আমাদের মতন সাধারণ ফ্যামিলির ছেলেদের উদ্যোক্তা  হয়ে ওঠা একদম সোজা কথা না। যেটা হলো নিডি ফ্যামিলি। একমাস আসতে না আসতে আর এক মাসের বাসা ভাড়া বোনদের স্কুলের খরচ। তবুও এগিয়ে চলতে হয় কারণ এগিয়ে চলার নাম জীবন এটা ভেবেই। 

চাকরি করতাম উত্তরাতে একটা আইটি প্রতিষ্ঠান। আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালই চলছিল। প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য বসের আস্থা ও বিশ্বাস এটাই ছিল সবচেয়ে বড় অর্জন। প্রায় চার বছরের মতন চাকরি করছি। প্রতিষ্ঠানকে কখনো অন্যের মনে হয়নি যে চাকরি করছি, মনে হতো নিজের প্রতিষ্ঠান নিজে কাজ করছি। আর এর মূল উদ্দেশ্য ছিল যে আমি যেন নিজে ভাল কিছু করতে পারি। আজকে যদি আরেকজনের প্রতিষ্ঠানের ডেভলপ করতে পারে তাহলে নিজের প্রতিষ্ঠান ডেভলপ করতে পারব অতি দ্রুত। প্রায় সাড়ে তিন বছর চাকরি করার পর নিজের জন্য কিছু ভাবতে শুরু করলাম।

শুরু হলো নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া, শুধু উদ্যোগ নিলেই হবে না আমার তো কাজ করার প্রয়োজন। ওইদিকে আবার আমার পিছু টান তো আছেই। তাই একবারে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। কারণ যেখানে চাকরি করতাম সেখানে ভালো একটা বেতন ছিল। তাই চাকরি করা অবস্থায় কি করা যায় এটাই ভাবতে রইলাম।

 অফিসে আরেকজন আপু কলিগ ছিল তিনি আমাকে একদিন পরামর্শ দিলেন তিনি আমার সাথে পাটনার হয় একটা বিজনেস করতে চাচ্ছেন। যেহেতু আমার ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ফেসবুক মার্কেটিং এর ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আছে সে আমার সাথে গ্রাফিক ডিজাইনার পার্ট যোগ করে নতুন বিজনেস করতে চাচ্ছে । 

আমরা আমাদের আইটি প্রতিষ্ঠান নাম দিলাম ফাস্ট ওয়ার্কিং জোন।  দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ডোমেইন হোস্টিং সহ সবকিছু গুছিয়ে নিলাম এবং রেসেলার প্যানেলসহ। আলহামদুলিল্লাহ অতি দ্রুত আমাদের সবকিছু এগিয়ে যেতে রইলাম। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট করে ফেললাম। মূল সমস্যা রয়ে গেল আমাদের অফিস নেয়া হয়নি এখনো। একদিন চা খেতে খেতে আমাদের এক কাস্টমার বলল  আমরা যদি তাকে পার্টনার করে তাহলে আমাদেরকে সে তার অফিস থেকে একটা রুম দিবে। আমরা রাজি হয়ে গেলাম এবং আমাদের কাজের গতি আরও বাড়ল। এভাবে প্রায় দুই মাসের মত চলতে থাকলো। আবিষ্কার করলাম যে আমার পার্টনার আমার কাজ না করে সে ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তার সাথে কথা বললাম এবং সে বলল যে তার ব্যক্তিগত কাজ বাদ দিয়ে কোনোভাবেই এককভাবে কোম্পানির  কাজ করবেনা। পরবর্তীতে তাকে বাদ দিয়ে আলাদা হয় নিজে কাজ শুরু করলাম।

💞💞 আমার অনলাইন ব্যবসার সূচনা এবং সামনে আগানো 

আইটি বিজনেস শুরু করার পাশাপাশি শুরু করলাম ই-কমার্স  বিজনেস। পেজের নাম সিলেকশন সহ বাদবাকি সব কিছু ঠিক করলাম কিন্তু সমস্যা ছিল প্রোডাক্ট নিয়ে। যখন ব্যবসা শুরু করে তখন আমার কাছে ক্লোথিং প্রোডাক্ট পাওয়াটা সহজলভ্য ছিল না। পেছনে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। আমাদের অফিসের পাশে আছে অফিস ছিল তাদের কাছ থেকে কিছু প্রোডাক্ট নিতে গিয়েছিলাম তারা এমন কিছু কন্ডিশন জুড়ে দিলো যে তাদের কন্ডিশনের কারণে আমার প্রোডাক্ট নিতে পারলাম না। তারপর ঢাকা সিটির বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি। অফিস ছুটির দিনে বিভিন্ন জায়গায় গিয়াছি অফিস শেষ করে আটটার সময় ঢাকা ইসলামপুর নিউমার্কেট সহ বিভিন্ন জায়গাতে ঘোরাঘুরি করতাম। যেসকল প্রোডাক্টগুলো নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি সেগুলো কোথায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কিছু  পেয়েছি রিসেলার হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে । আমি ঢাকাতে বসে এমন কিছু রিসেলারদের সাথে কাজ করতাম যারা থাকতো মৌলভীবাজার সিলেট নারায়ণগঞ্জ যশোর এবং চিটাগাং এর একটা আপু ছিলেন। একসময় মুল সোর্স হিসেবে একজন ভাইয়াকে পেয়ে যাই এবং তার কাছ থেকে প্রোডাক্ট নেওয়ার কথা বললে সে রাজী হয় প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করি। কাজ শুরু করে কিন্তু ততটা সফল হতে পারছিলাম না। ১ ভাইয়ের ফেসবুক পেজ বুষ্টিং করাতাম সেখান থেকে ওই ভাই আমাকে কিছু উৎসাহ দিল এবং আমাকে কিছু সোর্সিং দেখালো কিভাবে প্রোডাক্ট পেতে পারি। 

মোহাম্মদপুরে ভাইয়ের সাথে কথা হলো তার কিছু প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ করলাম হ্যান্ড পেইন্ট এর শাড়ি এবং পাঞ্জাবি। উনি আমাকে ওনার প্রোডাক্ট এর ছবি দেন এবং সেটা নিয়ে আমি পোস্ট করলাম। নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে যখন তার প্রোডাক্ট সেল দিতে পারছিনা মাসখানেক পর সে আমাকে থ্রেট করে এবং আমার নামে উকিল নোটিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। উনি ভাবছেন আমি হয়তো তার প্রোডাক্ট কপি করে বিক্রি করছি। আমি তার সমস্ত প্রোডাক্ট এর ছবিগুলো পেজ থেকে বাদ দিয়ে ওনার কাছে সরি বলে সরে আসলাম। 

ওই সময় দেখতে পেলাম হিট খায় মেহেজাবিন কাতান ড্রেস তখন এটা ইন্ডিয়া থেকে ইমপোর্ট করার জন্য লোক করলাম। এবং এক লাখ ইমপোর্ট করালাম। কাস্টমারদের থেকে ১৫ দিন সময়ের অর্ডার নিয়ে ৩৩ দিনেও  যখন দিতে পারলাম না তখন সবার কাছ থেকে অনেক বকা শুনলাম। তারপর কান ধরলাম এবং বন্ধ করে দিলাম ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট বিক্রি। 

রিসেলার হিসেবে যাদের কাছ থেকে কাজ করলাম প্রতিটি অর্ডারে তাদের কাছে ৩০০ টাকা দিতে হতো। প্রোডাক্ট  প্রোডাক্ট রিটার্ন আসতো তাহলে এডভান্স এর টাকা  মার যেত এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো তাদের রুড আচরণ। আলহামদুলিল্লাহ নিজে যখন রিসেলিং দেয়া শুরু করলাম তখন এই অ্যাডভান্স নেয়ার সিস্টেম টা বন্ধ করে দিলাম এবং এটা হল আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। 

👉👉 চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের জীবনের শুরু 

আমি যে ভাইয়ের থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে যখন কাজ শুরু করলাম তখন ঈদের আগের সময় ছিল। প্রায় এক মাস কাজ করে দেখতে পেলাম আমার প্রায় ১২ হাজার টাকার মতো লাভ ছিলো। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমি এখন নিজের ফিডব্যাক নিজেই দিতে পারব ব্যবসা করে। অফিসে রিজাইন দিয়ে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। একটা লোন তুলেছিলাম ৬০ হাজার টাকা। সেখান থেকে ২৫ হাজার টাকার সংসার খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা দিয়ে আমার ব্যবসায় ইনভেস্ট করি। 

ব্যবসা শুরু করার পর পড়ে যাই এক ধরনের বিপদে।আমার পরিচিত কেউ ছিলনা যাদের অফিসে বসে কাজ করতে পারি। যেহেতু আমার বাসা ছিল বাড্ডা আমার বাসার আশেপাশে কোন প্রকার বুকিং দেওয়ার সিস্টেম ছিল না তার নিউমার্কেট এসে সুন্দরবন এবং এসএ পরিবহনের প্রডাক্ট বুকিং দিতাম। নিউমার্কেট ওভার ব্রিজের উপরে বসে অনেকদিন মেমো করেছি আমি। ১৫ দিন এভাবে কাজ করার পর একজনের কুরিয়ার অফিসে বসে আমি আমার কাজ করা শুরু করলাম। 

মাস দুয়েকের মতন এভাবে করার পর আমি একটা অফিস নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমার অফিসে এখন পাঁচজন লোক নিয়ে কাজ করছি।  এখন নিজেই পাইকারি পণ্য বিক্রি করতে পারছি, এবং প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে পারছি। 

কাজ করছি লেডিস ড্রেস নিয়ে ব্লক থেকে স্ক্রীন প্রিন্ট ড্রেস, এমব্রয়ডারি ড্রেস, কুর্তি, ইন্ডিয়ান রেপ্লিকা ড্রেস, ব্লগ এবং হ্যান্ড পেইন্ট কাপল ড্রেস, বিভিন্ন ধরনের টাঙ্গাইল শাড়ি, ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ি এবং চুন্দ্রি প্রিন্ট শাড়ি এবং শীতের শাল  ইত্যাদি আছে আমার কালেকশনে। 

আমাদের সকল প্রোডাক্ট পাইকারি বিক্রয়ের জন্য। 

খাদি পাঞ্জাবি আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট 💞💝

আমার অনলাইন পেজ: কুঞ্জবন 

সময় হলে আমার পেজটা একটা ঘুরে দেখবেন 😊

ধন্যবাদ

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮০

Date:- ২৩/১১/২০২১ ইং

রাসেল হাওলাদার 

ব্যাচঃ১৫

রেজিষ্ট্রেশনঃ ৬৮৩০০

জেলা বাগেরহাট

বিজনেস লোকেশন ঢাকা নিউ মার্কেট 

জোন এরিয়া লালবাগ