চাকরি করে সম্পূর্ণ নিজের খরচে পড়াশোনা
আসসালামুয়ালাইকুম
আমি অত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেয়ে। বাবা-মা, ছোট ভাইকে নিয়ে আমার ছোট পরিবার। বাবা বরাবরই ঢাকায় থাকতো, আমরাও ছিলাম একটা সময় পর্যন্ত। তারপর গ্রামে গিয়ে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হই ২০০৩ সালে। ভালোই চলছিল আমাদের।
আমি ছোট থেকেই মায়ের খুব কাছের ছিলাম। মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার ভালো ছাত্রী ও ছিলেন কিন্তু ঐ যে সমাজে মেয়েরা অবহেলিত তাই নানুভাই মাকে কোন ভাবে এসে.এস.সি টা কমপ্লিট করার পর আর পড়ালো না, বিয়ে দিয়ে দিল। এটা নিয়ে মায়ের খুব কষ্ট ছিল এখনো আছে। মা আজও সেই কষ্ট টা ভুলতে পারে নি। তাই সে চাইতো আমি যেন জীবনে কিছু করতে পারি।
কিন্তু যখন ৯ম শ্রেণিতে উঠলাম তখন থেকে বাবা আর পড়াতে চাইলো না।
মা নাছোর বান্দা সে তখন প্রথম বারের মত বাবার বিরোধিতা করেছিল এবং আমার পড়াশোনা চালিয়ে গেলো।
আমি সায়েন্স নিয়ে পড়া শুরু করলাম যখন ফর্ম ফিলাপ করবো তখন জানতে পারলাম আমার নাম নেই লিস্টে। পরবর্তী বছরেরও রেজিস্ট্রেশন এর ডেট শেষ তাই পরীক্ষা দিতে হলে ২বছর গ্যাপ হবে
খুব ভেঙে পড়েছিলাম সেদিন। ভেবেছিলাম আর হয়তো পড়াশোনা হবে না। কিন্তু আল্লাহ সহায় ছিলেন আমার তাই ফর্ম ফিলাপের লাস্ট দিন আমার নাম পাওয়া গেল মানবিক বিভাগে প্রচন্ড খুশি হয়েছিলাম সেদিন।
সেই সময় পাশে ছিল আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন আমাকে নিয়ে। উনি ঐ ১.৫ মাস ওনার বাসায় রেখে রাতদিন পরিশ্রম করে আমাকে পাশ করালো। ৩.৯৪ পেয়েছিলাম, বাবা ও খুশি ছিল।
ইন্টার এ ব্যবসায় শিক্ষা নিলাম। পাশ করার পর শুরু হলো নতুন যুদ্ধ। ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগোন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম না আর অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে দেয়া হলো না।
সেই দুঃখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পরীক্ষা দিলাম না।
বিয়ে ঠিক করা হলো আমার থেকে ২২ বছরের বড়ো একজনের সাথে, কত কান্না কাটি করলাম কাজ হলো না। তারপর বিয়ের আগে জানতে পারলাম ওনার বউ আছে তখন বিয়ে টা ভেঙে গেল। আত্নীয় স্বজন প্রতিবেশী সবার কথা শুনলাম। প্রচন্ড প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হলো। আবার নতুন যুদ্ধ। সেইদিন গুলো কতটা কষ্টের ছিল একমাত্র আমিই জানি। কিন্তু লক্ষ্য ছিল ঘুরে দাড়াতেই হবে।
পরের বছর আবার চেষ্টা করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু তখনো হলো না।
ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং অনার্স।
চাকরি করে সম্পূর্ণ নিজের খরচে পড়াশোনা এবং নিজের যাবতীয় খরচ চালিয়ে অনার্স শেষ করলাম ৩.১৫ নিয়ে।
এখন মাস্টার্সে টুঙ্গি সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছি।
মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল কিছু করবে তাই বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে একটা টেইলার্স এর দোকান নিলাম গত ৩বছর আগে। এখন সেখানে টেইলার্স এবং ড্রেস ২টাই আছে। ভালোই চলছে।
অনলাইন বিজনেস ও শুরু করেছি কিছুদিন হলো। তখন এই গ্রুপটাতে একজন এড করলো আশা করি ভালো কিছু করতে পারবো এই প্লাটফর্ম থেকে।
এত বছরে আমি একটা জিনিস শিখেছি"জীবনটা একান্ত আমার তাই সেটাকে সুন্দর করে সাজানোর দ্বায়িত্ব টাও আমার। আর সেই পথটা মোটেও সহজ নয়। সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয় আর সেই সংগ্রামের পথে দুর্বল হলে চলে না, লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হয়। মানুষের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে থেমে না থেক বরং তাদের কটু কথাকে শক্তি করে এগিয়ে গেলেই সাফাল্য পাওয়া যায়''
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য। দোয়া করবেন আমার জন্য।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 135
Date: 09.02.2020
ফাতিমা রিমু
৯ম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন:১০৬০৫
জেলা: বরগুনা