আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। 

সপ্তাহের অনলাইন হাটটা আমার কাছে স্পেশাল একটা দিন। ছোট বেলায় আমাদের বাজারে সপ্তাহে হাট ছিলো শনিবার ও মঙ্গলবার এবং এখনও আছে । এ দুইদিন আসলে খুব আনন্দ লাগতো আব্বা হাটে উঠা নতুন নতুন ফল ও অন্যান্য জিনিস বেশি বেশি আনতেন,কারণ হাটের দিনে নিত্য নতুন জিনিস পাওয়া যেতো খুব সহজে ও তুলনামূলক ভালো মানের পণ্য পাইকারী রেটে অনেকটা। আমাদের এ মানবিক প্লাটফর্মে একদিন মাত্র হাটের দিন,পুরো সপ্তাহে অপেক্ষায় থাকি কবে আসবে মঙ্গলবার। সেই ছোট বেলার আনন্দটাকে খুঁজে বেড়াই এদিনটিতে। এ দিন যদি বাজারে আসতে দেরি হয়, তাহলে তো বাজারে ঢুকা কষ্ট হয়ে যাবে তাই দেরী না করে শীতের সকালে বাজারে চলে আসলাম।

আজকে আমাদের (৭২) তম অনলাইন হাট বারে আপনাদের সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। 🥀🥀

আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমিও ভালো আছি। 

সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাদেরকে এখনও সুস্থ রেখেছেন ও ভালো রেখে মানবিক এ প্লাটফর্মে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আমাদের প্রিয় শিক্ষক, মেন্টর, ভালো মানুষ গড়ার কারিগর, পথ হারা পথিককে সঠিক পথের সন্ধানে আলোকবর্তিকা হয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নিঃস্বার্থভাবে গত প্রায় চারটা বছর ধরে। যিনি আপন ঘরকে হয়তো অনেক সময় বঞ্চিত করেও আমাদের সময় দিয়ে যাচ্ছেন,যাতে আমরা ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াতে পারি,তৈরী করতে পারি নিজের বলার মতো একটা গল্প। যে গল্পে থাকবে সফল হওয়ার কথা,নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি অন্যের জীবন গল্পেও থাকবে আমাদের সহযোগিতা,তাহলেই স্বার্থক হবে আমাদের প্রিয় স্যারের মূল্যবান সময়গুলো আমাদের পিছনে ব্যয় করা। সময়টা অনেক মূল্যবান যেটা স্যার আমাদের জন্য মানবিক কাজে ব্যয় করছেন। আমাদের উচিত স্যারের এ নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে আমাদের জীবনে কাজে লাগানো। স্যারের প্রচেষ্টা সকলে মিলে স্বার্থক করে তুলি,গড়ে তুলি চলো এক নতুন বাংলাদেশ। 

প্রিয় স্যারের এ প্রচেষ্টাকে যারা প্রানবন্ত করে তুলছি সেই পুরাতন ও নতুন  ভাই বোনদের প্রতি রইলো অনেক অনেক ভালোবাসা....।

আমার ছোট  বেলা থেকেই খুব ইচ্ছে নিজে কিছু করবো,নিজের একটা আলাদা পরিচয় থাকবে। আমার বাবা ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী,খুব পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। বাবাকে দেখতাম কিভাবে তিনি কাজগুলোকে ভাগ করে নিতেন পুরো ২৪ ঘন্টায়। পুরো বড় একটা পরিবার,ব্যবসা,সামাজিকতা সব কিছুই পালন করতেন সুন্দরভাবে। মানবিক অনেক কাজও করতেন তিনি।  আমার বাবা ছিলেন খুব ধার্মিক। আরো সবচেয়ে বড় একটি গুন ছিলো বাবার মাঝে তিনি আমার মাকে খুব ভালোবাসতেন,শ্রদ্ধা করতেন,যেকোন ডিসিশনই নিতেন মায়ের সাথে আলোচনা করে। সবগুনে গুণান্বিত ছিলেন আমার বাবা। সেলুট জানাই হাজারবার আমার বাবাকে। আজ বাবা নেই নয় বছর। জীবনটা আজ অনেক বদলে গেছে। খুব মিস করি আমার বাবাকে। আল্লাহ আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।

মূল গল্পটা এখনও শুরু হয়নি। আমার বাবা,মা ছেলেদের পড়াশোনা,ব্যবসায়িক বা চাকুরীর ক্ষেত্রে যতটা প্রাধান্য দিতেন মেয়েদের ক্ষেত্রে তেমনটা দিতেন না। আমার বাবা ছিলেন মেধাবী ছাত্র,৫ ম ও ৮ ম শ্রেণীতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন তিনি। আমার বাবা লেখাপড়া শেষ করে অল্প কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন। কিন্তু আমার এই বাবা খুব অল্প বয়সেই ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অল্প লেখাপড়া করিয়েই বোনদের বিয়ে দিয়ে দিতেন। এটা আমি সেই ছোট্ট বেলা থেকেই মানতে পারতাম না। 

শুরু হয় আমার সংগ্রামী জীবন পরিবার থেকেই। লেখাপড়া করবো এবং নিজে কিছু করবো তারপর বিয়ে। এস এস সি পাশের আগে থেকেই টুকটাক টিউশনি করতাম ( অভাবের জন্য নয়),বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করলাম বাবাকে না জানিয়ে আমার জমানো টাকা দিয়ে। এস এস সির পরপরই বাবা বিয়ে দিয়ে দিবেন অনেক কষ্ট করে সেটা ঠেকিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। এ সময়েও চলতে থাকলো সেই বিয়ের অত্যাচার। খুব ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হবো,সেজন্য বিজ্ঞান বিভাগও নিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে এইচ এস সি পাশ করলাম কিন্তু খুব ভালো রেজাল্ট হয়নি। মাঝে অনেকটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। 

আমার সবচেয়ে কাছের এক বন্ধু আছে তিনি সবসময় আমাকে বিভিন্নভাবে সাহস ও সহযোগিতা করে আসছিলেন। তিনি আর কেউ নন আমার ইমেডিয়েট বড় বোন। যখন বাবা বললেন ডাক্তারিতে পড়াবেন না তখন আরো ভেঙে পড়লাম। ইউনিভার্সিটিতেও যখন বাবা ভর্তি করবেন না তখন এ বোনটিই আমাকে গোপনে টাকা দিয়ে হেল্প করে বিভিন্ন ভার্সিটির ফরম তুলে দিয়েছিলেন,কোচিংয়ের ও করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পরীক্ষাও দিয়েছিলাম,কিন্তু চান্স হয়নি। শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হলো মেনেজমেন্টে। ওখানেই অনার্স শেষ করলাম। অনার্সের ২য় বর্ষেই জাতীয় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে কম্পিউটার অফিস ও গ্রাফিক্স কোর্স করলাম বাবাকে না জানিয়েই। টার্গেট ছিলো অনার্স পাশের পর বিসি এস দিবো এবং ভালো চাকুরী করবো যাতে অনার্সের পরে কম্পিউটার প্রশিক্ষনের পেছনে সময় নষ্ট না হয়। বন্ধু বান্ধব বলতো তোর চাকুরী করতে হবে কেনো বাবার তো টাকার কোনো অভাব নেই। আমি মুচকি হাসতাম ওদের কথা শুনে। কম্পিউটার কোর্স করার পর সরকারীভাবে যখন ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্য লোক নিয়োগের সার্কুলার হয় সেখানে অ্যাপ্লাই করি এবং পৌরসভা ভবনে বসে কাজগুলো করি এবং বড় একটা টাকাও ইনকাম করি। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো নিজের আইডি কার্ড আমি নিজেই তৈরি  করেছি।

অনার্স পাশের পর ( চুপি চুপি বন্ধুর সহযোগিতায় ইডেন মহিলা কলেজে এম বি এস ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হই)বাবা বলেই দিলেন অনেক বয়স হয়ে গেছে, বিয়ের পর হাজবেন্ডের সাথে ব্যবসা করতে পারবে ( কারণ পাত্র ছিলো ব্যবসায়ী)। পরিবারের একটা বিশাল চাপে শেষ পর্যন্ত পরিবারের পছন্দেই ঝাঁপ দিতে হলো না দেখা,না জানা এক মানুষকে নিয়ে নতুন জীবনে। কিন্তু সেখানেও দেখি আরো কঠিন অবস্থা। বাইরে ঘরের বউ কাজ করতে পারবে না। ১৪৪ ধারা জারি হলো। এদিকে হাসবেন্ডও পরিবারের বাইরে গিয়ে কিছুই বলতে পারে না। মাস্টার্স শেষ করে গোপনে চাকুরির চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলাম। পারলাম না। এদিকে আমার কোল জুড়ে আসলো এক পুত্র সন্তান। বাচ্চার যখন এক বছর হলো তখন থেকেই একাই বন্ধু বোনের সহযোগিতায় আবার শুরু করলাম চাকুরির চেষ্টা। পরীক্ষা দিলাম বাবার বাড়ি থেকে। ভালো হলো পরীক্ষা এবং কাছাকাছি পোস্টিং নিয়ে সাড়ে ৩ বছর চাকুরীও করলাম। বাচ্চাকে যখন স্কুলে ভর্তি করালাম তখন বাধ্য হলাম চাকুরী ছাড়তে। তখন শ্বশুর বাড়ির লোকজন চাকুরী ছাড়তে দিবে না অথচ চাকুরির শুরুতে এতটুকু মানসিক বা আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। 

চাকুরী ছাড়ার পর থেকে ঘরে আর মন বসে না। ঘরে বসেই কিছু একটা করতে চাইলাম। অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলাম কিছু করতে পারছিলাম না বলে। এদিকে আমারও নিজের টাকা দিয়ে নিজের মতো করে চলার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। দেখি একটা সময় হাসবেন্ডের কাছেও নিজের প্রয়োজনে টাকা চাইতে ইচ্ছে করে না। 

এ সময় একদিন হঠাৎ আমার এ বন্ধু বোন প্রিয় স্যারের একটা ভিডিও সেশান পাঠালো। আমিও দেখলাম। স্যারের কথাগুলো আমার স্বপ্নের সাথে মিলে গেল। বাবার বা হাসব্যান্ডের অনেক কিছু থাকতে পারে কিন্তু  নিজের একটা গল্প থাকতে হবে,নিজের একটা পরিচয় তৈরী করতে হবে স্যারের এ কথাটা আমার মনে খুব দাগ কাটলো। আমি তখনই রেজিষ্ট্রেশন লিংক খুঁজে বের করে রেজিষ্ট্রেশন করলাম। তারপর থেকে গ্রুপের সবার পোস্ট,কমেন্টগুলো পড়তে থাকলাম। কিছুদিন পর আমি একটা পরিচিতি পোস্ট করলাম। দেখি সবাই লাইক,কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে স্বাগত জানাচ্ছে।

অনেক ভালো লাগলো। সেই থেকে শেখার চেষ্টা করছি। 

অনলাইনে ও অফলাইনে আমার ছোট ব্যবসাটা শুরু করে দিলাম। আমার ছোট একটি পেইজ আছে এখন। আমার স্বপ্নের পথে হাঁটার পথ আবার খুঁজে পেয়েছি। 

সবাই আমার জন্য ও আমার বন্ধু বোনটির জন্য দোয়া করবেন যেনো আমি সফল উদ্যোক্তা হতে পারি এবং আমার বোনের কষ্টকে স্বার্থক করতে পারি। 💕💕

ধৈর্য্য সহকারে গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সব সময় আমি আমার কাস্টমারকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি, কারণ কাস্টমাররা হলো লক্ষি। তাই আজকের হাটে আমার ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত নেয়া শিক্ষা থেকে একটা অফার করতে চাই,সেটা হলো প্রতি হাটে আমি অন্যান্য দিনের থেকে অনেকটা কম লাভে পন্য দিবো ইনশাআল্লাহ, শুধু এ ছাড় হাটবারের জন্য।

আমার লেখায় কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

বর্তমানে কাজ করছি লেডিস আইটেম ও ছেলেদের রেডি পাঞ্জাবি ও হাতের কাজের পাঞ্জাবি নিয়ে।

আমার পেইজ লিংকঃ ( প্লিজ ভালোবেসে সবাই পেইজে লাইক করবেন)

https://www.facebook.com/বাংলার-আঙ্গিনা-101700918088202

পাশে থাকবেন

পাশে রাখবেন।।।

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৯

Date:- ০৯/১১/২০২১ ইং

🌱সালমা আক্তার 

🥀কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার

🥀জেলাঃ ঢাকা

 উপজেলাঃ সাভার

🥀ব্যাচঃ১৪

🥀রেজিঃ ৬২৭৭১