প্রতিটা মেয়েই তার বাবার কাছে রাজকন্যা👨👧
আসসালামু আলাইকুম
সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মহান রাব্বুল আলামীনের উপরে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই মহামারির মধ্যে আমাকে সুস্থ রেখেছেন তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। তারপর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মা-বাবা ভাইয়ের প্রতি যারা আমাকে তাদের আদর্শে বড় করেছেন এর জন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।তারপর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সবার প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন।
প্রতিটা মেয়েই তার বাবার কাছে রাজকন্যা👨👧।আমি যখন ছোট ছিলাম বাবা রোজ সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন আবার নিয়ে আসতেন।বাবা সরকারি মিলে জব করতেন যেহেতু মিলে জব করতেন সেহেতু প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বিল পেতেন(মানে টাকা)। আর বৃহস্পতিবারের অপেক্ষায় থাকতাম কখন বৃহস্পতিবার আসবে আর আমাকে নিয়ে বাজারে যাবে।কারণ বাবা প্রতি বৃহস্পতিবার আমাকে বাজারে নিয়ে যেতেন আর আমার পছন্দ মতো বাজার করতেন যা যা বলতাম তাই কিনতেন।যে দোকান থেকে চাল,সদাই কিনতেন ঐ দোকানে আমাকে বসিয়ে যা যা খেতে চাইতাম তাই তাই কিনে দিতেন আর আমি বসে বসে খেতাম।তারপর সব কিছু কেনা শেষ হলে রিকশায় করে বাবার সাথে মজা করতে করতে বাসায় আসতাম😍।
যখন আমার ৭/৮ বছর বয়স তখন একদিন নানি বললেন ঢাকা যাবি। তখন আমার নানিরা ঢাকায় থাকতেন(মানে নানিরা দুই বোন তাই নানিরা বলেছি).আমাকে বলার সাথে সাথে আমি রাজি হয়ে গেলাম।আমি ঢাকায় যাবো শুনলেই মনটা আনন্দে ভরে যেতো। যেহেতু কখনও ঢাকায় যাই নি,আর সবার মুখে শুনতাম ঢাকায় অনেক মানুষ আর অনেক মজা হয়।নানি শুধু বলেছিলো নিবে তবে আমাকে নিয়ে যেতে সাহস পায় নি কারণ বাবা আমাকে মিল থেকে এসে বাসায় না দেখলে মাকে অনেক বকা দিতেন এবং তখন মাকেই আমাকে খুঁজে আনতে বলতেন আর মাও খুঁজে নিয়ে আসতেন আর তখন আমাকেও বকা দিতেন যে তোর জন্য রোজ রোজ আমার বেশি কথা শুনতে হয়।আমি অনেক শুকনা ছিলাম ছোট থাকতে তাই বাবা প্রতিদিন ভাত খেয়ে শেষের ভাতটুকু আমার জন্য রেখে দিতেন যাতে ঐ খেয়ে মোটা হই কিন্তু চিকন চিকনই থাকতাম।আর কখনও আমি বাবা- মাকে রেখে কোথাও যেয়ে থাকতে পারতাম না বিশেষ করে বাবার জন্য কারণ বাবাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসতো না।তাই বাবা যেখানে মিল থেকে এসে না দেখলে বকা দিতো তাই নানি আমাকে ঢাকা নিয়ে যেতে সাহস পেলো না তারপরও আমি জোর করে যাবো বললাম। আমার কান্না দেখে নানি আমাকে নিয়ে গেলেন বাবা বাসায় আশার আগে।রাতে বাসে করে ঢাকায় গেলাম অনেক আনন্দে।এদিকে বাবা তো রেগে গেলেন আমাকে বাসায় না দেখে।পরের দিন সকালে ঢাকায় পৌঁছালাম। আর মামা সাথে করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরালেন। চিরিয়াখানা আর শহীদ মিনারে।ঘুরে শেষে বাসায় আসলাম এখন আমি বাবাকে খুজতিছি বাবা কোথায়? নানি বললো তোর বাবা তো খুলনায় ২ দিন আবার খুলনায় যাবো।আমি বললাম আমি বাবার কাছে যাবো বলে কান্না শুরু করে দিলাম। আর আমার কান্না দেখে ঐ রাতেই আবার আমাকে নিয়ে খুলনায় ব্যাক করলেন।আর বাসায় এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।তখন বাবা আমাকে বললো কে তোকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলছে? তোর মা নাকি নানি? আমি বললাম নানি নিয়ে গেছে। তখন নানিকে অনেক বকা দিলো।
তবে তখন বাবার কাছে বায়না ধরলাম আমি ঘুরতে যাবো। বাবা বললো ওকে আগামী মাসে যাবো। আমি বললাম কোথায় যাবা? বাবা বললো চিটাগং যাবো তোর সেজো চাচার বাড়িতে😍।খুশিতেই যেনো যাচ্ছিল না কবে মাস শেষ হবে।মাস শেষ আমি আর বাবা চিটাগং রওনা দিলাম।পরের দিন দুপুরে পৌঁছালাম। ঐদিন চাচার বাসায় রেস্ট নিলাম।পরের দিন সকালে আমি চাচাতো বোন আর বাবা ঘুরতে বের হলাম।নিয়ে গেলো এক মাজারে,মাজারের সামনেই ছোট একটা পুকুরের মতো আর তার মধ্যে অনেক গুলো কচ্ছপ😲। দেখতে লাগলাম সবাই কচ্ছপকে কতো কিছু খাওয়াচ্ছে এটা দেখে বাবাও আমার জন্য খাবার কিনে আনলেন কচ্ছপ কে খাওয়ানোর জন্য। যদিও ভয় লাগছিলো খাওয়াতে তাও খাওয়ালাম।তারপর একটা পার্কে নিয়ে গেলো ঘুরার জন্য যদিও আমার মনে নেই জায়গা গুলোর নাম।তাও সারাদিন অনেক মজা করলাম, বাহিরে খাওয়া দাওয়া করে রাতে বাসায় ফিরলাম চাচাতো ভাই বোনের জন্য খাবার নিয়ে🤗।
বাবার হঠাৎ শরীরটা খারাপ লাগছে বললো চাচাকে😢, চাচা বললো ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন।সারাদিন বাহিরে ছিলেন তাই হয়তো খারাপ লাগছে,আপনি রেস্ট নিন ভালো লাগবে। এই বলে বাবা ওয়াসরুমে গেলেন আর হঠাৎ একটা শব্দ আসলো ওয়াসরুম থেকে, চাচা দৌড়ে যেয়ে দেখে বাবা ওয়াসরুমে পরে আছে😢 তার কোন সেন্স নেই।আমি তা দেখে বাবা বাবা বলে চিৎকার শুরু করলাম আর কথা বলে না বলে কান্না করতে শুরু করলাম বাবাকে ধরে😭। চাচা তাড়াতাড়ি করে বাবাকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলেন আমিও সাথে গেলাম।তখন ডাক্তার দেখে বললো বাবা মিনি স্টক করছেন😭। টেনশন করবেন না ঠিক হয়ে যাবে। সারারাত বাবার পাশেই শুয়ে রইলাম হসপিটালে।মাঝরাতে বাবার সেন্স আসলো আর দেখে আমি পাশে সুয়ে আছি। তা দেখে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে রইলো😍।পরের দিন বিকালে বাবায় আসলাম।তারপর একদিন রেস্ট নিয়ে খুলনায় রওনা দিলাম আর খুলান চলে আসলাম।
তারপর থেকে আর কোথাও যাই নি।২০০৭ সালে বাবা রিটায়ার্ড করার পর সংসারে অনেক সমস্যা দেখা দিলো। কারণ তখন সংসার বাবাই চালাতেন।পরিবারে অনেক খরচ কিভাবে চলবে সংসার?২০০৭ সাল আমাদের অনেক অনেক কষ্টের একটা সাল গেছে।বাবা অনেক টেনশনে পরে গেলো।ডাক্তার তাকে টেনশন করতে মানা করেছেন কারণ টেনশন করলে সে আবার স্টক করবে।বাট সংসারের জন্য তো টেনশন হচ্ছে। ঠিক তখন আমি যেনো কি আবদার করছিলাম ঠিক মনে নেই বাবা বলেছিলেন টাকা নেই পরে দিবো। অনেক রাগ হয়েছিলো তাই বাবার সাথে কথা বলতাম না।পরের দিন সকালে বাবাকে নাস্তা দিলো মা খাওয়ার জন্য। মা নাস্তা দিয়ে একটু বাহিরে গেছিলেন।আমি সোফার উপরে বসে বসে টিভি দেখতে ছিলাম আর বাবা পাশেই নাস্তা করতে ছিলেন।বাবা নাস্তা করে দাঁড়ালেন হাতে মগ ছিলো বাবা,হঠাৎ দেখলাম বাবার হাত থেকে মগটা পরে গেলো। তাকাতেই দেখলাম সাথে সাথে বাবাও মাটিতে পরে গেলেন😢।বাবাকে ধরে চিৎকার শুরু করলাম 😭বাবা চোখ খোলো,বাড়িতে কেউ নেই কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।আমার চিৎকার সুনে আমাদের বাসার সামনে আমাদের দোকান ছিলো ভাড়া দেওয়া সেখানের লোক আমার চিৎকার সুনে দৌড়ে আসলো যে কি হয়েছে? এসে দেখে বাবা মাটিতে সুয়ে আছে আর আমি বাবাকে ধরে কান্না করতে ছিলাম। সাথে সাথে বাবাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে গেলেন।হসপিটাল আমাদের বাসার পাশেই। আমিও গেলাম হসপিটালে আর কান্না করতে লাগলাম বাবা একটা বার চোখ খোলো,আমি আর কিচ্ছু চাই না, আমি আর রাগ করবো না তাও তুমি চোখ খোলো। বাবাকে নিয়ে গেলেন ভিতরে অক্সিজেন দিলেন ডাক্তার আবার বললো বাবা মিনি স্টক করছেন এর মধ্যে মা আসলেন আর ডাক্তার মাকে বললেন এটা কি এই প্রথম নাকি আগেও করেছেন তখন মা বললো নাহ আগেও একবার মিনি স্টক করেছেন। তখন ডাক্তার বললেন মিনি স্টক টেনশনের জন্য হয় আর নেক্সট টাইম যদি আবার স্টক করেন তাহলে হয়তো তার কোন একটা অঙ্গ অকেজো হয়ে যাবে 😭তাই তাকে কোন প্রকার টেনশন করতে দিবেন না। শুনে আরও কান্না শুরু করে দিলাম আর অপেক্ষা করলাম কখন বাবার সেন্স আসবে।বাবার সেন্স আসলো আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম বাবা আমি আর কখনও কিচ্ছু চাই না। শুধু তুমি সুস্থ হও তখন বাবা বললো মারে তুই আমার কাছে এমন সময় আবদার করলি তখন তোর বাবার কাছে কোন টাকা নেই। আমি যে তোর লাল মুখটা দেখতে চাই না,সব সময় হাসি মুখ দেখতে চাই।(লাল মুখ বলতে আমি রাগ করলে আমার মুখ নাকি লাল হয়ে যায়)। তখন বললাম আমি আর কখনও কিচ্ছু চাইবো না।তারপর থেকে আর কখনও বাবার কাছে কিচ্ছু চাই না। বাবা সুস্থ হলেন বাবায় চলে আসলাম😍।
তারপর থেকে আর কখনও কোন রাগ করি না, জেদ করি না কারণ জীবনে বাবার কাছে ২ টা জেদ ধরলাম এক চিটাগং যাওয়ার জন্য আর এক কিছু একটা আবদার করার জন্য। আর ২ বারই বাবা স্টক করলেন।যদি বাবার কিছু হতো তাহলে আমাদের সবার কি হতো?বাবা নামক বটগাছটা কোথায় পেতাম? আলহামদুলিল্লাহ বাবা এখনও ভালো আছেন।জীবনে পিতা মাতাই শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আর এখন বিজনেস করে মাঝে মাঝে বাবাকে কিছু টাকা দেই।কিছু দরকার হলে কিনে দেই আর এগুলো সম্ভব হয়েছে স্যারের জন্য কারণ স্যারের কারণেই আমার এই বিজনেস করা। কখনও ভাবি নি আমি বিজনেস করবো।কখনও বলতে পারবো বাবা তোমাকে ভালোবাসি তাও আমি স্যারের জন্য বলতে পেরেছি।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা-বাবা, ভালো থাকুক বাবা নামক বটগাছ😍। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি Iqbal Bahar Zahid sir
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮২
Date:- ২৬/১১/২০২১ ইং
* ***লিমা খাতুন ***
* ***৯ম ব্যাচ ***
* ***রেজিঃনং- ১২৫৯৮ ***
* ***জেলা খুলনা ***
* ***কমিউনিটি ভলান্টিয়ার ***
* ***সদস্য সাপ্তাহিক হাট মনিটরিং টিমের ***
* ***সদস্য কুইজ টিমের ***
* ***পেশা-শিক্ষিকা + উদ্যোক্তা***