ক্ষুধার কি কষ্ট আমার মত পরিস্থিতিতে পরেনি তারা কখনো বুঝতে পারবে না
আমার জীবনের গল্প
আসসালামু আলাইকুম
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রিয় ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন,
আশা করি সবাই ভাল আছেন,
আমি মাসুদ রানা,
আমার জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার এক নিন্ম মধ্যবৃত্ত পরিবারে,
পরিবারে বাবা মা সহ আমরা চার ভাই চার বোন ছিলাম,
আট জন ভাই বোনের মধ্যে আমি ছিলাম ছয় নাম্বার, আমার ছোট এক বোন ও এক ভাই,
বাবা ব্যবসা করতেন ভালোই চলছিল আমাদের পরিবার,
💞💞 বাবা যে যাযগায় ব্যবসা করতেন সে যায়গাটা ছিল অন্য একজনের, সে লোক খুবই ভাল ছিল কিন্তু লোকটি হঠাৎ করে মারা যায়, তার অনেক ছেলে মেয়ে ছিল, তিনি ভাল মানুষ ছিলেন বলে বাবা কোন কাগজপত্র বা দলিল ও করেনি কখনো, ঐ লোকের ছেলেরা বাবাকে বাবার ব্যবসার কোনো কিছু আনতে দেয়নি,,বাবার সাথে বেইমানি করে, বাবার ব্যবসার উপর আমাদের পরিবার ডিপেন্ডেবল ছিল, আমি ক্লাস টু তে ছিলাম বাকি ভাই বোন সবাই পড়াশোনা করত, আমি বাবাকে খুব ভালোবাসাম, তখন বাবা যে কাজ করত বাবাকে সাহায্য করতাম,
আমাদের আট ভাই বোনকে পড়াশোনা করানো + সংসার চালানো বাবার জন্য কষ্ট হচ্ছিল খুব,
তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পড়াশোনা করব না, বাবার কাজে সাহায্য করব,
এই সিদ্ধান্ত টা ছিল আমার অনেক বড় ভুল,
এখন ভাল ভাবেই বুঝতে পারছি,
বাবা সব সময় বলতেন সব কিছুর ভাগ পাবি কিন্তু লেখা পড়ার ভাগ পাবিনা,
খুব কান্না আসে বাবার এই কথাটি মনে পরলে।
💞💞 প্রবাস জীবন
১৯৯৯ সালে চলে আসলাম সেই স্বপ্নের প্রবাস সৌদি আরবে,
সেই সাথে প্রবাসীর কাথায় নাম লিখালাম।
দেশে থেকে যেমন মনে করেছিলাম সৌদি আরব আসলেই অনেক টাকা কামাই করতে পারব তার কোনো কিছু বাস্তবতার সাথে মিল হচ্ছে না,
এসে পড়লাম সাপ্লায়ার কোম্পানি তে,
সেখান থেকে তারা অন্যখানে আমাকে বিক্রি করে দিল,
যারা সৌদি আরবে আছেন তারাই ভাল জানবে সাপ্লায়ার কোম্পানি সম্পর্কে,
যে জায়গায় বিক্রি করে দিল সেখানে বেতন ধরল ৪০০ রিয়াল,
খাবার খরচ বাবদ দিল ১০০ রিয়াল টোটাল ৫০০রিয়াল বেতন মাসিক,
যেটা বর্ধমান টাকায় বাংলাদেশের ১০ হাজার টাকা,
খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করব,
এখনো মনে পড়ে কোরবানির ঈদের আগের দিন সৌদি আরবে প্রথম ঈদ, আমার কাছে খাবারের টাকা নেই,
কোম্পানির ম্যানেজার কে বললাম অন্তত ১০০ টাকা খাবারের জন্য হলে ও দিতে, পড়ে বেতন থেকে কেটে নেওয়ার অনুরোধ করলাম,
কিন্তু সে রাজি হলনা, কাল ঈদ ডিউটি থেকে আসলাম খাবার নাই, রাতে কি খাব, সকালে কি খাব চিন্তায় মাথায় কোনো কিছু কাজ করতেছেনা,
আমি নিজে নতুন ভাষা জানিনা কোথায় কাজ খুঁজে করব এটা ও সম্ভব না,
পুরোনো এক বাংলাদেশি লোক খুঁজে বের করলাম, তার সাথে চুক্তি করলাম আমি কাজ করব সে শুধু কথা বলে ঠিক করে দিবে আর আমাকে বুঝিয়ে দিবে বাংলাতে,
তার বিনিময়ে আমি যা কাজ করে পাব সেখান থেকে তাকে অর্ধেক দিতে হবে,
কি কাজ করব এখন, এই ভেবে টিক করলাম যেহেতু কুরবানীর ঈদ ছাগল 🐐 দোম্বা কুরবানী করবে সৌদিরা, সৌদিরা তো এইসব ছাগল দোম্বা নিজেরা জবাই করে না আমাদের মত কেও ই করে সেগুলো, আমি সেটাই করব,
কিন্তু এগুলো করতে হলে আমার চুরি বা চাকু দরকার, যেখানে আমার কাছে খাবার টাকা নেই,
এগুলো পাব কোথায়, বাংঙ্গালী যাকে টিক করেছি তার কাছে ও এগুলো নেই,
তখন অনেক দোকানে গেলাম যে দুটি চাকু যেন আমাকে দেয় কাল সকালে এসে টাকা দিয়ে যাব,
কেউ ই দিতে রাজি হলনা,
শেষে এক বাংলাদেশির দোকানে বলার পর সে দিয়ে দিল,
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাজ খুঁজতেছি অবশেষে রাত একটায় এক সৌদি পেয়ে গেলাম সেখান থেকে ৬০ রিয়াল রুজি হল,
৩০ রিয়াল সাথের বাংঙ্গালী নিয়ে নিল যদিও সে কোন কাজ করেনি,
২০ রিয়াল দিয়ে দিলাম চাকু কেনার টাকা,
মনে একটু শান্তি এল অন্তত সকালে খাবার তো খেতে পারব,
ভোর চারটা বেজে গেল, সকাল ৮টায় আবার ডিউটি তে যেতে হবে,
এক রিয়ালের রুটি কিনে চিনি দিয়ে খেয়ে ফজর নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,
৮টায় উঠে আবার ডিউটিতে চলে গেলাম,
রাতের বেলায় আবার কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পরলাম,
শুধু আমি না সবার একি অবস্থা যারা এখানে কাজ করে,
ক্ষুধার কি কষ্ট আমার মত পরিস্থিতিতে পরেনি তারা কখনো বুঝতে পারবে না,
মনে হত যদি বাড়িতে চলে যেতে পারতাম,
কিন্তু পরেই মনে হত পরিবারের কথা আমি চলে গেলে আমার পরিবারের সবার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, আমার একার কষ্ট হচ্ছে হউক বাকি সবাইতো ভাল থাকবে,
ঐদিন গুলোর কথা মনে হলে এখনও চোখ দিয়ে আশ্রু ঝরে, এভাবেই চলে গেল একটি বছর খেয়ে না খেয়ে,
এক বছরে ভাষা শিখে ফেলেছি সেলারী ও বেরেছে কাজ ও শিখে ফেলেছি অনেক,
আশার আলো দেখতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে,
😭😭বাবাকে হারালাম
প্রবাসে ভালই চলছে, ছোট বাড়িটা বড় করে করেছি, বড় ভাইদের পড়াশোনা কমপ্লিট হয়েছে, বোনদের বিয়ে দিয়েছি,
দেখতে দেখতে সাড়ে পাঁচ বছর চলে গেল,
২০০৪ সাল মনটা খুব খারাপ থাকে বাড়িতে যেতে মন চায়, টিক করি বাড়িতে যাব, বাবার জন্য মায়ের জন্য অনেক কিছু নিব, বিশেষ করে বাবার পাঞ্জাবির কাপড় যায়নাযাজ কম্বল, সবার জন্য অনেক কিছু কিনে ২০০৪ এর শেষের দিকে ৬ বছর পর বাড়িতে যায়, অনেকেই আসে এয়ারপোর্টে,
আমার চোখ শুধু মা বাবাকে খুঁজেছে,
বাবা মা কে দেখতে পাচ্ছি না, সবাই বলল বাবা মা বাড়িতে আছে বয়স হয়েছে তো তাই এয়ারপোর্টে আসেনি, আমি ও চিন্তা না করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাড়িতে ডুকেই দেখি মা অপেক্ষা করছে আমার জন্য, আমাকে দেখা মাত্র জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগল, আমি মাকে বললাম আমি তো চলে এসেছি কান্না করতে হবেনা, মা আরো বেশি কান্না করতে লাগল আমিও মা কে এতো দিন পরে দেখে কান্না করতে লাগলাম, জিজ্ঞেস করলাম বাবা কোথায়?
(এতোটুকো লিখার পর কান্নার জন্য আর লিখতে পারছি না)
বাবার কথা জিজ্ঞেস করাতে মা সহ সবাই চোপ হয়ে গেল,
আমার প্রশ্নের উত্তর আমার প্রতিবেশী কেউ জন দিলেন,
তার উত্তর আমার মন আমার মস্তিষ্ক আমার কান যেন বিশ্বাস করতে পারছে না,
সে বলছে তোমার বাবা গত সারে তিন মাস আগে মারা গেছেন, তুমি শান্ত হয়ে বস, আমি তোমাকে বলছি সব, আমি বসে পড়লাম যেখানে ছিলাম সেখানেই, আমার চোখে যেন অন্ধকার দেখছি,
আমার চোখ দিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু ঝরছে,
সে বলে যাচ্ছে আমাকে জানানো হয়নি কারণ আমি বাবাকে বেশি ভালবাসতাম, আমাকে জানালে বিদেশের মাটিতে আমি যদি অসুস্থ হয়ে পরি তাই,
আমার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,
বাবা মারা যাওয়ার সময় আমাকে জানালে হয়তো আমি বাবাকে শেষ দেখাটা দেখতে পারতাম,
মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে তার প্রিয় মানুষ মারা গেলে সেই খবরটা লুকিয়ে রাখতে পারে,
মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে বাবা মারা যাওয়ার পরও ছেলেকে খবরটা দেয়নি, খবরটা দিলে আর কিছু না পারি বাবার জন্য দোয়া তো করতে পারতাম!
আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম পরিবারের মানুষ গুলো কে দেখতে চেষ্টা করছি আসলেই কি তারা মানুষ?
কিছু দিন কেটে গেলো বাবার সুখে।
💕💕বিয়ে
বাবা চলে যাওয়ার পর মা ছোট বোন সহ সবাই এক সাথে থাকত, ভাইরা সবাই আলেদা হয়ে গেল, আমি যা কিছু পাঠিয়েছি তার কিছুই নেই সবাই তার যার নামে করে ফেলেছে,
সবাই আরো প্রশ্ন করে আমি তাদের জন্য কি করেছি? আমি আসার সময় যা কিছু নিয়ে এসেছি সব কিছু দিয়ে ছোট বোনটাকে বিয়ে দিয়ে দিলাম,
আমি আবার চলে যাব, বড় ভাই শিক্ষকতা করে, বড় ভাবি ও শিক্ষিকা, অন্য সব ভাইরা ও যার যার মত করে আলেদা হয়ে গেল, মাকে নিতে কেউ রাজি না, ছোট বোনটার ও বিয়ে হয়ে গেছে মাকে কার কাছে রেখে যাব।
চিন্তায় পড়ে গেলাম, একদিন সন্ধা বেলায় মা আমাকে ডেকে বললো তোকে বিয়ে করিয়ে দিব। আমার আর একা থাকতে হবেনা, আমি ও ভেবে দেখলাম ঠিক ই আছে, মায়ের পছন্দ করা পাত্রিকে বিয়ে করে ফেললাম।
💞💞 জীবনের প্রথম উদ্দোগ
ক্লাস টুতে পাশ করে পড়ালেখা ছেরে দিলাম বাবার কাজে সাহায্য করছি তবুও পরিবারের অবস্থা ভালো হচ্ছে না,
কি করতে পারি চিন্তা করে রাস্তার পাশে ছালার চট বিছিয়ে বাচ্চাদের খেলনা চিপস এগুলো এক দোকানদার থেকে এনে বিক্রি করতে শুরু করলাম,
আস্তে আস্তে সেটা বড় হতে লাগল,
ছালা থেকে এখন একটা টং দোকানে পরিবর্তন হয়ে গেল,
ভালই চলছিল কিন্তু পরিবারের সদস্য সবাই বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের পড়াশোনার খরচ ও বাড়তে থাকল, এভাবে চলছে না কি করব কি করব চিন্তা করে প্রবাসে চলে প্রবাসে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম,
💞💞 ভালোবাসা পরিবারে যুক্ত হওয়া ও আমার পাল্টে যাওয়া,
২০১৮ সাল থেকেই আমি প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ইউটুবে ভিডিও ফলো করতাম,
স্যারের এমন কোনো ভিডিও নেই যেখানে আমার কমেন্ট নেই, আমি অনলাইন সম্পর্কে খুবই কম বুঝি তাই নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি ১৬তম ব্যাচে এসে রেজিস্ট্রেশন করি,
কিন্তু আমি প্রিয় স্যারের ভিডিও ফলো করে স্যারের একটি কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রবাসে থেকেই গাজীপুরে একটি বাড়ি ও একটা মিনি গার্মেন্টস করেছি, যেখানে বর্তমানে ৫জন মেয়ে কাজ করতেছে, আমার মিনি গার্মেন্টসে ছোট ছেলে মেয়েদের সব ধরনের জামা তৈরি হয়,
আলহামদুলিল্লাহ প্রিয় স্যারের শিক্ষা নিয়ে আমি ক্লাস টু পাস একজন মানুষ সফলতার পথে হাঁটছি সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
💞💞অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে যিনি আমাদের সফলতার পথ দেখাচ্ছেন সেই জন্য প্রিয় স্যারের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।
এবং অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই প্রিয় নুরুন্নবী রিয়াজ ভাইকে যিনি আমাদের উৎসাহিত করার জন্য এই বেস্ট লিখার চমৎকার আইডিয়াটি শেয়ার করেছেন।
আরো ধন্যবাদ জানাই প্রিয় Md Iqbal hossen ভাইকে, যিনি ভাল লিখা গুলো ধৈর্য সহকারে প্রতিদিন সোড ঘোষণা করে আমাদের জীবনের গল্প লিখার আগ্রহ বৃদ্ধি করছেন প্রতিনিয়ত,
আরো ধন্যবাদ জানাই যারা আমার এই পোস্ট টি ধৈর্য সহকারে পড়বেন তাদের প্রতি,
সবার ভালোবাসা ও দোয়া প্রত্যাশী,
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৫
Date:- ২৪/১২/২০২১ইং
মাসুদ রানা
ব্যাচ নং ১৬
রেজিস্ট্রেশন নং ৭৪৩১১
জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ
থানাঃ রুপগঞ্জ
বর্তমান সৌদি আরব রিয়াদ প্রবাসী।