জীবনের_গল্প
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম আসসালামু আলাইকুম
✍️✍️✍️জীবনের ২০টি বছর কাটিয়ে দিয়েছি হেলায় হেলায়।
লেখা পড়া থাকা অবস্তাতেই পরিবারের বড় ছেলে সংসারের হাল ধরতে পারি জমাই মরুর দেশ সৌদি আরবে।
✍️✍️✍️২০০১ সালের ৩ জুন আসি এই দেশে জী আমার ছোট চাচা ছিলেন তাই আসতে তেমন একটা কষ্ট হয় নাই।
কিন্তু এখানে আসার পর শুরু হয় কঠিন জীবন সেটা প্রথমে বুঝতে না পারলেও কয়েক দিন যাওয়ার পর যখন কফিলের কাছে ইকামা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চাচার ছোটাছুটি দেখে বুঝতে পারি।
কফিল ইকামা দেবেনা কারণ তার যে লাইসেন্স দিয়ে আমাকে বা আমার সাথে আরও তিনজনকে ভিসা দিয়ে সৌদিতে এনেছে সেই লাইসেন্স আর নবায়ন না হওয়াতে আমাদের ইকামা হচ্ছিলনা সে বলতেছিল কোথাও কাজ সংগ্রহ করে কফালা নিয়ে নাও তাহলে আমি ট্রান্সফার দিয়ে দিতে পারবো। এদিকে আমার নাই ইকামা আর এ দেশে ইকামা না থাকা মানে আমি অবৈধ আর অবৈধদের কেও কাজ দেবেনা। তবে হ্যা অনেক কোম্পানী আছে তারা অনেক শর্ত সাপেক্ষে কাজ দেয় অল্প বেতন আর অধিক কাজের মাধ্যেমে।
এদিকে ইকামা না থাকাতে আমি ছিলাম আমার চাচার বাসায় যে বাসাতে থাকতেন সেটা তাদের কোম্পানীর বাসা। এরখম অন্য কোম্পানীর বাসায় অন্যদের থাকাটা তাদের মেনেজমেন্ট অনুমোধন দেয় না। আর বাসার অনেকেই সেটা পচন্দ করতনা হয়ত আমি ফ্রি ফ্রিতে থাকছি দেখে তাদের কাছে কারাপ লাগতো। এদিকে আমার চাচাকে একজন বলল একটা কোম্পানীতে কফালা করে লোক নিচ্ছে আপনার বাতিজাকে সেখানে দিতে পারেন। চাচাও বলল ঠিক আছে ওই কোম্পানীতে কি কাজ হয়। ওই লোকটা বলল পাতরের কোম্পানী পাতর কেটে টাইলস বানানো হয়। চাচা শুনে বলল ধন্যবাদ ভাইয়া আমার বাতিজাকে দেশে পাঠিয়ে দেব তবুও এমন কাজে দেবনা বলে আমাকে রুমে নিয়ে চলে গেল। এদিকে আমি বাসাতে থাকি অনেকের জেলাস ফিল হত কয়েক দিন যাওয়ার পর কোনো একজন কোম্পানীতে নালিস করে দিল আব্দুর রউফ এর বাতিজা ৪ মাস যাবত বাসায় থাকে ঠিক ওইদিন অফিসে ডেকে নিয়ে বলা হল বাতিজাকে বাসা থেকে সরানোর জন্য। চাচা কাজ শেষে সন্ধ্যা বেলা এসে আমাকে নিয়ে চলে গেল ফ্রি ভিসা ভিলা নামক বাসায় এরখম বাসায় সব যার যার ভাড়া দিয়ে থাকে। যদিও বিল্ডিং তবে আমাদের দেশের বস্তির মতো।
😢😢😢চাচা কান্না কাটি করে আমাকে সেখানে রেখে আসেন ।
কয়েকদিন থাকার পর মানিয়ে নিলাম পরিবেশটাকে কারন আমাকে হাল ধরতে হবে আমার পরিবারের জন্য আমার বাবার জন্য। জী আমার বাবাও একজন প্রবাসী ছিলেন তিনি থাকতেন ওমানে।
✍️✍️✍️ফ্রি ভিসা ভিলা নামক বাসায় পরিচয় হয় প্রিয় এক ভাই বাড়ি কুমিল্লা সে একদিন বলল চল আমাদের কোম্পানীতে তুমাকে নিয়ে যাব আমি বললাম আমার তো ইকামা নেই আমাকে কি কাজ দেবে? ওই ভাইটি বলল তাদের কোম্পামী নতুন চালু করেছে চেষ্টা করে আমাকে কাজ দিতে পারবে। আমি বললাম ঠিক আছে যাব যা আছে কপালে দেখি কি হয়।
✍️✍️✍️পরের দিন সকালে রেডি হয়ে ওই ভাইটির সাথে চলে গেলাম তাদের কোম্পানীতে। যাওয়ার পর আমাকে বসিয়ে রাখলো তাদের ক্যান্টিনে। অপেক্ষা করতে থাকলাম কোম্পানীর ম্যানেজার সাহেবের তিনি আসার পরেই আমাকে নিয়ে যাবে বস এর কাছে। বস আসলেন সকাল ১০টার দিখে তারপর আমাকে নিয়ে গেল অফিসে বস জিজ্ঞাস করলেন কোথায় থাকো বললাম ওই ভাইয়ের সাথে একি বাসায় তখন বস বলল ঠিক আছে আজ থেকে কাজে লেগে যাও তবে ৩ মাস বেতন দিতে পারবোনা। আমিও মনে মনে ভাবলাম কাজ শুরু করি বেতন সবার বেলায় এমন হইছে আমার কি আর সমস্যা। অন্যদিকে চাচা ইকামার জন্য অনেক টাকা পয়সা খরছ করে আমি কাজে ২মাস হয়েছে আর ইকামা টাও পেয়ে যাই। এদিকে আমার হাতে ইকামা দিয়ে চাচা ১০ দিনের ইমার্জেন্সি ছুটি নিয়ে চলে যায় আর আসেনি। আমি এখানে একা হয়ে গেলেও আশে পাশের মানুষ গুলা খুবই ভাল ছিল। এভাবে কাজ করতে করতে ওই কোম্পানীতে ইকামা ট্রামস্ফার করি এবং আজও পর্যন্ত একই কোম্পানীতে আছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন ভাল অবস্তানে আছি বছর দুই বছর পর পর দেশে যাচ্ছি আসছি এভাবে চলছে প্রবাস জীবন।
✍️✍️✍️কিন্তু হঠাৎ করে গত ২০১৭/১৮ সাল থেকে মনে হচ্ছে কি করছি আমি l এটা কি ধরনের জীবন যে জীবনে নাই কোন নিজের ইচ্ছা নিজের স্বাধীনতা l এই জীবন তো পুংগ করে দিচ্ছে আমাকে l হয়ত কোম্পানী তাদের সার্থে আমাকে কাজের বিনিময়ে দিচ্ছে মাস শেষে একটা নাম মাত্র বেতন। এই জীবনের শেষ কোথায়?
ভাবতে ভাবতে খুজা খুজি শুরু করলাম কিভাবে দেশে কিছু করা যায় l কিভাবে এখানে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কিছু একটা শিখা যায়। যা শিখে দেশে গিয়ে কিছু একটা শুরু করে নিজে স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করতে পারি।
ইউটিউব ফেইজবুকে খুজা খুজি করে অনেক শিখার মাধ্যম পেয়েছি কিন্তু সেটা টাকা দিয়ে শেখা লাগবে বিশ্বাষ করতে পারছিলাম না l টাকা দিয়ে শিখতে গেলে কি শিখাবে ভাবনার বিষয় l তারপরও ভাবলাম দেখিনা না শুরু করে কোন কোর্স l তাই একটা অনলাইন কোর্স এর জন্য সারে ১২ হাজার টাকা দিয়ে এডমিশন নিলাম l নিয়ে কয়েকদিন অনলাইন ক্লাস করে দেখলাম যা শেখানো হয় সেটা বেসিক কিছু l যেটা অলরেডি ইউটিউবে ফ্রিতে অনেকে শিখাচ্ছে। বাদ দিয়ে দিলাম ওই অনলাইন ক্লাস এবং থেমে গেলাম সেখানে ভাবলাম হবেনা কিছুই।
✍️✍️✍️আমি প্রায়ই দেখতাম ইউটিউব ভিডিও যেহেতু আমি কিছু শিখার জন্য খুজা খুজি করি এবং লার্নিং অনেক ভিডিও দেখি। একদিন হঠাৎ প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর ভিডিও আমার প্লে ভিডিও এর সাজেশন লিস্টে আসে এমনিতেই স্যার এর ভিডিও প্লে করি স্যার এর কথা বলার ভংগিতে ভিডিওটা শুনে বেশ ভাল লাগছিল যেমনটা স্যার ভিডিওয়ের শুরুতে বলে থাকেন আপনারা জানের যে #নিজেরবলারমতএকটাগল্প ফাউন্ডেশ এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলা এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী সহ প্রায় ৫লক্ষ মানুষকে গত সাড়ে ৩বছর ধরে আমরা অনলাইনে ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছি যে কীভাবে একজন উদ্যোক্তা হতে হয়l এবং এই পুরোটা কার্যক্রম হয় বিনা মূল্যে বিনা পয়সায় টানা ৯০ দিন শিক্ষা দেওয়া হয় কোন ধরণের ফি ছাড়া।
আমি সাথে সাথে ভিডিও চালু রেখে ফেইজবুকে এসে চার্স দিয়ে আমাদের ফাউন্ডেশন বেড় করি এবং সেখানে জয়েন হই। কিন্তু কিছুই বুঝতাম না কিভাবে সেশন পাব কিভাবে রেজিস্টেশন করবো। দেখা শুরু করলাম পোষ্ট গুলা।
একটা পোষ্ট দেখলাম ১৪তম ব্যাচে রেজিস্টেশন চলছে কমেন্ট বক্সে জিজ্ঞাস করলাম আমি রেজিস্টেশন করতে চাই অবাক করার বিষয় অনেকেই আমাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আমাকে রেজিস্টেশন করে দিলেন।
পরের দিন স্যার এর আরেকটা পোষ্ট দেখলাম সেখানে স্যার বললেন নিজ নিজ জেলা মেসেঞ্জার গ্রুপে যোক্ত হওয়ার জন্য সেম কাজটা করলাম কমেন্ট বক্সে অনেকেই আমাকে দিকনির্ধেশনা দিলেন এবং জেলা মেসেঞ্জার গ্রুপে যোক্ত হয়ে গেলাম আলহামদুলিল্লাহ।
প্রতিদিন স্যার এর সেশন গুলা পড়ে এবং ভিডিও সেশন দেখে নিজের ভিতর শক্তি যোগাতে থাকলাম এভাবে ৯০ টা সেশন কম্পিট করলাম। করার পরও লেগে আছি নিজেকে মজবুত ভাবে তৈরি করার জন্য এবং অনেক পরির্তন করতে পেরেছি নিজেকে এবং এখনও লেগে আছি।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল হেলায় হেলায় কাটিয়ে দেওয়া ২০ বছর পর হলেও আজ আমি মনের শক্তিবল এর সাথে সপ্ন দেখছি একজন উদ্যেগক্তা হব এবং মুক্তি নিতে পারব এই প্রবাস নামক জেল কানা থেকে। আর এটা এক মাত্র সম্বভ হয়েছে আমার অভিভাবক প্রিয় মেন্টন জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার এর শিক্ষায় এবং #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশন এর কারণে।
স্যালুট প্রিয় স্যার আপনাকে। আমার জন্য দোয়া করবেন প্রিয় অভিভাবক।
প্রিয় প্লাটফর্মের সকল ভাই ও বোনদের প্রতি ভালবাসা ও দোয়া। আমাকে আপনারা সকলে ভালবেসে পাশে রাখবেন।
আমার জীবনের গল্প লেখায় কোন ধরণের ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমার জীবনের গল্পটি ধয্যের সাথে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৮
Date:- ০৮/১১/২০২১ইং
মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন
ব্যাচঃ ১৪
রেজিঃ ৬২১৪২
নিজ জেলাঃ মৌলভীবাজার
বর্তমান অবস্তানঃ সৌদি আরব,রিয়াদ