পুরো জীবনটাই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা নিয়ে চলেছি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
আস্সালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুগন,
কেমন আছেন সবাই ?
আশা নয় বিশ্বাস আপনারা শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও ভালো আছেন সুস্থ আছেন।
আমি ও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
🥀 সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন, গত দিনের গল্পের ধারাবাহিকতায় আজকের এই শেষ অংশটি আপনাদের কাছে নিবেদন করছি -- গল্পটা ছিল আমার মেয়ের বিষয় ।
তার বড় হয়ে ওঠার বিষয়ে গল্প বলছিলাম ।
এবার তার বড় হবার পরের বাস্তব ঘটনা কিছু আলোকপাত করছি । বলেছিলাম আমার মেয়ে শমরিতা হসপিটাল এ পুষ্টিবিদ হিসেবে জয়েন করে ।
বেশ কিছুদিন চাকরি করার পরে তাদের হসপিটালে ভর্তি হন, বিশিষ্ট চর্মবিদ প্রফেসর ডাঃ কবীর চৌধুরী।
উনার খাবারের ডায়েট চার্ট এর দায়িত্বটা পড়ে ছিল আমার মেয়ের । উনি সুস্থ হওয়ার পরে আমার মেয়েকে প্রস্তাব দেন তার চেম্বারে ডায়েটিশিয়ান হিসেবে বসার জন্য। হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর সে সেখানেও চেম্বার করে । এভাবেই চলছিল আমার মেয়ের কর্মজীবন ।
🥀এরই মধ্যে একটু বিপত্তি ঘটলো, হঠাৎ করে আমার হাজবেন্ডের ঘাড়ের কাছে একটি টিউমার দেখা দিল, সেটি দিনে দিনে দ্রুত বড় হয়ে উঠলো।
যেহেতু মেয়ে শমরিতা হসপিটাল এ আছে। সে তার বাবার টিউমারের বিষয়টা নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে বাবার জন্য একটি অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করে।
কিন্তু যেদিন তার বাবাকে ডাক্তার দেখাতে যাবে, সেই দিন সকাল বেলা থেকে প্রচন্ড জ্বর আসে মেয়ের বাবার ।
সেই কারনে তার আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়ে উঠেনি । সেই জ্বরটা হওয়ার পর ধীরে ধীরে চিকুনগুনিয়া জ্বরে রুপ নেয়।
চিকনগুনিয়া হওয়াতে চিকিৎসা টা পিছিয়ে যায় ।
🥀 আমরা সবাই আগেই পাসপোর্ট করেছিলাম । মেয়ে প্রস্তাব করলো মা, চলো আমরা সবাই ইন্ডিয়াতে গিয়ে ঘুরে আসি । বাবাকে ও ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসি । মেয়ের কথা শুনে আমি কিছুতেই যেতে চাচ্ছিলাম না ।
কারন দেশের বাহিরে সপরিবারে ভিজিট করলে অনেক খরচের একটা ব্যাপার আছে , বললেই তো আর হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তার পার নানান রকম চিন্তা করি কারণ এর আগে দেশের বাহিরে আমার কখনো যাওয়া হয়নি ।
তারপর আমি টুকি টাকি যা কিছু করি সেটা দিয়ে সব সময় নিজের হাত খরচ নিজে চালাই। তখন আমার হাতে ও তেমন টাকা পয়সা ছিলো না - হাতটাও খালি হিসেব করে দেখলাম ঐ মূহুর্তে ভিজিট করা মোটেও সম্ভব নয়। আমি মেয়েকে বার বার বললাম তোমরা দুজনে যাও, আমি যাব না ।
কে শুনে কার কথা, অবশেষে আমার মেয়ে আমাকে বলল মা আসো তো একটু হিসেব করি তুমি তো আমার কাছে অনেক গুলো টাকা পাবে। আমি তো খুব অবাক হয়ে গেলাম, আমি আবার তোমার কাছে কিসের টাকা পাব। মেয়ে বলছে তাহলে শুনো।
প্রিয় বন্ধুগন আমি আগেই বলেছিলাম যে আমার মেয়েটা খুবই হিসেবী মেয়ে, সে তার বন্ধু বান্ধবের অথবা তার বাচ্চাদের জন্য আমার বুটিকস থেকে যখন যা নিয়েছে, সেটা হিসেব করে রেখে দিয়েছিলো। সে হিসেব করে দেখলো যে আমি তার কাছে বেশ মোটা অংকের টাকা পাচ্ছি। যেটা দিয়ে আমি অনায়েসে ইন্ডিয়া থেকে ঘুরে আসতে পারবো।
🥀আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম আমার এই বুদ্ধিমতী মেয়েটির কাছে। অবশেষে আমরা সপরিবারে ইন্ডিয়া গেলাম এবং তিনজনেরই মেডিকেল চেকআপ করালাম, আমার হাজবেন্ডের টিউমার থেকে টিস্যু নিয়ে ওরা টেস্ট করে দেখল যে ওখানে খারাপ কিছু আছে কিনা, আলহামদুলিল্লাহ রিপোর্টটা ভাল ছিল । কিন্তু অপারেশন টা অনেক ব্যয়বহুল হওয়াতে, আমরা ঐ সময়টাতে অপারেশন টা করাতে পারলাম না । এই দিকে ফ্রান্স থেকে জামাই বার বার তাগাদা দিতে লাগল আমি টাকা পাঠাই তোমরা অপারেশন টা এখনই করে নিয়ে যাও।
কিন্তু আমার মেয়ে এবং হাসবেন্ড সব সময়ই অনড় ও অটল ছিলো, জামাই এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা লজ্জায় পড়বেনা। যাই হোক আমাদের মোটামুটি মেডিকেল চেকআপ সবার হয়েছে। এরপরে আমরা সবাই মিলে ঘুরলাম, বেরালাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম এবং ইন্ডিয়াতে আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজন আছে। ইন্ডিয়ার নদীয়া জেলা তে আমরা সেখানেও গেলাম। একটা সময় কুষ্টিয়া ও নদিয়া একটি জেলা ছিল। যখন দেশভাগ হলো তখন আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজন ওই পারেই রয়ে গেলো।
🥀 যাই হোক ইন্ডিয়াতে সবাই মিলে ঘুরে ফিরে আনন্দ উল্লাস করে আমরা চলে এলাম দেশে।
দেশে ফিরে মেয়ে তার বাবার রিপোর্টগুলো নিয়ে ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলো । এরই মধ্যে আমিও কিছু অসুস্থতার মধ্যে পড়ে গেলাম। চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল। ঐ দিকে আমার হাজবেন্ডের অপারেশনের ডেট সব ঠিক হয়ে গেল । সময় মতো আমি ও আমার মেয়ে আমার হাসবেন্ডকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করলাম, রাতে অপারেশন ।
নিচে ডিসপেনসারি আছে অতএব ওষুধপত্র সেখানে সব পাওয়া যাবে আমরা নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কিন্তু আনুমানিক রাত একটা দুইটার সময় এমন এমন ওষুধ দিচ্ছিল যে ওষুধ তাদের ডিস্পেন্সারিতে ছিলো না। আমাদের বাইরে থেকে আনতে হবে । আসলে একটা অপারেশন করাতে গিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি যতটা সহজ ভেবেছিলাম.ততটা সহজ নয়।
পুরো জীবনটাই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা নিয়ে চলেছি।
🥀 রাত দুইটা
তখন আমি যাচ্ছিলাম ওষুধ আনতে বাইরে নার্স বা ডাক্তাররা বিব্রত হচ্ছেন। আপনাদের সাথে পুরুষ মানুষ নেই , পুরুষ আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তারা রাতে ডিউটি করার মতো কেউ নেই সবাই হয়তো চাকরি-বাকরি করে, কাকে বলব যে এসে আমাদের সাথে রাতে থাকো।
যাই হোক উনারাই সমাধান দিলেন বললেন কোন একটা পিওনকে দিয়ে ওষুধ আনাতে, পরে একটি ছেলে হেল্প করলো আমাদের।
তিনদিন পর হসপিটাল থেকে ছুটি হলো । আমার মেয়েটা একটি টাকাও তার বাবাকে খরচ করতে দেয় নাই। কারণ সঞ্চয় এর টাকা খরচ করার পর আমরা যদি অসহায় হয়ে পড়ি এটাই ছিল তার ভাবনা ।
।
🌱যাইহোক তিনদিনের দিন আমরা হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় আসলাম l আমার ও আমার মেয়ের সেবায় তার সুস্থ হয়ে উঠেন l
এরপরে শুরু করলো আমার চিকিৎসা l কারণ সরকারিতে চাকরিতে যারা পেনশন পায় তাদের অনেক টাকা জমা থাকে না যে বড় চিকিৎসা করাতে পারবে l আমার হাজবেন্ডের কাছেও নেই l যখন মেয়ে আমাকে বলল, "তুমি তোমার ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়নমেন্ট করো, তোমার যা যা করা লাগবে ব্যবস্থা করো" । আমি তখন করাতে চাইনি, মেয়ে বলল "অসুবিধা নাই মা আমার কাছে টাকা আছে" আমি খুব অবাক হয়ে বললাম, " ইন্ডিয়া থেকে ঘুরে আসলাম এত খরচ করলে আবার তোমার বাবার অপারেশন করালে, সেখানে প্রচুর খরচ হলো, আমার খরচ টাও তো কম না আরো পরে না হয় করি" । বলল, "অসুবিধা নেই আমি জানি যে, আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । তাদেরকে দেখতে হলে আমাকেই দেখতে হবে এবং তোমরা দুজনেই কেউ টাকা জমাতে পারো না সেইজন্য আমি আমার টাকা জমিয়েছি তোমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে " আরও বলল , "যদি কখনো তোমাদের কোনো চিকিৎসা বা বড় কোনো কারণে কোন টাকা পয়সার দরকার পড়ে তখন তোমরা কি করবা ? তাই সঞ্চয়ী হয়েছি "।
▶️ তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার মেয়ে এত ভালো চাকরি করার পরও এবং চেম্বারে রোগী দেখার পরেও এত সাধারণভাবে চলে কেন ।
এরপর আমার চিকিৎসা শুরু করে সেখানেও প্রায়ই লাখখানেক টাকা খরচ হয়ে যায় l
▶️ আমি দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি, "এমন মেয়ে যেন ঘরে ঘরে জন্ম নেয় যারা বাবা মায়ের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারে, বাবা-মায়ের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারে, বাবা মায়ের আদর্শ সন্তান হয়ে উঠতে পারে "।
এরপর ইউরোপ কান্ট্রি তে দুই-তিনবার সে এম এস / পিএইচডি করার জন্য ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়, কিন্তু দুঃখের বিষয় সে ভিসা পায়না । প্রতিবারই দিল্লিতে যেতে হয় ভিসার জন্য এবং এক মাস করে সেখানে অবস্থান করতে হয় l অবশেষে সে চাকরিটা ছেড়ে দেয়।
এর পর সে যখন ভিসা পায় না তখন সে আরেকটি হসপিটালে চাকরিতে জয়েন করে । দুই মাস করার পরে সে বুঝতে পারে যে হাসপাতাল টা পুরাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান । রোগীদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নামের অর্থ নেওয়া হচ্ছে ।
তখন সে প্রতিবাদস্বরূপ চাকরিটি ছেড়ে দেয় ।
🌱 আমি আমার লিখাটি সংক্ষেপ করার চেষ্টা করছি,
আমার শ্বশুরের জায়গাতেই আমরা একটি একতলা বাড়ি করেছি তিন তালার গাঁথুনি দিয়ে যদিও সেটা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছিলাম। এখন মেয়ের মাথায় ঢুকলো সে যখন এখানে থাকবেনা, তখন বাবা-মাকে কে দেখবে, তাহলে পুরো বাড়িটা কমপ্লিট করে দেই । নিজেরা একটি ফ্ল্যাটে থাকলে অন্য ফ্লাট গুলো ভাড়া দেওয়া থাকলেও আমাদের হঠাৎ অসুখ-বিসুখ বা কোন সমস্যা হলে একটা মানুষ অন্তত ডাকতে পারব । যেই ভাবা সেই কাজ । অবশেষে সে দোতালা সম্পন্ন করল ( ফিনিশিং বাকি আছে ) ।
আমাকে সে অনেকখানি বোঝে, না হলে এই বয়সে আমাকে সে কাজ করতে দিতে চাইত না। আমার উদ্যোক্তা হবার পেছনে ও আমার মায়ের ও বোনের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমন রয়েছে আমার মেয়েরও। সে সব বুঝতে পারে যে আমি যদি আমার এই উদ্যোক্তা জীবন থেকে ফেরত আসি তাহলে আমি অসুস্থ হয়ে পরবো ।
আমি আমার মেয়েটির গল্প করলাম এই জন্য যে এরকম একটি মেয়ে এই সমাজে পাওয়া খুব দুষ্কর ।
🌱বাস্তব চিত্র
আমি বহু ছেলের মা'দেরকে দেখেছি অন্য মানুষের কাছে চেয়ে ভাত খেতে । কিংবা অসুখ বিসুখ হলে সন্তানকে বলতে পারেনি ।. কষ্ট করেছে, সংসারে অশান্তির ভয়ে চুপচাপ থেকেছে আর ছেলেরাও হয় তো বাবা-মায়ের সাথে অত ক্লোজ হতে পারেনা বলেই সংসারের অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারেনা অথবা কখনো নিজের ঘরের অশান্তির ভয়েও বুঝে উঠতে চায় না ।
#সন্তান_তো_সন্তানই_সে_ছেলে_হোক_বা_মেয়ে_হোক । বাবা-মায়ের ভাগ্য যদি ভালো হয় সন্তান তাকে ভালবাসবে বৃদ্ধকালে অথবা মন্দ হলে তাকে ছেড়ে চলে যাবে ।
#আমি_গর্বিত_এরকম_একটি_সন্তান_পেয়ে।
🌱 সার্টিফিকেট এর শিক্ষা নয় প্রয়োজন সুশিক্ষা আমার মতে সন্তানকে ছোট থেকেই এই ভাবে শিক্ষাদান করা প্রয়োজন, যেন সে ছোট থেকেই উৎশৃংখল হয়ে না ওঠে।
নিজের আর্থিক অবস্থা ছোট থেকেই বুঝতে দেওয়া প্রয়োজন । আর যদি নিজেদের অবস্থান অনেক ভালো হয়, তবুও সন্তানকে সেই ভাবে গা ভাসাতে না দেওয়াই ভালো। একটু রাশ টেনে ধরবেন । অনেকে মনে করে আমার যা কিছু আছে তা আমার সন্তানের জন্যই অতএব আমি তাদের পেছনে কেন যথেষ্ট ব্যয় করবো না । ব্যয় অবশ্যই করবেন কিন্তু সেই ব্যয় টা যেন সঠিক পথে হয় ।
কারন আপনার ব্যয় যদি সন্তানের জন্য মঙ্গল বয়ে না আনে, তাহলে আপনার সারা জীবনের উপার্জন ব্যর্থ, মূল্যহীন ।
সকলের কাছে আমি আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থী, আল্লাহতালা যেন তার সব মনের আশা পূর্ণ করেন এবং তাকে যেন নেক হায়াত দান করেন, আমীন।
কষ্ট করে সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রথম গল্পের লিংক টি দিলাম
https://m.facebook.com/groups/youngentrepreneursbdiqbal/permalink/1451787875292564/
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৭
Date:- ১৮/১১/২০২১ইং
↔️ওয়ারেক্বা বিনতে ওয়ালী
↔️ব্যাচ নং ১১
↔️রেজিস্ট্রেশন নং ১৯৩০০
↔️উপজেলা এম্বাসেডর
↔️ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া
↔️ পেইজ লিংক
https://www.facebook.com/evergreenbabymomshop