ইন্জিনিয়ার থেকে খামারি
আজ শুনাবো একজন ইন্জিনিয়ার এর খামারি হওয়ার গল্প।
শৈশব ও কর্মজীবন শুরু কথা আগের একটি পোষ্টে লিখেছিলাম।
🎄বিয়ে ঃ-চাকরি জীবনের ৪র্থ বছর বিয়ে করে ফেললাম। আম্মার পছন্দ, পাত্রী দেখতে বাড়ী থেকে আম্মা ছোট বোন এলেন চট্টগ্রাম আর্টিলারি সেন্টারে পাত্রীদের সরকারি বাসায়, আমি আমার কর্ম স্থল, আবুল খায়ের ষ্টীল থেকে গেলাম।
এর আগে কখনো ঐ এলাকায় যাইনি, যা হওয়ার তাই হয়েছে, রিকসাওয়ালা আমাকে জেলে পাড়া নিয়ে যায়, ঐ খান থেকে কয়েক জনকে জিঙ্গাসা করে, আর্টিলারি সেন্টারে খুজে পাই।
চট্টগ্রাম আসার বয়স ৪ বছর হলেও অফিস ছিলো মাদামবিবির হাট, তাই শহরে তেমন কিছুই চিনতাম না।
যাইহোক আমাকে রিসিভ করলো পাত্রী এর ছোট ভাই। ড্রইং রুমে বসার সাথে সাথে আম্মাও ছোট বোন আমার কাছে আসে, আম্মা বললো বাবা আমিতো তুমি আসার আগে মেয়েকে আংটি পরিয়ে দিয়েছি, আমি বললাম, তাহলে আমাকে আসতে বললেন কেন? আপনাদের পছন্দ, আমাকে জানিয়ে দিতেন,, আমিতো আপনার কথার উপরে কোন কথা বলবো না ইনশাআল্লাহ।
এর পর সেই পরিমান নাস্তার আয়োজন করেছে, একটু পর পাত্রীকে সামনে আনা হলো, আমি নাম জানতে চাইলাম, এর পর বললাম সুরা ফাতেহা পড়তে, এর পর দোয়ায়ে কুনুত পড়তে বললাম, তার পর বিদায় নেয়ার সময় ১০০০ টাকা হাতে দিলাম।
আম্মা ছোট বোন আমি বসে আছি। ছোট বোন বললো ভাইয়া, আপনার পছন্দ হয়েছে?
আমি বললাম, আমার পছন্দ হয়নি! আম্মা ছোট বোন সবাই মন খারাপ করে ফেলেছে। এর পর আমি মনে মনে ঠিক করলাম, বিয়েতো জীবনে একবারই হয়,, আর আমার মা এর মনে কষ্ট দেয়া কোন ভাবেই যাবে না, তাই বললাম আপনারা যেহেতু পছন্দ করেছেন, আমার কিছু বলার নাই, আপনারা কথা এগিয়ে নিন।
এর পর ২০-২ -২০০৪ শুক্রবার বিয়ে সম্পূর্ন হয়। এরপর আল্লাহর রহমতে যাকে বিয়ের আগে পছন্দ হয়নি সেই জীবনের বড় অংশ হয়ে গেলো। তাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায়না।
বিয়ের পর সংসার কোন রকম চলছিলো। বিয়ের দুই বছর পর হুজাইফার জন্ম হয়।
বাসা তখন ভাটিয়ারীতে , চাকরি বাসা, চাকরি বাসা এই ভাবেই চলছিলো জীবন। আলহামদুলিল্লাহ হুমায়রার জন্ম হলো, বাসা তখন আব্দুলার ঘাটা ফৌজদারহাট । একসময় হাতে আসে বাটন মোবাইল। তখনও আগের নিয়মেই জীবন চলছে। ২০১৩ সালে হাতে আসে এম্ব্রোয়েড ফোন , ফেইসবুক, ইউটিউব, এই সবের সাথে পরিচয় শুরু।
তখন ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে আমি শিশু। তার পরও প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নেটে সময় দেই। ইউটিউবে ছবি দেখি, ফেইসবুক সময় দেই। নিজেও একটু একটু লেখা লেখি শুরু করি, আমার প্রায় বানান ভুল হতো, এর পরও লিখতাম।
অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে আমার কোন ধারনা ছিলো না, এর পরও কিছু কিছু প্রতারিত হওয়ার কথা শুনতাম বন্ধুদের নিকট, তাই কেনা কাটা অফলাইনেই করতাম।
এক সময় জানলাম বিশ্বস্ত সাইড গুলি থেকে ক্রয় করলে প্রতারিত হওয়া সম্ভাবনা নেই।
তখন আস্তে আস্তে কেনা কাটা শুরু করলাম।
এর পর আসলো ফেইসবুক মার্কেটিং, এখানেও বিশ্বস্তা খুজতে থাকলাম, নিজের অজ্ঞতার কারনে প্রতারিত হয়েছি,, অনেক শুকরিয়া, প্রিয় Iqbal Bahar Zahid স্যার। এত সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি থাকবেন দেওয়ার জন্য। এখন অনেক কিছু শিখেছি।
#ইন্জিয়ার থেকে খামারি।
একদিন হুজাইফা এক পাখি ওয়ালার থেকে ৪ টা কোয়েল পাখি কিনে করে,, আমি ছোট একটা খাঁচা কিনে দেই। আমাদের বাসার পিছনের দিকে একটি দরজা ছিলো, বারান্দার মতো ওইখানে, এলোভেরা, মরিচ, টমেটো প্লাস্টিকের বোতলে লাগিয়েছিলো হুজাইফা।।।
দুপরে খাওয়ার পর পাখির খাঁচাটা বারান্দায় রেখে আমরা ভিতরে চলে আসি, একটু পর হুমায়রা খুব জোরে চিৎকার, কিরে কি হয়েছে।
বাহিরে এসে আমিও অবাক, কাক ঠোকর দিয়ে তিনটা পাখি মেরে ফেলেছে, ফেরদৌস আমাকে বললো, হুজাইফা বাসায় আসার আগে কিছু একটা কর, না হয় ছেলে কেঁদে পুরা বাসা মাথায় তুলবে। এখন পাখি কোথায় বিক্রি করে তাতো জানিনা, কয়েক জনকে ফোন দিলাম, একজন বললো কর্নেল হাট পাখির দোকান আছে, দেরি না করে ঐ খানে গিয়ে ৬ টা পাখি একটি খাঁচা সহ কিনে আনলাম। এখন পাখির খাওয়া, পাখি রোগ বালাই কিছুই জানিনা, শুরু করলাম ইউটিউব সার্চ, ভিডিও দেখে দেখে শিখতে থাকলাম,। কয়েক দিন পর পাখি গুলি ডিম পাড়ায় খুব খুশি সবাই। পাখি নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে হলো। ফেরদৌস কে জানালাম সে এক কথায় রাজি।আলহামদুলিল্লাহ যখনই যে কাজ করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার সাপোর্ট পেয়েছি। আমার কোনো কাজে সে আমাকে নিরৎসাহ করেনি
চাকরির কারনে প্রশিক্ষণ নিতে পারলাম না,, ২ টি খামার ভিজিট করলাম। তার পর ২ তাকের একটা খাচা কিনলাম রেডিমেড, পাখি উঠালাম ৫০টি এক মাস বয়সের, ১৫ দিন পর থেকে আস্তে আস্তে ডিম আসা শুরু প্রতি দিন গডে ৪০,৪২ টা ডিম আসতে শুরু করলো । অফিসে বন্ধুদের কাছে বললাম, আমার নিকট কোয়েল পাখির ডিম আছে কারো লাগলে দিতে পারবো। এই শুরু হলে আমার চাকরির বাহিরে কাজ। এক মাস পরে ডিমের চাহিদা বিবেচনায় পাখি করলাম ১০০ টি। এখন ডিম আসে ৮০, ৮৫ টি।
খাঁচা বড় বানাতে হবে, পাখি বাড়াতে হলে, এই সময় শুরু হলো করোনা মহামারী। বাসা থেকে বাহিরে যাওয়া বন্ধ এক বস্তা খাওয়া প্রায় একমাসের কাছাকাছি নিলাম, তার পর, কি আর করবো, পাখির খাবার আনা খুব কষ্ট হয়ে পড়লো, প্রতি দিন ৮৫,৯০টা ডিম ষ্টক হতে লাগো বাসায় নিয়মিত ডিম খাওয়ার পরও ডিম ষ্টক হতে লাগলো, তবে বাসার আশে পাশে কিছু বিক্রি হতো, একদিন এক দোকানদার কে বললাম সে পাইকারি নিয়ে গেলো,।
তখন আমাকে অফিসে কোয়ারান্টাইন থাকতে হচ্ছে,পাখির খাবার জোগাড় করাটাই সমস্যা হয়ে গেলো সেই সময় তাই পাখি জবাই করে খাওয়া শুরু করলাম। পরিচিদের নিকট পাখি কিছু বিক্রিও করলাম। এইভাবে শেষ হলো কোয়েল পাখি পালন পর্ব।
করোনার সময় আমি ও আমার সহ কর্মিরা নাটোর থেকে মধু নিয়ে আসি খাওয়ার জন্য। এক থেকে দুই, একমাসে ১০ কেজি মধু আনতে হয়। ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরর স্যারের লাইফষ্টাইল মোটিভেশান শরু করি, সয়াবিন তেল থেকে, সরিষার তেল খাওয়া শুরু করি ।
এর পর ফেরদৌস আমাকে অনুপ্রেরনা দিতে থাকে।আমি প্রথমে রাজি হইনি, কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা। সে প্রতিদিন বলতো আমি যাতে এই পন্য গুলি কাজ করা শুরু করি। তখন আমাদের মধ্য যাদের কে মধু ও তেল দিয়েছি, তাদের থেকে রিভিউ নেয়া শুরু করি।
৫ কেজি মধু আর ৩০ লিটার তেল দিয়ে শুরু আমার নতুন উদ্যক্তা জীবন
এর পর নিজের ঢোল নিজেই পিটাই। কাজ শুরু করলাম। বন্ধুরা টিটকারি করা শুরু করেদিলো। আমি হাসতাম কিছুই বলতাম না। এক সময় তারাই জানতে চাইলো মধু কেমন? আমি বললেতো হবে না, মধু খায় এমন কাউ কে গিয়ে জিঙ্গাসা কর। আর না হয় ল্যব টেষ্ট করাতে পার, এর পরও ভাল না লাগলে আমি ফেরত নিবো।
৩০ লিটার এক কাটুন তেল বিক্রি করতে আমার প্রায় ২ মাস লেগে ছিলো। আমি ধৈর্য হারাইনি,লেগেছিলাম। আর এখন প্রতি মাসে আলহামদুলিল্লাহ , তেল, মধু,ঘি সেল হচ্ছে।বেশিরভাগ রিপিট কাষ্টমার।
বড় পরিসরে এখনো যেতে পারি নাই, প্রিয় ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো এগিয়ে যাবো। চাকরির পাশা পাশি করছি, আলহামদুলিল্লাহ , আরেকটু ফান্ডিং কালেকশান হলে এগ্রো নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে, শিখছি প্রতিনিয়ত,, ১৫ তম ব্যাচের ৯তম সেশনে যুক্ত হয়েছিলাম,, এর পর এক দিনের জন্যেও সেশন চর্চা ক্লাস মিস করি নাই ,, চাকরিতে গাড়িতে, বেডাতে সময় মত সেশন চর্চায় জয়েন করতাম।
আলহামদুলিল্লাহ শিখছি, আরো অনেক কিছু শিখবো, লেগে আছি, লেগে থাকবো, নিজের বলার মত একটি গল্প যতক্ষন না তৈরি হয়।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি , ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর প্রতি যার অক্লান্ত পরিশ্রম আজকের এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৭
Date:- ০৬ & ০৭/১১/২০২১ইং
মুহাম্মদ মোতাহের হোসেন
ব্যাচ নং ঃ-১৫
যুক্ত আছি এগ্রো ফোরামে।
রেজিষ্ট্রেশন নং ঃ- ৬৯৯২৩
উপজেলা, ঃ- সোনাগাজী।
জেলা ঃ-ফেনী।
বর্তমান অবস্থান ঃ-সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম।
কাজ করছি কাঠের ঘানি সরিষার তেল, বিভিন্ন ফুলের মধু, ঘি, ও শীতলপাটি নিয়ে।