সময় স্রোতের মতো বহমান, আমি সেই স্রোত ধারায় বয়ে চলেছি
🧕আমি খুবই সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলাম
আমার জন্ম গ্রামে,কিন্তু বেড়ে উঠা ঢাকায়,বাবা একটা এন জি ও তে জব করতেন সেই জবের কারণেই মূলত ঢাকায় থাকি।এই ভাবেই দিন যাচ্ছিল, এরই মধ্যে স্কুল এর গন্ডি পেরিয়ে বিয়ের গণ্ডিটাও পার হয়ে গেলো,খুবই ঝড়ের গতিতে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় ঘটনা টা সাধারণ একটা ঘটনা হয়ে গেলো।
🧕একটা মেয়ের কাছে তার মাতৃত্বের স্বাদ নাকি অমৃত!!!কিন্তু মজার বিষয় হলো এই সাধটা কেমন তা উপলব্ধি করার আগেই মা হয়ে গেলাম,আমার ১৬ বছর বয়সে আমার বড় ছেলের জন্ম,অনেক নাটকীয়তার পর সে আমার কোল জুড়ে এসেছিল ,সেই থেকেই মূলত আমার জীবনের একটি অধ্যায় এর সূচনা!
🧕এতক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গুলো খুব দ্রুত বলে ফেললাম ,কারণ এমনই দ্রুত গতিতে ই ,কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার সাথে ঘটে গিয়েছিল ঘটনা গুলো।
💥💥আমার সংগ্রাম💥💥
🧕ছেলেকে কোলে নিয়ে শুরু করলাম আবারও লিখা পড়া,যখন আমার বিয়ে হয় তখন হাসবেন্ড ও স্টুডেন্ট আমিও স্টুডেন্ট,
একজন স্টুডেন্ট এর কোন সাপোর্ট ছাড়া সংসার মেনটেইন করা যে কি কষ্ট তা শুধু মাত্র যে ভুগতো ভুগি সেই জানে, খুব কষ্ট করে পড়ার খরচ ও নিজেদের খরচ দুজন মিলে বহন করেছিলাম।আমার একটা অস্ট্রেলিয়ান বান্ধবী ছিল ওই কষ্টের সময় ও আমাকে খুব হেল্প করেছে,সপ্তাহে তিন দিন ওকে বাংলা শিখাতাম,তার বিনিময় ও আমাকে পারিশ্রমিক দিত যা দিয়ে আমাদের সংসার চলত। আর আমার হাসব্যান্ড খুলনা থেকে মাছ এনে ঢাকায় সেল দিত,খুব কষ্ট দেখেছি , এমনও দিন গিয়েছে যে চাল ডাল কেনার টাকা নাই,শুধু মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে খেয়েছি,কিন্তু সেই ভালোবাসাকে অটুট রেখেছি।
🧕খুব সহজেই চিন্তা ভাবনা না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়।ভালোবাসা অন্যায় নয় কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা টা বোকামি। কথায় আছে প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ অন্ধ হয়ে যায়,আমার বেলায় কথা টা ঠিক ছিল।অল্প বয়সে প্রেম করে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময় দেখেছি।পার করেছি দুর্বিসহ দিন।
❤️প্রেম ভালোবাসা খুবই মূল্যবান সম্পদ প্রতিটি মানুষের জীবনেই,তবে এই মধুময় সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করতে চাইলে নিজেকে তার যোগ্য করে গড়ে তুলতে হয়,আবেগে গা এলিয়ে দিয়ে দিলে সমাজও কাছের মানুষের কাছে অনেক তুচ্ছতার শিকার হতে হয়।আমি বলছিনা যে প্রেম করা খারাপ,কিন্তু নতুন জেনারেশনদের বলবো নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে সবার আগে,যেনো নিজের অবস্থান শক্ত হয়।
যেমনটা করেছিলেন প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার,আমরা সবাই জানি প্রিয় স্যার এর সেই দৃঢ় , প্রত্যয়ী ভালোবাসার কথা যা যুগে যুগে আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে।
💥💥আবার ফিরে যাই 💥💥
🧭এই ভাবে কষ্ট করে দিন কাটছিল আমাদের,লিখা পড়া, সংসার ও আমাদের ছেলে কে সামলিয়ে ।
এক দিন আমার বর বললেন আমি হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এর শর্ট কোর্সে ভর্তি হব,আমি বললাম যদি ভালো হয় তবে করো,তার পর খোঁজ খবর নিয়ে সে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করে,তখন আমার মনে হলো আমিও করতে চাই।ওর সাথে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা দুজনেই কোর্স করবো,
যেই ভাবা সেই কাজ,শুরু হলো আমাদের জীবনের অন্যতম অধ্যায়ের,সবকিছু ম্যানেজ করে এই তিন মাস পার করা খুব সহজ ছিল না,ছোট ছেলেটাকে বাবা মার কাছে রেখে এসেছিলাম,কারণ বাচ্চাটাকে নিজের কাছে রাখার অবস্থা ছিল না ,ওর খাবার জোগাড় করাও খুব কঠিন ছিল আমাদের জন্য।তিন বছরের সন্তানকে নিজের থেকে দূরে রেখে দিনের পর দিন তাকে মা বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছি ,কিযে কষ্ট, কিযে যন্ত্রণা র ছিল সময় গুলো!! বাচ্চাটা জড়িয়ে ধরে আধো ভাঙ্গা বাংলায় বলত মা আমি তোমার সাথে থাকবো,ওই সময় মনে হতো আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করে দিও মাসুম বাচ্চাটাকে কষ্ট দিচ্ছি বলে,কতটা রাত সন্তানের বিচ্ছেদে কেদে বালিশ ভিজিয়েছি তার শেষ নেই।এক দিন ক্লাস মিস হয় নাই।
🧭তিন মাস হবার পর ফাইভ স্টার হোটেলে 2 মাস প্রেক্টিকাল করার সুযোগ আসে,কিন্তু খুব ভাল লাগার বিষয় হলো আমার সার্টিফিকেট হাতে আসার আগেই এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আমার এক পাঁচ তারকা হোটেলে জব হয়ে যায়,আমি জয়েন হবার পর দুই মাসের মাথায় আমার মেনেজার স্যারকে request করি, আমার হাসব্যান্ড এর জব কনফার্ম হয়ে যায়।আপনারা অনেকেই জানবেন যে কোন ইন্টারন্যাশনাল রূল ফলো করা কোম্পানিতে একই ফ্যামিলির দুজন জব করতে পারে না।
তাই এক বছর একই কোম্পানিতে কাজ করছি,কেউ জানতেও পারেনাই আমাদের সম্পর্ক।
পরে সে অন্য একটা কোম্পানি জয়েন করে।খুব ভাল দিন ,সুখের দিন আসতে শুরু করে। মনে হচ্ছিল সুখের দিন চলে এসেছে ,খুব বিলাসী জীবন যাপন শুরু হয়ে যায় আমাদের,তখন সবাই খুব আপন, কোন প্রকার সমস্যা নেই।
🧭আমার কাছে মনে হয় মানুষ চেনার জন্য জীবনে খারাপ সময়ের দরকার আছে,যখন আপনার জীবনে কঠিন বাস্তবতা আসবে তখন দেখবেন যে কে আপনার আপন কে আপনার পর!!!
🧭সুখ নাকি বেশি দিন স্থায়ী হয় না,এমন টা মুরুব্বীরা বলেন,2013 তে আমার কোল জুড়ে আসলো আমার রাজকন্যা,তার পৃথিবীতে আগমনের পর আমার এত ভাল জব ছেড়ে দিলাম ,আমার মনে হয়েছিল মেয়েকে দেখাশোনা করা আমার দায়িত্ব,মেয়ের মা কে কাছে পাওয়া তার অধিকার।কারণ নিজের সন্তান মা ছাড়া যে কি কষ্টে জীবন যাপন করে তা বড় ছেলের দূরে থাকা আমাকে দেখিয়েছিল,তাই মেয়ের সময় তাকে সেই কষ্ট আমি মা হয়ে আর দিতে চাইনি আর পারিও নাই।
🙏তাই প্রিয় হাসব্যান্ড এর উপর সম্পূর্ন বিশ্বাস করে আমার ক্যারিয়ারের ইতি টানলাম। মনে করেছিলাম তিনি সম্পূর্ণভাবে সংসারের দায়ভার সামলাতে সক্ষম।
That time he proved me i was rong.কিছু দিন যেতে না যেতেই তিনি মহা নায়কের মত জব ছেড়ে দেন বিজনেস করার জন্য।অনেক করে বলেছিলাম এই জব ভালো না লাগলে অন্য জব খুঁজে নাও।কিন্তু প্রিয় হাসব্যান্ড কথা শুনেন নাই। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে শিক্ষা অর্জন করতে শুরু করি,তিনি সাত মাসের ব্যবধানে মোটা অংকের অর্থ লস এ পড়েন,আমরা বিগত বছর গুলোতে কষ্ট করে যা উপার্জন করে এগিয়ে গিয়ে ছিলাম সাত মাসে তার ও বেশি হারিয়ে ফেললাম।এই খানে একটা কথা বলতে চাই যে ব্যবসা না শিখে করতে যাওয়া চরম বোকামি তাই আগে যেটাই করতে চাই না কেন শিখতে হবে ,জানতে হবে,তার পর তাকে কাজে লাগাতে হবে।
💥যা নিজের ছিল সব কিছু পর হয়ে গেলো,চোখের পলকে সব শেষ হয়ে গেলো।
তার পর থেকে পুরো চার বছর বাচ্চার জন্যে আমি কোথাও কিছু করতে পারি নাই, আর তিনি ফ্রাস্টটেট
হয়ে পুর এলোমেলো হয়ে যান।আমি অথৈ সাগরে পরে যাই,কিভাবে সব সামলাবো!!!!
কই যাবো ,খুব কষ্ট হয় এমনও দিন গিয়েছে যে মানুষের ফুড এর দোকানে তিনি কাজ করেছেন,তিন বার দোকান নেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি,দোকান নিবো বলে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে ঠিক করেছি এমন কিছু কারণ এসে গেছে যে আর নিতে পারি নাই।
সেই সময় একদিন ভাবছিলাম কি করব যাতে ঘর সংসার,বাচ্চার কাছে থেকেও নিজের অবস্থান তৈরি করা যায় ও টাকা ইনকাম করা যায়,ভাবলাম নিজে কিছু বানাবো ,আমি ছোট বেলা থেকেই হাতের কাছে বেশ ভাল ছিলাম,তাই চিন্তা করলাম যে যদি তাসবিহ বানাই তবে কেমন হয়!!🍃
যেই ভাবা সেই ধারায় নেমে পড়লাম ,শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা হবার গল্প,সেই বছর অফ লাইনেই পরিচিতদের মধ্যে শুরু করলাম তাসবিহ সেল।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো সাড়া পেলাম,সাথে যুক্ত করলাম জায়নামাজ, আর হিজাব,চলছিল মোটা মুটি।মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার কারণে তার স্কুল আমার ভালো একটি মাধ্যম হলো সব সেল করার,কিন্তু কপাল এ খানেও আমার অনুকূলে ছিল না ,শুরু হলো covid-19,সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলো । আবারও আমি হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গেলাম,কিযে কাল রাত ছিল সেই দিনগুলো ,বর্ণনা করতে পারবো না।
❤️এত কিছুর পরেও আল্লাহ্ পাকের দরবারে হাজার কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যে তিনি বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের।
এত কিছু আমার জীবনে ঘটে গেছে,অনেক চড়াই উৎরাই,যখন খুব এলোমেলো সব কিছু ঠিক সেই সময় ,গত বছর ফাইনালি তিনি একটা জব পেয়েছেন তিনি ,আমি আবার নতুন করে সব শুরু করেছি আগের চেয়ে আরও বেশি ভালো করে করবো বলে,আমি নতুন করে অনলাইন বিজনেস ফাউন্ডেশন বলার মত একটি গল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছি ,আমার একটি প্রিয় আপুর মাধ্যমে, বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হয়েছি।,তিনি হলেন খুলনার, নাম ময়না আক্তার , ভলান্টিয়ার ,ব্যাচ 12, আপু র কাছে আমি সত্যি ঋণী ,আপু খাঁটি মধু ও ঘি নিয়ে কাজ করেন।অনেক অনেক দোয়া রইলো প্রিয় আপুর জন্যে।
🌿ছেলে ,মেয়ে নিয়ে এখন সপ্নদেখি,নিরাশার মেঘ আমাকে আর ঘিরে ধরে না,আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সম্পূর্ণ ভাবে এগিয়ে যেতে চাই।সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের সকলের প্রিয় বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন, আর আমাদের মহা নায়ক ,সত্যের দিশারী,প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।আমি আশাবাদী ,আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই আমি যেনো নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারি।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০১
Date:- ১৯/১২/২০২১ ইং
🧕 Monira Akter Adhora,
💌ব্যাচ ১৫
🪶রেজিঃ ৭২১৩১
কাজ করছি
📿তাসবীহ
🟥জায়নামাজ
📖আল্ কোরআন শরীফ
🎊হোম মেড ফুড
🥯পর্দা বেডশিট নিয়ে