মানুষের জন্য কাজ করলে, জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না।
আজ আমি আমার বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া কিছু অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সাথে সেয়ার করবো, আশা করি এ থেকে জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু অনুভূতির স্বাদ পাবেন।
প্রিয় শিক্ষকের অমর বানী -
মানুষের জন্য কাজ করলে, জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না। এই কথাটার মানে সেই বুঝতে পারে যে অন্য মানুষের জন্য কাজ করে।
আর আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তার মূল্য অনুভব করছি।
২০০৭ সালে আমি যখন মরিশাস প্রবাসে আসি, তখনও জানতাম না যে প্রবাস জীবন আসলে কি, তবে আমার প্রবাস জীবন মোটামুটি ভালো কাটছিল। কারন আমি একজন গ্রাফিকস ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছি। বর্তমানে মরিশাসের দুটি প্রথম সারির পত্রিকা "সানডে টাইমস" এবং "লে-এক্সজুরনাল", পত্রিকার চিফ ডিজাইনার হিসাবে। তো সেই সুবাদে বিভিন্ন খবরা খবরগুলো কোথায় কি হচ্ছে আমার
জানা হয়ে যায়। জানতে পারি মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি যে, একজন প্রবাসী প্রবাসে এসে কি অমানুষিক পরিশ্রম করে। দেখেছি সেই প্রবাসী সারাটা দিন অমানুষিক পরিশ্রম করার পরও তার মালিকের অমানবিক নির্যাতন। আমি দেখেছি একজন প্রবাসী দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে ব্যাথার যন্তনায় ছটফট করতে কেও তার পাশে
আসছে না। দেখেছি অসাধু কিছু দালালের খপ্পরে পড়ে নির্দিষ্ট কাজ না পেয়ে না খেয়ে দুঃখ দুর্দশায় দিন কাটাতে কাটাতে। আরও দেখেছি এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে।
বিপদগ্রস্ত এই মানুষগুলোর আহাজারি ও আর্তনাথ চিৎকার আমি সহ্য করতে পারিনি।মানুষ গুলোর অসহায়ত্ব আর তাদের অমানবিক কষ্ট আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে প্রতিনিয়ত। তখন থেকে এই অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার
চিন্তা করি। আমি আমার বেতনের একটা অংশ থেকে নিজের দায়িত্ব বোধ থেকে সামর্থ অনুযায়ী পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি। এই কাজ গুলো করতে গিয়ে আমি তাদের একেবারে কাছের মানুষে পরিনত হয়েছি। উপকৃত হওয়া মানুষগুলোর কৃতজ্ঞতা, তাদের দোয়া, মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ। সর্বপরী তারা যেভাবে আমাকে সম্মানও ভালোবাসা দেয়।তা দেখে অভিভুত ও সম্মানিত বোধ করি।এটা যে কেমন একটা ভালো লাগা আসলে আমি কাউকে বোঝাতে পারিনা কিন্ত অনুভব করতে পারি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মনে হয় যা একজন বিলিয়নিয়ারও এই সম্মান টুকু পায় না।
এরপর থেকে কোন বিপদগ্রস্ত মানুষ দেখলে তাদের পাশে দাড়ানো যেনো আমার নেশায় পরিনত হয়ে গেলো। এই মানুষগুলোর জন্য কাজ করতে গিয়ে শত শত ভালো মানুষের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা আমার জীবনের চেয়ে বেশী প্রিয়। এই মানুষ গুলোর ভালো বাসার কাছে আমি সারাজীবন ঋনী হয়ে থাকবো।এই সাদা মনের মানুষ গুলোর সমন্বয়ে আমি খুজে পেয়েছি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভালো মানুষের পরিবার "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন"। পেয়েছি লাখো ভালো মানুষের পরিবারের এক মহাকর্তাকে যার প্রতিটা কথা প্রতিটা কাজকে আমি বুকে ধারন করি। যার একটু মন খারাপ হলে রাস্তায় এসে একজন দরিদ্র মানুষকে ১০০০ টাকা দিয়ে বলেন, এই টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে খাবেন আর আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। এবং যখন প্রয়োজন মনে করেন চলে আসবেন। যে তার জন্ম দিনে বড় পার্টি না করে একজন খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য, তার জন্ম দিনের খরচের টাকা দিয়ে তাকে সফল ব্যবসায়ী বানিয়ে দেন। যে কিনা রাস্তা দিয়ে হাটার সময় ও রাস্তায় পড়ে থাকা দরিদ্র মানুষটিকে যথা সাধ্য সাহায্য করেন। সেই মানুষের রুপে আসা আমার কাছে ফেরেস্তাসম আমার প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে পেয়েছি। প্রিয় স্যারের এই মানব দরদী উদারতা আমাকে মানবিক কাজের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেয়।
আমার এই প্রান প্রিয় ভালো বাসার মানুষগুলো আমাকে মরিশাস নামক একটা টিম উপহার হিসাবে দেয়। এবং এই টিমের সবচেয়ে সম্মানিত পদ সিনিয়র কান্ট্রি এম্বাসাডর হিসাবে আমাকে দায়িত্ব দেয়। মরিশাস টিম গঠনের পর থেকে আমাদের মানবতার কাজগুলো নতুন উদ্যোমে শুরু
হয়। এবার আমরা টিমগত হয়ে কাজ শুরু করি প্রথম বছরে আমরা অনেক গুলো ইভেন্ট নিয়ে কাজ করি যেমনঃ
শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের
ত্রান সহায়তা, ঘরহীন মানুষদের অর্থ সহায়তা
দুরারোগ্য দের চিকিৎসা সহ অসংখ্য অসহায়
প্রবাসী ভাই বোনদের সেবা করার সুযোগ হয়েছে।
এভাবেই চলতে থাকে আমাদের মরিশাস টিমের কার্যক্রম। নবম ব্যাচ থেকে মাত্র দুজন কান্ট্রি এম্বাসাডর নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া মরিশাস টিমের বর্তমানের অবস্থান প্রিয় প্লাটফর্ম সকলেরই জানেন।
প্রিয় প্লাটফর্মের সকল ভাইবোন মরিশাস টিমকে মানবিক টিম হিসাবেই চিনে। এই টিমের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত সহৃদয় বান এবং প্রচন্ড মানবিক। মরিশাস টিমের এই মানততার সাথে বর্তমানে বিশ্বের ১৮টি দেশের সাদা মনের মানুষ জড়িত। তারা আমাকে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে সব জায়গায় পরিচিত করে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না আমাদের টিমের এই মানুষ গুলোর মানবিকতার কাছে আমি কিছুই না। আমি একটা জিনিস পরিস্কার বুঝতে পেরেছি যে ভালো কাজ করলে ভালো মানুষেরও অভাব হয় না। আমি মাঝে মধ্যেই অবাক হই যে এখনো দুনিয়ায় এত পরিমাণ ভালো মানুষ আছে যে তারা চাইলে পুরো সমাজ
ব্যবস্থাটা পাল্টে দিতে পারে। পাশাপাশি ভালো কাজের স্বীকৃতি ও পাওয়া যায়। এই মানবিক কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ আমাকে বাংলাদেশ সরকার নিযুক্ত হাই কমিশনার মি. রেজিনা আহমেদ আমাকে এ্যাপ্রোসিয়েশন সার্টিফিকেট সম্মাননা স্বরক প্রদান করেন। এবং মরিশাসে বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়োজিত এক ফুড-ফেষ্টিবল প্রোগ্রামে মরিশাস সরকারের বতর্মান রাষ্ট্রপতির হাত থেকে একটি বিশেষ ক্রেস্ট বেষ্ট সোস্যাল এ্যাওয়ার্ড আমার অর্জিত হয়।
মানবিক কাজগুলোর জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবো তা কখনোই ভাবিনি, নিজের বিবেকের তাড়নায় আমি এই কাজগুলো করি।
অনেকে বলে মানুষের উপকার করলে, তারা
নাকি সেটা মনে রাখেনা, ভুলে যায়। আমি তাদের সাথে সম্পুর্ন দ্বীমত পোষন করছি।আমি যাদেরকে সহযোগিতা করতে পেরেছি।তারা বছরের পর বছর আমাকে মনে রাখেছে। এবং এখনো তারা নিয়মিত যোগাযোগ করে। এমনই একটি ঘটনা
শুনলে অবাক হয়ে যাবেন।
গত কয়েক দিন আগে মনির মোল্লা নামক এক ভাই আমার ইমুতে ভিডিও কল দিয়ে অঝোরে কান্না, আমি কিছু বুঝতে পারছি না তাকে, ঠিক কি বলবো। সে বলছে আপনার ভাই নাম্বারটি হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই দীর্ঘ ছয়টি মাস আপনার সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে পারি নাই। আমার মোবাইলটাতে সমস্যা হয়েছিল হারিয়ে ফেলেছিলাম আপনার নাম্বারটি।
এই পঙ্গু শরীর নিয়ে যতটুকু পারছি অনেক কষ্ট করে আপনার নাম্বারটি জোগাড় করেছি।এখন মরে গেলেও আমার আর কোন আফসোস থাকবে না। ভাই আপনি হয়তো
ভেবেছেন আমি হয়তো আপনাকে ভুলে গেছি না হয় মারা গেছি। আমি ভুলেও যাইনি মারাও যাইনি। আর ভাই আপনাকে ভিডিও কল দেওয়ার কারন হলো আমি যদি কখনো মারা যাই। আমার সন্তানেরা আপনাকে যেন চিনে রাখে, যে এই মহৎ মানুষটার জন্য হয়তো আমাকে আল্লাহ এখনো বাচিয়ে রেখেছেন। কি বলবো আমি, কোন ভাষা খুঁজে পেলাম না। শুধু নিচের দিকে মুখ করে মনের অজান্তেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
একটি বারের জন্য সৃষ্টি কর্তাকে বললাম সৃষ্টি কর্তা আমার এই সামান্য একটি ভালো কাজের জন্য, তুমি এত বড় প্রতিদান দিলা।এমন একজন মানুষের সাথে তুমি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলা যে তার তুলনায় আমি আমি কিছুইনা, এমন মানুষ দুনিয়াতে এখনো আছে?
এর সাথে তুমি এ কেমন খেলা খেলছো। এতো বড় পরীক্ষায় তুমি তাকে কেনো ফেললে। তুমি তো বলেছো যে তুমি তোমার প্রিয় বান্দাদের কঠিন পরীক্ষায় পাশ করাও। আর কত কঠিন পরীক্ষা দিলে সে পাশ করবে। হে আসমান জমিনের মালিক এই নিঃস্পাপ লোকটি উছিলায় আমাকে কি আপনি আখেরাতে একটু জায়গা দিবেন?আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি তাহলে যেনো এই লোকটির পাশের থাকতে পারি।
লোকটির নিস্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম ভাই আপনি বরং আমাকে ক্ষমা করবেন, কারন হয়তো আমি আরো কিছু সহযোগিতা করতে পারলে আপনার আজকের এই অবস্থা হতোনা।
সে বললো ভাই আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার ঋন আমি কি করে শোধ করবো। সেদিন যদি আপনি আমার পাশে না থাকতেন তাহলে তো আমাকে খালি হাতে দেশে ফিরতে হতো। আমি কিছুই ভুলিনি ভাই,বলে আবারো হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে। আমি শুধু তাকে শান্তনা দিয়ে
বললাম ভাই ভাববেন না। যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে। আপনি জীবনে যতদিন বাঁচবেন যখনই প্রয়োজন মনে করবেন শুধু এই ভাই কে একটু স্বরন করবেন।
মনির মোল্লা ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। ছোট ছোট এক ছেলে আর এক মেয়ের জনক তিনি। খুবই নিম্নবৃত্ত পরিবার। ২০১৭ সালে ৮/১০জন প্রবাসীদের মতো তিনিও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারি জমিয়েছিলেন সুদূর প্রবাসে। ভেবেছিলেন বিদেশ গেলে জীবনের কষ্টাঘাত কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তা আর হলো কোথায় মাত্র ২টি বছর অতিবাহিত হতে না হতেই জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার কালো আধার !
মরিশাসের বানান এলাকায় কিউপিপ এরিয়াতে, একটি ফুলের বাগান পরিচর্যার কাজে আসেন মনির মোল্লা। সাথে অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে তাল মিলিয়ে কর্মজীবন খারাপ কাটছিলনা তার। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে একদিন বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করতে মই দিয়ে উপরে উঠেন তিনি। ফুলের বাগানটি ছিল পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ঘরের মতো। উপরে পলিথিনে জমানো পানি পরিস্কার করতে উপরে উঠার পর মই পিচলে নিচে পরে যান। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলেন তিনি, তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। শরীরে বেশ শক্ত ধরনের চোট লেগে যায়। এরপর এক্সে করা হয় রিপোর্টে দেখা যায় তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে ডিসপ্লেস হয়ে গেছে। সবচেয়ে কষ্টের যায়গাটা এখানেই হাত পা ভাঙ্গলে সেটা কোন না কোন ভাবে প্লাস্টার বা জয়েন করানো সম্ভব হতো। কিন্তুু মেরুদন্ড ভাঙ্গার কারনে জয়েন করানো এতোটা সহজ নয়, প্রায় অসম্ভব।
কোমরের হাড়ের ভেতর প্রচণ্ড ব্যাথা হয়।এবং এই ব্যাথার যন্ত্রণা এতই তীব্র যে এ জ্বালা সহ্য করতে না পেরে হাউ মাউ করে কান্না করতেন। ঘটনার প্রায় দুই সাপ্তাহ পর এক মরিশান ভাই বিষয়টি আমাকে জানায়। শত কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও একটু সুযোগ করে ঐ মরিশান ভাইটিকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাই কাঠবন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। আমার অবস্থান দেশটির রাজধানী পোর্টলুইসে, আমার জায়গা থেকে দূরত্বও কম নয়।
আমার অফিস আওয়ারের পরে হাসপাতালে যাওয়ায় রুগী ভিজিট টাইম ওভার হওয়ায় বেশ বেগ পেতে হলো আমাকে,মনির মোল্লার সাথে দেখা করতে। ডিউটি ডাক্তারদের বিশেষ অনুরোধের পর সাক্ষাৎ করতে পারি তার সাথে। আমি একজন বাংলাদেশী তাকে দেখতে গিয়েছি শুনেই কান্না শুরু করে দিল মনির মোল্লা। কোমর থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত কোন রকম বোধ নেই তার প্রশাব পায়খানা সবই বিছানায় করতে হচ্ছে। তার এ রকম পরিস্থিতি দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরলাম। সৃষ্ঠি কর্তাকে বললাম, এত কষ্ট মানুষকে দিয়ে কি শান্তি পাও আল্লাহ?। ডিউটি ডাক্তারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি তারা জানান তাকে খুব শিগ্রই রিলিজ দিয়ে দেশে পাঠানো ব্যবস্থা করবে কোম্পানি। কথাটা শুনে মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো।কোম্পানির এই তাড়াহড়োর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো কারন লুকিয়ে আছে।
যাইহোক আমার কন্টাক্ট নাম্বার মনির মোল্লাকে দিয়ে তার নাম্বারটি নিয়ে বাসায় ফিরি, তার ঐ কান্নার শব্দ আমার কানে বাজতে থাকে আমি বাসায় সস্তি পাচ্ছিলামনা। তাই সকাল বেলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনকে বিষয়টি অবগত করি, ঠিক যা ভেবেছি তাই হলো, তারা বিষটি জানে না। কোম্পানিও কিছু অবগত করেনি।আমার খবরটি শুনে মরিশাস প্রবাসীদের অভিভাবক সু-যোগ্য হাই কমিশনার মি. রেজিনা আহমেদ নিজেই ছুটে যান তাকে দেখতে এবং তাৎক্ষণিক কোম্পানির সাথে কথা বলেন। তার ক্ষরিপূরণ বিষয়েও কারণ সে কর্মস্থলে এক্সিডেন্ট করেছে। মান্যবর হাই কমিশনের সঠিক পদক্ষেপে তাকে ক্ষতি পুরন
বাবদ অর্থ আদায় করা সম্ভব হয়েছিলো।
সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছিলাম মনির মোল্লা সাথে। কারন, আমি একজন প্রবাসী প্রবাসে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে পরে থাকা কতটা কষ্টকর তা অনুভব করতে পারি। এই যন্তনার ব্যাথা গুলোর তীব্রতা খুব কাছ থেকে দেখেছি অসংখ্য বার।
এদিকে মনির মোল্লার পরিবারের অবস্থাও সোচনীয় ছিলো। দুটি বাচ্চা নিয়ে কষ্টেই দিন কাটছিল তাহার সহধর্মিনীর। যে টাকা খরচ করে মরিশাসে এসেছিলেন সে টাকা মাত্রই উসুল হয়েছিল, দুই বছর কাজ করার পর। বাড়তি কিছু করার আগেই তাহার এই অবস্থা হলো। মনির মোল্লার পরিবারের কথা শুনে আমাদের মরিশাস টিম থেকে একটি মানবিক ফান্ড কালেকশন করার চেষ্টা করি। খুবই স্বল্প কিছু টাকা ২/৪জন মানুষ আমাদের দেন এবং আমাদের মরিশাস টিম থেকে মোট ৩৫,০০০ হাজার টাকা মনির ভায়ের স্ত্রীর নিকট পাঠাই।
এর পর আল ইহসান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মি. শাকিল আনারাথকে নিয়ে যাই মনির ভাইকে দেখানোর জন্য। মি. শাকিল আশ্যস্থ করেন যে তিনি কিছু আর্থিক সহায়তা করবেন।
সেই সাথে মরিশাসের স্টার এবং সানডে টাইমস পত্রিকায় আমি মনির ভাইকে নিয়ে ইন্টারভিউ/প্রতিবেদন করি সেখানে "আল ইহসান ইসলাম ফাউন্ডেশনের একটি একাউন্ট নাম্বার ব্যবহারের সুযোগ করে দেয় মি. শাকিল আনারাথ। মরিশাসের সাধারণ মানুষ কন্টিবিউশন করে এতে মোট সাহায্যের সংখ্যা ৬০০,০০০ (ছয় লক্ষ টাকা) আল ইহসানের নিজ দায়িত্বে পাঠান।
যাইহোক, তিন মাস প্রাথমিক চিকিৎসার পর ২০১৯ এর মার্চ মাসে দেশে ফেরেন মনির মোল্লা। তাকে দেশে পাঠাতে এবং তার ক্ষতিপূরণ উসুল করতে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে শ্রম কাউন্সিলর ওহিদুল ইসলাম স্যার প্রচেষ্টা ছিল চোখে পরার মতো। আমিও লেগেছিলাম সে যেন সঠিক ক্ষতিপূরণটা পায়। কোম্পানির ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আমি সঠিক বলতে পারছিনা তবে এটুকু বলতে পারি সেটা আশানুরুপ পায়নি ! তার চিকিৎসার খরচও হয়নি।
মনির ভাই দেশে যাবার পরও সর্বদা আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছে, এরপর ইন্ডিয়াতে চিকিৎসার জন্য যান সেখান থেকেও যোগাযোগের কমতি ছিলনা। সাভার সিআরপি হাসপাতালে ছিলেন কয়েক মাস। আমি যখন ২০১৯ এ দেশে যাই তার কয়েক দিন পরেই ছুটে যাই মনির ভাইকে হাসপাতালে দেখতে। একটি নিবির সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় তার এবং তার পরিবারের সাথে।
যখনি কথা হতো কথা শেষে প্রান ভরে দোয়া করতো আর বলতো মরিশাসে আপনার মতো আর কাউকে পাইনি এমন মানুষ দুনিয়াতে আছে আমাট জানা ছিলনা। তারপর মাঝে মাঝে কথা হতো আমার সাথে। এক সময় আমার নাম্বারটা যে কোন কারনে হারিয়ে ফেলায় এই দীর্ঘ দুরত্ব তৈরী হয়। যার দরুন প্রায় ছয় মাস যাবত যোগাযোগ হচ্ছিল না। সে নেট থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে গিয়েছিল এবং আমার নাম্বারও হাড়িয়ে ফেলেছে।
কে বলে মানুষের জন্য কিছু করলে, মানুষ তা ভুলে যায়? প্রবাস থেকে যতো গুলো মানুষের জন্য মানবিক কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ কেউনভুলেনি। সবাই ফোন করে অনেক দোয়া করে। কেউ বলে আল্লাহ আপনাকে ফেরেস্তা বানিয়ে আমার নিকট পাঠিয়েছিল।
গত ২৩শে মে আমাদের মরিশাস টিমের ঈদ পূনমিলনী মিট-আপে প্রিয় শিক্ষাগুরু জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার মরিশাস টিমের মানবিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।প্রিয় স্যারের ভালো বাসা নিয়ে মরিশাস টিমের এই
মানবতার কাজ অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
আমার মরিশাস টিমের সকল মানবতার সেবক সহযোদ্ধা প্রিয় কলিজার ভাই দের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা থাকবে তারা আমার এই কাজে উৎসাহ দাতা যোগান দাতা। মনির মোল্লার মত আরো অসংখ্য ঘটনা আমার জীবনে আছে সময় করে আবারো একদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে বলতে চাই, দুর থেকে একজন মানুষকে বিচার না করে কাছে এসে দেখুন আপনিও তার ব্যথার তীব্রতা অনুভব করতে পারবেন। যেটা আমার প্রিয় স্যার করেন। আমি তো শুধু স্যারকে কপি করার চেষ্টা করি। প্রিয় স্যারের একজন যোগ্য ছাত্র হতে চাই। সকল দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই বোনদের বলবো প্রবাসে অসুস্থ বা সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাড়ান। আমাদের প্রিয় স্যার বলেন মানুষের জন্য কাজ করলে, জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয়না।
আমার এই লেখাটিতে যদি কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রসারিত হোক মানবতার হাত, ভালো থাকুক সুবিধা বঞ্চিত মানুগুলো।
আজ এ পর্যন্তই
সবার সু-সাস্থ কামনা করছি
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪০
Date:- ৩০/০৫/২০২১
আমিঃ
🕴: মোহাম্মদ হাফিজ
🇧🇩 : জেলা- মানিকগঞ্জ
🎓: ব্যাচ- ৯ম
📂: রেজিঃ নাম্বার- ১৩২৮১
🖱: গ্রাফিক্স ডিজাইনার (নিউজ মিডিয়া)
🇲🇺: কান্ট্রি এম্বাস্যাডর, মরিশাস
💉: ব্লাড গ্রুপ- AB+