ব্যর্থতা থেকেই হয়তো আমাদের শুভ সূচনা হয় সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার
🙏 নমস্কার ,আদাব🙏
🥀 প্রিয় নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন এর ভাইয়া ও আপুরা সবাই কেমন আছেন আশা করি সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ভালই আছেন।
🌹শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রাণপ্রিয় ভালবাসার শিক্ষক মেন্টর হাজার লক্ষ তরুণ তরুণীদের অন্ধকারে পথ চলার আলো যার অক্লান্ত পরিশ্রমে এমন একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি যার নাম নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন। আমাদের পাঁচ লক্ষেরও বেশি সদস্যের সফলতার কারিগর মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ।
🌹স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল এবং তার জন্য অনেক আশীর্বাদ ও শুভকামনা রইল।প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তা যেন স্যার কে আমাদের মাঝে সব সময় রোগমুক্ত ও সুস্থ রাখেন।
❣️আমি আজ বলব আমার জীবনের গল্প মেয়েদের চলার পথে কিছু করতে গেলে সবার আগে পরিবার বাধা দেয় যে লোকে কি বলবে তেমন আমার পরিবারের বাধার সম্মুখীন হয়েছি এবং এখন ও প্রতিনিয়ত হচ্ছি।
❣️প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটি গল্প থাকে আমার জীবনেও আছে দুঃখ ,কষ্ট, সুখ ,আনন্দ ,হাসি ,ব্যর্থতা যখন সবকিছু মিলিয়ে আমার জীবনের গল্প আছে।
🌷জীবন চলার পথ ফুলে আবৃত থাকে না কাটা থাকবেই। জীবনে চলার পথে বাধা বিপত্তি আসবে তাই বলে হতাশায় নিমজ্জিত করে রাখলে তো হবে না যতই কষ্ট হোক নিজের মনকে শক্ত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
🌿আমি বুঝতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করব আমার গল্পটা তবুও সাহস করে কিছু লেখা শুরু করলাম আমি সুমিত্রা বিশ্বাস আমার বাবার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা তে মাতৃভিটা ভেড়ামারা উপজেলার বিত্তিপাড়া গ্রাম ,সেখানে আমার জন্ম ।তখন থেকেই আমার জীবনের গল্প শুরু। ছোটবেলাতে বেশ আনন্দে ছিলাম। গ্রামে বসবাস করতাম লেখাপড়া করতাম ।যখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন হঠাৎই একদিন দুষ্কৃতকারীদের চক্রান্তের শিকার হয় আমাদের গ্রামের পরিবারটি তাদের চক্রান্তের প্রধান টার্গেট ছিল আমার বাবাকে হত্যা করা কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় তিনি বেঁচে যান সেই রাত ছিল আমাদের জন্য এক বিভীষিকাময় রাত ।
🌿যাই হোক ঐ রাতের পরদিন আর আমরা ঐ গ্রামে থাকলাম না চলে আসি কুমারখালীতে । সেখানেই আমার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল আমাদের মোটামুটি বেশ চলত ।
🌿যৌথ পরিবারে আমার বড় হয়ে ওঠা । আমরা চার ভাই বোন । তিন বোন এক ভাই। আমরা মেয়ে তাই লেখাপড়া শিখে জীবনে কিছু করব সেই চিন্তা ভাবনা করাটা ও যেন আমাদের অন্যায়।
🌿 স্কুলজীবন আমি লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো ছিলাম কিন্তু পরিবারের মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটা যেন একটা বড় অভিশাপ মনে হতো মাঝে মাঝে ।আমি ছোট বেলা থেকে যৌথ পরিবারে মানুষ হয়েছি পরিবারে কাকা কাকির সঙ্গে একই পরিবারে বসবাস করতাম একসাথে বাস করলেও তাদের মনোভাব ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাদের কথা ছিল মেয়েরা লেখাপড়া শিখে কি চাকরি করবে না জীবনে বড় কিছু করতে পারবে।
🌿 এমন কিছু কথা শুনতে শুনতে যেন লেখাপড়া করার মাঝে মাঝে নিজের মনে মনে ভাবতাম লেখাপড়া শিখে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না কিন্তু আমার মা যিনি আমাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য খুব উৎসাহ দিতেন। একদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি নাটক দেখেছিলেন আমার মা নাটকটি দেখার পর তার মনে অনেক সাহস যুগিয়েছিল । কথাটি ছিল এই মানুষই তো জজ , ব্যারিস্টার হয় লেখাপড়া শিখে গরু, ছাগল তো আর অফিসে চাকরী করে না।
🌿আসলে আমি জানি যে কষ্ট ছাড়া কখনো সফলতা অর্জন করা যায় না তাই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শুরু করে দেই যাতে জীবনে কিছু একটা করতে পারি। এভাবেই চলছিল লেখাপড়া বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এসএসসি পাস করলাম এইচএসসিতে ভর্তি হলাম কিন্তু কলেজ জীবন শুরু হতে না হতেই আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় ।তাদের সবার কথা ছিল আমরা অনেকগুলো মেয়ে বড় বোনের বিয়ে দিতে দেরি হলে পরবর্তীতে সমস্যা হয়ে যাবে । তাই তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দিয়ে দিল এইচএসসি পরীক্ষার তিন মাস আগে। যদিও আমার এবং আমার মায়ের অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিয়েটা হয়ে গেল।
🌿শুরু হল আমার জীবনের আরেকটা অধ্যায়ে আমার বিয়ের তিনমাস পরে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও মোটামুটি ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করলাম। কিন্তু তারপর লেখাপড়া শেখাতে তেমন রাজি হয়নি আমার অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হতে পারলাম না তাই এভাবে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে শুরু করলাম।
🌿আমার স্বামীর একটা ব্যবসা ছিল কিন্তু বিয়ের পর ৬ মাস হতে না হতেই সংসারের অভাব দেখা দেয়। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি খুব ভালো মানুষ ছিলেন কিন্তু ওভাবে কাছে তারা হার মেনে যায়।
🌿যাইহোক আমার বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি শেষ হয়ে যায় আমাকে তখন আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমি চলে এলাম বাপের বাড়ীতে ।থাকতে লাগলাম কয়েক মাস। আমাদের যৌথ পরিবার তাই বাড়িতে আমি সহকারে আবারও কয়েক বোন একসঙ্গে হলাম।
🌿আমাদের সমাজে বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে থাকবে এটাই যেন নিয়ম যাই হোক খেয়ে থাকুক বা না খেয়ে। আমাকে অনেকের নানা রকম কথার সম্মুখীন হতে হয়েছে তবুও ভাবতাম সব ঠিক হয়ে যাবে হয়তো । তখন আমি টেইলার্সের কাজ শিখলাম এবং তারপর টুকটাক কিছু কাজ করতাম ।
🌿কয়েক মাস পরে আমার স্বামী একটি ছোট ব্যবসা করতে লাগল সেখানে আমাকে নিয়ে গেল এবং ওখানে যেয়ে একটি ছোট বাসা বাড়িতে থাকতে লাগলাম। বাসা বাড়িতে থাকা খুব কষ্টের তা আমি উপলব্ধি করলাম প্রথম কারো বাড়িতে বাসা ভাড়া থেকে। নানা রকম সমস্যার মধ্যে থাকতে হয় তবুও আমরা মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করেছি সবসময়।
🌿সেখানে আমি কিছু বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম। বাচ্চাদের পড়ানোনার বেতন ছিল খুব কম কিন্তু তারপরও পড়াতাম কারণ আমি কিছু না করে বসে থাকি তাহলে তো চলবে না। তাই আস্তে আস্তে অনেকগুলো বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করলাম।
🌿আমার বাচ্চাদের পড়াতে খুব ভালো লাগতো। অনেক বাচ্চাদের আমি ফ্রি পড়াশোনা করিয়েছি। একজন বাচ্চাকে পড়াতাম তার বাবার পরিবারটি স্বচ্ছল ছিল না। কিন্তু তারা টাকা না দিলে বা আমি না নিলেও তারা আমাকে খুব ভালোবাসত ও সম্মান করতো যা কয়েকটা টাকার চেয়ে অনেক মূল্যবান। এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
🌿তারপর আমি টিউশনির টাকা দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে দিই । বিএসএস ভর্তি হয়ে গেলাম অনেক কষ্টে এবং এভাবেই আমি বিএসএস পাশ করলাম মোটামুটি ভালো রেজাল্ট নিয়ে।
🌿আসলে কারো জীবনের মানে টা অনেক সুন্দর সুখময় আবার কিছু কিছু মানুষের জীবন বিষাদে পরিপূর্ণ থাকে আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা দুঃখ ছাড়া সুখকে। দুঃখ ছাড়া আমরা সফলতার কথা উপভোগ ও করতে পারিনা। ব্যর্থতা থেকেই হয়তো আমাদের শুভ সূচনা হয় সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার।
🌹🌹প্রিয় স্যারের অনুপ্রেরণামূলক বাণী গুলো আমার মনে আরো উৎসাহ জোগায়। স্যার বলেছেন স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন সফলতা আসবেই। এই বাণীগুলো বুকে ধারণ করে আমি অল্প কিছু পূঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি এবং লেগে আছি । এই পরিবারের সকল ভাইয়া এবং আপুদের সহযোগিতাই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
🌿আজকে আমি আমার নিজের জীবনের কিছু কথা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরলাম অন্য আরেকদিন নিয়ে আসব আমার জীবনের আরেকটি অধ্যায় । সবাই দোয়া ও আশির্বাদ করবেন, ভুল ত্রুটি হলে আপনাদের ছোট বোন হিসাবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আমার জীবনের গল্পটি কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ সবাই ভাল থাকবেন এবং সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
🌷আমি আমাদের প্রিয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করছি যে মানুষটির জন্য আমি আমার হতাশাপূর্ণ জীবন থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে পারছি। যার জন্য আমরা এমন একটা বিশাল প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি নিজের ,নেটওয়ার্ক ও পরিচিতি বৃদ্ধি করতে পারছি এই প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৭২
Date:- ১২/১১/২০২১ইং
🥀সুমিত্রা বিশ্বাস
🥀ব্যাচ নং:১৩
🥀রেজি নং :৫০৮৪৩
🥀উপজেলা: কুমারখালী
🥀জেলা: কুষ্টিয়া
✨✨নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন এর একজন গর্বিত সদস্য✨