দ্বিতীয় জীবন
১!!
আজ ৫টা বছর ধরে অসুস্থ আমি।
ছোট জীবনটার খুব দুর্বিষহ কিছু মুহূর্ত দেখেছি আমি। আমার জীবনের কিছু সময় আর পাঁচটা মেয়েদের মত নয়। আলাদা একটু বেশিই আলাদা।
আমি আজ আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অতীতের ঘটনা বলতে চাই। আমি যখন প্রেগনেন্ট ছিলাম সে সময়টার কিছু কথা সবাইকে বলতে চাই।
মা হওয়াটা প্রতিটা মেয়ের কাছেই অনেক খুশির, এবং আনন্দের বিষয়। একজন নারী কেবল একটি সন্তান জন্ম দেয় না বরং সেসময় সে নিজেও নতুন করে জন্ম নেয়। আর সেটা হয় দ্বিতীয় জীবন। এটাকে আমার লেখা ডায়েরিও বলতে পারেন।
আমার দ্বিতীয় জীবনের পথ চলা শুরু হয়েছিল,
আমি যশোর থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছে ছিলাম বিকালে। তারপর থেকে পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। আমি ডাক্তারকে ফোন দিলে, উনি আমার সব শুনে প্রেগনেন্সি টেষ্ট করতে বলেছিল। আমার হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবুও আমি বহু কষ্টে আমার বাসার কাছের এক ফার্মেসি থেকে একটা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট কিনে সঙ্গে সঙ্গে ইউরিন টেষ্ট করলাম। আর প্রেগনেন্সি টেস্টের রেজাল্ট দেখে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কী থেকে কী করব কাকে বলব খুশিতে ভেবে পাচ্ছিলাম না।
কিন্তু আমার মা হবার খবরটা সবার আগে জানার অধিকার একমাত্র আমার স্বামীর। আমি দ্রুত আমার স্বামীকে জানালাম। প্রেগনেন্সি টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ দেখে প্রথমে আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। গত তিন বছর যাবত আমার বেবি কনসিভ করছিলো না। হুট করে এমন খুশির খবর পেয়ে আত্মহারা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আমার প্রথম দুটো সন্তান এবরশন হবার পর থেকে আমার বাচ্চা কনসিভ করছিল না। যখন বাচ্চাটা আমার পেটে আসে তখন বাচ্চার গ্রোথ হচ্ছিলোনা বলে ডি এন সি করা লেগেছিলো । দীর্ঘ তিনটা বছর পর আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। সবাই বোধহয় খুব খুশি ছিলো।
পরেরদিনই ডাক্তারের কাছে গেলাম, তিনি আবার প্রেগনেন্সি টেস্ট করলো। আল্লাহর রহমতে এবারও রেজাল্ট পজেটিভ। আমার আর আমার স্বামীর খুশি যেনো আকাশ ছোঁয়া। ডাক্তার ঐদিনই বাচ্চার প্রটেক্ট করার জন্য ইনজেকশন দিয়ে দিলো। সাথে অনেক মেডিসিন এবং পূর্ণ বেড রেস্ট। আর প্রতিসপ্তাহে একটা করে ইনজেকশন দেয়া লাগবে। যেটার জন্য আর আলাদা করে ডাক্তার কাছে যেতাম না। আমার স্বামী প্রতি বুধবার ইনজেকশনটা আমাকে পুশ করে দিতো।
আমি ছোট বেলা থেকে ইনজেকশন প্রচন্ড ভয় পেতাম। সেই আমি প্রতি সপ্তাহে একটা করে ইনজেকশন নিচ্ছিলাম। ইনজেকশনটা হিপে দেয়ার ফলে প্রচন্ড ব্যথা হত! পরের সপ্তাহেও ব্যথা সারতো না। প্রতি সপ্তাহে এপাশ ওপাশ করে দিতাম। ইনজেকশনটা পুশ করার পর ভয়ানক যন্ত্রনা হতো। সেই সপ্তাহ ঐ পাশ ফিরে ঘুমাতে পারতাম না। এত যন্ত্রনা আর কষ্টের পরও আমি খুশি ছিলাম। কারণ আমি মা হবো তাই।.......
✍️লেখা-ফারহানা কেয়া।
২য় জীবন২!!
২য় মাসে ডাক্তার যখন ইউ এস জি করতে দিল তখন আমার মধ্যে বেড়ে উঠা আরেকটা প্রানের হৃদয়ের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম প্রথমবার। খুশিতে আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানিয়েছিলাম।
ইউ এস জি করে বাসায় ফিরে আসার পরও আমার কানে বারবার আমার অনাগত সন্তানের হৃদয়ের ধ্বনি ভেসে আসছিলো। বিষয়টা যতবার ভাবতাম ততবার আমি আনন্দে আনন্দিত হচ্ছিলাম।
কত প্রতিক্ষার পরে আমি মা হতে যাচ্ছি। এটা আমার জন্য ঠিক সুখের নয়, এটা আমার জন্য স্বর্গীয় অনুভূতি ছিলো। প্রতিটা পদক্ষেপ অনেক চিন্তা করে ফেলতাম। আমি ছোটবেলা থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যপারএ অনেক বাচবিচার করতাম। সবসময় এটা খাবনা ঐটা খাব না। কিন্তু যেদিন থেকে জানলাম আমি মা হবো সেদিন থেকে যে খাবার কেউ জোর করেও খাওয়াতে পারিনি তাও খেয়েছি। কারণ আমার সন্তানের সুস্থতা মুখ্য আমার কাছে।
রোজ একটু একটু করে অনুভব করতাম আমার ভেতরে তিলে তিলে বেড়ে উঠা প্রাণটাকে। তখন আমার চিন্তার বিষয় ছিল আমার অনাগত সন্তান।প্রতিনিয়ত তাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাতে যেনো আলাদা প্রশান্তি পেতাম। ভালো লাগত তাকে নিয়ে ভাবতে।
ভাববো না কেন? আমার দুটা বেবি এবরশন হবার পর, অনেক ডাক্তার দেখিয়ে, মেডিসিন নিয়েও বাচ্চা কনসিভ করছিলো না। সকল চেষ্টা বিফলে যাচ্ছিল। তখন একদম নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার দেখা মতে আর কোন আলোর দিশা পাচ্ছিলাম না। তখন একমাত্র ভরসা ছিলো সয়ং সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহকে মন থেকে ডাকলে তিনি অবশ্যই সাড়া দেন।
২০১২ সালের জুন মাস,
আমরা মহান আল্লাহর কৃপা পেতে উমরা হজ্জ পালন করতে গিয়েছিলাম। আর সত্যি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে ২০১৩ সালে আমি আবার কনসিভ করলাম। আমি আল্লাহর শুকরিয়া কিভাবে আদায় করবো বুঝতে পারছিলাম না,, বাচ্চা কন্সিভ করার পর থেকেই নামাজ এক ওয়াক্তও মিস করিনি আর সারাদিন কোরআন তেলোয়াত করতাম আলহামদুলিল্লাহ । নিয়মিত নামাজ, রোজা করা কোরআন তেলায়ত করা আমার অভ্যাসে
পরিনত হয়েছিলো। বাচ্চা কনসিভ করার পর যেনো আল্লাহর নাম নেয়া আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তার শুকরিয়া কী করে আদায় করব বুঝতে পারছিলাম না।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৬
Date:- ১৭/১১/২০২১ ইং
✍️ফারহানা কেয়া
🌿নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন।
নামঃ-Farhana keya
ব্যাচঃ-16
রেজিষ্ট্রেশনঃ-77311
জেলাঃ-ঢাকা
ব্লাডগ্রুপঃ-AB+
মোবাইল নাম্বারঃ-01402275340
আমার পেইজ- Karima's creation