আমার জীবনের গল্প
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🥀🥀🥀🥀🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🥀🥀🥀🥀
💕আমার পরিচয়💕
আমি সালাউদ্দিন বেপারী। আমার বাড়ি রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ থানার ছোট্ট গ্রাম ২ নং বেপারী পাড়া। আমার জর্ন্ম নিজ গ্রামের নিজ বাড়িতেই। আমরা ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট।
💕আমার পরিবার💕
আমার বাবা একজন কৃষক ও পাশাপশি গ্রামের একজন সৎ মাতব্বর । মা গৃহিণী।
আমাদের বাড়ি গ্রামের এমন এক জায়গায় যা আগে পদ্মা নদীতে বার বার বিলীন হয়ে যেত। একটা কথা বলে নেই অনেকের অজানা থাকতে পারে নদীর একপাশ ভাঙ্গলে নদীর বিপরীত কূলে মাটিতে ভরে চর পরে। আমাদের জমিটা ২ কূলেই ছিল,তাই আমাদের এক পাশ বা এক কূল ভাঙ্গলে আমার বাবা আর কাকারা অন্য কূলে বাড়ি করতো। আমার বাবার মুখে শুনেছি এই নদীর কারনে আমাদের ৭-৮ বার বাড়ী ভাঙ্গতে হয়েছিলো। আমাদের,১টি ট্রলার ছিলো। আমার কাকিমার মুখ থেকে শুনেছি,
আমাদের প্রচুর অভাব ছিল। ২ টা ছনের ঘর ছিল। আমার যখন জন্ম হয় তখন আমার বড় ভাই তখন এস,এস,সি তে পড়তো।
ঘরে তেমন খাবার ছিলো না কখনো আধা খেয়ে, বা না খেয়ে আমাদের কাটাতে হতো । তখন বিদ্যুতও ছিল না। কেঁরোসিন তেল দিয়ে হাঁরিকেন জ্বালাতে হতো,সেই তেল টুকো কেনার সামর্থ ছিলনা বাবার । যে টুকো থাকতো সেটা দিয়ে আমার ভাই রাতের লেখাপড়া করতো। মাসের একটা সময় জোৎস্না উঠতো। রাত্রের সেই জোস্নার আলোতে বড় ভাইয়া লেখাপড়া করতো।বড় ভাই সারাদিন মাঠে কাজ করতো রাতে যতটুকু সময় পেত লেখাপড়া করতো। এভাবেই শত কষ্টের মধ্যে কখনো মাঠে কাজ করে, কখনো লজিংয়ে থেকে অবশেষে বড় ভাই তার ডিগ্রি শেষ করেন।
আমার বাবাকে একদিন বললাম, আচ্ছা বাবা দাদু মাতব্বর ছিলো,তুমি ও মাতব্বর তাহলে জমি তো অনেক থাকার কথা। মাতুব্বর দের নাকি অনেক জমি থাকে,টাকার মালিক হয় তোমরা নেই ক্যানো। বাবা বলে তোমার দাদুর কথা ছিল জীবন খুব ছোট,
জীবনে কারে সাথে প্রতারণা করা যাবেনা,এত সম্পদ কি লাভ। চলেই তো যেতে হবে একদিন। আল্লাহর পথে চলতে হবে সৎ ভাবে,আর মানুষকে দান করতে হবে।
তাইতো দাদু নাকি জীবনে তেমন কিছু করেন নি। যা ছিল মানুষকে দান করে গেছেন।
আমাদের গ্রামে শিক্ষার হার খুবই নগণ্য। বড় ভাই অনেক শিক্ষিত হওয়ায় আমাদের এলাকার অনেকে বড়লোকরা তাদের মেয়েকে আমার বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে চান। ভাইয়া রাজি হয় না।শত বাধা,বিপত্তির মধ্যে আমাদের এলাকার ৩ জন মিলে আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে একটা হাই স্কুল দেন।বড় ভাইকে সবাই সেখানকার প্রধান শিক্ষক বানান। ভালোই চলছিল আমাদের। গ্রামে আমাদের ভালোই সম্মান ছিল। আর আমার মেজ ভাই,সেজ ভাই এবং ২ বোন পড়া লেখা করতে পারেন নি অভাবের তাড়নায় 😢 আমার বড় টা মানে ভাইয়ের মধ্যে ৪ নম্বর ভাইটা ইন্টার পর্যন্ত পড়েছেন।
🌺🌺 আমার বাল্যকাল ও ট্রাজেডিময় শিক্ষাজীবন 👈
আমি ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলাম। সত্যি কথা আমার জন্মের পর সবার থেকে বেশি ভালোবাসা পাবার কথা ছিলো। কিন্তু অজ্ঞতা-কুসংস্কার সমাজের মানুষের কথার জন্য পরিবারের আমার মা বাবা ছাড়া সবাই আমাকে অত্যন্ত ঘৃর্ণা করতো। কারণ বড় ভাইয়ের সাথে আমার বয়সের অনেক ফারাক ছিলো। কথা টা বলতে কষ্ট হলেও বলছি, মানুষ আমাকে পেট মুছা ছেলে বলতো 😢 ছোটবেলায় আমাকে সবাই জীবনের প্রতিধাপে মানুষীক কষ্ট দিত 😢 আমার একটু একটু বুদ্ধি হবার সময় বুঝতাম কেউ আমার সাথে কেন খেলতে চাইতোনা। এভাবে চড়ম অবহেলার মাঝে যখন ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলাম। ক্লাস ১ রোল ছিলো ৪৪। বছর শেষে যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠলাম রোল হলো ০৩। তখন অনেকের নজরে আসতে শুরু করলাম।
মনেআছে 💟💟
আমি তখন ক্লাস ৫ এ পড়ি।
উঠানে ঘুরি বানাচ্ছিলাম।বড় ভাইয়া আমাকে এসে একটা থাপ্পর দিয়ে বললো তুমি এত ভালো ছাত্র বৃত্তির জন্য মেধা তালিকায় তোমার নাম কেন? সত্যি বলছি সেই দিন থেকে আমি জীবনে অনেক লেখাপড়া করতাম,কতদিন রাত্রে পড়তে পড়তে বই বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিল বাড়ির পাশেই। বিদ্যালয়ের এক হিন্দু স্যার আমাকে বলতো ব্যরিস্টার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সেই নামটি আমার নিক নামে পরিনত ছিল সকল স্যারদের কাছে। আমি ছাত্র হিসাবে অনেক ভালো ছিলাম। পড়ে জানতে পারলাম আসল কাহিনী,বৃত্তির জন্য আমার নাম কেন উঠেনি
আমার নামের জায়গায় স্যারের আত্মীয়কে দিয়েছেন। কারন তখন স্কুল ভেদে কোটা ছিল বৃত্তির পরীক্ষার দেওয়ার জন্য। অবিচার করা হলো আমার প্রতি। স্বপ্ন ছিল ডাক্টার হবো।প্রাইমারী গন্ডি পেরিয়ে যখন ক্লাস ৬ এ পড়ি। বড় ভাই আমাদের ৩ টা টিনের ঘর তৈরী করেন। বড় বোনকে বিয়ে দেন এর পর বড় ভাই বিয়ে করেন।
আমাদের ভালোই চলছিলো। আমার পড়াশোনাও চলছিলো।
যখন আমি ক্লাস ৭ এ পড়ি। হঠাৎ একদিন বড় ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান শশুর বাড়ি। তখন আবার আমাদের পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে।
আমার পুরো পরিবার ট্রাজেডীর মত, প্রলয়ংকারী ঘর্ণীঝরে রুপান্তরিত হয়। কারন আমার আর ভাই গুলো সবাই পড়াশোনা জানতোনা। কোন মত জমি চাষ করতো।
আমাদের জমি গুলো বেশির ভাগ বর্ষায় ডুবে থাকতো। বুঝতেই পারছেন কি অবস্থা। আমাদের অনেক কষ্ট করতে হত। চরম কষ্টে দিন যেতে লাগলো আমাদের।
খেঁয়ে না খেঁয়ে দিন পার করতে হতো আমাদের পুরো পরিবারকে। আব্বু অনেক চিন্তায় ছিল। আমার পড়া লেখা হওয়া,না হওয়ার মধ্য দিয়ে এভাবে আমি নবম শ্রেণীতে উঠি।
ক্লাস নাইনে স্যার বললো কে কোন বিষয় নিবে,
আমি কমার্স(ব্যবসায় শাখা নিলাম) জানতাম না যে ডাক্তার হতে হলে সাইন্স নিতে হয়। বিষয়টা বুঝলাম যখন,তখন ডাক্তার হউয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। নতুন স্বপ্ন উদয় হলো,ব্যাংকের ম্যনেজার হবো। তারপর এলো এস,এস,সি পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ।
টেস্টে ভালো রেজাল্ট করার কারণে। আমার প্রতি তার ভালোবাসা তৈরী হয়। তাই বড় ভাই ভাবির অজান্তে আমাকে ফর্ম ফিলআপ করিয়ে দেন। এর মধ্যে বড় ভাই একটা আলাদা সুন্দর বাড়ি করেন তার স্কুলের পাশেই।
আমি ভাইয়ার স্কুলেই পড়তাম। কিন্তু তখন ভাইয়ার বাড়ি আমার যাওয়া হয়নি।
নির্বাচনী পরীক্ষায়, আমাদের ব্যাচের অনেক জনের মধ্যে মাত্র ২৭ জন পাঁশ করেন।
তার মধ্যে আমিও পাশ করি। ভাই,ভাবি তখন আমাকে আলাদা ভাবে ভাবতো শুরু করলো। বিশ্বাস টা না করার আগে কারন ও ছিলো আমার বয়সের বড় ভাইটা মানে ভাইয়াদের মধ্যে ৪ নাম্বার ভাইয়া আমার ২ ক্লাস উপরে পড়তো।
সে এস,এস,সি তে ১ বিষয়ে ফেইল করছিলো। তাই তাদের বিশ্বাস আমাদের উপর ছিলোনা। বড় ভাই একজন সৎ মানুষ ছিল। মনে আছে হিসাব বিজ্ঞানের অংক করার জন্য স্কুল থেকে একটি ক্যালকুলেটর নিতে চেয়েছিলাম। তিনি বললেন এটা স্কুলের সম্পদ,তুমি কেন ব্যবহার করবে। টাকা দিচ্ছি কিনে নাও।। এরপর একদিন ক্লাসের বিরতিতে কলম খেলছিলাম।ভাইয়া আমাকে বেতের বারি দিয়েছিলো।স্বর্বোপরি ভাইয়া আমাকে সৎ ও শাষণে রাখতো। বড় ভাই অনেক সৎ এবং ভালো ছিলেন।ভাবির অজান্তেই সংসারে টাকা দিতেন যা দিত চলতে কষ্ট হত আমাদের। আমার এস,এস সি পরীক্ষার সময় মেজো ভাইয়ের বিয়ে হয়। ১ বছর পর মেজ ভাইও বউয়ের কথায় বাড়ি থেকে চলে গেলো।
আমার পরিবারে কষ্ট তখন পাহার সমান 😴😴কারন মেজ ভাই নতুন ফিড মিলে নতুন চাকরি করতো।সেই দিনের কথা আমার মনে হলে,আজও আমার চোঁখ দিয়ে পানি একাই চলে আসে। এটা আমার জীবনে দ্বিতীয় ট্রাজেডী হিসাবে পরিলক্ষীত হয়।
একটা পরিবার একটা ব্যথার ঘা শুঁকাতে না শুঁকাতে আরেকটা ব্যথা পেলে কেমন অনুভূত হয় তা কেবল যার পরিবারের সাথে হয় সেই পরিবারেই জানে। যাইহোক।
আমার কিশোরকালের নরম মনটা আরো একবার ভাঙ্গলো।
বড় দুলাভাইদের বাড়ি ছিল মরণ ফাঁদ পদ্মা নদীর পাড়েই।হঠাৎ, বড় আপাদের ভিটা-বাড়ি নদীতে ভেঙ্গে যায়। দুলাভাইসহ তাদের পরিবারকে নিয়ে আসি আমাদের বাড়ীতে। কারন তাদের বাড়ি করার মত আর জমি ছিল না। কিছুদিন পরই, বড় বোনের জামাই অর্থাৎ আমার বড় দুলাভাই গভীর রাত্রে ঘুমের ঘরে, হৃদরোগে মারা যান। ২ ছেলে,১ মেয়ে রেখে দুলাভাই মারা যাওয়ার পর, অন্ধকার পুরো পরিবারের মধ্যে বিরাজ করেন।আমাদের কষ্ট আরো বেড়ে গেলো।
আবারো অভাবের তাড়নায় আমার লেখাপড়া বন্ধ হবার পথে। আমার ইচ্ছে আমি পড়বোই। তখন ভাইকে বলি ভাই বলে,তুমি নিজে কিছু করো, মনে আছে এক বন্ধুর বাড়ি বেরাতে যাওয়ার কথা বলে, সেই বন্ধুদের জমির ঘাস পরিষ্কার করে টাকা জমাই। আর কিছু টাকা তখন কান্নাকাটি করে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে আরও কিছু টাকা নিয়ে আমার স্বপ্নের ইন্টারে ভর্তি হই।
কলেজের নাম,
গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ। ভর্তি হওয়ার সময় কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে বলি, প্রিন্সিপাল স্যার ভর্তির কিছু টাকা কম নেয়। তখন কমার্স আর নেওয়া হলোনা,কারন কমার্স নিলে প্রাইভেট পড়তে হতো,যা আমার পক্ষে সম্ভাব ছিলোনা।
ভর্তির সময় বেচে যাওয়া টাকা দিয়ে, কিছু বই কিনলাম আর কিছু কলেজের স্যারের কাছ থেকে নিলাম।
সবার জীবনে নবীণ বরণ কতইনা স্মৃতির,
কিন্তু আমার জীবনে এটা ধরা দেয়নি। প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্বেও যেতে পারিনি, কারণ আমার ১ টা মাএ প্যান্ট ছিল আর সেটি ছিল ছেঁড়া। সেই দিন অসুস্থতার জন্য সেলাই করতে না পারায় আমার আর নবীণ বরণে যাওয়া হয়নি। তার কয়েকদিন পর থেকে প্যন্টটি সেলাই করে কলেজে যেতাম।
কতদিন যে খালি পকেট নিয়ে চলছিলাম।
১ টা প্যান্ট দিয়ে ক্লাস করছি সবাই নতুন সাইকেল নিয়ে কলেজে আসতো। আমি হেঁটে,না খেঁয়ে ও ক্লাস করেছি। তখন আমাদের গ্রামে টিউশনির ওতো প্রচলোন ছিলো না,যে করবো।সবাই জানতো, আমার বড় ভাইয়ের অনেক টাকা,আমার টাকার অভাব নাই। কিন্তু আমি জানতাম আমি কি রকম আছি। তবুও কাউকে বুঝতে দিতাম না। চাঁপা কষ্টে বুকে নিয়ে চলতাম। আমি একদিন সবাইকে না বলে ঢাকায় চলে গেলাম,
(বঙ্গবাজার)। সেখানে না গেলে বুঝতাম না জীবন কি। অন্যের অধীনে কাজ করা কি যে কষ্ট। মা বাবা তুলে গালি গালাজ করে। সর্বোপরি মানুষের আন্তরিকতার বালাই, নাই সেখানে। আমার কাজ ছিলো,বিদেশের অর্ডারকৃত শার্ট ফল্ট বা ভূল হলে তা খুঁজে বের করা। মালিকের ব্যবহার যেমন যঘন্য তেমনি কর্মচারীও। শিক্ষা রেশ,ভালো ব্যবহার,শ্রদ্ধা-সম্মান বিন্দুমাত্র সেখানে ছিলোনা। তাই মনে মনে ভাবলাম,জীবনে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করবো নয়তো ব্যবসা করবো। তবে আমার ব্যবসা হবে খুবই ভদ্রতার সহিত মালিক-কর্মচারীর ব্যবহার হবে খুবই শালীনতা।
সেখানকার পরিবেশে টিকতে পারলাম না আবার বাড়ি চলে আসলাম। শত কষ্ট নিয়ে
ক্লাস করতে লাগলাম। কলেজের স্যাররা আমার খুব ভালোবাসতো।
অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এস,এইচ,সি পরীক্ষা দিলাম।
মনে আছে ইংরেজী ১ম বিষয়ে পরীক্ষার মাঝ সময়ে, ওএমআর এর খাতার উপরের নম্বর প্রেজেন্ট খাতায় লিখছিলাম। আমার ছিট ছিল বেঞ্চের এক প্রান্তে,
তখন এক স্যার আমার হাতের উপরে এসে পড়লো,
আমার প্রেজেন্ট খাতার লেখাগুলো কলমে কাটাকাটি হলো। কথাটি বলতে কষ্ট হচ্ছে,তবুও সত্যটা আপনাদের সামনে বলতেই হবে,স্যারের ১ চোঁখটা অন্ধ ছিলো আরেকটা চোঁখ ছিল খুবই ছোট,স্যার চশমা পড়া ছিল। স্যারকে কাটাকাটি করা অতিরিক্ত পেজটি দেখালাম, স্যার বললো ঠিক আছে। স্যার বললেও আমার কাছে ঠিক মনে হলোনা। তবুও পরীক্ষাটি ভালোই হলো। ইংরেজি ২য় পত্রও ভালো হলো। এই বিষয়টা এক ভাইয়ার কাছে বললাম। ভাইয়া বললো ভূল হলে অতিরিক্ত কাগজে লিখে নিবে। আমার অনেক চিন্তা হলো। আবার কেউ কেউ বললো বেপার না। এত চিন্তার মধ্যে বাকি পরীক্ষা ভালোই হলো। রেজাল্ট দিবে ৩ মাস পর। ততোদিনে কি করবো।
দেখলাম আমার কাকাতো ভাই আনসার ভিডিপির ইউনিয়নের একজন লিডার।
আনসার ভিডিপির ১০ দিনের ট্বেনিংয়ের কথা ভাইয়া আমাকে বললো। ট্রেনিংয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৮ বছর কিন্তু আমার ছিল ১৭ বছর। ট্রেনিং শুরু হওয়ার দিন আমি গেলাম, ভাগ্যক্রমে লোক ১ জন কম। আমাকে নিয়ে নিলো আনসার-ভিডিপির অফিসাররা। ১০ দিনে মোটামুটি জানতে ও বুঝতে পারলাম।
আনসার অর্থ সাহায্যকারী।
এটা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ ১৪০০ বছর আগেই বলেছেন।
১০ দিন ট্রেনিংয়ে ১০ জন কৃষি,,মৎস্য,গবাদি-প্রাণী,প্রাথমিক চিকিৎসা,ইত্যাদি বিষয়ে ধারনা দেন। এই ১০ দিন ট্রেনিং শেষে ১০০০ টাকা ও একটি সার্টিফিকেট এবং আনসার উন্নয়ন ব্যাংকের একটি(১০০টাকার) শেয়ার প্রনোদনা প্রদান করা হয়।
সেই টাকাই আমার জীবনের প্রথম ইনকামের টাকা।
মাকে ১ টি শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। এটি ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন।
অনুভূতি ছিল অনেক। যা ভাবলে চোঁখ দিয়ে অঝড়ে পানি ঝড়ে। এটা ছিল প্রথম সুখের কাঁন্না।
১০ দিন আনসার-ভিডিপির ট্রেনিং শেষে ঈদের জন্য ভিরের মধ্যে যাত্রীরা যাতে করে কোন ডাকাতি,ছিন্তাইকারী,মলমপার্টির কবলে না পরে, মোট কথা যাত্রীদের সেবার লক্ষে ৭ দিনের জন্য আনসারের অফিসারদের মাধ্যমে আমি অংশগ্রহন করি। স্থানটা ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া।আমার দায়িত্বটা ছিল দৌলতািয়া খানকাপাকের সামনে।একদিন রাত্রে ডিউটি শেষ করে পেটে অতিরিক্ত ক্ষিদের জন্য বাড়িতে তারাতারি আসবো বলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তখন দেখি অন্ধকারের মধ্যে একটা মহিলা কান্না করছে,কেউ আগাচ্ছেন না। আমি কাছে গিয়ে আমার টর্চ লাইট দিয়ে দেখি। মহিলার কোলে ছোট্ট২ বছরের বাচ্ছা,সাথে আর একটি ৫ বছরের ছোট বাচ্ছা, আর সাথে ছিল ব্যাগ,মহিলাটি গর্ববতী ছিলেন। তাদের দেখে আমার ভীষন দুঃখ ও কষ্ট লেগেছিলো, পাশে কেউ নেই।
আমার দেখে হাউমাউ করে কেঁদে বললো ভাই আমি পাটুরিয়া থেকে লঞ্চে এসে এইপারে বাস মিস করছি, আমার কাছে কোন টাকা নেই, আমার বাড়ি যশোরের শেষ দিকে হাইওয়ের পাশেই। আমি বললাম যে গাঁড়িতে এসেছেন সেই গাঁড়ির সুপার ভাইজার কোঁথায়, মহিলাটি বলল খুঁজে পেলাম না ভাই। আমি বললাম বাড়ি ফোন দেন,বললো ফোন নাই, বললো আমি ফোন সম্পর্কে বুঝিনা। রাত গভীর, আমার মায়া হলো ঐ মহিলা ও বাচ্ছাগুলোর জন্য। ছোট বাচ্ছাগুলো না খেয়ে ছিল। অনেক্ষন হয়তো দাঁড়িয়ে ছিল,তাই মলিন ছিল তাদের মুখ খানা, কেউ কোন সাহায্য করেনি।বুক ফুলিয়ে, বললাম আপনার টাকা নেই সমস্যা নেই,আপনার এই ভাইটা তো আছে।মনে হলো আপুটা স্বস্থ্যি পেল।অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পড়ে ভাগ্যক্রমে একটা বাস পাওয়া গেল। প্রথমে গাড়ির হেল্পার নিতে চায়লোনা, আমি বাসের হেল্পার,সুপারভাইজারকে বুঝিয়ে বললাম,আমার কাছে কিছু টাকা আছে,আর নাই বোন টারে বাসে নেন।তারা নিতে রাজি হলো।পরে ঐ মহিলাকে বললাম,আপু যান কোন সমস্যা নাই। সেইদিন ঐ আপুটা আমার জন্য যে কান্নার সাথে দোঁয়া করলো।
বিশ্বাস করেন টাকা দিয়েও এটা কেনা যাবেনা।
সেইদিন বুঝলাম মানুষের দুঃখের পাশে থাকলে কতটা মনে প্রশান্তি আসে। সেই থেকে মনে মনে পণ করলাম, মানুষের পাশে থাকবো।
কয়েকদিন পর....
এরপর আমি ১টি টিউশনি পাই, ১টি থেকে অনেকগুলো হলো। এই টাকা দিয়ে নিজে চলেছি,মানুষের পাশে থেকেছি।
এরমধ্যে, আনসারের ট্রেনিং করে আমার মাঝে একটি জিনিস যাগ্রত হয়,যে মানুষের জন্য কিছু করবো। আমরা হাই-স্কুলের কিছু বন্ধুরা মিলে একটা সংগঠন তৈরী করলাম। সংগঠনটির নাম
#অনিবার্ণ_কল্যান_সংস্থ্যা।
এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য হলোঃ
১।গরীব ছাত্র-ছাত্রী যাতে ঝড়ে না পড়ে এজন্য তাদের বেতন ফ্রি বা হাফ করা,স্কুল ড্রেসের ব্যবস্থা করা,বই খাতার ফ্রিতে ব্যবস্থ্যা করা, পড়ার বেপারে উৎসায়িত করার জন্য বছর শেষে পুরষ্কার প্রদান করা,তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া(নিয়মিত -পড়াশোনা করছে কিনা)।
২।বাল্য বিবাহ রোধকরণ। আমাদের এলাকায় এটা করা অত্যন্ত চেলেন্সজিং একটা বিষয় ছিল। কারন এখানে অজ্ঞতা- কুসংস্কার লেগেই ছিল।
৩।সংগঠনের অর্থ আমরা মাসিক ভাবে সব বন্ধুদের কাছ থেকে উঠাবো, বাকি টাকা স্থানীয় মেম্বার,চেয়ারম্যান,এলাকার যারা দান করতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে উক্ত সংগঠন সম্পর্কে বুঝিয়ে অর্থগুলো উঠাবো এমন সিদ্ধান্তে আসি।
৪।মাদক/নেশামুক্ত সমাজ গড়বো।
এভাবে করে আমার স্বপ্নের এইচ,এস,সি পরীক্ষার ফলাফলের দিন চলে আসে।
আমি পরীক্ষার ফলাফলের দিন ১২ টায় কলেজে গেলাম, ২ টায় পরীক্ষার ফলাফল কলেজের বোর্ডে টাঙ্গানো হলো, কাছে গিয়ে দেখি আমার রোল,রেজিস্ট্রেশন মেলেনা।
হতাশ হয়ে নিচে দেখি ফেইলের জায়গায় আমার ১ বিষয়ে নাম।
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো 😩😩😩 মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার কারন ছিল,
আমি কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষা সহ সব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছিলাম।
কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এটা কখনো ভাবিই-নি।
সব অন্ধকার গ্রাশ করলো আমার। মনে হচ্ছিলো আমি রক্তিম সূর্য থেকে হারিয়ে গেলাম কোন এক অজানা পৃথিবীতে। কোন বিষয় টা ফেইল আসছে ইতোমধ্যে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। বার বার খুব মনে পরছিল পরীক্ষার গার্ডে থাকা স্যারের কথা।
সন্ধায় বাড়ি ফিরলাম। জানি কি অপেক্ষা করছিল আমার জন্য।
এত কিছুর পর আস্তে আস্তে নিজেকে ঠিক করলাম। এরপর টিউশনি,আনসার থেকে বিভিন্ন সরকারী উন্নয়ণ কাজ,সামাজিক কাজের সাথে, যেমন,ঈদের ডিউটি,নির্বাচনী ডিউটি,বৃক্ষ রোপণ,প্যারেড ইত্যাদি কাজের সাথে আমি যুক্ত থাকা শুরু করলাম ।
আমার প্রিয় সংগঠন ও বিভিন্ন সংগঠনের(রাজনীতি বাদে) মধ্যে থেকে সামাজিক কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম।
এভাবে চলে গেল ১টা বছর.....
আবার পরীক্ষার সময় চলে আসলো, ফরম ফ্লাপ করে নিলাম। ইন্টার পাশ করলাম আর্টস(মানবিক) থেকে।
★★★
এখন অনার্সের পালা :
ইচ্ছে ছিলো ঢাকা ইউনিভার্সিটি, বা ঢাকা কলেজ ছাড়া কোথাও পড়বোনা।
কিন্তু আমার পাশে কেউ ছিলোনা। তাই আর হয়ে উঠেনি।অবশেষে ,ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম।
শুরু হয় কঠিন জীবন যুদ্ধ। আমার ইচ্ছে ব্যাংকের ম্যানেজার হওয়া।
এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে তাই চয়েজটা কমার্সের বিষয় প্রথম দিকে রাখি।হয়ে যায় হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে। এখানে অনেক পাঠক ভাবতে পারেন ইন্টারে আর্টস তাহলে অনার্সে কমার্সের বিষয়। প্রিয়,পাঠক এস,এস,সি তে হিসাববিজ্ঞানে আমার অনেক নম্বর ছিল। হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির আগে অনেকেই ভয় দেখালো,আমি পারবোনা কারন নাইন,টেনে কমার্স থাকলেও আমার ইন্টারমিডিয়েটে ছিলো আর্টস। আমি আমার গ্রামের এক বড় ভাইকে বলি, সে হিসাবজ্ঞান বিষয় নিয়ে আগে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ছিল।সে যা বলল আমার আশা শেষ হওয়ার মত।এটা নাকি এতই কঠিন আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। যাইহোক একদিন এক কম্পিউটারের দোকানে গেলাম ভর্তির বিষয়ে কাগজ উঠাতে,ওখানে কুষ্টিয়া ইসলামি ইউনিভার্সিটির একটি ভাইয়াকে বিষটি বললাম, সে ভাইয়া বলল।শোন,একটা কথা বলি।মরলে হাতীর পায়ের তলে মরবা,পিঁপরার পায়ের তলায় কেন মরবা? ভতি হলাম হিসাবজ্ঞানে।
এরমধ্যে আমি ভীষণ অসুস্থ্যতা হয়ে পরি।
ভীষণ অসুস্থতার জন্য টিউশনি গুলো ছেড়ে দেই।
তখন মনেই নাই যে, আমার পার্ট টাইম কিছু করতে হবে। এটা কেউ কোনদিন বুঝায়নি।এখন কি করি টাকা কোথায় পাই।আব্বু বড় ভাইকে বললে তুমি বাড়ি টাকা দাও আর না,দাও ওকে (মানে আমাকে) দিতে হবে। কোন মত টাকাটা নিয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। হয়ে গেলাম ভর্তি।কলেজে গেলাম, এখন শুনি প্রথম বর্ষে ৩ টা প্রাইভেট পড়তে হবে। তারপর ফরিদপুরে থেকে পড়তে হবে।এবার বড় ভাবিকে বললাম,ভাবি ৫০০ টাকা দিল।ফরিদপুরে গেলাম।
কঠিন চিন্তায় পরে গেলাম। আমার জীবন কি শেষ এখানেই, আল্লাহর উপর প্রবল বিশ্বাস ছিল।
★★★
আমার জীবনে সবার সাথে চলার পথে আমার কমিটমেন্ট ও সততা ও চরিত্র ছিলো প্রচুর পজিটিভ। আমি একদিন ইন্টারে পড়া বন্ধুর সাথে এক দোকানে চাঁ খাচ্ছিলাম আর আমার সুখ-দুঃখের সমস্যার কথা বন্ধুকে বললাম । বন্ধুকে কখনো বলিনি যে আমার লজিং ব্যবস্থ্যা করে দাও। একদিন হঠাৎ বন্ধু ফোন দিয়ে বললো ফরিদপুরে বন্ধুর বোনের ৬ বছরের মেয়েকে লজিং থেকে পড়াতে পারবো কিনা। থাকা-খাঁওয়া ফ্রী।আসলে এই বন্ধুটির নাম না বললে আমি জীবনে সবচেয়ে বড় কালপ্রীট,চির ঋণী হবো,
কেননা সেই বন্ধুই আমাকে জীবনে সবচেয়ে বড় পথ দেখিয়েছে,
এই গ্রুপ,(নিজের বলার মত একটি গল্প গ্রুপে)
যুক্ত করিয়ে দিয়েছিলো। বন্ধুর নাম MD Nowshad বন্ধুটা আমার খবই ভালো,
ব্যক্ত জীবনে,নামাজী,ইমানদার। ❤ কাজ করেন কম্পিউটারের যাবতীয় লেখালেখির কাজ। তার জন্য আমি সর্বদা দোঁয়া ও সফলতা কামনা করি।আল্লাহ তাকে সুখে রাখুক।
যাইহোক ফিরে যাই সেই কথায়, সাথে সাথেই আমার আর একটি লজিং হয়।
পরের লজিংটি আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু সেই লজিং আমি করিনি।
অন্যটা করি।
অনার্স ২ বর্ষে উঠলাম। আমি ক্রিকেট ভালো খেলি।
তাই, আমার বড় ভাইয়া কি মনে করে যেনো আমাকে ঢাকা ধানমন্ডি আবহানী ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি করে দেয়। ফরিদপুর ছাড়তে হলো। সেখানে প্রচুর টাকা প্রয়োজন ছিলো,
যা বড় ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।
অনেক জল্পনা-কল্পনার পর ফরিদপুরে আসি। স্বপ্ন অনার্স শেষ করা।
তখন ভাবতে শুরু করলাম আর আমার লক্ষ্য ঠিক করলাম।
তখন গভীর ভাবে ভাবছি.........
আমার জীবনে যেমন, আমার বড় ভাইয়ের অবদান সব চেয়ে বেশি।তার চেয়ে বেশি আামার মায়ের। বললে এখন চোঁখে পানি ধরে রাখতে পারবোনা। মা আমার জন্য যা করছে তা কখনো ভোলার নয়। মা মুরগী,ছাগল,বেঁচা টাকা,নিজে না খরচ করে আমাকে দিয়েছে। ডক্টর না দেখাইয়া আমার দিতো।
মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছে।
এখনো করেন। । আমার কাকীমা বলে, তোর মা বড় লোক পরিবারের বড় মেয়ে হওয়া সত্বেও, বাবা জমি চাষ করে যে টুকো আমন ধান,গম পেত এই বাড়ি এসে সারারাত তা ঢেঁকিতে ভানতো। ২ টা ছেড়া কাপর ছিল। তাই পরতো। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতো।
কত কষ্ট,
যা শুনলে আমার ভীতরটা ফেটে,চোঁখে কান্না এসে যায়। তখন এত অভাব অনটানের মাঝেও মা-বাবা নিজে কষ্ট করে পরিবারের কিছু বুঝতে দিতে চাইতোনা।
যাইহোক,
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার অনার্স শেষ হলো।
জীবনে বড় চমক, আমি অনার্সে কোখনো কোনদিন ইমপ্রুভ দেইনি বা দিতে হয়নি।
এখন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে মাস্টার্সে আছি। মাঝে মাঝে অফার আসে বড় বড় চাকরী দিবে, কিন্তু মেয়ে বিয়ে করতে হবে। আমি সাথে সাথে রিজেক্ট করে দেই। আমার জীবন সুদ,ঘুষ, খাওয়ার ইচ্ছে নেই। বা শশুর বাড়ির পায়ের তলে থাকার ইচ্ছে নাই।
এটা আমার মায়ের কথা।
জীবনে,
নীজের বল বড় বল।
স্বপ্ন ভালো একজন মানুষ হওয়া।
স্বপ্ন টা ছিল আপনাদের বলি,
বিসিএস দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া ও আদর্শবান একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়া।
অনাথ,গরীব,অসহায়দের পাশে থাকা। এই কথাগুলো ভাবছিলাম আর কাজ করছিলাম। লক্ষ্য পূরণের জন্য। কিন্তু এইসব ভাবনা আমার একদিন প্রচুর হতাশায় গ্রাশ করে।
★★★
এখন যা লিখতে যাচ্ছি.....
সত্যি আমার হাত বার বার থেমে যাচ্ছে......
তবুও লিখতে যে হবেই আমার,
কারন আমার জীবনের গল্প থেকে আপনাদের কিছু পাওয়ার আছে।
২০২১ সালের সেপ্টম্বরের ২৬ তারিখে,
আমার স্বপ্ন গুলো যখন মেলাতে পারছিলাম না তখন হাজার হতাশা আমার ঘিরে ধরেছিলো।
(প্রিয় পাঠক ও এই গ্রুপে যুক্ত থাকা আমার পরিবারের সদস্য,শুভাকাঙ্খীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবাই ক্ষমা করবেন)
আমি হাজার হতাশার মধ্যে থেকে,
মাথায় কিছু না নিতে পেরে ২৭ তারিখে নিজে নিজে সব চেয়ে খারাপ/বাজে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি সুইসাইড করব। খুব মনে পরছে,ফেইসবুক গুতাচ্ছিলাম আর
আল্লাহকে স্বরণ করছিলাম। হঠাৎ একটি গ্রুপের পোস্টের ভিডিও সামনে আসে,ভিডিওটি ছিল
"আপনি কি শত হাজার হতাশায় ডুবে আছেন।
তাহলে এই ভিডিও আপনার জন্য।"
ভিডওটি সত্যি একটু একটু আমার মনকে নাড়া দিলো, একটু ভালো লাগা থেকে
সব টুকো ভিডিও দেখে ফেললাম। আজব লাগছিলো কারন ভিডিওটি আমার জীবনের সাথে মিল ছিল। ভিডিওতে যিনি কথা বলছেন তার নাম
ইকবাল বাহার জাহিদ। আর গ্রুপের নাম নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন।
তখন মনে পরে গেল এই গ্রুপে আমি তো আগেই যুক্ত ছিলাম।
কিন্তু আমি গ্রপে রেজিস্ট্রশন করার পর আর গুরুত্ব দিয়েছিলাম না। যাইহোক তারপর
গ্রুপের ভিতরে গেলাম। একটি পোস্টে দেখলাম কে যেন ঠিক মত কথা বলতে পারছেনা,হুইল চেয়ারে বসে মধুঁ,ঘি,সরিষার আর কি যেন নিয়ে কথা বলছে। এত সমস্যা তার পরও তিনি আল্লাহকে বার বার অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছেন ও কৃতজ্ঞতা পেশ করছেন।
আমি একটু নরে বসি।আরো মনোযোগ দেই। অনেক পোস্ট দেখি।আরও পরিষ্কার বুঝতে পারি কথা ঠিক মত বলতে না পারা হুইল চেয়ারে রে বসে থাকা আল্লাহকে বার বার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ জানানো ঐ ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ ফয়সাল মীর। সেই ২৭ সেপ্টম্বরের রাত ভর পোস্ট দেখি। একটা পোস্ট কে যেন লিখেছে আপনারা যারা নিজ জেলা মেসেন্জারে যুক্ত হন নি তারা যুক্ত হতে চাইলে কমেন্টসে জানান।
সেই পোস্টের পেক্ষীতে আমি তাই করি। পরে আমাকে জহিরুল ইসলাম জহির ভাইয়ের মাধ্যমে আমি রাজবাড়ি জেলা গ্রুপ মেসেন্জারে যুক্ত হই।আমি প্রচুর একটিভ থাকি গ্রুপে। জহিরুল ইসলাম জহির ভাই মূল গ্রুপে একটি পরিচিতি পোস্ট দিতে বললে পোস্ট দেই। জেলা মেসেন্জারে সেশন চর্চার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,
অক্টোবর থেকে তা শুরু হয় আমি অনেক ব্যস্ততায় থেকেও এ পর্যন্ত রাজবাড়ি জেলা মেসেম্জারে সব দিন(৩৬) থেকে অংশগ্রহন করেছি।সেশন চর্চা ক্লাসের মধ্যে।
স্যারের একটি পোস্টে প্রায় ১৩৫ টি বিজনেস আইডিয়ার কথা দেখি। স্যার বলে ভাল কিছু করতে চাইলে ব্যতিক্রম কিছু করতে হবে।তবে সেই কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। আমি চিন্তা করি আমি এমন কিছু নিয়ে কাজ করবো,যাতে অনেকের উপকার হয়। বর্তমানে বড় সমস্যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যানসার।এটার কথা ভেবেই আমি মাশরুম নিয়ে চিন্তা করি।
পরে গোয়ালন্দ কৃষি অফিসারের বিশেষ সুপারিশে ঢাকা সাভারে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে ৫ দিনের প্রশিক্ষন নেই। এইসব রোগের বিকল্প হিসাবে নিরব আহমদ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় মোরিঙ্গা নিয়ে শুরুর চিন্তা করি। এবং ছোট করে শুরু করি। কিন্তু পরিবারের বাধ্যবাধকতার জন্য ভালোভাবে শুরু করতে পারছিনা।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,
জনাব ইকবাল বাহার স্যারের অনুপ্রেরণা ও গ্রুপের সকলের ভালোবাসায় পাশে পেলে ভালো মানুষ হিসাবে আমি একদিন অনেক দূর এগিয়ে যাবো।
এখন আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছি,
আমি একজন ভালো মানুষ।
আমার বিশ্বাস এখন অটুট।
সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার জীবনের গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
সবাইর জন্য দোঁয়া,ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো।
সবাই আমার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্য দোঁয়া করবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৫
Date:- ১৫/১১/২০২১ইং
সালাউদ্দিন বেপারী।
ব্যাচঃ০৮
রেজিঃ৭৬২৪
কাজ করছি মাশরুম নিয়ে।
আমার পেজের নামঃ
বেপারী মাশরুম ঘর।
পেজ লিংকঃhttps://www.facebook.com/বেপারী-মাশরুম-ঘর-110043611473948/
জেলাঃরাজার বাড়ি রাজবাড়ি।