___আমার ব্যর্থতা ও সফলতার গল্প_______
আসসালামু আলাইকুম ।
শুরু করছি সেই মহান রবের নামে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন । কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি কিছু পথ হারা মানুষের পথ প্রদর্শক প্রিয় Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি ।
আমি “হৃদয় সুলতান” ২০১৭ সালের শেষের দিকে সৌদি আরব ’আলবাহা’ নামক জায়গায় আসি দুচোঁখে পাহাড় সামান স্বপ্ন নিয়ে । আমাকে এনেছিলেন আমার বাবা কিন্তু দূভাগ্যক্রমে আমি আসার আগেই ওনাকে একেবারে বড়িতে চলে যেতে হয়। তখন আমি আসার পর খুব অসহায় হয়ে পড়লাম কারন ভাষা বুঝিনা ফ্রি বিসায় এসেছি কি কাজ করবো তাও জানিনা । তখন এক দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের কাছে কিছুুদিন ছিলাম এর পর বাবার এক বন্ধু সহযোগিতায় একটা আবাসিক হোটেলে কাজ করতে লাগলাম খুবই অল্প বেতনে । অনেক কষ্ট হতো কারন জীবনে কোনদিন ঘন্টা হিসাবে কাজ করিনি এছাড়াও নতুন আসার কারনে বাড়ির জন্য অনেক মায়া হতো কখনো কখনো মনে হতো সব ছেডে দিয়ে বাড়িতে চলে যায় ।
এরপর চাঁদপুরের একভাইয়ের সাথে পরিচয় হয় খুবই ভালো মানুষ। উনি মূলত আলমারির কাজ করতেন তখন আমি হোটের জব ছেড়ে ওনার সাথে কাজ করতে লাগলাম, ভালোই চলছিলো । এরপর সমস্যা হলো আমার কফিল নিয়ে , সে আমাকে মাত্র ১৫ দিন সময় দিলো এর ভিতরে আমি যদি কোন কোম্পানিতে স্থায়ীভাবে ট্রান্সফার না হই তাহলে সে আমাকে খুরজ (final exit) লাগিয়ে দিবে । খুবই দূঃচিন্তাই পডে গেলাম কপালা হওয়ার মতো কোন কাজই পাচ্ছিলাম না অন্য দিকে সময়ও শেষ হয়ে যেতে লাগলো । তখন সিদ্ধান্তা নিলাম ওমরা করে আসবো কারন যানিনা সৌদিতে আর থাকতে পারবো কিনা ।
ওমরা করলাম ও মন খুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম । আমি ভাবতেও পারিনি আল্লাহ এতো তারাতারি আমার দোয়া কবুল করবেন এবং এই মক্কাতেই আমার রিজিকের ব্যবস্তা করে দিবেন । ওমরা শেষে যখন আমি গন্তব্যে ফেরত আসলাম তার ২-১ দিন পরেই ১জন সৌদি লোক আসলো আমাদের বাঙ্গালি বিলাতে। সে বললো মক্কায় তার হোটেল আছে সেখানে রিসেপশনে কাজ করার জন্য একজন লোক প্রয়োজন , কম্পিউটার+ আরবি লিখা জানা থাকতে হবে । তো সেখানে সাবাই আমার ব্যাপারে বললো । মূলত এখানে শুদু আমারি কিছুটা পডালিখা ছিলো আর আমি কম্পিউটার ও আরবি লিখা যানতাম এবং ইতি মধ্যে আরবি ভাষাও অনেকটা শিখে পেলেছি । পরিশেষে সে সৌদির সাথে ৩ বছরের কন্টাক্ট করে ১দিনের মধ্যে কফালা(ট্রান্সফার) হয়ে চলে আসলাম মক্কায় । হোটেলটা খুব ছোট আমরা তিন জনই চালাই , আমি রিসিপশনে কাজ করতাম সাথে ১জন ইন্ডায়ান ও ১জন পিলিপাইনি লোক কাজ করতো । খুব ভালো চ্যালারি ও এখানে থাকার সুবাদে খুব সহজে ওমরা ও হজ্জ করতে পেরেছি । আলহামদুল্লাহ!
______এই গ্রুপে যুক্ত ও উদ্যোক্তা জীবন______
হোটেলে কাজ কম থাকলেও ডিউটি ছিলো অনেকটা লম্বা । ঘন্টার পর ঘন্টা রিসেপশনে বসে থাকতে হতো আর টাইমপাচ করার জন্য মুভি দেখতাম । এর পর চিন্তা করতে লাগলাম সময়টা কোন কাজে লাগানো যায় কিনা । youtube এ খুজতে লাগলাম এভাবে খুজতে খুজতে এপর্যায়ে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের কিছু বিডিও দেখলাম এভাবে একদিন ২০১৯ সালের শেষের দিকে ’’’নিজের বলার মত গল্প’’ গ্রুপের সন্দান পাই এবং জয়েন হই ও ২০২০ সালের শুরুতেই ৯ম ব্যাচে রেজিস্ট্রিশন করি।স্যারের সেশন ও গ্রুপের ভাইদের ভালোবাসা সব মিলিয়ে মনে হলো একটা নতুন জগতে চলে আসলাম যেখানে সবাই ভালো মানুষ সাবাই পজেটিভ । অনেক কিছু শেখলাম এখান থেকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম । আসলে গ্রুপের পরিবেশটা এমন ছিলো যে এখানে আসলে সবসময় নিজে কিছু করার অনুপেরনা জাগতো মনের গহীনে ।
তখন আমি এবং আমার ভাই Jewel Sultan (আমার ভাই আমি আসার প্রায় ৬মাস পরে এসেছে সৌদিতে ) মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম অনলাইনে জীম এক্সেসরিজ ও গিপ্ট আইটেম নিয়ে ব্যবসা করবো সৌদিতে। আসেপাশে এগুলোর দোকান এভেলেবেল ছিলো । কিছুটা নলেজ ছিলো ওতো বেশি না তবে ফেসবুকে বুস্ট করতে পারতাম । এরপর একজন বন্ধুর সহযোগিতায় ব্যবসার জন্য shopplex.net নামে wordpress দিয়ে একটা ওয়েব সাইট তৈরি করলা ।
সবকিছু ঠিক ছিলো কিন্তু সমস্যাটি হলো পন্য ডেলিভারি নিয়ে ।তখন samsa ও aramex কোরিয়ার সাথে কথা বললাম ওরা বললো সিজিল তিজারি (ট্রেড-লাইসেন্স) ছাড়া ওরা আমার পন্য ডেলিভারি করবে না । এদেশে লাইসেন্স করলে সৌদির নামে করতে হবে, তাই আর অতো জামেলার দিকে গেলাম না । নিজে নিজে ডেলিভারি দেওয়ার পরিকল্পনা করলাম , একজন টেক্সি ওয়ালার সাথে কন্টাক্ট করলাম ও ফেসবুকের মাধ্যমে শুদু মক্কাকে তার্গেট করে বুস্ট করতে লাগলাম । প্রথম কয়েক দিন অর্ডার আসলো ডেলিভারিও দিলাম কিন্তু এর পর থেকে নানা ধরনের সমস্যা শুরু হতে লাগলো । কখনো কপিরাইট সমস্যা কখনো এড একাউন্ট সাসপেন্ড কখনো ওয়েবসাইটে সমস্যা । সব মিলিয়ে বুঝলাম আমার নিজেরও নলেজের ঘাটতি আছে । এর পর ১ মাসের মাথাই ব্যবসাটা বন্ধ করে দিলাম । যদিও আমি ব্যর্থ হলাম কিন্তু আমি বুঝলাম অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য নিজেকে অনেক কিছু জানতে হবে অন্তত অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য হলেও । কারন একটা ব্যবসার সাথে অনেক কিছু জিডিত , ডিজাইন + কন্টেন লেখা + মার্কেটিং + ওয়েব সাইট দেখেশোনা ইত্যাদি
এর পর সিদ্ধান্ত নিলাম ওয়েব সাইট ডেভলপমেন্টের কাজ শিখবো । Youtube,google, freecodecamp,w3school থেকে শেখা শুরু করলাম পাশাপাশি udemy & programming hero থেকে পেইড কোর্স করলাম । ১ বছরেরও বেশি সময় লাগলো একজন MERN stack developer হতে ।ইতি মধ্যে অনেক গুলো প্রজেক্ট কমপ্লিট করলাম । পাশা-পাশি একজন ফ্রিলান্স ফ্রন্ট-এন্ড ডেভলপার হিসাবে কয়েকটা কোম্পানির সাথে কাজ করছি ।
এভাবে ঢাকার একজন প্রোগ্রামারের সাথে পরিচয় হয় ,সে কালের কন্ঠে জব করে । তো দুইজ মিলে ShadowBangladesh.com নামে একটা অনলাইন ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট শুরু করি যেখানে আমরা ফ্রিতেই সবাই কে ওয়েব ডেবলপমেন্ট শেখাই । আমাদের লক্ষ ছিলো দেশের মেধাবি ছাত্রদের নিয়ে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি চালু করা । প্রায় ৪০০০+ স্টুডেন্ট আমাদের সাইটে রেজিস্টিশ করে এবং তাদের কে আমরা ফ্রিতেই শেখাই । এদের মধ্যে লাস্ট ৯০ জনকে আমাদের টিম মেম্বার হিসাবে যুক্ত করি। সবই ঠিকঠাক চলছিলো কিন্তু সমস্যাটা হলো আমাদের ইনভেস্টরকে নিয়ে জিনি আমাদের কোম্পানিতে ১৫ লক্ষটা ইনভেস্ট করার কথা ছিলো কিন্তু বিশেষ কারনে সে ইনভেস্ট আর করা হয় নি এরপর আমরা বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পনির সাথেও যোগাযোগ করি তাও হয় নি । এরকম অনেক গটনা হয় তা আর লিখলাম না, এমনিতেই লিখা অনেক বড় হয়ে গেছে । তো এক পর্যায়ে আমাদেরকে shadowbangladesh বন্ধ করে দিতে হয় ।
আসলে এতো কিছুর পরও আমি নিজেকে সফল মনে করি ।কারন এগুলো করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি অনেক অবিজ্ঞতা অর্জন করেছি যা ভবিষ্যতে আমাকে আলোর মতো পথ দেখাবে ইনশাআল্লাহ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৩
Date:- ২২/১২/২০২১ইং
হৃদয় সুলতান
ব্যাচঃনবম
রেজিঃ১০৯৭৪
জেলাঃনোয়াখালি
বর্তমান অবস্তানঃ মক্কা-সৌদি আরব ।
http://hridoysultan.com/