শৈশব থেকে শুরু করে আমার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প
ছোট থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল বিজনেস করার।সেই থেকে আজকের আমার উদ্যোগ।আজ আমি বিজনেস করি।
লেগে আছি প্রিয় ফাউন্ডেশনে সেই ১০ম ব্যাচ থেকে কিন্তু কখনও নিজের জীবনের গল্প শেয়ার করা হয়ে উঠেনি। সকল ভাই ও বোনদের জীবনের গল্প আমাকে অনুপ্রাণিত করে।তাই তো আজ ইচ্ছে হলো আমার জীবনের কিছু বাস্তব গল্প শেয়ার করার জন্য। সকলেই মন দিয়ে পড়বেন।
আমি শৈশব থেকে শুরু করে আমার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শেয়ার করব আপনাদের সাথে।আমি মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার পরিবারে অভাব থাকায় আমি চেষ্টা করি নিজেই টাকা উপার্জন করার।আর সেই থেকে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে অনেক ধরনের কাজ করি আমি।আমি জানতাম আমার প্রয়োজনীয় সব টাকা আমার পরিবার বহন করতে পারবে না।তাই আমার কাজ করা।
আমার খরচ নিজে জোগাড় করার এবং নিজেকে সব কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করার প্রেরণাটা পাই ক্লাস ৬ এ যখন "বেকার সমস্যার" রচনা পড়ি তখন থেকেই । আমি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলি সেই ছোট বয়সে। আমার পড়াশোনা করার খরচ চালাতে মাসে প্রায় ৫০০০ টাকা প্রয়োজন ছিল আমি সপ্তাহে দুই দিন কাজ করে জোগাড় করেছি।
আমি ছোট থেকে দেখেছি প্রতিবছর আমার গ্রামে অনেকে পড়াশোনা শেষ করে বেকার হয়ে বসে থাকছে।তাই আমি আমার এস.এস.সি পরীক্ষার পর ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষার রেজাল্ট আসার আগেই আমি নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য গ্রাম্য ডাক্তার প্রশিক্ষণ গ্রহন করি।৬ মাস প্রশিক্ষণ শেষে গ্রামবাংলা মেডিকেল এন্ড আবাসন নামে একটা কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি।ততদিনে আমার রেজাল্ট চলে আসছে।আলহামদুলিল্লাহ রেজাল্ট আশানুরূপ না হলেও মোটামুটি ভালো হয়েছে জি.পি.এ ৩.৮৯ পেয়ে পাশ করি এস.এস.সি।২ মাস চাকরি বেশ ভালোই চললো।এরপর হঠাৎ কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেল।বিপাকে পড়েছিলাম বেশ সেখানে চাকরি নিয়ে আমি।
এরপর এক সিনিয়র ভাইয়ের পরামর্শে আমার আগের পার্টপাইম জব থেকে জমানো মাত্র ১৫,০০০ টাকায় শুরু করি একটা ইউনানি মেডিসিন কোম্পনির ঔষধের হোলসেল বিজনেস। বেশ ভালো চলছিল বিজনেস।মাত্র ৩ মাসের মাথায় ১৫ হাজার টাকায় আমার মূলধন দাঁড়ায় ৭০,০০০ টাকা।আমার বিজনেসের উন্নতি দেখে বাসা থেকে আমাকে আরো ৪৫,০০০ টাকা দেয় বিজনেস বৃদ্ধির জন্য।আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক ই ছিল।এর কিছুদিনের মধ্যে লক্ষ্য করলাম আমার বিজনেস প্রতিনিয়ত ডাউন হচ্ছে। দোকানদার ভায়েরা বাকিতে পন্য নেওয়া শুরু করল।এটা অনেক বড় একটা ধাক্কা ছিল আমার জীবনে।
শেষমেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস আর টিকে থাকতে পারছিলাম না।কারন ততদিনে আমার অনেক টাকা লোকসান এবং লোন হয়ে গেছিল।তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর ১০ মাস। এরপর একা একা সিদ্ধান্ত নেই যে আমি আর বিজনেস কন্টিনিউ করবোনা।তখন আমার একটা ফোন এবং আমার গুদামে কিছু মেডিসিন ছিল যেগুলো পানির দরে সেল করে বাসায় মিথ্যা বলেছিলাম যে আমি ৩ দিনের পিকনিকে বগুড়া যাচ্ছি। কিন্তু আমি সেদিন ঢাকায় চলে আসি।এরপর আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের রেফারেন্স একটা চাকরিতে জয়েন করি। তখনকার দিন গুলোর কথা মনে হলে এখনও আমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল আসে।চাকরিতে জয়েন করার ৩ মাসের মধ্যে আমি একটা ফোন কিনি আগে।এরপর আবার খুজতে থাকি কোথায় ট্রেনিং করলে আমি মার্কেটিং শিখতে পারব,বিজনেস শিখতে পারব।হঠাৎ একদিন ফেসবুকে খোজ পায় নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের। কয়েকদিন স্যারের পোস্ট গুলো ফলো করি। অনেক ভালো লাগে স্যারের সেশন গুলো। আমি এখনও নিয়মিত স্যারের সেশন গুলো চর্চা করি।১০ ব্যাচের প্রত্যেকটি সেশন অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে কমপ্লিট করি।আমার আগের বিজনেসে যে ভুলগুলো ছিল সেগুলো আইডেন্টিটি করে একটা ফাইল করি এবং সেগুলো প্রতিদিন একবার করে দেখি।কারন ওই ভুলগুলো আমি আর করতে চায়না।আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত সেটা কন্টিনিউ করছি। এরপর শুন্য হাতে শুরু করি বিজনেস। শুরুতে আমার মূলধন ছিল শুধু মোবাইলের ডাটা খরচ। শুরুতে একটা সেলিং কোম্পানির গার্মেন্টস পন্য নিয়ে কাজ শুরু করি।আলহামদুলিল্লাহ শুরুতেই অনেক ভালো রিসপন্স পেয়েছি।গত বছরের নভেম্বরে ঐ কোম্পানির একই ডিজাইনের প্রায় ২৫০ টি জ্যাকেট খুচরা সেল করেছি আমি।
অনেক ভালো চলতে থাকে আমার বিজনেস।এরই মাঝে আমি মেডিসিন, হেলথকেয়ার ও মধু নিয়েও অনেক ভালো কাজ করেছি অনলাইনে।আর এ সব সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র প্রিয় স্যারের অনুপ্রেরনায়। এরপর নিজে কিছু করার চেষ্টা। যেহেতু আমার শিফটিং ডিউটি ৮ ঘন্টা পরপর।তাই আমি প্রায় দিন বিকেলে আশে পাশের ছোট ছোট মিনি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গুলোতে ঘুরাঘুরি করি।ইউটিউব আমাকে বেশ হেল্প করেছে। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আমি নিজে প্রোডাকশন শুরু করবো।তখন ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য খোঁজাখুঁজির পর,শুরু করি টি শার্টের ফ্রেশ প্রোডাকশন। আলহামদুলিল্লাহ একের পর এক বেশ ভালোই কাজ পাচ্ছি এখন পর্যন্ত। আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় ইতিমধ্যে আমার প্রোডাকশন কৃত টি শার্ট সিঙ্গাপুরের মাটি ছুয়েছে।বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ চাকরির পাশাপাশি আমি এখন মাসে ৭০+ হাজার টাকা সেল করি। আগামী জানুয়ারি মাসে আশা করি খুব শীঘ্রই আমি ১ লক্ষ টাকা সেল করব ইনশাআল্লাহ। সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী আমি।
আমার একটি বিজনেস পেইজ আছে। আশা করি সকলেই আমার পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮১
Date:- ২৫/১১/২০২১ ইং
মো:আমানুর জামান
রেজি:২২৬০৫
ব্যাচ:১০ম
তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়
অফিস :মামারিশপুর, মল্লিকবাড়ি, ভালুকা, ময়মনসিংহ
মোবাইল :০১৮৫০৯৯৪৯০০
বিজনেস পেজ: N-Pointss