আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ
____বিসমিল্লাহির রহমানুর রাহিম_____
___আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ___
____সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য, শান্তি বর্ষিত হোক নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর।__________
______কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যার প্রচেষ্টায় আমরা এমন একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি। যেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ভালো মানুষ, একটি সুশীল উদ্যোক্তা সমাজ ও পরিবেশ। যার অনুপ্রেরণা আজ আমরা নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের অনুপ্রেরণা উৎসহ জীবন কাহিনী আনন্দ বিনোদন লিপিবদ্ধ করার সাহস পেয়েছি। পেয়েছি লক্ষ মানুষের উৎসাহ অনুপ্রেরণা-ও ভালবাসা__________
___আমার জীবনের গল্প________________
____
আমার পরিবার ______
আমরা ৫ ভাই ৩ বোন
আমি সবার ছোট , আমার বাবা ছিলেন এক জন কৃষক। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন।
আমার জন্ম হয় ১৯৯৪ পাবনা জেলার, সদর থানার রাজাপুর গ্রামে। তখন আমার বড় ভাই গ্রামে গ্রামে বাদাম বিক্রি করে। বাবার কাজ ও প্রতিদিন হয় না। আমার মা আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে ধান শুখানোর কাজ করে কিছু ধান পেতো। মায়ের ধান শুখানো ধান আর বাবার কিছু কিছু কাজের অল্প কিছু টাকা এই দিয়ে আমাদের সংসারে ১০ জনের দুই বেলা খাওয়া হতো কনোমতো। এভাবে চলছিল আমাদের সংসার।
তার কিছু দিন পর বাবা বড় ভাই কে বিয়ে দিলো।
আমাদের নতুন ভাবি এলো তারপর বেশ কিছু দিন পর বড় ভাই সংসার থেকে আলাদা হয়ে গেল।
বাবাও ইস্টোক করে অসুস্থ হয়ে পরলো।
তখন আমার মেজো ভাই ৮ম শ্রেণিতে পড়ে।
মেজো ভাই এর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল।
সে ফার্নিচারের কাজে লাগলো
আমার ৩ নাম্বার ভাই ও দর্জির কাজে লাগলো।
আমার বড় বোন কে ৪ শতাংশ জমি দিয়ে বিয়ে দিল বাবা। তার পর
আমার মা মুরগি ও ছাগল পালতো ।
মুরগি ও ছাগল বিক্রি করে একটা গরু কিনলো বাবা।
সেটা পেলে পুষে বড়ো করলো
আবার সেটা বিক্রি করে আমার মেজো বোনকে বিয়ে দিলো।
এর পরে মেজো ভাই বিয়ে করে সংসার থেকে আলাদা হয় তার কিছু দিন পরে লুয়া ভাই ঢাকা চলে যায় গার্মেন্টসে কাজে।
কিছু দিন পরে ওখান থেকে একটা মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে
তখন বাবা ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয় এবং সংসার থেকে আলাদা করে দেয়।
এর পর ছোট বোন কেও বিয়ে দিয়ে দেয়।
মা বাবা আর আমরা দুই ভাই এক সাথে
বাবা আর কাজ করতে পারে না।
সেজো ভাই ইটের ভাটায় কাজে লাগে প্রতি দিন ১৫০ টাকা করে পেতো।
আমার ছাত্র জীবন -----------------
_আমাদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে যাই আর বাড়িতে এসে গুলি খেলতাম সারাদিন ।
আমি স্টুডেন্ট হিসেবে খুবি দূর্বল ছিলাম আমার রোল ছিল ৩৪
ক্লাসে পড়া ও পারতাম না। আমার সহপাঠীরা আমাকে নিয়ে হাসা হাসি করতো। স্যার ও ম্যাডামদের হাতে প্রতিদিন বেতের বারি খেতাম।
চতুর্থ শ্রেণির ফাইনাল পরিক্ষায় ৩৩, ৩৪, ৩৬ নাম্বার পেয়ে পাশ করে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠি।
আমার ছাত্র জীবন ছিল অনেক কষ্টের
আমার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশুনা শুরু হয়ে গেল
তখন আমার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবি খারাপ ।
আমার মা বললেন পড়াশোনা করার দরকার নেই তুই কাজ কর,,,।
তার পড়ে আমি গেঞ্জির কারখানায় কাজ করি আর
পড়াশোনা করি। এভাবেই অষ্টম শ্রেণি পাশ করি।
আমার বাবা মারা গেলো আমার পড়াশোনা ও বন্ধ হয়ে গেলো।।।
জীবনের কঠিন বাস্তবতা-------------------
আমার সেজো ভাই বিয়ে করে শশুর বাড়ি চলে যায় আমাদের ছেড়ে, ঘর জামাই।।
আমি আর মা অসহায় হয়ে গেলাম
আমার মনে পচুন্ড জিদ আসলো যে আমি ব্যবসা করে বড়োলোক হবো।
আমার তো কোনো পুঁজি নেই ।
তখন আমার মাথায় আসলো
আমি ঢাকা গার্মেন্টসে যাবো
ইতি মধ্যে আমি গেঞ্জির মেশিন অপারেটর হয়ে গেছি।
তার পরে আমি মাকে বুঝিয়ে ঢাকায় চলে যাই
আমাদের গ্রামের এক কাকা জিরানি বাজার বিকেএসপির পাশে থাকে৷ ওনার কাছে গিয়ে আমি ওঠি।
ওই কাকাও গার্মেন্টসে চাকরি করে সে আমাকে
গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে দিলো ।
আমি সুইং মেশিন অপারেটিং হিসেবে জয়েন করি।
আমার বেতন ৪৬০০ টাকা,
ওভার টাইম ১৪০০ টাকা,
থাকা খাওয়া বাবদ ৩৫০০ টাকা।
২৫০০ টাকা অবশিষ্ট থাকতো
মায়ের কাছে পাঠাতাম ১৫০০ টাকা।
নিজের খরচ ১০০০ টাকা কাছে রাখতাম
এভাবে ৮ মাস কাজ করি
ওদিকে মা ও কান্না করে যে তুই আমার ছোট ছেলে
বাড়ি চলে আয় বাবা।
আমি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি গিয়ে প্রথমে
এস এস সি পরিক্ষা দিবো।
ঢাকা থেকে চলে আসলাম বাড়িতে
৯ম শ্রেণিতে ভর্তি ও হয়ে গেলাম।
তখন ২০১২ সাল
১৩ তম ব্যচে রেজিষ্ট্রেশন করলাম।
পাশাপাশি জব নিলাম মেকানিক এসিসট্যান্ট
ভাই ভাই গার্মেন্টসে। এটা আমাদের পাবনায়
টি শার্ট তৈরি হয়, মালয়েশিয়ায় বিক্রয় হয় নিজস্ব শোরুমে।
আমি ওই কোম্পানিতে ৮ মাস বিনা বেতনে চাকরি করি।
যাতোয়াত বাবদ আমাকে মাসে ২০০০ টাকা দিতো।
৮ মাস পারে,,,,,,,,,,
কোম্পানির এমডি সবাইকে নিয়ে মিটিং দিলো
মিটিংয়ে এমডি বললেন মালয়েশিয়ার শোরুমে মাসে খরচ ৫ লক্ষ টাকা যে প্রডাকশন হচ্ছে তাতে আমার প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা লচ হচ্ছে।
ম্যানেজার স্যার কথা বললেন
একে একে সবাই কথা বললো।
এর পর আমাকে কথা বলতে বলা হলো
আমি এমডিকে উদ্দেশ্য করে বললাম
স্যার আমি আপনার প্রডাকশন ফুল ফিল করে দিবো
আমাকে ২টা জিনিস দিবেন।
সুইং কনটাক্ট
১৫ দিনের সময়
কিভাবে কনটাক্ট নিবা এমডি বললেন।
পারপিচ ৬ টাকা দিবেন
রাজি হয়ে গেল এমডি
আমাকে বললো কাজ শুরু করে দাও
আমি বিভিন্ন যায়গায় যোগাযোগ করে ২০ জন শ্রমিক যোগাড় করি।
এরপর সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পযন্ত কাজ করি
এভাবেই প্রডাকশন চাহিদা মিটাতে সক্ষম হই।
আরো লোকোবল বারাই প্রডাকশন বারে।
এর ফাঁকে আমি এস এস সি পরিক্ষা দিই
৩.৮ নাম্বার নিয়ে পাশ করি।
কলেজে ভর্তি হই পাশাপাশি কারখানার সুইং লাইন চালাই, সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকের বেতন দিয়েও আমার থাকতো ২০,০০০ টাকা
আমি বিবাহ করি। আমার পরিবারের চাহিদা ও পূরোণ করতে পারি।
আমার সাংসারিক চাহিদা বাড়ছে ।
তিন বছর চলেগেলো এভাবে
আমার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসে তখন আমি ভাবলাম
এর পাশাপাশি নিজের কারখানা করবো।
আগের দিন চিন্তা করি পরের দিন এসে ম্যানেজার এর
কাছে আমার আইডিয়া টা বলি ।
তখন সে বললো আমাকে পাটনার নাও
ম্যানেজার এর সাথে অনেক কথা হল
আমার আরো আত্মবিশ্বাস বেরে গেলো।
আমরা দুই জন ৬ লক্ষ টাকা মুলধন নিয়ে
১৫ টা মেশিন দিয়ে শুরু করি।
প্রথম সপ্তাহে ৩ হাজার পিচ টি শার্ট প্রডাকশন
করি। পরের সপ্তাহে গিয়ে ৫ হাজার পিচ প্রডাকশন করি এভাবেই দিন দিন প্রডাকশন বারাই ।
এক সময় আমি ওই কনটাক্ট সুইং লাইন ছেরে দিই
আমার ব্যবসা খুব ভালো চলছে।
আমি আরও একটা ব্যবসা বারাই গার্মেন্টস এক্সোসোরিজ এর দোকান করি আমাদের পাবনায়
ওটা এক বছর চালাই আমি ঠিক ঠাক সময় দিতে না পারায় ৩ লক্ষ টাকা লচ হয়। দোকান ক্লোজ করে কারখানায় মনোযোগ দিই তার পরই আসলো করোনা ভাইরাস সারাদেশ এবং সারাপৃথীবি স্তব্ধ হয়ে যায়
বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা বানিজ্য।
মালয়েশিয়ায় লকডাউন থাকে টানা এক বছরের বেশি। আমার ৪০ লক্ষ টাকা মালয়েশিয়ায় আটকে যায় ।
আমি তখন হতাশ হয়ে যাই
এরপর অনলাইনে আসা।
ইউটিউবে ইকবাল বাহার স্যার এর ভিডিও সেশন দেখে আমি আশার আলো দেখতে পাই
সাথে সাথে ফেইজবুকে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করি
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে।
তারপর
করোনার পাদুর্ভাব কমে যায় লকডাউন শিথিল হয়।
আমি আবার শুরু করি ব্যবসা সম্প্রসারণ ।
এখন আমার কারখানায় ৫০ টি সুইং মেশিন চলে ৮০ জন শ্রমিক কাজ করে প্রতি সাপ্তাহে ১৬ হাজার পিচ টি শার্ট প্রডাকশন করছি।।
আমার স্বপ্ন -----------
আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। আমার স্বপ্ন আমাদের পাবনাতে ৩০০ সুইং মেশিনের কারখানা দিবো প্রতি দিন ১০ হাজার পিচ প্রডাকশন হবে। ৬০০ জন শ্রমিক কাজ করবে ৬ শ টা পরিবারের জিবিকা হবে আমার কোম্পানি থেকে। কিছু টা বেকার সমস্যা দুর হবে সমাজ থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।।
প্রিয় স্যারের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা______
আমাদের প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার সব সময় বলেন আপনারা সকলেই ভলান্টিয়ারিং করেন --নিজেকে লিডার হিসেবে তৈরি করেন। দোয়া রইলো আপনাদের সকলের জন্য এবং আমাদের প্রিয় মেন্টর এর পরিপূর্ন সূস্থ্যতা কামনা করছি।
আমি কাজ করছি ----- টি শার্ট নিয়ে নিজস্ব কারখানায় তৈরি করি মালয়েশিয়ায় সেল করি।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৬
Date:- ১৭/১১/২০২১ ইং
নাম: আব্দুল্লা আল আমিন
আমার প্রতিষ্ঠানঃ আরিয়ান গার্মেন্টস
গ্রুপ: নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন
ব্যাচ: ১৫
রেজিষ্ট্রেশন : ৭২১০২
ব্লাড :B+
ফোন নম্বর ০১৭৩৮১৬০৫০৭
নিজ জেলা: পাবনা