২দিন আগে একটা আঞ্চলিক ভাষায় পোস্ট লিখেছিলাম,পোস্ট আপলোড করার পর ভয়ে ভয়ে
একটা লাল পরীর মৃত্যু
আসসালামু আলাইকুম, সবাইকে জানাই রমজানের জুম্মাবারের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
২দিন আগে একটা আঞ্চলিক ভাষায় পোস্ট লিখেছিলাম,পোস্ট আপলোড করার পর ভয়ে ভয়ে ছিলাম।এপ্রুভ হবে কি,সেই ভয়ে,কেননা এখনো এই প্লাটফর্মে আমি আঞ্চলিক ভাষায় কোন পোস্ট পাইনি।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মডারেটর ও এডমিন প্যানেল পোস্টটি এপ্রুভ করেছেন।আর প্লাটফর্মের সদস্যদের লেখাটা যে খুব ভাল লেগেছিলো সেটা কমেন্ট দেখেই বুঝতে পারছি।আমার জানামতে যতগুলো ভাই-বোন পোস্টটি পরেছিলো সকলেই প্রায় কমেন্ট করেছিলো।সকল মডারেটর, এডমিন প্যানেল ও প্লাটফর্মের সদস্যদের জন্য শুকরিয়া, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
সকলের সেই উৎসাহ নিয়েই আবার ও সাহস করলাম আরেকটা পোস্ট লেখার এই ভাষাতে।আশাকরি এবারও সকলে পাশে থেকে সাপোর্ট করবেন ইনশাআল্লাহ।
✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️
মেয়েঃ ওমা,মা,এইবার ঈদে আমারে একখান লাল জামা কিন্না দিবা,আর হাতে লাল রঙের কাচের চুড়ি। আমি যহন এই লাল জামা আর হাতে লাল চুরি পইরা হাইটা যামু,তখন কাচের চুড়ি গুলান হইতে ঝনঝন আওয়াজ হইবো।আর আমারে তহন দেখতে এক্কেবারে লাল পরীর লাহান লাইগবো।
কওনা মা কিন্না দিবা তো?প্রত্যেকবার ঈদে পুরান জামা পত্তে আর বাল্লাগেনা আমার।
(মাইয়্যার কথাগুলো হুইন্যা আমার আচলে মুখ গুইজা কান্দন ছারা আর কোন উপায় লাই,থাকবো ক্যামনে,ও যহন ১বছরের বাচ্ছা তহন ওর বাপ গাড়ী এক্সিডেন্টে মারা যায়।হের পর থিইক্কাই মুই মাইনসের বাড়ী কাম কইরা ২মা বেটি পেট চালাই।যেইহানে ২বেলা খাওনেরই ঠিক লাই,হেইহানে নতুন জামা চুড়ি তো আসমানের চান্দের লাহান মুর কাছে।
মাইয়ার আবদার সামান্য অইলেও মু গো মতো গরীব মাইনসের কাছে মেলা কঠিন ব্যাপার।কিন্তু মাইয়ারে না ও কইতে পারী না,একটা মাত্র কলিজার ধন আমার।ওরে লইয়াই তো আমার জীবন।তাই দিমু কইয়াই চইল্যা আইলাম ওর কাছ থিক্কা।থাকলেই যদি আরো কিছু চাইয়া বহে,তহন দিমু কই থিক্কা।ও তো আর এতকিছু বুঝবো না।)
এই তো মাত্র ৫ বছরের হইলো,চাইছিলাম স্কুলে ভওি করায় দিতে।কিন্তু টেহার যোগারযন্ত কইওে পারি লাই বইল্যা আর হইয়া উঠে লাই।এইবার টেহা জমায়তাছি।সামনের বছর করাই দিমু।তহন আমার মাইয়াটাও ইসকুলে যাইবো।লেহাপরা শিকবো।
তয় এহন মুই ভাবতাছি অন্যকতা,লাল জামা কিনবার টাকা কই পামু।
মেডাম রে কইলে তো দিবোওনা।কি করমু তয় এহন আমি?
হেইদিন মাইয়াটা ১টুকরা মাছ খাইতে চাইছিলো,কওবার কইরা অনুরোধ কইরলাম,শেসমেশ পায়ে পযন্ত ধরলাম, তাও দিলো না,কইলো,"ফইন্নির বাচ্ছাগো এত খাওনের শখ থাকা বাল না" যা দেই তাই খা।
আর এখন জামার কথা কইলে তো কাজ থিক্কাই তাড়ায় দিবো মুরে।
চিন্তায় মাতা কাম করতাছেনা।কি করমু আমি?
হারাদিন রাইত ভাইবাও কোন উপায় পাইলাম না,লাল জামা পাওনের লাইগ্যা।
হঠাৎ কইরা মনে পরলো,ঘরে তো আমার একখান সাদা কাপুর আছে,ওর বাপ মারা যাওনের সময় এলাকা থিক্কা কেউ একজন দিছিলো,বিধবা গো সাদা কাপুর পরোন লাগে,হের লিগা।
কিন্ত সাদা কাপুর পইরা তো আর মাইনসের বাড়ী কাম করুণ যায় না।সাদা কাপুরে ময়লা টানে।অল্পেই ময়লা ওইয়া যায় বইল্যা উঠায় রাখছিলাম।
আচ্ছা ওইটা দিয়া মাইয়্যারে জামা বানায় দিলে কেমুন অয়।
এইডা ঠিক,মাইয়াডা লাল জামা চাইছিলো,আর এইডা সাদা জামা,তারপরও, নতুন জামা তো অইবো।মাইয়াডা এতে খুশি অইবো মনে লয়।
যেই ভাবোন,হেই কাজ।প্রতিদিন রাইতের বেলা মাইয়াডা ঘুমানোর পরেই মুই হেই কাপুরডা কাইট্যা জামা বানান শুরু করি।প্রতিদিন একটু একটু কইরা জামাডা বানানো শেষ করি চান রাইতের দিন।
কাইলকা ঈদ।জামাডা এতটাও খারাপ অয় লাই।সুই সুতা দিয়া একটু নকশা ও কইরা দিছি।মাইয়ার ঠিক মনে ধরবো।
হেইডাই অইলো।মাইয়া আমার জামা পাইয়া মেলা খুশি।খালি একবার কইছিলো," ওমা তুমারে না কইছিলাম লাল জামা দিওয়ার লাইগ্যা।তাইলে সাদা জামা দিলা ক্যান।"
আমি ওর মাথায় হাত বুলাইয়া কইলাম" এইবার সাদাই লও,সামনের বার আবার লাল জামা আইন্যা দিমু।কতা দিতাছি।
তুমি তো লাল চুড়ি ও দিলানা আমারে।আমি অহন কি পরমু হাতে।
আমি কইলাম,সাদা জামার লগে লাল চুড়ি মানাইবোনা, তাই আনি লাই।লাল জামার লগে লাল চুড়ি পরে আইন্যা দিমু।
মাইয়াডা হেতেই মেলা খুশি অইয়া ঘুরতে চইল্যা গেল।আমি আমার কাজে চইল্যা গেলাম।
দুপুরবেলা হঠাৎ হইচই আর গন্ডোগলের আওয়াজ পাইয়া মেডামগো বাড়ির হগ্গলে বাইরে আইসা পরলো,সাতে আমিও আইলাম।রাস্তার নাকি একটা এক্সিডেন্ট হইছে।ঈদের খুশিতে কয়েকজন বড়লোক বাপের বেপরোয়া পোলামাইয়ারা গাড়ী চালাইতে গিয়াই এক্সিডেন্ট করছে।একটা বাচ্চা মাইয়া নাকি মইরা গেছে তাতে।
এই কতাটা হুনার পরই,আমার কইলজাডা মোচর দিয়া উঠলো।আমার মাইয়াডা ও তো বাইরে আছে।ও ঠিক আছে তো।ওর কিছু অইলো না তো।
দৌড়াইয়া গেলাম এক্সিডেন্ট যেইহানে অইছে, ঐহানে।লোকজন ভীর কইরা দাড়ায় আছে।কেউ কেউ মোবাইল দিয়া ভিডিও ও ছবিও তুলতাছে।তয় কেউ বাচ্চাডারে হাসপাতালে নিওনের কথা ভাবতাছে না।কি আযব দুনিয়া অইয়া যাইতাছে অহন।
আমি ভীড় ঠেইল্যা ভিতরে ডুকলাম।কিন্তু ভিতরে ডুইক্যাই আমার মাথায় যেন আসমান ভাইংগা পরলো।পুরো পৃথবীডা অন্ধকার দেইখতে শুরু করলাম।আমি এইডা কি দেখতাছি,আমি যা দেখতাছি হেইডা কি সত্তি দেখতাছি?
আমার কইলজার টুকরা, আমার নয়নের মনিডা রাস্তার ওপর পইরা আছে।সাদা জামাডা রক্তে লাল হইয়া গেছে।চারদিকেই ফুডা ফুডা রক্তের ছাপ।আমার মাইয়াডা নিহর হইয়া শুইয়া আছে রাইস্তার ওপর।
আমি যখন ওরে আমার কোলে মাথা রাইখ্যা শুয়াইলাম,তহনও উঠলোনা ও।একটা কতাও কইলো না আমার লগে।কত্তোবার ডাইকলাম, একবার ও সারা দিলো দিলো না।যহন ই ওর হাত দুইখান ধরতে গেলাম,আমি চমকে উঠলাম।হাতে কাচের টুকরোগুলো বিধে বিধে আছে।আর রক্তে সেই কাচগুলো লাল রঙের হইয়া গেছে।
আল্লাহর এইরকম শাস্তিটা মাইন্যা নিতে পারতেছিলাম না।চিৎকার কইরা উঠলাম আমি।আমার কান্দনে আকাশ পাতাল ভারী হইতে শুরু করলো,কিন্তু আমার মাইয়াডা আর একবার ও আমায় মা বইল্যা ডাকইলো না।আমার গলা জরাইয়া ধরলো না আর।একটা কতাও কইলো না আমার লগে।
আমার মাইয়াডার শখ আল্লায় এমন ভাবে পুরন করইবো ভাবী লাই।লাল জামা,হাতে লাল কাচের টুকরো সবদিয়া সাজাইয়াই লইয়া গেল আমার বুক থিক্কা।এক বিধমা মাইরে আরো অসহায় কইরা দিলো।তার বাইচ্যা থাকনের শেষ সম্বলটুকুও লইয়া গেল।ঈদের দিন তো খুশির দিন।তয় আমার জীবনে ক্যান এইডা দুঃখের দিন বানাইলো আল্লায়।
নাকি গরীর মানুষরে কান্দাইতেই আল্লাহ সবথিক্কা বেশি খুশি হয়।
আমার জীবনের সব সুখ,আনন্দ আল্লাহ কাইরা লইয়া ও আমারে বাচাই রাখছে।আমি বাইচ্যা আছি।হ আমি বাইচ্যা আছি।তয় বাচনের মত না,মরার মত।একখান জিবন্ত লাশ অইয়া বাইচ্যা আছি।আর অপেক্ষায় আছি।আমার লাল পরিটার মুখে আর একটা বার মা ডাকটা হুনোনের লাইগ্যা।
✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️✳️
চলছে রমজান মাস।সামনেই পবিত্র ঈদ।আসুন আমরা নিজেরা ১০-২০টাকার ঈদ শপিং না করে তার থেকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে গরীবদের ঈদের জামা কিনে দেই।বিশ্বাস করেন,নিজে ১০হাজার টাকায় জামা পরেও এতটা খুশি হবেন না যেটা ঐ গরীব শিশুটা ৫০০টাকার জামায় হবে।আর ওদের মুখের হাসি,ওদের প্রাণোচ্ছলতা,এসব আপনাকে এক অপার সুখে আচ্ছাদিত করবে ইনশাআল্লাহ।
আমাদের এই প্রিয় প্লাটফর্ম "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন " এর কারিগর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ভাল মানুষ হওয়ার প্রায়োরিটি টা সবার আগে দেন।একজন ভাল মানুষের মাধ্যমেই সমাজ বদলাবে,দেশ বদলাবে,জাতী বদলাবে।
তাই সর্বপরি একজন ভাল মানুষ হতে চেস্টা করুন।মানবতার হাত বাড়িয়ে দিন অসহায়দের প্রতি।নিজে ভাল থাকুন,আর চেস্টা করুন নিজের পরিবারের সাথে সাথে কম হলেও একটা মানুষের ভাল থাকার দায়িত্ব নিতে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"-৫২২
তারিখ :- ৩০.০৪.২০২১
সকলের শুভকামনায়
সোনিয়া সালমান
ব্যাচ নংঃ১৩
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৫৭২১৪
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
কেরানীগঞ্জ জোন
নবাবগঞ্জ ঢাকা