আমার জীবনের অগোছালো গল্পটা
................বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম...................
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ।
"নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন কেমন আছেন সবাই.....?
আশা করছি যার যার অবস্থানে আল্লাহর রহমতে শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও ভালো আছেন,সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
🥀শুরুতে লাখো কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যিনি আমাকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আবার ও শুকরিয়া আদায় করছি যিনি আমাদেরকে মহামারী করোনা ভাইরাসের কঠিন তম সময়ে ও সুস্থ ও নিরাপদে রেখেছেন।
🥀তার পর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক জনাম Iqbal Bahar Zahid " স্যারের প্রতি, যিনি আমাদের জন্য এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছেন যার নাম #নিজের -বলার-মতো-একটা-গল্প-ফাউন্ডেশন,
যার জন্য আমরা নিজের জীবনের না বলা কথাগুলো এই প্লাটফর্মে বলতে সাহস পাচ্ছি। এই প্লাটফর্মে যুক্ত না হলে হয়তো নিজীবনের গল্পটা কখনো বলতে সাহস পেতাম না।
🥀প্রিয় বন্ধুরা আজ আমার জীবনের অগোছালো গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে লিখতে বসলাম । আমি জানি প্রতিটা মানুষেরই নিজের জীবনের গল্প আছে সেটা হতে পারে কষ্টের হতে পারে দুঃখের।
আজ চেষ্টা করছি আমি আমার নিজের জীবনের কিছু সুখ - দুঃখের স্মৃতি শেয়ার করতে।
তবে সেই সাথে আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে কারো জীবনের গল্প শুনে তাকে হেয় ভাবে যেন না দেখা হয় ।
🌱 আমার পরিচয়
আমি শারমিন সুলতানা। আমার জন্ম ১৫ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার ছোট একটি গ্রামে।আমার ২বোন ও ১ভাইয়ের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমার মায়ের নাম (মৃত).বেবি পারভীন। মা খালামনিরা মিলে উনারা ছিলেন ৩ বোন ও ১ভাইয়ের মধ্যে আমার মা ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী।
যার সুন্দরের কাছে হার মেনে যায় আমার বাবা। ক্লাস ৯/১০এ আমার মা-বাবার বিয়ে হয় পরিবারিক ভাবে । মা বাবার সংসারটা অনেক সুখের সংসার ছিল । বাবার ঢাকা একটা কাপড়ের দোকান ছিলো, সেই দোকানে বাবা ভালোই ইনকাম করতো। দাদা ও বাবার নামে দো'তালা বাসা লিখে দিয়ে যুদ্ধের পর পাকিস্তানে চলে যায়। শুধু একা থেকে যায় আমার বাবা। হঠাৎ মা-বাবার সংসারে এলো ফুটফুটে একটা রাজকন্যা। আমার বড় আপু। কয়েক বছর পর আমার মায়ের কোলে এলো আমাদের একমাত্র ভাই।
তার কয়েক বছর পর মেজো আপু।
আর মেজো আপুর জন্মের ৩বছর পর আল্লাহ তায়লা এই সুনন্দর পৃথিবীতে আমাকে পাঠিয়েছেন ।
আমার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন বাবা ঢাকায় ছিলেন।আমার মা বাবাকে চিঠিতে জানায় তাদের একটা রাজকন্যা হয়েছে। সেদিন বাবা এত খুশি ছিল, তা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়। সেই খুসিতে আমার জন্ম তারিখটি ডায়েরিতে লিখতে ভুলে গেয়েছিলো।
যার কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় আনুমানিক একটা তারিখ দিয়ে দেয় ২৫/১২/১৯৯৭ইং। যা বর্তমানে আমার সাটিফিকেটে আছে এই তারিখ। যাই হোক আমার জন্মের দিন থেকে মায়ের শরীর খারাপ হয়ে যায়। অনেক পরীক্ষা করে ধরা পড়ে "মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সার "।
আমার বাবা এই খবর শুনে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় পেয়ে অনেক অনেক টাকা ব্যয় করেছিলেন। কবিরাজ,হুজুর,ডাক্তার কোনো কিছু বাদ দেয়নি আমার বাবা। অবশেষে ডাক্তার বললো অপারেশন করতে হবে। বাবা কোনো কিছু না ভেবে দাদার দেয়া দোতালা বাড়ি যেখানে আমাদের ভাই বোনদের জন্ম। সে বাড়ি ৫লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেয়। তারপর আমরা উঠি নানীর বাসায়। মামার কথায় বাবা ঢাকার কাপড়ের দোকান বিক্রি করে দিয়ে মায়ের অপারেশন করে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অপারেশন এর পর আমার মায়ের কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। তার কয়দিন পর আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন অপূর্ব সুন্দরী আমার "মা"।
মা হারানোর কষ্টটা কি, এই পৃথিবীতে যাদের মা নেই শুধু মাএ তারাই ফীল করতে পারবেন। অনেক মিস করি আমার মমতাময়ী মাকে😪 সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
👉মায়ের মৃত্যুর পর
ভেঙে যায় আমাদের সাজানো সুখের সংসার। বাবা যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। বাড়ি, দোকান সব জামানো টাকা সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রতি দিন প্রতিটা মূহুর্তে মায়ের টেনশন আর আমাদের নিয়ে চিন্তায় বাবার সময় গুলো কাটতো। কিভাবে আমাদের লালন-পালন করবে বুঝতে পারছিলো না আমার বাবা। কারণ আমরা সবাই অনেক ছোট ছিলাম । মা যখন মারা যায় তখন বড় আপু class six এ পড়তো। মা বেচে থাকতে বড় আপু কখনো এক গ্লাস পানিও হাতে তুলে খাইনি । হঠাৎ মাকে হারিয়ে বড় আপুও অনেকটা ভেঙে পড়ে। তার পড়াশোনা নষ্ট হওয়ার পথে। টেনেটুনে পাশ করতো।
এদিকে আমার বাবা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খিচুড়ি রান্না করে কাজের সন্ধানে বের হয়ে যেত। যখন যেই কাজ পেতো তাই করতো । এদিকে সারাদিন আমাকে দেখাশুনা,খাওয়ানো সব কাজ করতো আমার বড় আপু। বাবা রাতে এসে আবার রান্না করে আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাওয়াতো।
👉 হায়রে মা, মায়ের মতো আপন আর কেউ হয় না।
মা মরার ৪০দিন পর মামা বাবাকে বললো এদেরকে এতিম খানায় দিয়ে তুমি একটা বিয়ে করো। এই কথা শুনে বাবা বলেছিলেন "মহিষের শিং কখনো মহিষের কাছে ভারি হয় না"
আমি বিয়ে করবো না। আমার ছেলেমেয়েদের কাউকে দেখা লাগবে না। আমি নিজে এদের শিক্ষিত করে তোলবো।
এরপর থেকে আমার বাবা আমার নানী বাসার একটা কর্ণার রুমে আমাদের নিয়ে থাকতো। ভোরে রান্না করে বের হতো কাজের উদ্দেশ্যে আবার রাতে এসে রান্না করে আমাদেরকে খাওয়ায়ে আমাদের নোংরা করা - কাথা,জামা কাপর গুলো দ্রুত কত যেহেতো আমরা ছোট ছিলাম। এভাবে সারাদিন রাত জেগে কাজ করতে গিয়ে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
🌱তখন বাসায় মামা-মামীরা মিটিং বসায় মেজো আপুকে মামা নিজের কাছে রাখবে। কারণ তাদের কোনো মেয়ে নেই এজন্য। আর আমাকে মেজো খালামনি রাখবে। বাবার কাছে বড় আপু আর ভাই থাকবে। এতে বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে গেল। মেজো আপু চলে গেল নাটোরের খাদ্য গুদামে যেখানে মামা চাকরি করতো। আর আমি চলে আসলাম পাকশীতে খালামনির বাসায়। তখন আমি অনেক ছোট। খালামনি আমাকে ১,২,৩.../অ,আ..এসব শিখাতো। হঠাৎ খালাতো ভাই এর শরীরে হাম বাড়ায়। তার একদিন পর আমারও বাড়ায়। তখন আমার বাবা আমাকে দেখতে আসছিল ফল,মিষ্টি নিয়ে। আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু অসুস্থ ছিলাম তাই খালামনি নিয়ে যেতে দেয়নি
কিছু দিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলাম। একটু একটু পড়া শিখতে লাগলাম। এভাবে অনেক ভালো কাটছিল আমার ছোটবেলা। শীতের সময় আমি যখন হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে পাতা কুড়াছিলাম খালার রান্নার জন্য। তখন আমার বাবা এসে আমাকে এই অবস্থায় দেখে কষ্ট পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যে কথা সে কাজ ৩মাস খালার বাসায় থেকে চলে আসলাম বাবার কাছে। আমার আসার পর মেজো আপুকেও নিয়ে আসলো। আমরা আবার একসাথে হয়ে গেলাম সবাই।
আমি ভর্তি হলাম কিন্ডারগার্টেনে । স্কুল থেকে এসে বাসার টুকি টাকি কাজগুলো করতাম । যে সময় মিনা কার্টুন দেখার বয়স আমার তখন আমার বড় খালা আমাকে দিয়ে বাথরুম ধুয়াতো,ভাত রান্না করাতো। এভাবে চলতে লাগলো আমার জীবন। কিন্ডারগার্টেন থেকে ক্লাস -৮পযন্ত আমার রোল Number 1-। আমার বাবা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো । প্রতিটা বাবার মতো আমার বাবা ও স্বপ্ন দেখতো মেয়েকে একদিন বড় ডাক্তার বানাবে।
😪 বাবার স্বপ্নের ভাঙন,
আমি পড়ালেখায় ভালো ছিলাম বলে যখন যে স্যারের কাছে পড়তে চাইতাম বাবা তার কাছে পড়াতো। এই রকম এক স্যারের কাছে পড়তে যেয়ে এক বড় ভাইয়া আমাকে প্রস্তাব দিলো প্রেমের। সে ভাইয়া ছিল মেজো আপুর বন্ধু। আপুকে বলার পর আপু বললো তার বন্ধু অনেক ভালো। এজন্য কিছু না ভেবে প্রস্তাব এর ১৮দিন পর উত্তর দিলাম। তখন আমি ক্লাস ৬এর শেষে পড়তাম। তখন প্রেম বলতে কিছু বুঝতাম না। শুধু ভালো লাগা ছিল। প্রাইভেটে গেলে দেখা হতো তাতেই আমার আনন্দ হত। এভাবে উঠে গেলাম ক্লাস ৯এ। তখন তার প্রতি ভালোবাসা,মায়া জন্মায় গেল। তাকে ছাড়া কিছু বুঝতাম না। অন্য ছেলেদের দিকে তাকাতাম না। তাকালেও মনে হত আমার প্রেমিক অনেক সুন্দর। যখন ক্লাস ১০এ উঠি তখন বাবা জানতে পারলো। অনেক বুঝালো এখন প্রেম করার বয়স না, ভালো রেজাল্ট করে সবাইকে দেখায় দাও। তারপরও বাবার কথায় তাকে ছাড়লাম না। বাবা প্রাইভেট স্যারকে জানালে স্যার ওকে অনেক বকা দেয় যার কারণে সে আমাকে ছেড়ে দেয়।
প্রাইভেট শেষ করে আমাকে ডেকে বলে" I hate you"তখন এত কান্না করলাম তার পায়ে পড়লাম আমাকে যেন না ছাড়ে। তবুও ছেড়ে দিল। প্রতিদিন কান্না করতাম পড়াশোনায় মন বসতো না। ব্যস এসএসসি তে রেজাল্ট খারাপ করলাম। জিপিএ -৫পাওয়া মেয়ে এসএসসি তে পেলো ৪.২৮। শুরু হয়ে গেল পরিবারের সবার কথা
🌱এরপর ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলাম। তখন পেলাম আমার জীবনের প্রথম ফোন বাটন ফোন। অনেক কষ্টে তার নাম্বার জোগার করে কথা বললাম। তখন জানতে পারলাম সে গাজীপুরে বাইং হাউজে চাকরি করে। পরীক্ষার সময় বাসায় এসে পরীক্ষা দিয়ে চলে যায়। এভাবে প্রতিদিন ৪০মিনিট ভরে কথা বলতে বলতে আবার তার সাথে প্রেমে জোগায় গেলাম। ভালোই কাটছিল হঠাৎ কি মনে করে আমার পরীক্ষার আগে ব্রেকআপ করে বসলো। অনেক কান্না করে বললাম এবার ছেড়ে দিও না রেজাল্ট খারাপ হবে। ছেড়ে দিতে যদি চাও তাহলে আমার পরীক্ষার পর দিও। কে শুনে কার কথা ব্রেকআপ করে নিলো। আর যা হওয়ার তাই হলো রেজাল্ট খারাপ করলাম ৪.৩৩পেলাম।তখন বাসার সবাই বললো বিয়ে দিয়ে দিতে এর দাড়া কিছু হবে না।
কিন্তু আমার বাবা বললো না হলেও পড়াবো। ভর্তি হলাম অর্নাস ১ম বর্ষে। তখন পেলাম এন্ড্রয়েড ফোন। ফেসবুক আইডি খুললাম।আবার তার আইডি পেয়ে রিকুয়েষ্ট দিলাম।কথা হলো।হঠাৎ করে কয়দিন তাকে লাইনে না পেয়ে পাগল হয়ে গেছিলাম।পরে তার কলিগের ফোন দিয়ে আমাকে জানায় তার ফোন ভেঙে গেছে এখনো বেতন পাইনি।আমার ব্যাংক থেকে কিছু টাকা তুলে এনে দিতে বললো ধার হিসেবে। আমি বললাম ধার নিতে হবে না।এমনি নিও।কাউকে কিছু না জানিয়ে আমার ডিপিএস ভেঙে দিয়ে ১৩হাজার টাকা বিকাশ করলাম ফোন কিনার জন্য। সেদিন ফোন কিনে আমার সাথে সারারাত কথা বললো।
তখন ওকে বললাম ৭বছর হয়ে গেছে এবার বিয়ে করো।তোমার বাসায় বলো।সে আমার কথা মতোন বাসায় জানায় কিন্তু তার মা বাবা রাজি না। কারণ আমি খাটো এজন্য। অনেক বুঝানোর পর তারা রাজি হলো কিন্তু শর্ত দিল তার বাবা ৫লাখ টাকা নগদ দিতে হবে আর মেয়েকে গহনা দিয়ে সাজায় দিতে হবে। বাবা বললো প্রেমের বিয়েতে টাকা কিসের।তারপরও আমার বাবা প্রথমে ৩লাখ বললো তারা রাজি হলো না।পরে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা বললো ৫লাখ টাকা দিব কিন্তু ১৫লাখ দেনমোহর করতে হবে। এতে তারা রেগে যেয়ে বললো আপনি লোভী।আপনার মেয়ের সাথে আমার ছেলের সাথে কখনো বিয়ে দিব না।
আমি তাকে বললাম তুমি কি চাও।সে বললো আমার মা বাবা যা বলছে তা ঠিক বলছে।তোর বাবা লোভী এজন্য ১৫লাখ দেনমোহর এর কথা বললো।তোর মতোন ফকিন্নির মেয়ের সাথে প্রেম করা ভুল হয়ছে।তুই কখনো আমাকে ফোন দিবি না। তার মুখে এসব চামার টাইপের কথা শুনে ভেঙে পড়ছিলাম। ভাবছিলাম মরে যাবো এজন্য হাত কাটছিলাম পাগলের মতো।
🌱তারপর আমার বাবা আমাকে অনেক বুঝায় কোটি টাকা দিলেও আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না। কারণ তার মা আমাকে পছন্দ করিনি খাটো বলে।সেদিন আমার বাবা আমার জন্য প্রথম কান্না করছিল।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম সে ছেলে মাফ চাইলেও মাফ করবো না।বিয়ে করবো না। বাবাকে কথা দিলেও প্রতিরাতে তার জন্য কান্না করতাম।এর মধ্যে একদিন বাবা ব্যাংকের কি অবস্থা জানার জন্য আমাকে সব বই আনতে বলে।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম আমি ১৩হাজার টাকা তুলে তাকে দিছিলাম ফোন কিনার জন্য। ডিপিএস ভেঙে দিছি।এটা শুনার সাথে সাথে বাবা আমাকে চড় মারছিল। আর সব টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আনছিল। টাকাটা রেখেছিল আমার বিয়ের জন্য। যাই হোক রাগে বাবা আমার সাথে ৬মাস কথা বলেনি।আমি আমার জায়গা থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি বাবার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলাম। যখন ১ম বর্ষে ফাস্ট ক্লাস রেজাল্ট করলাম। তখন বাবা খুশিতে মিষ্টি এনে আমাকে খাইয়ে দিল। বাবা আবার কথা বললো আমার সাথে।
🌱 তারপর ২য় বর্ষে উঠার পর ছোট খালা দুইটা সরকারি চাকরি করা ছেলে দেখালো কিন্তু খাটো বলে পছন্দ করলো না। এরপর সবসময় ছোট খালা বাবাকে বলতো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দে, না হলে কেউ তোর এই নাটি মেয়েকে বিয়ে করবে না। খালার এসব কথা শুনে মনে অনেক কষ্ট পেতাম।
🌱 বৈবাহিক জীবন,,,
২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পর ফেসবুকে একটা ছেলে এড হলো।আমার ছবি দেখে পরিচয়ের দ্বিতীয় দিনে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি।কেননা এমন প্রস্তাব কম বেশি সবাই দিত।যাই হোক হুট করে বাবার নাম্বার চেয়ে বসে। আমি এই বিষয়টা আমার ভাইকে জানালে ভাই বলে বাবু তুই আর ফাদে পরিস না। একটা কাজ কর, আমার নাম্বার টা দিয়ে দে। তখন ভাই এর নাম্বার দিলাম। আমার হবু শাশুড়ী কথা বললো। বললো আমার একটাই ছেলে আপনার বোনকে পছন্দ করছে। আমরা আপনার বোনকে দেখতে আসতে চাই।
এরপর ভাই বাবাকে সব জানানোর পর বাবা রাজি ছিল না।তারপর অনেক কষ্টে মেজ আপু রাজি করায় ছেলের সব খোজ নিয়ে তাদেরকে আসতে বলে।এই তো ১৭জুলাই২০২০সালে আমাকে দেখতে এসে পছন্দ করে। সেদিনই বিয়ে করে আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।
আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি অনেক সুখে আছি।
🌱উদোক্তা হয়ে উঠা
বিয়ের পর বাসায় তেমন কাজ থাকতো না কাজের খালা করে সব কাজ করে দিত। সেই জন্য বসে অবস্বর থেকে মোটেও ভালো লাগতো না।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকে দেখি এক আপু আচার সেল এর পোস্ট দিছে। তখন ভাবলাম তাহলে প্লাটফর্মে আচার ও সেল হয়। বাহ দারুন তো।
ইচ্ছা করলে আমি ও আচার নিয়ে কাজ করতে পারি।
আমি তো আচার ভালো বানাতে পারি।
প্রথমে মাকে (শাশুড়ী মা) বললাম মা রাজি হয়নি ।স্বামীকে বললাম সে রাজী আছে । এভাবে মাকে ১মাস ধরে রাজি করানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু মা রাজি হলো না। আমি ও নাছোর বান্দা, শাশুড়ী মাকে বুঝানোর জন্য উনার পেছনে আঠার মতো লেগে ছিলাম - অবশেষে ১৭মে২০২১এ রাজি হলো।
তারপর শুরু করলাম আমের আচার বানানো।আমাকে সেসময় সাহায্য করতো আমার স্বামী।
পেজের ব্যাপারে, প্যাকিং ইত্যাদি। এভাবে ১মাস সে আমাকে সব দেখিয়ে দিল।অর্ডার আসতে লাগলো।আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি একাই আচার বানায়,প্যাকিং করি,কাস্টমারের সাথে কথা বলি।যদিও মা এখনো অনেক রাগ করে তবুও তার সার্পোটে এগিয়ে যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন একদিন আমি যেন সফল উদ্দোক্তা হতে পারি । নিজের অবস্থান তৈরী করতে পারি।
🌱 ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে প্রিয় স্যারের শিক্ষাগুলো কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় প্রিয় স্যারকে। যিনি না হলে কখনোই এমন একটা প্লাটফর্মের জন্ম হতো না।
দোয়া করি এমন একজন ভালো মানুষের জন্য- বেচে থাকুক আমাদের মাঝে হাজার বছর।
ধন্যবাদ জানাই সবাইকে এতোটা ধৈর্য ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য।
পরিশেষে এই টুকু বলে আজকেআমার জীবনের গল্পটা শেষ করবো। এই প্লাটফর্মটি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটি প্লাটফর্ম, এই প্লাটফর্মের ৯৯% মানুষ ভালো মনের মানুষ, সবাই অনেক আন্তরিক। সবাইকে সবাই হেল্প করে। যা অন্য কোন প্লাটফর্মে নেই।
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৭
Date:- ১৮/১১/২০২১ইং
শারমিন সুলতানা।
ব্যাচ নাম্বারঃ- ১৫
রেজি নাম্বারঃ- ৭০১৭০
জেলা ঃ পাবনা
কাজ করছি মোহাম্মদপুর থেকে হোমমেইড আচার এবং পাবনার বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ,রসকদম নিয়ে।
পেজঃপুত্রবধূ
আমার
এটা পেজ লিংক https://www.facebook.com/putrobodhoo/
আশা করছি ভালোবেসে লাইক দিয়ে পাশে থাকবেন।