আমার মা এবং আচার
#গল্পে গল্পে সেল পোস্ট
👇👇👇👇👇👇👇👇
পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আসসালামু আলাইকুম
♨️আমি প্রথমেই মহান রব্বুল আলামীন এর নিকট লাখো লাখো শুকরিয়া আদায় করছি তিনি আমাকে আজকের এখন পর্যন্ত সুস্থ্য রেখেছেন।আলহামদুলিল্লাহ।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম আমাদের জন্য তিল তিল করে গড়ে তুলছেন।
👉আমি অনেক আগ থেকেই এই হাঁটবার এ হাঁটে আসি।মাঝে মাঝে কেনাকাটা ও করি।তবে এই হাঁটের প্রিয় ভাইবোনদের রং বেরং এর সাজে দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে আমার বেশ লাগে।তাই সবার দোকান দেখতে দেখতে আজ আমিও একটা দোকান নিয়ে ৭৪ তম হাঁটে হাজির হলাম।এই প্রথম বিক্রেতা হিসেবে হাঁটে আসলাম।কিন্তু আমি খুব ভাবনায় পড়ে গেলাম এত এত অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের পাশে আমি বসতে পারবোতো?পরে ভাবলাম এইটাতো ভালোমানুষের হাঁট তাই এখানে ক্রেতা -বিক্রেতা সব ভালোমানুষ আমি নিশ্চয়ই জায়গা পাবো।তাইতো সাহস করে চলে আসলাম।
🌺🌺ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের এখানে সপ্তাহে দুইদিন হাঁট বসে। আর আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন আমার আব্বার সাথে হাঁটে যেতাম। সেটা ছিলো গ্রাম্য হাঁট আর এইটাতো অনলাইন হাঁট। তবুও আজ বার বার আমার বাবার কথা মনে পড়ছে।বাবা থাকলে এই হাঁটের কথা বললে হয়তো হেসে বলতো পাগলী মেয়ে আমার মোবাইলের মধ্যে আবার কিসের হাঁট। তারপর বাবাকে বুঝানো লাগতো।যেমনটা মাকে বুঝাই এখন।
💥💥যাই হোক গল্পটা এবার লিখেই ফেলি। আশা করছি আপনাদের ভালই লাগবে।❤️❤️
অনেকদিন আগের কথা। আমার বড় আপু যখন ৯ম/১০ম শ্রেনীতে পড়েন।তখন আমার বড় ভাই পত্রিকা কিনে আনতেন। আর আমার বড় আপুর অভ্যাস ছিলো পত্রিকার রান্নার রেসিপির পাতা খুঁজে বের করা।তখন থেকে আমার আপু পত্রিকার থেকে বিভিন্ন রকম রান্নার রেসিপি গুলো কেটে রাখতেন।তবে সব থেকে বেশি রাখতেন আচারের রেসিপি।তবে কখনোই আচার বানানো হতোনা।কারন আমার আপুতো কখনো রান্নাঘর ফাঁকা পাইতোনা। আমার আম্মা তিনবার ভাত রান্না করতেন।সেই সুবাদে সারাদিন রান্নাঘর আম্মার দখলে। আর এসব আচার খাওয়া ও আম্মার অপছন্দ ছিলো তাই আচার দেয়ার পক্ষেও ছিলেন না।
🌱🌱কিন্তু আমার বোন তো মনে মনে আচার বানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।তাই আমের সিজনে চুরি করে আম কেটে রোদে শুকাতে দিতেন। এখানে বলে রাখি আমার মা কিন্তু খুব কড়া ছিলেন।তাই আমরা আম্মাকে খুব ভয় পেতাম তবে অনেক ভালোবাসতাম আর এখনো ভালোভাসি।কখনো মায়ের মুখের উপর কোন কথাই বলি নাই।যা বলছিলাম-আমার আম্মা একদিন নানার বাড়ি বেড়াতে গেলেন। আর এই ফাঁকে আমার বড় আপু সুযোগে সৎ ব্যবহার করে ফেললেন। রেসিপি পড়ে পড়ে আচার বানিয়ে ফেললেন। কিন্তু আম্মা যখন বাড়ি আসি দেখলেন,বললেন তোর আর কাম কাইজ পড়া লেখা নাই আকামে সময় নষ্ট করোস।এসব মানুষ খায় নাকি।
🍀🍀রোদে যখন আচার শুকাতে দিলো।আমার এক চাচী এসে বললো এগুলো কিরে মা?আপু বললো খেয়ে দেখেন, উনি খেয়ে বললেন ভালই তো লাগে।কিভাবে দিছোস?পরে উনাকে আপু সব বললেন।কিন্তু আমার আম্মারতো সেই এক কথা এসব মানুষ খায় নাকি।উনি শুধু আমসত্ত্ব ছাড়া আর কিছুই পছন্দ করতেন না
♨️♨️সেই থেকে আমাদের আচার দেয়ার যাত্রা শুরু হলো। আপু কোথাও গেলে কেউ আচার খাইতে দিলে তাদের জিজ্ঞেস করতেন তারা কোনটা কিভাবে বানায়।নতুন কোন রেসিপি পেলেই সেটা ট্রাই করতেন।আমার ও সেই একই অভ্যাস।
☘️এভাবে আম,জলপাই, চালতা, বরই এর আচার দিতেন।বছরের এমন কোন দিন ছিলোনা আমাদের ঘরে আচার ছিলোনা।একটা না একটার আচার থাকতোই।এখনো থাকেই।🌻🌻আমড়ার আচার দেয়া শুরু যেভাবে,,,,🌻🌻
আমাদের একটা আমড়া গাছ আছে।সেটাতে প্রতি বছর ই অনেক আমড়া ধরতো।আর আমার আম্মা সেগুলো আশেপাশের মানুষ, আত্মীয় স্বজনদের বিলি করে দিতেন।কিন্তু ৪/৫বছর আগে একবার এত আমড়া ধরছে যে সেগুলো সবাইকে দিয়ে নিজেরা খেয়ে ও শেষ করা যাচ্ছেনা।তখন আমি আমার আপুকে বললাম, আপু চলেন আমরা এবার আমড়ার আচার দেবো।যেই ভাবা সেই কাজ।আমরা আমড়ার আচার বানাই।প্রথমে কম ই বানাইছি।সেগুলো রোদে দিতে দিতেই খাওয়া শেষ। বয়ামে আর ঢুকানো হয় নি।আমড়া ও শেষ হয়ে গেলো।এরপরের বছর থেকে আমরা নিয়মিত আমড়ার আচার বানাই।
❤️❤️এত আচার দিয়ে কি করি❤️❤️
হুম বিষয়টি চিন্তার। কারন প্রতি বছর ১৫/২০ বয়াম আচার বানানো হয়। সব আচার মিলিয়ে ২/৩ বয়াম সর্বনিম্ন থাকেই।
কারা খায় এই আচারগুলো???
আমাদের আচার গুলো যারা খায় তারা হলেন প্রথমত বাড়িতে আসা মেহমান,দ্বিতীয়ত আমার আদরের ভাতিজা-ভাতিজিরা,এরপর খায় মুরুব্বিরা কারো প্রেসার বেড়ে গেলে,মাথা ঘুরাইলে চলে আসে আমাদের ঘরে আচার এর জন্য।আমরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে দেই।
কখনো ভাবতাম না আচার দিতে এত খরচ তারপর অনেক শ্রম কিন্তু আমরা সেটা কোন লাভ ছাড়াই শেষ করে ফেলি।নিজেরাও কিন্তু তেমন খাই না।তবে সবাইকে খাইয়ে আনন্দ পাই।এটা অন্যরকম ভালোলাগা।
❤️❤️আমার মা এবং আচার❤️❤️
প্রথমেই বলছি আমার মা আচার পছন্দ করতেন না।আর প্রায় দুই বছর যাবত আমার মায়ের নাম করেই কিছু আচার বানানো হয়। তবে আমার আম্মা এখন সব থেকে বেশি পছন্দ করেন আমের টক-মিষ্টি আচার।এটা আমার আম্মার মেডিসিন হিসেবে কাজ করে। আম্মার প্রেসার হাই।শরীর অনেক দুর্বল। তাই প্রায় দিন ই শরীর কাঁপে।আর তখন আম্মা আচার খেলে স্বস্তি লাগে।উনি ভালো বোধ করেন।এখনো আমার মায়ের জন্য আমের আচার সংরক্ষিত আছে।আর আবার আম আসা পর্যন্ত থাকবে।
💥💥আচার নিয়ে ব্যবসায়ীক চিন্তার উদয়💥💥
আমি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এ অনেক দিন থেকে যুক্ত থাকলেও আচার নিয়ে কাজ করার কথা মাথায় আসে নাই।যদিও আমাদের আচার ছোট, বড়,মুরুব্বি সবাই পছন্দ করে। তবুও এটা ভাবনায় আসে নাই
কিন্তু আমাদের লক্ষীপুর জেলার মেসেঞ্জার গ্রুপে এড হওয়ার পর আমাদের জেলা এম্বাসেডর নাসির মির্জা ভাই একদিন আমায় বলেন আপু কি নিয়া কাজ করেন।আমি বললাম আমিতো অফলাইনে ব্লক এর ড্রেস করে বিক্রি করি তবে আমি চাকরি করি বিধায় সেটা করাও কষ্ট হয়ে যায়।এরপর উনি বলেন অনেকেইতো আচার নিয়ে কাজ করেন আপনি চাইলেই তো পারেন। এরপর আমার আপুকে বললাম আপু বললো আমরাতো অনেক আচার বানাই কখনো তো ভেবে দেখি নাই এটা নিয়ে বিজনেস করবো। তাহলে শুরু করা যায়।
🍀🍀🍀 অফলাইন মিট আপ আর আমার আচারের সরাসরি রিভিউ ❤️❤️❤️❤️
অক্টোবর মাসে কমলনগর উপজেলায় আমাদের লক্ষীপুর জেলার অফলাইন মিট আপ হয়।আর সেখানে আমি ভালোবেসে সকলের জন্য আম আর আমড়ার আচার নিয়ে যাই।
আর প্রথম আচারের বয়াম খুলে আচার টেস্ট করেন আমাদের জেলা এম্বাসেডর Rezon Hossain ভাই। এরপর একে একে কমলনগর উপজেলা এম্বাসেডর Omar Faruq ভাই।ক্যাম্পাস এম্বাসেডর Amran Bin Sayed ভাই রামগঞ্জ উপজেলা এম্বাসেডর Md Mainuddin ভাই সহ জেলার উপস্থিত অন্যান্য সকল ভাই ও বোনেরা আমার নেয়া আচার গুলো খুব মজা খাচ্ছিলো।উনাদের সবার খাওয়ার আগ্রহ দেখেই আমি রিভিউ অনুভব করে নিয়েছি।এরপর সবাই তো খুব ভালোই লেগেছে বললো। তবে আমি সবার চেহারা দেখে এতটুকু বুঝেছি যে উনারা আমাকে খুশি করার জন্য বলে নাই টেস্ট হয়েছে, টেস্ট হয়েছে বলেই বলেছে।ঐটা ছিলো আমার সব থেকে সুন্দর রিভিউ।আর এই রিভিউ এর জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
সবাই যখন আচার খাচ্ছিলো তখন আমার জেলার ছোট্ট বোন Afroza Erin Sabi সন্দেশ খাওয়ানো নিয়ে বিজি ছিলো। আর শেষ মুহুর্তে আমার হাত থেকে বয়াম নিয়ে বয়ামের নিচে অল্প একটু আচার ছিলো আর সেটুকু ও খেয়ে নিলো।পারলেতো ও বয়াম টাও খেয়ে নিতো এমন অবস্থা ছিলো। কেউ কিন্তু ওকে রাগাবেন না আমার আদরের ছোট বোনতো তাই দুষ্টমী করে বললাম।
তবে আমি সেদিন সবাইকে আচার খাওয়াতে পেরে খুব তৃপ্তি পেয়েছি। এখানে বলে রাখছি যারা যারা খান নাই তাদের আমাদের বাড়িতে আচার খাওয়ার দাওয়াত রইলো।
👩🦰👩🦰আজ আর আমার গল্পটা বাড়াচ্ছিনা এই হাঁটে অনেকেই গল্প নিয়ে এসেছেন সবার টাইতো শুনতে হবে।আপনারা সময় করে আমার গল্পটি পড়েছেন তাই আপনাদের প্রতি রইলো আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। আমি অন্য কারো গল্প পড়তে যাচ্ছি। আর আজ আমি রাত ৯টা পর্যন্ত হাঁটে আছি।তাই চাইলেই যোগাযোগ করতে পারেন।
বিঃদ্রঃ ঝুম কর্নার থেকে হাঁটবার এ যেকোনো পন্য অর্ডার কনফার্ম করলে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি । ❤️❤️
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৯
Date:- ২০/১১/২০২১ ইং
👩🦰হাসনা ইয়াসমিন
🌹কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
☘️ব্যাচ -১১
💐রেজিষ্ট্রেশন -৩০৬১৯
🌺উপজেলা -রামগঞ্জ
☘️জেলা-লক্ষীপুর
👉কাজ করছি -ব্লক এর ড্রেস, সব ধরনের মৌসুমি ফলের আচার,হোমমেইড নারিকেল তেল।
⏩পেইজ-ঝুম কর্নার JhoomCorner
🌹সবাই আমার পেইজটা ভিজিট করে আসবেন🌹