কালো কালো করিস না লো ও গোয়ালের ঝি আমায় বিধাতা করেছে কালো আমি করবো কি??
ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছে আমাকে নিয়ে আলোচনার মূল কেন্দ্র আমি কালো আমার বিয়ে কেমনে হবে???
খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
আসসালামু আলাইকুম
#নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশন এ একজন আজীবন সদস্য
সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই যিনি এই পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হয়ে এই পৃথিবীর বুকে এসেছি।।
সুস্থ সুন্দর হয়ে বেচে আছি সেই জন্য শুকরিয়া জানাই অবিরত।।
আর কৃতজ্ঞতা জানাই ফাউন্ডেশনের মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের এতো সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে অবমুক্ত করে দিয়েছেন। আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যক্তারা প্রতি নিয়ত শিখছি।
ছোট বেলা বেড়ে উঠাঃ
জন্ম হয় ফেনী জেলার সোনাগাজি থানার প্রত্যন্তগ্রামে। কাজির হাট সুইজ গেটে এলাকায় আমার বাবা মায়ের সংসারে প্রথম সন্তান, বলতে গেলে বাবারা দু ভাই চাচার দুই ছেলে তারপর বাবার ঘরে আমার জন্ম। জন্মে আমার বাবা খুশি হয়েছেন কারন আজও আমি বাবার রাজকন্যা।
দাদী ও জন্মের পর আচল পেতে কোলে তুলে নেন।। সেই তো এরপর আটমাস বয়সে আব্বু আম্মু আমাকে নিয়ে চট্টগ্রাম পাড়ী দেন আব্বু তখন চট্টগ্রাম একটা স্কুলে জব করতেন। আমাদের মা মেয়ে সেখানে আরেক জীবনের শুরু তখন।। এর কিছুদিন পর আব্বু জব হয় সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে।
আমিও বড় হচ্ছি আমার আড়াই বছর বয়সে আমাদের পরিবারে এলো আমার বোন।। পিঠাপিঠি দু বোন। এবার আমি বোধহয় একটু সবার নজরে এলাম গায়ের রং ময়লা।
আমার লাইফে আমার গায়ের রং নিয়ে যতো উপহাস সয়েছি অন্য কিছুতে হইনি
আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশি সকলের চিন্তার কারন আমি কালো। আমার জীবনের সব যোগ্যতা আমার গুন, আমার কথা বলা, আমার চেহারা,আমার চোখ কিংবা আমরা প্রতিভা কোনো কিছুই আমার রং কে ছাপিয়ে উঠতে পারলো না।
একটা ৫/৬ বছরের বাচ্চা প্রতিনিয়ত শুনছে সে কালো এটা তার অপূর্নতা তার মা সুন্দর বোন সুন্দর আর সে তার বাবার মতো কালো।
আসলে দোষ কার দেবো সমাজে সাদা চামড়ার মূল্য বাকি সব অযোগ্যতা কে ছাপিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে নিজের আত্মবিশ্বাসের ভীত নড়ে উঠতে লাগলো। হাতের কাছে যাই পেতাম ক্রিম বা পাউডার সে টা যাই হোক মুখে ঘষতাম আর ভাবতাম সৃষ্টি কর্তা এতো কিছু দিলে একটু রুপ দিলে কি হতো?
প্রতি নিয়ত রুপের কাছে হেরে যাওয়া এক শিশু।সুন্দর বান্ধবী পাশে হাটলে নিজেকে আরও ছোট মনে হতো কুন্ঠিত হতাম।
কৈশোর আর পরিনত এক নারীঃ
কালো হওয়া যেনো নিজের হাতে ছিলো। জীবনে কিশোরীর এক আবহ এলো পৃথিবীর সৌন্দর্য চোখে অন্যরকম ভাবে ধরা দিতে লাগলো।কিন্তু কালো হওয়া যে একটা অভিশাপ।
ভালোলাগা জীবনে প্রথম প্রেম তবু ভয় কালো নারীর প্রেম হয়না তারা কেবল নিজের ভালোলাগাটা মনের ভিতর আড়াল করে রাখে।
বান্ধবীরা চুটিয়ে প্রেম করে আর আমি তাদের সাথী হয়ে যাই আর নিজের কালো রঙ্গের কারনে নিজেকে কেবল অবাঞ্ছিত মনে হয়।
বিয়ের প্রস্তাব আসে। শাশুড়ী এসে আংটি পরিয়ে দেয় আব্বু আমাকে জড়ীয়ে ধরে আমার শাশুড়ী কে বলে আমার মেয়ে কালো কাজ জানেনা সেদিন চোখদুটো টলমল করছিলো একটা কারনে আমি মানুষ হিসেবে অতটা দামি নই কারন আমি গায়ের রঙ্গে পরাজিত এক নারী।
পরদিন বর এসে আমাকে তার পছন্দ হয়নি সেটা ঠিকই টের পেয়েছিলাম কারন তার মা আর বোনের কথা শুনেছিলাম
সেদিন প্রচন্ড ভয়ে কেপে উঠেছিলাম কার সাথে জীবন কাটাবো যে কিনা আমাকে পছন্দই করেনি সে ভালোবাসবে কি করে???
আমি মনে প্রানে চেয়েছিলাম বিয়েটা ভেঙ্গে যাক কিন্তু ভাগ্যের হাতে আমরা সবাই বন্দী তাই হয়তো যে আমাকে পছন্দ করেনি তার ঘরেই আসতে হলো।
বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও আত্মীয়রা কানাকানিতে ব্যাস্ত ছিলো কালো মেয়ের বিয়ে।
সেই ১৭ বছর ধরে সংসার করছি অসম্মান করেনি কখোনো তবে আমার ভিতর গেথে গেছে গায়ের রঙ্গ বুঝি সবকিছুর উর্ধে। খুব কাছ থেকে দেখেছি দু মেয়ের মধ্যে কালো মেয়ের জন্য বাবা মায়ের টেনশন টাকা জমিয়ে রাখা বিয়ের জন্য।
আজও মনে হয় আমার বর কি মন থেকে মেনে নিয়েছে? কারন সবাই স্বপ্ন দেখে লাল সুন্দর টুকটুকে বউএর কিন্তু আমি সেই যোগ্যতা নিয়ে জন্ম নেইনি।
আমরা কতো সহজে একজন মেয়েকে তার গায়ের রঙ্গ দিয়ে বিচার করে ফেলি
গায়ের রঙ্গ কেউ সৃষ্টি করেনা কারও চেহারা কেউ তৈরি করেনা পুরোটা বিধাতার সৃষ্টি। অথচ একটা মেয়ের মনের শক্ত ভীতটা নাড়ীয়ে দেই তাকে তিরষ্কার করে।
ভয়ে হয়তো চোখে কাজলই পরা হয়না যদি কেউ বলে কালো আবার কালি মেখেছে
এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর শিখেছি নিজেকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। যেদিন নিজের নামকে নিজেকে ভালোবাসার সেশন পড়ি সেদিন আমি খুব কেদেছি সবার আড়ালে কারন আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখিনি। আমি শিখেছি নিজের দোষ ধরা নিজের খুত ধরা অবশ্য ছোট বেলা থেকে আমার সাথে এগুলো বেশি হয়ে আসছে।।
একটা মানুষকে তার আকার, আকৃতি বা রং নিয়ে তিরস্কার করা মানুষটির মানুষিক ডিপ্রেশনে ঠেলে দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়
সবকিছুতে দোষি ছিলাম। আমার হাতধরে কাউকে বলার মতো পাইনি" তুমি পারবে তোমাকে দিয়ে হবে"
এতো অভিযোগ শুনতাম আমার বিরুদ্ধে নিজেকে কোনো কাজের যোগ্য মনে হতো না। ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর সম্মান পেয়েছি অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
সেই স্কুল লাইফে কবিতা আবৃত্তি করতাম ফাউন্ডেশনে এসে সেই চর্চাটা আবার করলাম। অনেকে বলে বেশি কথা বলি কিংবা যে কোনো বিষয়ে হুটহাট রেগে যাই আমি বুঝি কেনো এমন করি।
গত ৩৫ বছর কেবল অবিযোগ অনুযোগ আর অযোগ্যতার অদৃশ্য সাইনবোর্ড গলায় ছিলো আজ চিৎকার করে বুঝাতে চাই আমি অযোগ্য নই আমি পারি।
সেশন গুলো তে দেখি কথায় জড়তা স্পষ্ট নয় তবু তাকে অনুপ্রাণিত করে তাকে এগিয়ে রাখে সেও সম্মান পায় যে নিজেকে তুচ্ছ মনে করে।।
একদিন এক সেশনে আমি বলছিলাম আমি তুচ্ছ এক আপু খুব বকা দিলো আমি তুচ্ছ নই আমি অসুন্দর নই আমি জেনেছি আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি,আমি আরও অনেকের থেকে ভালো।
সবকিছুর জন্য আমি স্যার ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি কখনোই নিজেকে চিনতে পারতাম না যদি সেশন গুলোতে যুক্ত না হতাম।
আমার ১০ বছরের মেয়েটা আমার মতো চাপা তার গায়ের রং আমি প্রতিনিয়ত তাকে বুকে নিয়ে বলি সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রাজকন্যা। তাকে আজও বুকে চেপে ধরে বলি আমি যে কুৎসিত শৈশব পেয়েছি তার ছোয়া আমার মেয়েকে পেতে দিবো না।।
নিজেকে গায়ের রঙ্গে নয় কর্ম দিয়ে বিচার করবে আমার সন্তান।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৮
Date:- ০৮/১১/২০২১ইং
Ferdous Ara Yeasmin
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
জেলাঃফেনী, থানাঃ সোনাগাজি
অবস্থানঃচট্টগ্রাম
ব্যাচঃ১৪
রেজিষ্ট্রেশনঃ৬৪৬৯০