দিনটা ছিলো কোনো এক শনিবারের সকাল। পড়ালেখা নেই করোনাতে ঘর বন্ধি জীবন। কি ভাবে কাটাবো ফিউচার লাইফ সে চিন্তায় চিন্তায় ক্লান্ত। পড়ালেখা আর কোনো দিন চালু হবে কিনা তা অজানা। কি ভাবে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করা যায় এখন শুধু তারই চিন্তা। ইউটিউবে প্রথম স্যারের ভিডিও দেখি কি ভাবে পর্দার ভিতরে থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠা সম্ভব।  তবুও সাহস পাচ্ছিলাম না কি ভাবে কি করবো। সবার জন্য যত সহজ আমার জন্য কি তত সহজ হবে। আমাকে তো সাপোর্ট করবে না কেউ। বাড়ির ছোটো মেয়ে তাই সবাই সাপোর্ট করলেও বড় ভাইয়ার সাপোর্ট পাবোনা বরং কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করবে ভাইয়া আগেই জানা ছিলো। ভাইয়ার একটাই সাপোর্ট তা হলো সরকারি জব। কোনো পার্ট-টাইম জব & বিজনেস এইসব কিছু ভাইয়া কোনোদিন সাপোর্ট করেনা & আমাকে করতে দিবেনা। আর ভাইয়া যদি বলে না তার মানে সবাই বলবে না।  আসলে আমার সব সিদ্ধান্ত আমার বড় ভাইয়া নেয়। বড় ভাইয়া যে বিষয়ে না করে সেই বিষয়ে কেউ আমাকে সাপোর্ট করেনা। সবার একটাই কথা দেখ বড় ভাইয়া যা বলে কর। 

তাই স্যারের ভিডিও দেখার পরেও সাহস পেলাম না। এর পর স্যারের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখলাম। প্রতিদিন স্যারের নতুন নতুন ভিডিও পাচ্ছি আর তা দেখে অনুপ্রেরণা জাগে কিন্তু সাহস পাইনা। ভাবির সাথে বিষয়টা শেয়ার করি। পরে ২ জনে মিলে এক সাথে নূরে জান্নাত রানীর  ভিডিওটা দেখি। তখন ভাবি আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট দেয়। আর রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য ভাবি আমাকে বলে। কিন্তু আমি যে অলস 🥱 তাই রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়েও আর হোলোনা।  আবার ভাবির বকা শুনতে শুনতে রেজিষ্ট্রেশন টা করে পেল্লাম।  এর পর ভাবি প্রোডাক্ট কিনে আনার আগেই কাস্টমার ম্যানেজ করে পেলে। যেহেতু উপজেলাতে থাকি কন্ডিশনে মাল যাবেনা। তাই আগেই সব টাকা পেমেন্ট করে দিতে হোলো। আর এই টাকা আমাকে আমার আপু দিয়েছিলো। যদিও সবার টুকটাক সাপোর্ট ছিলো শুধু আম্মুর সাপোর্ট ছিলোনা। কারন এতো দিনে আমার পড়ালেখা গোল্লায়। 

🌱প্রথম প্রোডাক্ট সেল গল্পঃ-

 ছিলো আসন্ন ঈদুল আজহা। তাই কুরিয়ার সার্ভিসের বিল ২ গুন হয়ে গেছে। যেখান থেকে পাইকারি ড্রেস অর্ডার করি পরিচয় দিতে গিয়ে দেখলাম ওনারাও রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তাই ওনারা নিজে থেকেই আমাকে জানায় ওনারা যখন ঈদেরছুটিতে বাসায় আসবে তখন যদি নেই ডেলিভারি চার্জ লাগবেনা।  কথাটা শুনে আমি না করিনাই। ঈদের ২ দিন আগে  প্রোডাক্ট হাতে পাই আমি। কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা😥 ভাইয়ার সামনে পড়লো। কারন ভাইয়াও ঈদের ছুটিতে বাসায় এসেছে। যাই হোক ভাইয়া আমাকে কিছু বলে নাই আমিও কিছু বলিনাই। ঈদের আর বাকি ১ দিন।  ১ দিনেই আমার সেল ৪ হাজার+

এর পর মোটামুটি ড্রেস নিয়ে কাজ চলছে। তবে এতো বেশি সাড়া পাইনি। কারন আমি আমার পন্যের প্রচার করতে পারিনি। আর প্রচার ছাড়া কোনো কিছুরই প্রসার সম্ভব না। 

🌱ইউনিক পন্য নিয়ে কাজ শুরুর আইডিয়াঃ-

 প্রিয় ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর স্যারের একটা সেশন সামনে পড়ে। সেখানে স্যার ইউনিক কিছু নিয়ে কাজ করার কথা বলেছে। কিন্তু ইউনিক কি নিয়ে কাজ করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।  পরে লক্ষ্মীপুরের বিখ্যাত পন্য নারিকেল সুপারি & নারিকেলের সন্দেশ নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সন্দেশ তৈরি বেশ কষ্টকর😥 তাই প্রথম দিকে খুব হিমসিম খেয়ে গেলাম। কিন্তু ভাবি আর আপুদের সাপোর্টে ভালোভাবে প্রোডাক্ট তৈরি আর ডেলিভারি দিতে সক্ষম হোলাম।  আলহামদুলিল্লাহ অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছিলাম। তাই কষ্ট হলেও সন্দেশ আইটেম টা ছাড়তে মন চাচ্ছিলো  না।  কিন্তু আপুদের তো শশুর বাড়ি আছে তারা শশুর বাড়ি চলে যায়। আমাকে এখন ভাবি হেল্প করে আম্মু অসুস্থ তাই হেল্প করতে পারেনা। কিন্তু ভাবিও বাবার বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলো। ওখানে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আর আসতে পারেনি। কিন্তু আমি কাস্টমারকে ডেলিভারি দিবো বলে কথা দিয়ে দিয়েছি। তাই ভাবি নিয়ে আর সন্ধ্যায় আসা সম্ভব না। তাই ভাইয়া চলে আসলো আমাকে হেল্প করার জন্য যদিও ছোটো ভাইয়া আমার সন্দেশ তৈরিকে সাপোর্ট করেনা। আর  বড় ভাইয়া এখনও এই সম্পর্কে কিছুই জানেনা। ভাইয়া আমাকে সন্দেশ তৈরি করতে পর্যাপ্ত হেল্প করলো শেষে ভাইয়া আমার মাথায় হাত দিয়ে বোল্লো তুই কেনো এতো কষ্টের কাজ করছ। তুই তো অভাবে করছ না স্বপ্ন পূরন করার জন্য করছ। তাহলে এতো কষ্টের কাজ করার দরকার কি বল।  আমার ভালোর জন্যেও অনেক গুলো কথা আমাকে বুঝিয়ে দিলো ভাইয়া। আর অল্প লাভ হলেও কম কষ্টের কাজ করার জন্য বোল্লো। 

আর আমার কাছে আমার স্বপ্নের থেকেও আমার পরিবারের ভালোলাগা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সন্দেশ নিয়ে কাজ কিছু দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছি। কারন লেভার দিয়েও এই শীতে কাজ করা সম্ভব না।  কারন নারিকেল পিসা যায়না। 

🌱সফল হতে এক্টিভিটির বিকপ্ল নেইঃ-

 যেহেতু সন্দেশের কাজ কিছুদিনের জন্য স্থগিত। আর উদ্যোক্তারা কখনও থেমে থাকেনা তাই নিজের এক্টিভিটি ধরে রাখার জন্য। লক্ষ্মীপুরের প্রিয় ভাই বোনদের থেকে উৎসাহ পেয়ে  আবারও গার্মেন্টস আইটেম & শীতে কাস্টমারদের চাহিদার কথা চিন্তা করে শীতের পন্য নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে এসেছি।

আমার অগোছালো লিখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় নিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।  ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৯

Date:- ২২/১১/২০২১ ইং

আফরোজা ইরিন সাবি 

কমিউনিটি ভলান্টিয়ার 

ব্যাচঃ-১৫ 

রেজিষ্ট্রেশনঃ-৬৮০৭৬ 

ফাউন্ডারঃ- বিজনেস লাভার 

কো-ফাউন্ডারঃ- Average64