উদ্যোক্তা জীবনে বন্ধুত্বের উৎসাহ :-
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই?
সর্বপ্রথম আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। এই কান্তি কালে এখনো আমাদের মহান আল্লাহ সুস্থ রেখে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার শক্তি দান করার জন্য।
আজ হাটবার,
ডিজিটাল যুগে এসে ঘরে বসেই সারাদিন ব্যাপী অনলাইনে সুন্দর ভাবে কেনা বেচা করে নিজের জীবনের দুঃখময় অতীতকে ভুলে সুখের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলার এই যে প্লাটফর্মটি যিনি আমাদের জন্য তৈরী করেছেন সেই মহান ব্যাক্তি Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। যিনি না হলে হয়তো এই সুন্দর প্লাটফর্মের স্হাপনাই হতোনা।
গল্পে গল্পে চলুক এই পথ চলা :-
উদ্যোক্তা জীবনে বন্ধুত্বের উৎসাহ :-
সীঁথি আর লিমা কলেজ লাইফের প্রথম থেকেই খুব ভালো বন্ধু । বন্ধু বললে ভুল হবে লিমা সীঁথির চেয়ে একটু বয়সে ছোট হওয়ায় পথ চলতে চলতে একসময় এতো বেশিই ভালোবেসেছে যে তা প্রকাশ করার ভাষা নেই।
তারা এতোটাই ঘনিষ্ঠ যে একদিন দেখা না হলে মনে হতো কতদিন দেখা হয়নি। এভাবেই দিন যায়। যেতে যেতে একসময় কলেজের দিন গুলো শেষ এখন বিদায়ের পালা। সব বন্ধুরা দূরে গেলেও সীঁথি লিমা ঠিক আগের মতোই ছিল। এক বিন্দুও নষ্ট হয়নি তাদের ভালোবাসার স্থান। তাদের এতো সুন্দর একটা ব্যন্ডিং এর মূল কারন হচ্ছে তারা কখনো স্বার্থ কে প্রাধান্য দেয়নি, দিয়েছিল সম্পর্ককে । তাইতো এতো সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরী হলো। সবাই বলে কলেজের বন্ধুত্ব বেশি দিন থাকেনা, আমি বলবো ভুল বন্ধুত্ব এমন এক মনের টান যা কখনো শেষ হয়না।
কলেজ যাওয়ার মাঝ পথে লিমার বাড়ী । লিমা থাকে ঢাকার নিকুঞ্জ ১ এ । আর সীঁথি ও লিমা পড়ে টংগী সরকারি কলেজ এন্ড ইউনিভার্সিতে। সীঁথির যাওয়ার পথেই লিমার বাড়ী। সীঁথি ভাবতো আমি যদি আগে কলেজে যাই আর লিমা পরে যায় তাহলে এমনিতেই এতো পথ একা যাওয়া তার উপর কলেজ গিয়েও লিমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা খুব খারাপ জিনিস। তাই সীঁথি ভাবতো একা একা জার্নি টুকু না করে হোকনা খুব ছোট্ট জার্নি এটুকুকেই আনন্দময় করে ফেলি। যেই ভাবা সেই কাজ। যাওয়ার পথে নেমে লিমার বাড়ী গিয়ে লিমাকে সাথে নিয়ে হাসি খেলার মাঝে কলেজে যাওয়া হয়ে গেল তাদের নিত্য দিনের অভ্যাস। তাদের সম্পর্কটা এমনই হলো একদিন ও দেখা না হলে খারাপ লাগাটা খুব বেশি কাজ করতো। তাইতো সীঁথি ভাবলো প্রাইভেট পড়া নিয়ে। যেহেতু একি পড়া ২ জনের তাই একি শিক্ষকের কাছে পড়বে। তাই. তারা সিদ্ধান্ত নিল একি শিক্ষকের কাছে পড়বে। সীঁথি যেহেতু লিমাকে বেশি স্নেহ ও ভালোবাসতো তাই লিমাকে কষ্ট দিতে চায়নি। তাই কষ্ট আর টাকা বেশি খরচ হলেও লিমার বাসার কাছে এসে কোচিং করা শুরু করলো। এভাবেই হাসি আনন্দে কত মধুর স্মৃতি নিয়ে পার করলো কলেজ জীবন।
এদিকে লিমা কলেজের লাষ্ট ইয়ারে হঠাৎ করেই অসুস্থতা অনুভব করতে লাগলো । কিন্তু কেন তা বুঝতে পারেনি। অনেক চিকিৎসার পরে জানতে পারলো ওর হার্টের সমস্যা ধরা পড়েছে। তবে এর পরিমান কতটা তা জানা ছিলনা। ডিসিশান হলো আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলেই অপারেশন হবে। শুনে কলিজাটা কেঁপে উঠলো। তবুও ভালোলাগলো প্রিয় মানুষটা আবারো হাসি আনন্দে মেতে উঠবে এই ভেবে।
ও যে আমার আত্মার সাথে মিশে গিয়েছিল এটা আগে বুঝলেও কতটা মিশেছে তা ওর অপারেশনের আগ পর্যন্ত বুঝিনি। ওকে মিরপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হলো। যদিও ভয় লাগছে তবুও একটু ভালো লাগছিল আগের মতো আমরা ঘুরতে পারবো এই ভেবে । আমি মিরপুর এরিয়া তেমন চিনিনা এজন্য অপারেশনের আগে আমাকে যেতে মানা করেছে। বলেছে অপারেশন হলে যেতে। আর অপারেশন হবে বেশি বড়না হয়তো সব মিলিয়ে ঘন্টাখানেক লাগবে । তাই আর যাইনি। ফোনে খবর নিতাম একটু পরপর। এভাবেই আসলো ওর অপারেশনের দিন। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত কথা বলছি ওর সাথে। তারপর শুরু হলো অপেক্ষার পালা ওই দিনও আমাকে যেতে দেয়া হয়নি ওর পরিবারের সবাই সহ। বলছে অপারেশন শেষ হলে এসো। এখন আমরা তো আছি। সকাল ৮ টার পরে নেয়া হলো। আমার খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেল কি হবে কি হবে এই ভেবে । সবাই জানে ছোট্ট অপারেশন ডাঃ রাও তাই জানে। তবে অপারেশন শুরু করার পর দেখলো ওর মেজর সমস্যা। যা ডাঃ রাই ভয় পেয়ে গেল। এই অবস্থা দেখে বড় ডাঃ সহ পুরো টিম ওখানে উপস্থিত হলো। সমস্যা দেখে সবাই আতংকিত। কারন তারা এতো পরীক্ষা করার পরও দেখলো হার্টের একটা রক্তনালী একটু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মোটা হয়েছে তাই এমন হলো। কিন্তু অপারেশন এ গিয়ে দেখলো যেটা মোটামুটি পানির পাইপের চেয়ে একটু চিকন হবে এমন অবস্থা। আজো ও সেই দিনের কথা মনে হলে খুব কষ্ট হয় চোখে পানি চলে আসে। এদিকে বাসায় আমার অবস্থা পাগলের মতো । একটু পর পর ফোন দেই ওর বড় ভাই বোনকে । যারা আমাকে লিমার চেয়ে কম ভালোবাসেনা । পরে জানালো ওর সময় লাগবে বড় অপারেশন আর রক্ত লাগবে আরো ৩ ব্যাগ । কথাটা শুনে আমি শুধু বলেছিলাম এই নিয়ে চিন্তা করবেন না আমি ম্যানেজ করতেছি। আমার ছোট ভাই বোন যে স্কুলে পড়ে ওরা স্টুডেন্ট ভালো হওয়ায় সব স্যার ম্যাডামরা আদর করতো আর আমার আম্মুকে ও চিনতো। আম্মু স্কুলে ছিল ফোন করে বলছি আম্মু লিমার রক্ত লাগবে। বললো দেখি। পরে স্কুলের প্রিন্সিপাল এর কাছে বলার পর কলেজ থাকায় নোটিশ কলেজ ভবনে পাঠায় আর সাথে সাথে অনেক স্যার ম্যাডাম ও স্টুডেন্টরা রক্ত দিতে প্রস্তাব হয়ে যায়। আম্মু আমায় ফোন করে লোকেশান বলে দিল কোথায় যাবো। আমি যে সকালে নাস্তাটা ও খাইনি তাই ভুলে গিয়েছি। পরার জামাটাও পরিবর্তন করা হয়নি এভাবে দৌড়ে গিয়ে রক্ত দিবে ওই ৩ জন স্টুডেন্ট নিয়ে হাজির হলাম মনেহয় ৩০ মিনিটের মধ্যেই । এদিকে আরো ফ্রেন্ডদের বলেছি ওরা ও হাজির হয়েছে লোক নিয়ে। আমার কান্ড দেখে আপু আর ভাইয়া তো অবাক। যাক সময় যাচ্ছে আমাদের রোগী বের হচ্ছেনা। ওর অপারেশন শেষ হতে প্রায় ৪ টা বাজলো। আমাকে সবাই বাসায় পাঠাতে চাইলো কিন্তু আমি আসিনি। ওর খবর না নিয়ে আসবোনা এটাই কথা। ৪ টার পর যখন বললো সাকসেস হলো তখন যে কেমন আনন্দ লেগেছে আমার বলার ভাষা নেই। সারাদিন আমার বুকের ভিতরটায় এতো ব্যথা করেছিল মনে হলো আমার কলিজাটা কে যেন নিয়ে গেছে। সেই থেকেই আমি ওকে আমার কলিজার একটা টুকরা ভাবি। ওকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে অবজারভেশনে রাখলো। তখন আপুরা বললো এবার যাও কারন এখনতো দেখতে দিবেনা। একটু সুস্থ হলে এসো। সবার বুঝানোতে বাসায় ফিরে আসলাম।
প্রকৃত বন্ধুত্ব কখনো স্বার্থ দিয়ে হয়না এটাই বাস্তব সত্য।
আমি সীঁথি, উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছি তবে নিজের প্রচেষ্টাকে কাজে লাগানোর জন্য বল্কের কাজ শিখেছি। যখন নিজের জন্য করে একটু প্র্যাকটিস করছি তখন হঠাৎ বলে ফেললো দেখি কি শিখছোস আমার একটা জামা করে দে। আর এটা কিন্তু কাস্টমারের মনে রাখবি। আলহামদুলিল্লাহ আমি প্রথম কাজ ওর আর ওর মেয়ের জন্য বল্কের কাজ করে দেই। খুবই পছন্দ করেছে। এবং আমার একটা কুর্তি দেখে সেইমটা আবারো অর্ডার করলো। আলহামদুলিল্লাহ প্রানের বান্ধবীই আমার রিপিট কাস্টমার হয়ে গেল। এবং সামনে ওর আরো অর্ডার আছে যেটা হবে কাপলসেটের।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের বন্ধুত্ব এখনো সেই আগের মতোই আছে। একে অন্যের সুখ দুঃখের সাথী ছিলাম এখনো আছি আশাকরি থাকবো।
সবাইকে ধন্যবাদ ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য।
🍂🍁🍂আমার উদ্যোগের নাম Rup Collection House & এস.আর আচার সমাহার।
কাজ করছি পুরান ঢাকা থেকে মেয়েদের সব ধরনের পোশাক, হাতের কাজের কুশন কভার, টারসেল এবং বেডসীট আর নতুন সংযোজন রসুনের আচার নিয়ে।
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
সুস্থ থাকুন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৯
Date:- ০৯/১১/২০২১ ইং
সুলতানা রাজিয়া সীঁথি
ব্যাচ ১৪
রেজিস্ট্রেশন ৬৫২১৭
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
লালবাগ জোন
জেলা লক্ষ্মীপুর
ঢাকা