের প্রিয় স্যার #জনাব_ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যারের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। স্যার আজকে আপনি আমাদেরকে এই প্রিয় ফাউন্ডেশন তৈরি করে দিয়েছেন বলেই আমি আজ আমার জীবনের গল্প সবার সাথে শেয়ার করার সুযোগ পেলাম। আল্লাহ্ তা'য়ালা আপনাকে সহ আপনার পরিবারের সবাইকে সুস্থতা ও নেক হায়াত দান করুক এটাই প্রার্থনা করি। আমিন।
💦💦সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সবার জন্যে রইল অনেক অনেক দোয়া, শুভ কামনা ও ভালোবাসা। আল্লাহ্ হাফেজ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৩
Date:- ২৭/১১/২০২১ ইং
তাম্মিনা আক্তার
ব্যাচ: ১১তম
রেজিষ্ট্রেশন নং: ২২৮৪৬
নিজ জেলা: চাঁদপুর।