রাত যত গভীর হয়,প্রভাত তত নিকটে আসে
আসসালামু আলাইকুম,
"আলহামদুলিল্লাহি রাব্বুল আ'লামিন"
আশা করি পরম করুনাময় আল্লাহ আপনাদের সবাইকে ভাল রেখেছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আমার প্রতিটি পোস্ট ই আমি যদিও ব্যতিক্রম ভাবেই লিখতে পছন্দ করি এবং স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার জীবনের বাস্তবমুখী শিক্ষা থেকে অন্যরাও যাতে উপকৃত হতে পারে সেভাবেই লেখার চেষ্টা করে থাকি, তবুও আরেকটু ভিন্ন আঙিকে আমার আজকের লেখা।আমার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্যারের জনপ্রিয় কিছু স্লোগানের প্রভাব আজ আমি তুলে ধরতে চাই।
ছোটবেলা থেকেই আমি ভীষণ রকম স্বপ্নবাজ ও সাহসী একজন মানুষ ছিলাম।শূণ্য হাতে বড় হয়ে ওঠার যুদ্ধ শুরু করেছিলাম যখন আমি ক্লাস নাইন পড়ুয়া সদ্য একজন কিশোরী ছিলাম।সামাজিক পরিস্থিতি এবং ভাগ্যের লিখনকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে তখনই বিবাহিত জীবনে পা রাখতে হয়েছিল।যে মানুষটি বিয়ের আগে কথা দিয়েছিল পড়াশুনা শিখিয়ে আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে,বিয়ের পর তিনিই আমার পড়াশোনার জন্য একমাত্র বাঁধা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন।কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েও মৌলিক চাহিদা পূরণে তার চরম অবহেলা আর উদাসীনতা আমাকে আমার লক্ষ্যে স্থির করে দিল।কোনকিছুর লোভ আমাকে পড়াশোনা থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি।একেবারেই সহজ প্রকৃতির একজন মানুষ হিসেবে সংসারে সবার প্রতিই আমিই সহনশীল ও যত্নশীল থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছি সবসময়,বিনিময়ে সবাই সুযোগ বুঝে ব্যবহার করেছে আমার সরলতা।সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে চারদিক পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে স্থির করে নেই যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমাকে পড়াশোনা করতে হবে,এমন কিছু করতে হবে যাতে কারো উপরে কখনো নির্ভরশীল থাকতে না হয়।
নবম শ্রেণি টা দেখতে দেখতে কাটলেও দশমে ওঠার আগেই পারিবারিক চাপ শুরু হয় বংশধরের প্রয়োজন, পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে,কি হবে এত পড়াশোনা করে!! নাছোড়বান্দা আমি সেটাও মেনে নিলাম, সবটা সামলে নেব কিন্তু পড়াশোনা বন্ধ করব না।কঠিন থেকে কঠিন হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। আমার প্রথম সন্তানের জন্ম হয় আমার এসএসসি পরীক্ষার মাত্র বারো দিন আগে।আজ থেকে ষোল বছর আগের কথা বলছি।কাঁচা মাটির রাস্তা, রিকশা আর ট্যাম্পু ছাড়া কোন যানবাহন ছিল না, চার কিলোমিটার দূরে পরীক্ষার সেন্টার।তীব্র কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে প্রসব বেদনার তিনদিন পর সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখলো আমার একমাত্র সন্তান। ছোট্ট সে নিষ্পাপ হাসি মুখটা আমার জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে এলো, আমার সহযোদ্ধা হয়ে জন্ম নিল।এবার পরীক্ষা দেবার পালা।সফলতার প্রথম সিড়ি।সকাল বেলা পেটে একটা বেল্ট বেঁধে রিকশায় চার কিলোমিটার গিয়ে, যাওয়া আসা মিলিয়ে পাঁচ ঘন্টা,জমে থাকা বুকের দুধের ১০৪* জ্বর নিয়ে অজ্ঞান হতে হতে বাড়ি ফিরি। রাত বারোটা পর্যন্ত অজ্ঞান । এভাবেই কাটল পরীক্ষার প্রায় প্রতিটি দিন। আল্লাহর অশেষ রহমতে সফলতার সাথে পেরিয়ে এলাম প্রথম ধাপ।
বহুদূর পথ বাকি। কলেজে ভর্তি হবার কোন পারমিশন নেই।পরিবারের চরম অসহযোগিতা আর অসন্তুষ্টি নিয়ে কলেজ যাত্রা শুরু।ছায়ার মত আগলে ছিলেন মমতাময়ী মা যিনি না থাকলে আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যেত পৃথিবী থেকে।কিন্তু ভাগ্য আবারও কঠিনের সম্মুখীন করে দিল।ছোট্ট ৪ মাসের বাবু,আমিও ছোট, কলেজ, পড়াশোনা, সংসার -বাড়ি থেকে দূরে থাকা দিশেহারা অবস্থা। কেউ সহযোগিতা করে না।মাথার ওপর একমাত্র ছায়া প্রিয় বটগাছটা ততদিনে ভীষণ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।একটা বছর বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে হাসপাতালে শয্যাশায়ী,আহা তখন তো নির্মম পৃথিবীটার এত মারপ্যাচ বুঝতাম না।বাবার বুকে যদি মাথা রেখে আরো কিছু টা সময় কাঁটত!! এ অভাব থেকে যাবে আমৃত্যু। পৃথিবী টা শূন্য করে দিয়ে, পুরো পরিবারকে অসহায় অবস্থায় রেখে বাবা চলে গেলেন পরপারে। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল।বাসা -কলেজ ছেড়ে দিয়ে ফিরে এলাম বাড়ি। একটা বছর বাসায় বসে থেকে শুধু পত্রিকা পড়েছি।তিনটা পত্রিকা রাখতাম আর সারাক্ষণ সেগুলো উল্টে পাল্টে পড়তাম,আসলে জীবনের এই চোরাবালি থেকে বেরহবার রাস্তা খুঁজতাম। শুনেছিলাম পত্রিকা নাকি একটি দেশের তথা বিশ্বের প্রতিফলন হয়।
একদিন হঠাৎ খুঁজে পেয়েছি সেই পথ।বেসরকারি অনুমোদন পেয়েছে বেসিক মেডিকেল ডিগ্রি, ভর্তি হতে চাই আম্মুকে জানালাম।আম্মু সাপোর্ট করলেন কিন্তু টাকা তো কেউ দেবেনা!! গ্রামের সমিতি থেকে টাকা ধার করে একাই চলে গেলাম ভর্তি হতে।ভর্তি হওয়াটাই মূল কথা নয়,ঢাকায় বাসা নিয়ে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে চার বছর!! বাসা থেকে সাপোর্ট চার হাজার টাকা - থাকা, খাওয়া, বাবুর খরচ,আমার পড়াশোনা আর যা যা এই টাকায় করতে পার কর!!! কতদিন যে এক কাপ চা খেয়ে কেটে গিয়েছে তার হিসেব নেই,কত দিন যে একবেলা ভাত রান্না হলে দু'দিন আর রান্না হয়নি তারও হিসেব নেই।কত যে দিনের পর দিন দু'বেলা খাবারের খোটা শুনতে হয়েছে সে গল্প তোলাই রইল,খুব চা পাগল মানুষ আমি, ছেলের নাম করে দুধ কিনে চা খেয়েছি বলে যে অপবাদ জুটেছিল পোড়া কপালে তা তো এজন্মে ভুলতে পারব না, যাক গে সেসব কোন দুঃখ নয়,পড়তে পারছি সে সময় এটাই বড় কথা ছিল।
আবারও সেই পত্রিকা নিয়ে বসে পড়লাম চাকরি খুঁজতে।যেহেতু মেডিকেল স্টুডেন্ট,বর্তমানে রেপুটেড একটা হার্ট ক্লিনিকে প্রথম ইন্টারভিউতে সিলেক্টেড হয়ে গেলাম মেডিকেল টেকনিশিয়ান হিসেবে।কাজ শুরু করলাম মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে,মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে।সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কলেজ,বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত অফিস, বাসায় বাবুটা মেইড সার্ভেন্টের কাছে, তার খাওয়া গোসল, বাজার করা, রান্না করা - সে ভয়ংকর পরিস্থিতি আমি আর বর্ণনা করতে পারছি না, কাঁপছে আমার সারা শরীর।প্রতিটি মুহুর্তে সংসারের অশান্তি,সবার দূর্ব্যবহার, কি সীমাহীন নির্মম মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে কেটেছিল সেসব দিন, মৃত্যুযন্ত্রণার চাইতে ভয়াবহ।আহা আমার কলিজার টুকরা কত কষ্ট করেছে আমার জন্য!! বাবুকে কোলে নিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে কেটেছে কত নির্মম শীতল রাত!! আহা জীবন!! প্রতিটি মুহুর্তে জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠছে মস্তিষ্কের এক একটি কোটরে!!
আমার হাত থেমে গেছে, আর লিখতে পারছি না, ঝাপসা হয়ে গিয়েছে আমার চোখ, বৃষ্টি থামছে না!!
আধাঘণ্টা বিরতির পর......
রাত যত গভীর হয়,প্রভাত তত নিকটে আসে। সুযোগ এলো ইন্ডিয়াতে স্বনামধন্য হসপিটালে প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি ট্রেনিংয়ের। ছেলেকে আমার মায়ের বুকে রেখে সব বাধাকে উপেক্ষা করে চলে গেলাম ট্রেনিংয়ে,ফিরে এসে পড়াশেনা চাকরি এডজাস্ট করে নিলাম, ফুল টাইম জব করি,মাঝে মাঝে কলেজে যাই, আমার কর্মক্ষেত্রে যিনি আমাকে এতটা সাপোর্ট করেছেন সেই মহান ব্যক্তিটির কথা অন্য একদিন বলব।এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাইনি। এক চাঞ্চে ডিপ্লোমা কমপ্লিট।এরপর প্রাইভেটে ইন্টার পরীক্ষা দিলাম, আরেকটা মেডিকেল ডিপ্লোমা কমপ্লিট করলাম, পড়াশোনা- চাকরি- ছেলে সব একসাথে নিয়ে চলতে লাগলাম। অতটাও সহজ ছিলনা এই পথচলা, দিনের পর দিন না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় কেটে গিয়েছে। ছেলে মায়ের কাছে, সপ্তাহে তিন চার দিন অফিস শেষে নরসিংদী আসি,রাত বারোটা বেজে যায় পৌঁছতে, রাতটুকু মানিকটা বুকে নিয়ে প্রশান্তিতে থাকি,কাঁক ভোরে উঠে আবার অফিস!! তবে ততদিনে রাস্তা টুকু আয়ত্তে এসে গিয়েছিল,এই যা!
অর্জনের ঝুলিটা ভারী হয়ে উঠলেও,জীবনের ঝুলিটা ততদিনে শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল।
তবু স্বপ্ন দেখতে ছাড়ি নি, পিছ পা হইনি এক মুহুর্তের জন্য,কয়েকটা বছর সূর্য কোনদিক থেকে উঠেছে আর কখন কোনদিকে ডুবেছে তা দেখার সময় হয়ে ওঠেনি.....
পড়াশোনা শেষ করে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠিত করলাম নিজের চেম্বার, ব্যবসা।আলহামদুলিল্লাহ সুখেই কেটে যাচ্ছিল আমাদের দিন। উদ্যোক্তা হবার যে স্বপ্ন লালন অন্তরে লালন করছিলাম তা প্রতিনিয়ত পীড়িত করছিল আমাকে, অস্থির করে তুলেছিল আমার ভিতর। অফলাইনে শুরু হয় আমার "ফাগুন'স ফ্যাশন হাউজ"।নকশী কাঁথা, থ্রি পিস, হ্যান্ডলুম শাল নিয়ে কোন এক ফাগুনে যাত্রা শুরু হয় আমার উদ্যোগের।পাশাপাশি ব্যবসার খুটিনাটি নানান বিষয় শেখার উদ্দেশ্যে বিচরণ করি অনলাইনে। একদিন সন্ধ্যায় চোখ আটকে যায় স্যারের একটা ভিডিওতে।তখন দ্বিতীয় ব্যাচ চলছিল। সারারাত বসে বসে একটার পর একটা সেশন পড়তে থাকি,প্রতিটি সেশনের মোরাল গুলো নোট করতে থাকি - যেন আমি আলাদিনের প্রদীপের সন্ধান পেয়েছি,যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলাতে থাকে আমার চারপাশ। প্রোডাকশনে যাবার চিন্তাভাবনা শুরু করি,পরিকল্পনা গোছাতে থাকি আর কাজও আগাতে থাকি।খুঁজতে থাকি নরসিংদীতে আমাদের গ্রুপের কে আছে,খুঁজে বের করি সাব্বির ভাইকে,আস্তে আস্তে যোগাযোগ হয় সবার সাথে, মিটিং এর পর মিটিং, আয়োজিত হয় স্মরণীয় প্রোগ্রাম সবুজ পাহাড় কলেজে।সফল ভাবে সংগঠিত হয় নিজের বলার মত একটি গল্পের নরসিংদী টিম। দূর্ভাগ্যবশত আমার আল্ট্রাসাউন্ড সার্টিফিকেট এর বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা আর প্রোগ্রাম এর দিন একই হয়ে যায়। পিছিয়ে যাই আমি, দেখা হল না স্বপ্নের নায়ক প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার স্যারের সাথে।যাই হোক মেনে নিয়ে এগোতে থাকি - নিশ্চয়ই আল্লাহ ভাল কিছু রেখেছেন।
ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে সহযোগিতার প্রত্যাশা করি কাছের মানুষদের কাছে, এগিয়ে এসেছিল কেউ কেউ। সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধ্বংস করে দিয়ে যায় আমার সবকিছু। তার কারণে দূরে সরে যায় আমার পৃথিবীর সমস্ত আপন মানুষেরা। শেষ হয়ে যায় আমার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা,চেম্বার, সামাজিক অবস্থান, সুনাম সবকিছু। নিঃস্ব হয়ে যাই আমি। ঘুড়ে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে পাড়ি জমাই বিদেশে। এক সপ্তাহের মধ্যেই একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে জব হয়ে যায় এসিস্ট্যান্ট ডক্টর হিসেবে।সবকিছু মিলিয়ে মান্থলি আয় প্রায় ৭০,০০০ /-।মোটামুটি সেটেল্ড বলা যায়।বছর গড়িয়ে যাচ্ছে। ঐ যে মাথার মধ্যে উদ্যোক্তা হবার ঘুনপোকা!! কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সাব্বির ভাইয়ের সহযোগিতায় দুবাইয়ে আমাদের টিমের সবাইকে খুঁজে বের করলাম। জাফর ভাইয়ের পরিবার সহ, নুর ভাই আর আমি মিটিংয়ে বসলাম। সবাই মিলে আয়োজন করলাম বিশাল মিটআপ।পরিচিত হলাম দুবাই টিমের সকলের সাথে।এবার এগিয়ে যাবার পরিকল্পনা। অপরচুনিটি এনালাইসিস অনেকটা এগিয়ে। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। দেশে তখন নিজের বলার মত একটি গল্পের সম্মেলনের হাওয়া বইছে। অবর্ণনীয় উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দেশে এসেছিলাম সম্মেলনে যোগ দেব বলে।সেই সাথে পারিবারিক কিছু কারণ ও ছিল ফেরার,এভাবে সবাইকে ছেড়ে কখনো থাকিনি আমি ।অবশ্য এখানে থাকার জন্যও আসিনি, ফিরে যাবারই কথা ছিল।
আপনাদের মনে পড়ে কি না সেই দিন! স্যারের অফিসে গতবছরের সম্মেলনের প্রথম টিকিট উদ্বোধন করলেন স্যার।দ্বিতীয় টিকিট টি নিয়েছিলাম আমি।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেই ৪ জানুয়ারি সম্মেলনের দিনে আমি আই সি ইউ তে পাঞ্জা লড়ছিলাম মৃত্যুর সঙ্গে।
আমি স্তম্ভিত, স্তব্ধ, আর প্রচন্ড মানসিক বিপর্যয়ে ভুগছিলাম! আমার জীবনের সবচাইতে প্রিয় মানুষ টি আমাকে এমনভাবে প্রতারিত করেছে যা আমার মৃত্যু সংবাদের চাইতেও ভয়ংকর। এর চাইতে আমার মৃত্যু হলেও আমি হাসিমুখে মেনে নিয়ে চলে যেতাম।পাশাপাশি একটা সুসংবাদ ও ছিল। আসলে ঐ যে ওপরে একজন বসে, তিনি তো উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি তো পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অবলম্বন প্রস্তুত করে রেখেছিলেন আমার জন্য। ইতিমধ্যে ছোট্ট রাজপুত্র ছিলেন আমার গর্ভে। মরে যেতে ইচ্ছে করলেও তার কোন উপায় ছিলনা।
সেই সময়ের পরস্থিতিও এত করুন ছিল যে বর্ণনা করতে পারছি না।দিনের পর দিন অসহায়ের মত কাটিয়েছি একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন বন্ধ ঘরে।কারো সাথে কোন যোগাযোগ করিনি,কথা বলতে পারিনি, খাবার খেতে পারিনি।কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি যার এক কথায় আমি প্রাণ দিতে প্রস্তুত তার এমন প্রতারণা। নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না কিছুতেই। মৃত্যুর জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম। জীবনের অর্থ টাই ভুলে গিয়েছিলাম। কোন লক্ষ্য ছিল না সামনে,ভুলে গিয়েছিলাম আমার স্বপ্নের কথা, সন্তানের কথা, পরিবারের রক্তের সম্পর্ক গুলোর কথা।পরিবারের সবাই বলেছিল আমার ছোট রাজপুত্রকে পৃথিবীতে আনার প্রয়োজন নেই। নতুন করে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে,সব ভুলে গিয়ে ঘুড়ে দাঁড়াতে। কিন্তু আমি এটাও মানতে পারছিলাম না যে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আমার নিজেরই অস্তিত্ব, আমার ভেতর বেড়ে ওঠা প্রাণকে আমি নিঃশেষ করে দেব!!যত আঘাত আমার ওপর আসুক আমি এতটা পৈশাচিক বর্বর আচরণ করতে পারি না। আমি মা, আমি মমতাময়ী মা।
ঠিক সেই সময় ছুটে গিয়েছিলাম আমার আত্নার সাথে সম্পর্কিত গুরুজনের কাছে, যার কথা আমি অবলীলায় মানতে পারি কোন প্রশ্ন করা ছাড়াই,যিনি বললে আমি এমন চরম অস্থির পরিস্থিতিতে ও স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারি... শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার স্যারের কাছে। স্যার সেই সময় আমাকে মেন্টাললি যে সাপোর্ট দিয়েছিলেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে,আমি চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকব স্যারের কাছে। স্যারও অন্য সবার মত বললে হয়ত আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুবার ভাবতাম! কিন্তু স্যার এক বাক্যে বলেছিলেন যে পৃথিবীতে আসছে তাকে আসতে দিন।
"সানিয়া আপনি সময় নিন, সময় বদলাবে,দেখবেন সময় সব ঠিক করে দেবে।"--- কথাগুলো এখনো আমার কানে মন্ত্রের মত বাজে।আমি যখনই কোন বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট হই,রেগে যাই, আমার ভাললাগেনা কোন বিষয় তখনই আমি নিঃশ্বাস টেনে নেই, ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করি,চুপ হয়ে যাই,সময় নেই ---- এরপর আমি ফিরে পাই এক অবিস্মরণীয় আত্মবিশ্বাস ইতিবাচক আমাকে।
জীবনের গল্প এত ছোট নয়। কিছু শব্দ দিয়ে জীবনের সব পরিস্থিতি, অনুভূতি, পরিনতি প্রকাশও করা সম্ভব নয়। তবুও আজ গল্পটা তুলে ধরা যদি প্রিয় প্লাটফর্মের কেউ কোনভাবে উপকৃত হয়।
আল্লাহর ও তার প্রেরিত রাসূল( সাঃ) এর নির্দেশিত পথে নিজের জীবন পরিচালনাই হোক আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
প্রিয় শিক্ষকের আদেশ, নিষেধ ও শিক্ষা গুলো মনে রেখে সাবধানে পথ চলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
আজ দু বছর আমি নিজের সাথে যুদ্ধ করছি।প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশনে ভুগতে হয় প্রায়ই,দিনরাত এক করে একা হাতে সন্তানকে লালন-পালন কতটা কষ্টকর একজন মা শুধু উপলব্ধি করতে পারবেন।
আবারও উঠে দাঁড়িয়েছি আমি।সুপরিকল্পিত, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কে সামনে রেখে।গুছিয়ে একটু একটু করে পথা চলছি, সামনে আগাচ্ছি এক পা এক পা করে।
আমার চিন্তাভাবনায় আমি যেখানে যেখানে আটকে যাই,সর্বদা স্মরণ করতে থাকি আল্লাহকে, তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে স্যারের শিক্ষা গুলোকে যথাযথ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। সহযোগিতা নিচ্ছি আমার সহযোদ্ধাদের।
ইতিমধ্যে ঘুড়ে দাড়ানোর গল্পটা শুরু হয়ে গিয়েছে....
উদ্যোগ ১ঃ J&J Biotic Export
★★★কাজ শুরু করেছি পাটের তৈরি নান্দনিক গৃহ পন্য ও জামদানী নিয়ে। লক্ষ্য স্থির।সমস্যা থেকে সম্ভাবনা। পাট নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়তে চাই পরিবেশ দূষণ রোধে।
★★★যে দেশে জন্মেছি তার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিশ্বের বুকে তার সমৃদ্ধির একটা ছোট্ট গর্বিত অংশীদার হতে চাই। জামদানি নিয়ে বিশ্ব বাজারে পদচিহ্ন এঁকে দিতে চাই বাংলাদেশের ঐতিহ্যের।
উদ্যোগ ২ ঃStop- The Prevention
★★★ মানুষের জন্য কাজ করলে জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না - এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে কাজ করছি শুধুমাত্র মানবতার কল্যাণে।
লক্ষ্য ----★★রোগ প্রতিরোধ মূলক স্বাস্থ্য তথ্য ও চিকিৎসা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে চিকিৎসা খাতে মানুষের হয়রানি দূর করা।
★★ চিকিৎসা খাতে উল্লেখযোগ্য সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানুষকে মুক্ত করা।
★★সুবিধা বঞ্চিত দুস্থ অসহায় মানুষের চিকিৎসা ও শিক্ষা দুটো মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
বিঃদ্রঃ --আমি জানিনা আমার এত বড় লেখাটা কেউ পড়বেন কি না,তবুও যদি কেউ পড়ে থাকেন তবে স্যারের কোন কোন কথার প্রতিফলন দেখেছেন গল্পে তা আমাকে নিশ্চয়ই বলবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৭
Date:- ১৮/১১/২০২১ ইং
Dr.Saifunnesa Sunia
DMF & DPT(Dhaka)
Bsc. In Public Health Nutrition
Managing Director -
★★ J&J Biotic Export ★★
★★STOP -The Prevention. ★★
4 th Batch ; Reg-4742
Dist-Narsingdi