আমার সন্তানের জীবনের গল্প,
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
আস্সালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুগন,
কেমন আছেন সবাই ?
আশা নয় বিশ্বাস আপনারা শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও ভালো আছেন সুস্থ আছেন।
আমি ও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
🥀 শুরুতে লাখ কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যিনি আমাকে সৃষ্টির সেরা মাখ-লুকাইত হিসেবে এই সুন্দর পৃথিবীতে পেরন করেছেন।
আমি আবার ও আলহামদুলিল্লাহ বলে মহান আল্লার প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি যিনি আমাদেরকে করুনার মহামারীর মতো এত কঠিন সময়ের মধ্যেও সুস্থ ও নিরাপদে রেখেছেন।
প্লাটফর্মের প্রতি ভালোবাসা,
"নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশন - এত বড় একটা প্লাটফর্ম সেখানে 3 লক্ষ মানুষ আজীবন সদস্য ও সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষের একটি পরিবার । এখানে যুক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ভীষন গর্বিত মনে করছি ।
আমার মনে করি - মহান আল্লাহতায়লার পরেই আমি আমাদের প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক জনাব Iqbal Bahar Jahed স্যারের প্রতি অনেকে অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যিনি আমাদের সকলের জন্য এত সুন্দর একটি প্লাটফর্ম উপহার দিয়েছেন। যে প্লাটফর্মে বসে মানুষ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাচ্ছে।
যারা কখনো বিজনেস করবে এই ভাবতে ও পারেনি এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে তিনিও এখন উদ্যোক্ত কিংবা বিজনেসম্যান।
আমি একজন মা, বয়স ও অনেক হয়েছে এই বয়সে এসে ও আমি এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আমি ও এখন বিজনেস নিয়ে ভাবছি এবং বিজনেস করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া এই প্লাটফর্মে সবার সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে পেরে আমার যে কি আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না ।
আমার মনে হয় এই প্লাটফর্ম টা আমার জন্য অক্সিজেন' । সকলের সাথে কথা বলা, উপজেলা এম্বাসেডর সবার সাথে সমন্বয় করে মিটআপ করা আমার অনেক ভালো লাগে।
আমি এই প্ল্যাটফর্মের যুক্ত হওয়ার পর আমার কার্যক্রমে পরিপেক্ষিতে আমাকে উপজেলা অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
আমি অনেক মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি এবং এই প্ল্যাটফর্ম এর ব্যানারে কাজ করতে এসে আমি আরো গর্ববোধ করছি ।
আমার জীবন থেকে অনেকটা সময় চলে গেছে, কত কথা যে জমে আছে কত ঘটনা যে ঘটে গেছে এই জীবনে তা বলতে লাগলে রাত দিন ফুরিয়ে যাবে তবু শেষ হবে না ;।
সবাই তাদের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প শোনায়।
💞🥀 সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন,
আজ আমি আপনাদেরকে শোনাবো আমার সন্তানের জীবনের গল্প,,, আশা করছি সবাই একবার হলে ও পড়বেন। ৷ ----🥀(পার্ট ০১)🥀
👉 আমি একজন গর্বিত মা, প্রতিটি মা তার সন্তানকে নিজের চেয়ে ও তার সন্তানকে অনেক বেশি ভালোবাসে, আমি ও তার ব্যতিক্রম নই।
▶️ আমার দু' টি সন্তান, একটি সন্তান গর্ভে ধরেছি আর অন্য সন্তানটির 'মা' হয়ে উঠেছিলাম l দুটি সন্তানই আমার কাছে প্ৰিয় ও অমূল্য l
জবের পারপাসে আমার হাসব্যান্ডের পোস্টিং হয় সেই সুদূর পটুয়াখালী পাথরঘাটা থানাতে । সেই সময় না ছিলো কারেন্ট, না ছিলো ফোন, না ছিল কোন ভালো যোগাযোগের ব্যবস্থা ।
একবার সেখানে পৌঁছলে আর কারো কোনো খবর পাওয়া যেত না। একটা চিঠি পৌঁছাতে লাগত ১৫ দিন থেকে একমাস এভাবেই আমার মেয়ের 4 বছর বয়স পার হলো ।
এই সময়ে আমার হাজবেন্ডের দুই বছরের ট্রেনিং শুরু হয় ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে। তো তিনি চলে যান ট্রেনিংয়ে আর আমি চলে আসি আমার বাবা-মায়ের কাছে l
💥 একদিন হঠাৎই ঢাকায় বেড়াতে যেয়ে আমার বান্ধবীর পরামর্শে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দেই। চাকরিটা হয়ে যাবে ভাবিনি। ইন্টারভিউ ভালো হওয়াতে চাকরিটা আমার হয়ে যায়।
তখন চাকরিতে কি ভাবে জয়েন করবো বুঝতে পারছিনা, কারন আমার মেয়েটাকে বাসায় একা রেখে যাওয়াটা সম্ভব নয় তাই ভাবলাম আমার মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে যাই।
চাকরিতে জয়েন করে চাকরিটা ২ বছর করলাম l দুই বছর পর আমার স্বামী ট্রেনিং শেষে, নানান জায়গায় বদলি হোন, আমি কখনো তার বাসায়, কখনো আমার মায়ের কাছে, এইভাবে আবার মেয়েকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে বড় করতে থাকি l
🥀মেয়ের কথা কি বলবো - খুব শান্তশিষ্ট লক্ষ্মীমন্ত একটি মেয়ে আমার । হয়তো অনেকেই মনে করবে আমার মেয়ে তাই একটু বাড়িয়ে বলছি। সত্যি বলছি মোটেও না। সে সত্যি অনেক শান্ত ও কিউট ছিলো।
মা-মনি আমার ছোটবেলায় কোন জিনিস এর বায়না ধরলে বলতাম আমাদের তো শোকেস নেই মা -কোথায় রাখবো জিনিস পএ।
তখনও বলতো মা আমাদের শোকেস হলে আমরা এই জিনিস কিনব । ও খুব সৌখিন কিন্তু আমি কখনো একটি সোকেস বানাতে পারিনি যে আমার মেয়ের শখের জিনিস গুলো রাখবো বলে । কখনো শখ করে কোন জিনিস বা জামা চাইলে আমি ঠিক আমার বাড়ির পাশের বস্তিতে মেয়েদেরকে দেখিয়ে বলতাম দেখো ওরা আমাদের চাইতে কত কষ্টে আছে, তার থেকে তো আমরা অনেক ভালো আছি তাই না- মা ? তখন সে মনে করতো যে হ্যাঁ ওর অনেক বেশি আছে ওর একটা ভালো জামা ও পাশের বাড়ির ওই মেয়েকে দেওয়া উচিত এই ভাবে ওর মনটা কখনো বাড়তি চাহিদার দিকে আর এগোয়নি.। সে ছোট থেকে বড় হতে থাকলেও খুব দ্রুত যেন সবকিছু বুঝতে শিখলো l
🥀 আমাদের যেহেতু চাকরির লিমিটেড ইনকাম এবং একসঙ্গেই টাকাটা হাতে আসে তাই আমরা একটা বাজেট করে খরচ করতাম খাতায় লিখে রাখতাম, ওকে দিয়েও লেখানো হত । সেই বাজেট করার হিসাব রাখার সিস্টেম টা ওর ভিতরে একদম বসে গেছে সুন্দরভাবে ।
কোন কিছু চাইলেই সাথে সাথে না পাওয়াতে তার ধৈর্য্য সহ্য শক্তিও অপরিসীম l
একটি কথা বলে রাখি আমার গর্ভে আর কোন সন্তান আসেনি । কিন্তু বহু মানুষের বহু কথা শুনেছি, কেন একটি ছেলে নিচ্ছি না, ছেলে না হলে ভবিষ্যতে আমাদেরকে কে দেখবে ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষের কথায় অনেক কষ্ট পেতাম কিন্তু আমার কখনো সন্তানের জন্য হাহাকার হয়নি ।
💥 আমার মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় আর নানান দিকে না ঘুরে দেশে আসি বাড়ির পাশেই গার্লস স্কুল সেখানে ক্লাস নাইনে ভর্তি করে দেই l মেয়েটার শরীর অনেক দুর্বল ছিল আগে থেকেই।
পড়াশোনাটা করতে খুব দুর্বল ভাবেই এসএসসিতে ভাল রেজাল্ট করল ফার্স্ট ডিভিসনএ ৫ টা লেটার নিয়ে । পারিপার্শ্বিক নানান কারণে আমি আর দেশে থাকতে চাই নাই একলা একলা মেয়েকে নিয়ে।
তাই তাকে রাজশাহি নিউ ডিগ্রী গভমেন্ট কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি করে দিলাম এরপর সেখান HSC পাস করল l এই সময় তার বাবার পোস্টিং চিটাগাং হলো । আমি ঢাকা, চিটাগাং, রাজশাহী জব করলাম দুই বছর l এর পরে মেয়েটাকে বললাম ঢাকা তে পড়াশোনা করতে l
পড়াশোনা তো অবশ্য করতেই হবে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এটা ছিল আমার অঙ্গীকার । কারণ আমি হাড়েহাড়ে বুঝেছি আত্মমর্যাদা ও অর্থকষ্ট কাকে বলে এবং কখন যে কোন সমস্যা আসবে কে জানে ।
ঢাকাতে এসে ন্যাশনাল হোম ইকোনমিক্স কলেজে নিউট্রিশন ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হল অনার্সে, আলহামদুলিল্লাহ অনার্স ও মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে সে পাশ করলো।
তার পর সে চাকরি নিল একটি এনজিওতে l বেশ কিছু দিন সেখানে চাকরি করার পরে শমরিতা হসপিটাল এর পুষ্টিবিদ হিসেবে জয়েন করে । চাকরির মাঝেই আমার মেয়ের হঠাৎ করে বিয়ে দেওয়া হয়, আলহামদুলিল্লাহ । ছেলেটি ফ্রান্সে থাকে । জামাই যেহেতু বাইরে থাকে সে এর মধ্যে আরেকটি মাস্টার্স করলো চাকরির পাশাপাশি l
💥আমার মেয়ের একটি বিশেষ দিক আমি লক্ষ্য করে মাঝে মাঝে অবাক হতাম। এই যুগের মেয়েদের মত সে কখনো বিলাসিতায় গা ভাসায় না, ধৰ্মভীরু,
ধৈর্যশীল, মিতব্যয়ী, আদর্শবতী , বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যত্নশীল ও আন্তরিকতা পূর্ণ l তার সেই পার্সোনালিটি দেখে মা হিসেবে নিজেকে অনেক গর্বিত মা মনে করি।
আমি মনে করি প্রতিটা মা তার সন্তানকে যদি ছোট বেলা থেকেই সঠিক সু-শিক্ষা দিয়ে বড় করে তাহলে সন্তান তার পিতা মাতাকে কখনো অবহেলা অসম্মান করবে না। সে ধার্মিক ও সুশীল ও অসহায় মানুষে প্রতি বিনয়ী হবে।
সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন, আমার এই লিখাটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে তাই গল্পের বাকী অংশ টুকু আগামী কাল লিখবো ইনশাআল্লাহ। আমার লিখাটি পড়ে কে কি বুঝলে কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনারা সকলকে পড়ার অনুরুধ রইলো।
ভালো থাকবেন সবাই আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্যে ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
আল্লাহ হাফেজ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৫
Date:- ১৫/১১/২০২১ইং
↔️ওয়ারেক্বা বিনতে ওয়ালী
↔️ব্যাচ নং ১১
↔️রেজিস্ট্রেশন নং ১৯৩০০
↔️উপজেলা এম্বাসেডর
↔️ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া
↔️ পেইজ লিংক
https://www.facebook.com/evergreenbabymomshop