যৌতুক নামের মানসিক ব্যাধির কাছে হেরে যায় আমি এবং আমার দুই মেয়ে
আমার পথ চলাটা অন্য দশ জনের চেয়ে আলাদা।
আমার জীবনটাই আসলে সবার থেকে অন্য রকম।মা বাবার বিয়ের একযুগ পর আমার জন্ম।বলতে গেলে সোনার চামচ মুখে নিয়ে আমি পৃথিবীতে আসি।মা বাবার একমাত্র মেয়ে ছোট তিন ভাই।এক মেয়ে হওয়াতে আদরের পাল্লাটা ভারী আমার জীবনে সব সময়।
আমার বড় হওয়া গ্রামে।চট্টগ্রাম শহরের অদূরে চন্দনাইশ উপজেলার,গ্রাম বৈলতলী,শঙ্খ নদীতে আমার বেড়ে উঠা।সবার আদর ভালোবাসাই পরিপূর্ণ ছিল আমার জীবন।
কিন্তু মাত্র ১৪বছর বয়সে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয় আমাকে।এক প্রকার শুশুর বাড়ীর অন্যায় আবদারের কাছে হেরে যেতে হলো মা বাবাকে, তাই ছোট বয়সে বিয়ে দিয়েছিল।
বিয়ের পর একটা স্বপ্ন বাজ সহজ সরল মেয়ের জীবনটা পরিনত হয়েছিল অনেক দুর্বিসহ।
যৌতুক নামের মানসিক ব্যাধির কাছে হেরে যায় আমি এবং আমার দুই মেয়ে।
ছোট মেয়ের জন্মের ছয় মাস আগে আমাকে নিয়ে আসে মা বাবার কাছে।আর এইখানেই হলো আমার সংসার জীবনের ইতি।
শুরু হলো নতুন এক লড়ায়, কিছু দিন পর দুই মেয়ের মা আমি বয়স কম, তাতে কি কাধে এসে পড়ে দুই মেয়ের দায়িত্ব। আমিও হার না মানা মা।মনে মনে শপদ নিয়েছিলাম বাবার অভাব বুঝতে দিব না কোন দিন।তাই মা বাবার সংসারে বোঝা হতে চাইনি কখনো।চাইনি আমার মেয়েরা পরাধীন জীবন যাপন করুক।আমার আব্বু এবং ছোট ভাইরা আমাদের দায়িত্ব নিয়েছেন।তবুও আলাদা একটা পরিচয়ে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠাত করার ইচ্ছে ছিলো আমার সব সময়।
২০১৭ সালে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর অধীনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষে অনেক ট্রেনিং করি।সেলাই, শৌপিছ,এবং পার্লারের কাজ শিখি ,এর পর আমি বিজিএমইএ থেকে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে ট্রেনিং করি ছয়মাস।এর পর কোরিয়া বাংলাদেশে এর যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন প্যাটার্ন এবং সেলাই এর উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি।এই সব করেছি আম্মুর সহযোগিতায়। ডিভোর্স এর পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম অনেক।আব্বু এবং ভাইরা কখনো চাইনি আমি ঘর থেকে বাহিরে গিয়ে কাজ করি।আমার কোন কাজে ওরা সাপোর্ট করেনি কখনো।
উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইটা আমার একার।কেউ নেই আমার পাশে আম্মুছাড়া।এর আগে আমার একটা জব হয়।কিন্তু আমার ভাই করতে দেয় নি কারণ বাচ্চা দুইটার অযত্ন হবে তাই।এর মধ্যে বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করলাম।সেই সুবাদে সবার সাথে ভালো পরিচয় হয় আমার।তারপর সবার অনুরোধে আমি বাসায় সেলাইয়ের কাজ শিখানো শুরু করি। স্টুডেন্ট ও বাড়তে থাকে দিন দিন।আমি আমার মেয়ের বিভিন্ন ডিজাইন এর জামা বানিয়ে দিতাম পরে সেগুলা অর্ডার আসতো। আর আমার বিজনেস ধীরে ধীরে শুরু হয়।প্রথমে শৌপিছ দিয়ে এবং পরে থ্রীপিছ টুপিছ বুটিক আইটেম এবং নকশীকাঁথা যুক্ত হয় আমার বিসনেজে।
আমি ছোট বেলা থেকে ডিজাইন করতে পছন্দ করতাম।আমার উদ্যেগের সিগনেচার প্রোডাক্ট হলো কুরুশের বেবীড্রেস আলহামদুলিল্লাহ। আজ আমি আমার পাশাপাশি কিছু অসহায় মেয়েদের পাশে দাড়াতে পেরেছি।নিজের দুই মেয়ের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি পরিবার কে সাপোর্ট করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭৪
Date:- ১৪/১১/২০২১ইং
তানজিন আক্তার রিফাত
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার 71816
15 তম ব্যচ
খুলশী জোন
খুলশী জোন
চট্টগ্রাম