**মেয়েদের স্বাধীনতা কোথায়?**
আসসালামু আলাইকুম
সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মহান রাব্বুল আলামীনের উপরে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই মহামারির মধ্যে আমাকে সুস্থ রেখেছেন তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। তারপর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মা-বাবা ভাইয়ের প্রতি যারা আমাকে তাদের আদর্শে বড় করেছেন এর জন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।তারপর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সবার প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন।
**মেয়েদের স্বাধীনতা কোথায়?**
একটা মেয়ে জন্ম হওয়ার পর থেকে মা-বাবার আদরে বড় হতে থাকে, ছোট থাকতে সবাই তাকে অনেক ভালোবাসে,অনেক আদরও করে, অনেকে আবার অনেক কিছু কিনে দেয়। তারপর যখন মেয়েটার বয়স ৯/১০ বছর হয় তখন থেকেই মেয়েটার অনেক ভুল ধরা শুরু হয়। এদিকে যাবা না, ওদিকে যাবা, এর সাথে মিশবা না, ওর সাথে মিশবা না।অনেক কিছু। যখন মেয়েটার বয়স ১২ বছর পার হয়ে যায় তখন মনে হয় মেয়েটা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলছে তখন তার প্রতিটা জিনিসে দোষ ধরা শুরু হয়ে যায়। কারণ সে তো বড় হয়ে গেছে। পরিবার তাকে অনেক দেখাশোনা করা শুরু করে দেয় কারণ সমাজের কিছু কিছু লোক আছে যারা শুধু দোষ খুঁজে বেড়ায়। যখন মেয়েটার বয়স ১৮ বছর হয় তখন তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু কিছু পরিবার পাগল হয়ে যায়,সমাজ তখন আরও দোষ ধরা শুরু করে দেয়।কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই মেয়েটা তখন আরও খারাপ হয়ে যায় কারণ মেয়েদের তো ছেলে বন্ধু থাকতে নেই।তখন ঘুরতে গেলেও বলে মেয়েটার স্বভাব চরিত্র ভালো না।
একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা আমি ঘুরতে যাবো।যদিও খুলনার বাহিরে কোথাও যাওয়া হয় না।তবে ইচ্ছে করতিছে ঘুরতে যেতে আমাকে কি একটু ঘুরতে যেতে দিবা? তখন মা বললো বিয়ের আগে কিসের ঘোরাঘুরি? বিয়ের পর স্বামীর সাথে ঘুরবি। শুনে অবাক হয়ে গেছি। সাথে সাথে মাকে বললাম আচ্ছা মা আমার যদি বিয়ে না হয় তাহলে কি হবে? মা বললো বাজে কথা না বলে কাজ কর যা। আমি রাগ করে চলে গেলাম, মা বুঝতে পারলো আমি রাগ করেছি। কিছুক্ষণ পর মা আমাকে বললো, এখন তো তুই কিছু করিস না,এখন যদি তুই বাড়ির বাহিরে যেয়ে থাকিস কতো মানুষ কতো কথা বলবে এটা তুই বুঝবি না, শুধু রাগ করাটাই বুঝবি।যখন আরও বড় হবি তখন বুঝবি।আসলে তখন আমি কিছু করতাম না যে তার কথা বলে বাহিরে যাবো।কারণ বিয়ের আগে বাহিরে যাওয়াটা কেউ ভালো ভাবে নেয় তাই আর বাহিরে যাওয়া হয় না।
তারপর আমার এক বান্ধবীর সাথে একদিন আমার দেখা হয়েছে তখন ওকে বললাম কিরে বিয়ের পরের জীবনটা কেমন কাটতিছে? তখন ও বললো সব কিছুতেই বাঁধা, বিয়ের আগের জীবনটাই ভালো ছিলো অনেক স্বাধীন ছিলাম।এখন সব কিছু তেই বাঁধা। এখন কোথাও যেতে চাইলেও বেশি কথা বলে। বলে বিয়ের আগে যেখানে ইচ্ছে সেখানে গেছো এখন আর কোথাও যেতে পারবা না।অথচ বিয়ের আগেও মা-বাবা কোথাও যেতে দিতো না,বলতো বিয়ের পরে যাবি আর এখন বলে বিয়ের পরে শুধু সংসার করো, ঘোরাঘুরি বাদ দেও। ছেলে মেয়ে মানুষ করো। ছেলে মেয়ে বড় হোক তারপর না হয় ঘুরতে যাবা।ওর মুখে কথা গুলো শোনার পরে খারাপ লাগলো।যে মেয়েরা আসলেই অনেক অসহায়।
এরপর ভাবলাম যে যাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করবো যে তাদের জীবনটা কেমন? তাই সামনের বাসার আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা আন্টি আপনি জীবনে কেমন স্বাধীনতা পেয়েছেন? তখন আন্টি বললো মেয়েদের কোন স্বাধীনতা নেই যদি মেয়ের কোন যোগ্যতা না থাকে, নিজের পায়ে না দাঁড়ায় তাদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই। তখন বললাম কেমন? তখন আন্টি বললো জীবনে ইচ্ছে ছিলো অনেক পড়াশোনা করে চাকরি করবো তবে পরিবার বললো মেয়ে মানুষের কোন পড়াশোনার দরকার নাই, তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও পড়াশোনা করতে পারলাম, কোথাও যেতে চাইলেও যেতে দিতো না কারণ বিয়ের আগে মেয়েদের ঘুরতে গেলে লোকে খারাপ বলবে এই ভেবে,বিয়ে করলাম ভাবলাম বিয়ের পরে হয়তো জীবনটা সুন্দর হবে তবে দেখলাম তাও না।কোথাও যেতে চাইলে বলে ঘোরাঘুরি বাদ দেও, ছেলে মেয়ে বড় করো।ছেলে মেয়ে বড় হলে তারপর না হয় ঘুরতে যাবা ছেলে মেয়ের সাথে। বললাম ঠিক আছে তাহলে তাই হবে। সংসার সামলানো,ছেলে মেয়ে বড় করলাম, যে শেষ বয়সে হয়তো ছেলের সাথে ঘুরতে যাবো। ছেলে মেয়েও বড় হলো। একদিন ছেলেকে বললাম বাবা আমাকে একটু দুরে ঘুরতে নিয়ে যাবি? আমার না ঘুরতে যেতে অনেক মন চায়। তখন ছেলে হেসে দিয়ে বললো মা তুমি না। মজা করার সময় পাও না। আমি বললাম কিসের মজা আমি তো একটু ঘুরতে যাওয়ার কথা বললাম। তখন ছেলে বললো। বিয়ের পর তো বাবার সাথে অনেক ঘুরছো এখন এই বয়সে কেউ ঘুরতে যায় নাকি? এখন নামাজ পরবা আমাদের জন্য দোয়া করবা। তা না করে এখন ঘুরতে যাওয়ার কথা বললা। তখন মনে হলো আমার জীবনের স্বাধীনতা কোথায়? আন্টি তারপর থেকে আর কখনও কোথাও যেতে চাইলো না।বলে আন্টি কেমন যেনো কান্না করে দিলো। তার কথা শুনে আমার চোখেও পানি চলে আসলো। আন্টিকে আর কিছু না বলে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে মাকে বললাম আচ্ছা মা মেয়েদের জীবনটা এমন কেনো? মা বললো কেমন? আমি বললাম এই যে বিয়ের আগে বাঁধা, বিয়ের পরে বাঁধা।কোন কিছু করতে চাইলেও বাঁধা। মা বললো এটা হয়ে আসতিছে তবে এখন তো অনেক মেয়েরাই সফল হয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, তখন আমি বললাম তাহলে আমি কেনো এভাবে আছি আমিও নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তখন মা বললো তোর ইচ্ছে থাকলেও সমাজের জন্য পারবি না, অনেক বাঁধা আসবে। আমি বললাম দেখি চেষ্টা করে। ঠিক তখনই কি করবো কি করবো ভাবতে ভাবতে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে একজন ইনভাইট করলো। দেখতে লাগলাম স্যারের সব কিছু। যেনো স্বপ্নের মতো স্যার আমার জীবনে আসলো।স্যারের সব কিছু মেনেই জীবনটাকে সাজালাম ঠিক তখনই সমাজের অনেক মানুষ বলতে শুরু করলো মেয়েকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাবসা করাচ্ছো? তখন অনেকেই অনেক কিছু বললো তবে স্যারের অনুপ্রেরণায় কারো কোন কথা গায় নিলাম না, নিজের মতো নিজের কাজ করে গেলাম। কারণ আমিও স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই।আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি কোথাও গেলে কেউ কিছু বলে না কারণ সবাই জানে আমি বিজনেস এর কাজে বাহিরে যাই। প্রতিটা মেয়েরই স্বাধীনতা বলে কিছু আছে তবে সমাজ সেইটা করতে দেয়, পরিবার স্বাধীনতা দিতে চাইলে সমাজের জন্য পারে না, বিয়ের পরেও মেয়েরা স্বাধীনতা পায় না।কেমন যেনো বন্দী একটা জীবন পার করে। সমাজ তো কতো কিছুই বলবে তবে সমাজ কিন্তু আপনাকে খাওয়াবে না তাই এমনভাবে প্রতিটা মেয়ের জীবন গড়া উচিত যাতে সমাজের জন্য কিছু করতে পারেন। তখন দেখবেন সমাজ আপনাকে বাহবা দিবে তাই আসুন স্যারের কথা মতো সবাই আমরা জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাই। স্যালুট স্যারকে যিনি আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৬
Date:- ১৭/১১/২০২১ ইং
লিমা খাতুন
৯ম ব্যাচ
রেজিঃনং- ১২৫৯৮
জেলা খুলনা
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
সদস্য সাপ্তাহিক হাট মনিটরিং টিমের
সদস্য কুইজ টিমের
পেশা- শিক্ষিকা+ উদ্যোক্তা