একা একা বসে লুকিয়ে কত কান্না করেছি
.....বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম....
.........আসসালামু আলাইকুম.........
প্রথমে শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহর প্রতি, যিনি আমাদের আজকে পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন।
গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন, প্রিয় শিক্ষক, মেন্টর, ভালো মনের মানুষ,একজন সফল উদ্যোক্তা, লাইফে সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী শ্রদ্ধেয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি, যিনি এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন।
যেখানে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ভালো মনের মানুষ।
হাজারো সফল উদ্যোক্তা। এত এত ভালো মানুষ এবং সফল উদ্যোক্তা তৈরি তে যার সম্পুর্ন কৃতৃত্ব, তিনি আর কেউ নয়, আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার।
আজকে আমি বলব স্যারের সংস্পর্শে এসে এই প্লাটফর্ম থেকে আমি কি কি শিখেছি, নিজের মধ্যে কতটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি। 🥰
🌹🌹প্রথমেই স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই 🌹🌹
আমার শৈশব কাল ঃ
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, যখন একটু ভালো ভাবে কথা বলতে শিখেছি মাত্র সেই সময় আমার আব্বু আমায় জিজ্ঞেস করতো ""আব্বু তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও"", আর তখনই আমি এক বাক্যে বলে দিতাম আমি পুলিশ অফিসার হব, আর আমার কথা শুনে আব্বু খুব খুশি হতো।আমি তখন কথা টা হয়তো না বুঝেই বলতাম, তবু ও সবাই এটাকে আমার স্বপ্ন ভেবে খুব ছোট থেকে ই পড়াশোনা করাতে শুরু করলো, মাত্র যখন ভালো ভাবে কথা বলতে পারি স্কুলে ভর্তি তখন নেয় না এত ছোট বাচ্চাদের, তখন আমায় বাড়িতে টিচার রেখে পড়াতো,আমি ও নাকি খুব মনযোগ সহকারে পড়তাম।আর স্কুলে ভর্তির যে বয়স তার আগেই আমি সব শিখে গেছিলাম।তারপর স্কুলে ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে পাস করে ভর্তি হলাম।আমার রিলেটিভ যারা আছে সবাই আমায় খুব আদর করতো।শুধু মাত্র পড়াশুনায় ভালো ছিলাম বলে। সেই ছোট থেকেই নিজের মধ্যে স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম আমি পুলিশ অফিসার হব, কিন্তু আমার স্বপ্ন টা বাস্তবায়ন করার সুযোগ হয় নি বড় হবার পর।
বড় হবার পর ঃ
লেখাপড়া চলছি মোটামুটি ভালো ই। একদিন আব্বু বাড়ি আসে এবং আমার হাতের লেখা দেখে বলে, ঢাকার বাচ্চারা ও এর চেয়ে সুন্দর করে লিখে, তারপর আমায় নিয়ে বসলো, আর একদিনেই হাতের লেখায় অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তারপর থেকে ক্লাসে স্যার বা ম্যাডাম রা যদি জিজ্ঞেস করতে ক্লাসে ভালো হাতের লেখা কার? তখন সবাই এক সুরে আমার কথা বলে দিত, এমন করে আমি এস এস সি পাস করি, ছোট বেলার স্বপ্ন তো আর সত্যি হলো না, কিন্তু তারপর ও স্বপ্ন দেখেছি লাইফে ভালো একটা কিছু হবো, আর আমার আব্বুর ও আমায় নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। খুব কেয়ার করতো আমার। পরীক্ষার সময় আসলে আমার মা কে বলতো ওরে হরলিক্স খাইয়ো, খাবারের দিকে খেয়াল রেখ, কারণ আমি খুব বেশি চিকন ছিলাম তখন। আর খুব আদরের তো ছিলাম ই। এক কথায় আমার বাবার চোখের মণি ছিলাম আমি।
এমন করে এইচ এস সি পাস করলাম। বলা হয়নি এস এস সি পরীক্ষার যে ছুটি থাকে সে সময়ে আমায় কম্পিউটার শিখেয়ে, তখনই বাড়িতে কম্পিউটার এনে দিছে। যখন যা চেয়েছি সবই পূরণ করার চেষ্টা করেছে, যদিও খুব স্বল্প বেতনে চাকুরী করতেন আমার আব্বু।আর স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে নিলে তো কোন মানা নেই আমার, আব্বু বলতো পড়াশোনার পাশাপাশি সবই দরকার, আর সফর থেকে নাকি এক্সট্রা নলেজ তৈরি হয়।
এমন করে আমার কলেজ জীবন শেষ করলাম, তখন আব্বু বলেছিল, আমি যেন কোন সরকারি কলেজ থেকে একাউন্টিং এ অনার্স কমপ্লিট করি। কারন আমি ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রী ছিলাম।কিন্তু আব্বুকে আমার মা বলল এটাতে তো অনেক খরচ, হোস্টেলে থেকে পড়তে হবে, কারণ প্রাইভেট ছাড়া ভালো রেজাল্ট আসবে না। কিন্তু আব্বু তো মানবেই না, আমায় বলে দিল একাউন্টিং না আসলে পড়তে হবে না, টাকা যত লাগে আমি দিব, যদি না পাড়ি তাহলে শরীরের রক্ত বিক্রি করে খরচ চালাবো😭😭তখন আব্বুর চাকুরী ছিল না, আমার এইচ এস সি পরীক্ষার আগে আব্বু স্ট্রোক করে এই নিয়ে দুই বার।তাই মা আর চাকুরী তে যেতে দেয় নি।
খুব বেশি কষ্টের বিষয় কি জানেন, আমার সরকারি কলেজে একাউন্টিং সাবজেক্ট ঠিক ই আসে কিন্তু আমার আব্বুর সেটা দেখার ভাগ্য হয় নি। 😭😭😭
তার আগেই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের এতিম করে চলে যান এই পৃথিবী ছেড়ে😭😭
খুব বেশি কষ্ট লাগে যখন মনে পড়ে বলেছিল শরীরের রক্ত বিক্রি করে পড়াশোনা করাবে আমায়।কান্না টা আর ধরে রাখতে পারি না।
একটা সময় আব্বু কে বলতাম আমি যখন চাকুরী করবো তখন খুব বড় একটা শপিংমলে নিয়ে যাবো আপনাকে, আর আপনি তখন যা ইচ্ছে যত ইচ্ছে কেনাকাটা করবেন আপনার জন্য, কারন আমাদের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য আব্বু খুব কষ্ট করেছিলেন,নিজে নতুন জামা কাপড় কিনতেন না ঈদে, ভালো কিছু খেতে চাইতো না, আমরা ছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের।
এত কষ্ট রাখার জায়গা নেই স্যতি😭😭
তারপর কোন রকমে অনার্স দুইবছর কম্পলিট করলাম, তারপর আর পড়ালেখা করার ভাগ্য হয় নি আমার, আমার বড় কোন ভাই ছিল না উপার্জন করার মত। আমি ই পরিবারের বড় মেয়ে ছিলাম।
এটা আমার জন্য আরো বেশি কষ্টের। খুব কষ্ট লাগে যখন সাথের বান্ধবীরা পড়াশোনা করছে,বা আমার সামনে দিয়ে পরীক্ষা দিতে যায়।
ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি, ভেবে নিলাম হেরে গেছি, আমি আর কিছুই করতে পারবো না। খুব অসহায় লাগতো নিজেকে, একা একা বসে লুকিয়ে কত কান্না করেছি। ভাবতাম আমার আব্বু থাকলে আমার লেখাপড়াটা বন্ধ হতো না। আর ভাবতাম আমি একটা মেয়ে হয়ে আর কি করতে পারবো। আমি এক ধরনের ভিতু ই ছিলাম, ভয় কাজ করতো সবকিছু তে। হঠাৎ একদিন আমায় গ্রুপ থেকে একজন ইনভাইট পাঠায়। সেই থেকে লেগে আছি গ্রুপে। যদিও এক্টিভ ছিলাম না অনেকটা সময়। যখন থেকে গ্রুপের পোষ্ট পড়ি, স্যারের সেশন পড়ি কমেন্ট করি তখন থেকে আমার ভয় টা কাটতে থাকলো, মনে সাহস পেতে শুরু করি।
যে মেয়েটা একসময় কথা ই বলতে পারতো না কারো সাথে, সেই আমি আজকে তিনটা সেশন ভিডিও করছি ইনশাআল্লাহ🥰 যদিও ততটা ভালো হয় নি, কিন্তু সাহস করে তো শুরু টা করতে পেরেছি, এখন আমি একা একা অনেক কিছুই করতে শিখে গেছি 🥰এই সবটা আমার প্রাণের গ্রুপ থেকে পাওয়া শিক্ষা। আমি আজকে এই জায়গায় আসার জন্য যা যা শিক্ষা দরকার সবটা স্যারের জন্য।পাশিপাশি সাপোর্ট পেয়েছি প্রতিটা ক্ষেত্রে Saiful Islam Mahabub উনার।
আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্যার এবং স্যারের গ্রুপ আমায় ঘুড়ে দাড়াতে সাহায্য করেছে। ইনশাআল্লাহ আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।
ছোট করে হলে ও শুরু করতেছি ইনশাআল্লাহ। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাপক ভাবে লেগে থাকবো স্যার।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, পাশে থাকবেন,
অসংখ্য ধন্যবাদ @ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে।
এবং ধন্যবাদ গ্রুপের সকলকে, আমার সেশন ভিডিও তে এত এত লাইক কমেন্ট করে উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকার জন্য। আমার লেখায় কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
কাজ শুরু করেছি বাটিক চাদর, থ্রিপিস, কুশি পণ্য নিয়ে, আর শখের কাজ বিউটিফিকেশন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭২
Date:- ১২/১১/২০২১ইং
অজান্তা হোসাইন
ব্যাচঃ ১০
রেজিঃ ২৪৪৪০
জেলাঃ নরসিংদী