চলনে- বলনে, দায় -দায়িত্বে, পাওয়া - না পাওয়ায় সব তো তোমারেই "নারী "!
চলনে- বলনে, দায় -দায়িত্বে, পাওয়া - না পাওয়ায় সব তো তোমারেই "নারী "!
সারাদিন সারাক্ষণ যেন ছোটো আর ছোটো তোমার পরিবার, পরিজন সবাইকে নিয়ে তুষ্ট থাকার নামই তো "নারী"!
যতই ভালো রান্না করোনা কেন " লবনটা যদি একটু বেশি হয় বা ঝাল বা হলুদ কিংবা স্বাদ ১৯/২০ হলেই তো এই যে এতদিন এত মজা করে খাইছো অনেকেই তা মূহুর্তেই ভুলে যাবে! তাই তো রান্নার সময় খুব সাবধানে!
অবশ্য তুমি কখনোই রান্নাটা খারাপ করতে চাওনা! রান্না বসিয়ে যখন তুমি হঠাৎ বাবা সোনার কান্নাকাটি শুনতে পাও তখনই তো তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখতে গিয়ে রান্নাটা ১৯/২০ হয়ে যায়! ইশ এটা যদি পরিবারের কর্তা মশাই/ বাকি সদস্যরা বুঝতেন তাহলে তো অনেক সুবিধাই হতো!
দেখোনা! পাশের বাসার " কিংকুর মায়ের দিকে! সে তো কাজের লোক সক্কাল বেলা এসে রুম পরিষ্কার করলে তবেই সকালের বিছানা ছাড়ে!
ওমনি ডাইনিং এ বসে রেডি পরোটা ও মাংস দিয়ে সকালের নাস্তা সারে। কফি নিয়ে টিভির সামনে বসে " বুয়াকে একটার পর একটা হুকুম করে "
একদিন বুয়া না এলে অনলাইনে খাবারের অর্ডার ছাড়ে। শপিং মলে কেনাকাটা করতে গিয়ে কিনতে কিনতে কাজের মেয়েটার দুই হাত বোঝাই করে! আজ এদেশে কাল ওদেশে ঘুরে ফিরে টাকা খরচ করে। তারা তো অনেক বড় লোক। স্বামীর ঘুষের টাকা/ অবৈধ ইনকাম করা টাকায় তারা চলছে দিকবিক।
তুমি তো তাদের মতো নও, কারন তোমার স্বামীর অল্প রোজগারের সংসার! মাঝে মাঝে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। অনেক সময় যখন স্বামী বা পরিবারের অনেকের বঞ্চনা ও তোমাকে সইতে হয়! ছেঁড়া কাপড় ও পরতে হয়, কারন তুমি যে মধ্যবিত্ত পরিবারের বউ!
সেই কবে তুমি নিজেকে আয়নায় দেখার সুযোগ হারিয়েছো! চুলে শ্যাম্পুর জায়গায় কাপড় কাঁচা সাবান ঘষা শুরু করেছো! পরনের শাড়ীতে ক'বার সেলাই দিয়েছো! বাচ্চাকে ভালমন্দ খাওয়ানোর কষ্ট, তোমাকে জর্জরিত করেছে।
সেই তুমি সব সামলিয়ে "টিভিতে নারী উদ্যোক্তাদের পন্য দেখে। নিজের মধ্যে স্বপ্ন তৈরী করার চেষ্টা শুরু করতেই পারো। তোমার মধ্যে হলো ও তাই!
কাজ তো একটা ভালোই পারো! সেলাইয়ের কাজ " নিজের গলার চেনটা বিক্রি করে "কিছু কাপড় কিনে পোশাক তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করলে।
একদিন তোমাকে দেখলাম স্টেজে দাড়িয়ে বক্তব্য দিতে! আমি তো অবাক হলাম!
তোমার বক্তব্যে ছিল " তুমি নাকি "কাপড় কিনে এনে পোশাক তৈরি করে দোকানে দোকানে দেয়া শুরু করলে! তারজন্য নাকি তোমার পরিবার থেকে অনেক লান্চনা -বঞ্চনা, বাঁধা-বিপত্তি সব সয্য করতে হয়েছে! প্রথম শুরু করার পর নাকি তোমার প্রোডাক্টসের অনেক চাহিদা বেড়ে যায় " তখন নাকি লাভের অংশ দিয়ে তুমি আরও বেশ কয়েকটি মেশিন কিনে লোকজন নিয়োগ দিয়েছিলে। তারপর আস্তে আস্তে শো-রুমে হোলসেল দিতে শুরু করলে, আজ নাকি তোমার প্রোডাক্টসের অনেক চাহিদা।
বাচ্চা, সংসার সব সামলিয়ে নিজের ব্যবসাটা দাড় করাতে গিয়ে নাকি তোমার কত শ্রম দিতে হয়েছে, রাতের পর রাত, দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত করেছো নিজের প্রতিষ্ঠান। অবশ্য তোমার কারখানায় কিছু অসাধু কর্মী তোমাকে কয়েকবার নাকি লস করে দিয়েছে আবার ঠকিয়েছে। তারপর ও তুমি থেমে যাও নি।
শুনলাম তোমার কারখানায় নাকি অসাবধানতার কারনে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবার অনেক অসাধু ব্যবসায়ী তোমার টাকাও মেরে দিয়েছে।
যে মেয়েটা তুমি মানুষের সামনে যেতে ভয় পেতে। ছেঁড়া কাপড় পরতে, সেই মেয়েটা আজ তুমি হাজারো মানুষের মাঝে মাথা উঁচু করে নিজেকে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বক্তব্য দাও। তোমার কথা শুনে অনেক উৎসাহিত হয়, অনুপ্রাণিত হয়।
সেদিন তোমাকে দেখলাম " নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছো! সত্যি অনেক অসাধারণ।
নিশ্চয়ই আজকের এই সফলতার গল্প অনেকে শুনবেন, আজকে তুমি সফল নারী তাই প্রতিটি জায়গায় অনেক সম্মানিত হবে। আজ নিশ্চয়ই তোমার টাকা পয়সার কমতি নেই!
তবে তুমি স্বার্থক হয়েছো " তোমার চেষ্টায় তোমাকে সফল করেছে! তুমি চেষ্টা না করে যদি অভাবেই প্রতি দিন ধুঁকে ধুঁকে দিনপাত করতে, তবে আজ সফল হতে না! আজ তুমি শত ব্যস্ততায় আছো বলে! কর্মজীবী নারী বলে অলসতার সময় নেই! তাই তো শরীর টা ভালো আছে। ওদিকে " রিংকুর মা " নাকি সারাদিন রেষ্টে থাকায় দিনদিন অসুস্থ হয়ে পরেছেন।
আমাদের এই প্লাটফর্ম এ আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার প্রতি দিন প্রতি মূহুর্তে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরকে এগিয়ে নিতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই তো অনেক নারী আজ স্যারের শিক্ষা পেয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন এবং বাস্তবায়ন করতে চলছেন। নারীরা সব কিছু সামলিয়ে আজ অনেকে অনেক এগিয়ে আছেন।
মন্তব্য : নারীদের পারিবারিক সব দায়িত্ব পালন করার পর নিজে কিছু যখন করতে চান " তাদেরকে সহযোগিতা করা দরকার প্রতিটি পরিবারের " বিশ্বাস করুন আমাদের সমাজ ব্যবস্হায় ১০০% সার্পোট নারীদের দেয়া হয় না। দিলেও হয়তো তার পরিমান খুব কম! এই গ্রুপে অনেক ভাইয়েরা আছেন নিশ্চয়ই আপনাদের নিজের জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করবেন। শুধু যে নারী উদ্যোক্তার জন্য করতে হবে তাও না, প্রতিটি নারীর স্বাধীনতা দেয়া দরকার। অবশ্য আমাদের সামাজিকতা মেইনটেইন করে।
বিশ্বাস করুন "আমাদের নারীদের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তই খুব চ্যালেন্জিং!! আমরা যেভাবে অনুশীলন করি সেটা আপনারা কখনোই পারবেন না।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫০২
Date:- ০৪/০৪/২০২১
জ্যোৎস্না বেগম
ব্যাচ ৮ ম
রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৬৩২৪
জোন এম্বাসাডর উত্তরা
জেলা সিরাজগঞ্জ
বর্তমান উত্তরা
ব্যবসা: একাত্তর সোর্সিং লিমিটেড বায়িং হাউজ