*এক সৌদি প্রবাসির আত্বকথা*
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম,
সর্বপ্রথম শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি সেই মহান রবের যিনি আমার মত অধম বান্দাকে কখনই উনার রহমত থেকে বঞ্চিত করেননি-আলহামদুলিলহা।
দুরুদ ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইয়াস্লাম এর উপর.
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার স্যারের প্রতি, স্বার্থপর এই পৃথিবীতে যিনি নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের স্বপ্ন পুরণে।
নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আজ স্যারের শিক্ষা নিয়ে জীবনের এই মুহূর্তে বার বার মনে হচ্ছে একটি কথা আর তা হলো;
*নিজের স্বপ্নকে অন্য আরেকজনকে দিয়ে পুর্ন করার বৃথা চেষ্টা না করা।*
আমি আমার বাবার বড় ছেলে বাবার স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো, আমাদের নিজস্ব একটা ফার্মেসি থাকবে বাবা বিকালে সেখানে গিয়ে বসবেন আমার ডাক্তারি দেখবেন। বাবার এ স্বপ্ন আমি পুরন করতে পারিনি ডাক্তার দূরে থাক কম্পাউন্ডার হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। আমার স্বপ্ন ছিল রাখাল হবো কারন তাদের লাইফ ষ্টাইল আমাকে আকৃষ্ট করত। আমার খেলার সাথী বন্ধুদের সাথে বাবাকে লুকিয়ে অনেকবার গিয়েছি তাদের সাথে গরু চড়াতে বেশ ভালই লাগত। প্রতিদিন সকালে তারা চার পাঁচজন মিলে গরু চড়ানোর জন্য হাওরের দিকে রওয়ানা দিত, আমাদের গ্রাম থেকে হাওরের দুরুত্ব ৪/৫ কিলোমিটার হবে. পথে দুইটা নদী একটি মুটামুটি বড় নাম মনু আরেকটি ছোট ওরা বলেছিল নাম মাছুয়াকালী। যাইহোক প্রথম যেদিন আমি ওদের সাথে যাই গিয়ে দেখি ওখানে কোন নৌকা নেই সবাই গরুর লেজ ধরে পাড়ি দিচ্ছে অনায়াসেই, কিছুটা ভয় পেয়ে ধরলাম লেজে যাইহোক গরুটি ঠিকঠাক ভাবে আমাকে ওপারে পৌছে দিল দ্বিতীয়টা মনে পড়ে বেশি পানি ছিল না কোমর পর্যন্ত পানি ছিল তাই সহজেই পাড়ি দিতে পেরেছিলাম। আমাদের হাওরের নাম কাউয়াদিঘীর হাওর নামেই পরিচিত,সারাদিন তাদের সাথে হুই হুল্লোড় করে কাটিয়েছিলাম. তাদের মধ্যে একটি জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম একেক দিন একেক জন গরুর পালের দ্বায়িত্ব নেয়, গরুর পালে কিন্তু অনেকগুলো গরু থাকে প্রায় ৭০/৮০ টার মত যেদিন যার দায়িত্ব সে খেলতে পারবে না শুধু গরুগুলোর দেখ ভাল করবে আর বাকি সবাই খেলাধুলা করবে। স্কুলের পড়ালেখার প্যারা থেকে এভাবে স্বাধীন ভাবে গরু রাখার জীবনকেই আমাকে আকৃষ্ট করে। শেষ পর্যন্ত গরু রাখার জীবনকে বাবার শাসনের ভয়ে বেছে নিতে পারিনি কোন রকম টেনেটুনে কিছু লেখাপড়া করে মামার জোরে প্রবাসি হয়ে গেছি আজ প্রায় ২০/২১ বছর ধরে।
বাবা কয়েক বছর হলো আমাদের ছেড়ে মাওলার ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন-আমিন। মাঝে মাঝে যখন একা বসি আমাকে নিয়ে বাবার স্বপ্নগুলোর গল্পের কথা মনে পড়ে আর চোখের জল ফেলি বাবার স্বপ্নের সেই ছেলেটার মত যদি আমি নিজেকে গড়তে পারতাম তাহলে এই প্রবাস নামক কারাগারে আমাকে থাকতে হতনা। মাঝে মাঝে মনের ভেতর ভাবনা আসে এই স্বপ্ন ভংগের জন্য শুধু কি আমি একা দায়ী? এর সাথে নিশ্চই আমার আসেপাশের পরিবেশটা ও দায়ী ছিল। সব কিছুর জন্য ভাল একটা ইনভারমেন্টের দরকার এ ক্ষেত্রে আমার বাবার কোন দোষ নেই উনি আমাকে মানুষ করতে সাধ্যের ভেতর সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন যখন থেকে একটু বুঝতে শিখেছি সেই থেকে ক্লাশ ওয়ান থেকে এস এস সি পর্যন্ত লজিং মাষ্টার নিয়োগ রেখেছিলেন আমার জন্য। কিন্তু পরিবেশের একটা রোল থাকে মানুষ হয়ে উঠার জন্য এটা এখন অনুধাবন করতে পারি। অনেকেই বলবেন গ্রামে থেকে কি মানুষ হওয়া যায় না? কেন যাবেনা অনেক গুনীজনরা গ্রামে বাস করে কীর্তি ও নাম রেখে গেছেন সেটা ভিন্ন কথা।
এই যে আজ ২০ বছর ধরে প্রবাসে আছি কত মানূষের সাথে পরিচয় হলো তাদের গল্প গুলো শুনতাম ছেলেকে মেয়েকে নিয়ে কত স্বপ্ন তাদের অনেকে বলতেন নিজে লেখাপড়া করিনাই যা বেতন পাই সব বাড়িতে পাঠাই ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হবে এই প্রবাসে এসে আমার মত গাধা হয়ে খাটতে হবে না কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন সেই লোকটি কিছুদিন পর মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে কোন রকম একটা ভিসা কিনে ছেলেকে প্রবাসি বানান তার কারন ছেলের স্বপ্ন প্রবাসি হবে বাবার কি সাধ্য তাকে ব্যবসায়ী বা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানায়।
একটা সময় পণ করেছিলাম নিজেতো আমার বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে পারিনি কিন্তু আমার যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোন দিন সন্তান দান করেন তাহলে আমি তাকে অনেক বড় ডাক্তার বানাবো মানুষের সেবায় কাজ করবে আর এর জন্য যা যা করতে হয় আমি করব.
এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আমার শিক্ষা;
এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর স্যারের সেশনগুলো বা বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে আমার এই সিদ্ধান্ত ভুল, তার কারন কয়েকটা জায়গায় স্যার বলেছেন স্বপ্নের পথটা নিজেকে শুরু করতে হবে নিজের স্বপ্ন অন্য কেউ পুরণ করে দিবেনা। স্যারের অনুপ্রেরণামুলক কথাগুলো শুনে মনে হলো বাস্তবিক স্বপ্ন যেটা আমি সফল হওয়ার জন্য করতে পারি আমার সেটাই শুরু করা উচিৎ, যা আমার মুল লক্ষ্য মানুষের কাজে আসা আর তাই এই প্লাটফর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সাহস করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি উদ্যেক্তা হওয়ার, যা আমি গত ১৫/২০ বছরে করতে পারিনি।
স্যারের যে শ্লোগানটি আমাকে উদ্ভুদ্ধ করেছে তা হলো. স্যার বলেছেন,
স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
শুরু করুন
লেগে থাকুন
সাফল্য আসবেই।
স্যারের এই সাহসী শ্লোগান আমাকে দিন দিন সাহসী করে তুলেছে যাইহোক এখন আমি স্বপ্ন দেখছি যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাকে কখন ও সন্তান দান করেন তাহলে আমি তাকে শেখাবো কিভাবে উদ্যেক্তা হয়ে মানুষের সেবা করা যায় যেটা আমি স্যারের কাছে থেকে শিক্ষা পেয়েছি.
আপনাদের সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনাদের মুল্যবান সময় ব্যয় করে আমার মত সামান্য একজন মানুষের অগোছালো লেখাটা পড়ার জন্য. আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা আল্লাহ যেন সবার মনের নেক কামনা বাসনা পুর্ন করেন.
প্রিয় স্যারের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালবাসা রইল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনার নেক হায়াত দারাজ করুন, লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের স্বপ্ন পুরনের জন্য যিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন-আমিন.
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৫
Date:- ২৪/১২/২০২১ইং
শওকতুর রহমান
ব্যাচ-১৪
রেজিঃ-৬৩৬৩৭
জেলাঃ মৌলভী বাজার
বর্তমান অবস্থানঃ রিয়াদ,সৌদি আরব
পেইজ; Al Tahmer