সকলের কথার জবাব কাজের মাধ্যমে দিতে পারি
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
👉👉জীবন গল্প 🌲
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কে এবং আমাদের পরিবারের সবাইকে সুস্থ রেখেছেন।
🌲জন্মঃ
অজপাড়াগাঁয়ে ২৭ ডিসেম্বর ২০০০ সালে নানা বাড়ি পটুয়াখালীর ভরিপাসা গ্রামে আমার জন্ম। পরিবারের আমি এক মাত্র সন্তান। আমার দুই ভাই ছিলো ২য় ভাই জন্মের পরপরই মারা যায় এবং ৩য় ভাই ২ বছর বয়সে পুকুরে পরে মারা যায়। জন্মের পর থেকেই বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। কারণ দাদার অসিয়ত ছিলো বড় চাচার কাছে দাদার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় বাবার পড়া শুনা শেষে চাকরি দেওয়ার। বড় চাচা বাবাকে চাকরি না দিয়ে তার শ্যালক কে চাকরি দেন। বিভিন্ন ভাবে বাবাকে অপমান অপদস্ত করে তারিয়ে দেন। তখন থেকে আমাদের পরিবার আর্থিক সংকট এর মধ্যে কাটছে।
👦শিশুকালঃ-
বাবার বেকারত্বের কারণে চার বছর নানা বাড়িতে থাকি। বাড়িতে আসার মত ভাড়া বাবার কাছে ছিল না। হঠাৎ একদিন খবর আসে দাদু খুব অসুস্থ। মা আমাকে নিয়ে চার বছর পরে প্রথমবারের মত দাদা বাড়ি যান। তখন ছোট্ট ঘরে দুই পরিবার থাকতাম। আমাদের থাকার জন্য বারান্দায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে চকি ছিলো। এক সপ্তাহ পর দাদু বলে ভাই আমার, তোমার বাবার কামাই নাই (ইনকাম) নানা বাড়ি গিয়ে থাকো। তাই আমরা নানা বাড়ি চলে যাই। এক বছর পরে দাদা বাড়ি যাওয়ার জন্য দাদু খবর পাঠান। দাদা বাড়ি যাওয়ার পরে এক বেলাও কেউ খাওয়ায়নি। দাদু মাকে বলেন তোমাদের ভাগের চালডাল এখন রান্না করে খাও। মা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আর ভাবলো আসতে না আসতেই এক ঘরে এক চুলোয় দুই পাতিলে রান্না। ওই দিন থেকে দাদু আমাদের সাথে থাকেন। চাচী চাচাতো ভাই বোনকে নাস্তা দিতো আমিও গিয়ে নাস্তার জন্য হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। চাচি নাস্তা দিত আর আমাকে বলতো তোর বাবাকে খাবারের কারখানা দিতে বলিস। আবার মাটিতে বসে কান্না করতাম তখন বলতো তোর বাবাকে সাবানের ফ্যাক্টরি দিতে বলিস। কারণ সাবান কিনা টাও খুব কষ্টের ছিল, চাচার সাবান ব্যবহার করতাম। তারপর থেকে মা আর কোনদিন তাদের কিছু ধরতে দেয়নি। আর থাকাটাও ছিলো অনেক কষ্টের, বাঁশের চকির উপরে বসে খানা খেতাম, আসবাবপত্র চকির নিচে রাখতাম এবং ঘুমের জন্য ছিল বাঁশের চকিটাই। এভাবে করে কাটে আমার শিশুকাল।
✒️🎓শিক্ষাজীবনঃ-
চার বছর বয়সে মা শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করান। পরের বছর দাদার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় ভর্তি হই। তখন পড়াশোনায় আমি অতটা মনোযোগী ছিলাম না। তখন চাচী হাসা হাসি করতো আর বলতো বাবার ডাবল সার্টিফিকেট আছে আর লেখাপড়া লাগবে না (বাবা মাদরাসা থেকে কামিল ও কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন) আবার চাচী বলতো আমার এক মামা ছিলো ২২টি লেখার সিলেট ভাঙছে তারপর ও শিশু শ্রেণী পাস করতে পারে নাই। ২০০৯ সালে হাফিজি তে ভর্তি হই। নূরানী, নাজেরা, ও হেফজ ১ পারা পরে চলে আসি। ২০১৪ সালে পঞ্চম শ্রেণি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন A+ পাই। আরো ভালো পড়াশোনার জন্য ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ওখানে ভর্তি হই এবং অষ্টম শ্রেণীতে A+ পাই। পরবর্তীতে দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার থেকে দাখিল দেই এবং বর্তমানে আলিম পরিক্ষর্থি।
💰আর্থিক উন্নতিঃ-
জন্মের পর পাঁচ থেকে ছয় বছর অনেকটা কষ্টের ছিল। পরবর্তীতে বাবা কেরানীগঞ্জ ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৩ সালে কেরানীগঞ্জ জমি ক্রয় করেন, ২০১৪ সালে হজ্জ ট্রাভেলস নিয়ে কাজ শুরু করে। আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। আল্লাহ এখন অনেক ভালো অবস্থানে রেখেছেন।
🌱উদ্যোক্তা জীবনঃ-
ছোটবেলার সমস্ত কথাগুলো মা সব সময় আমাকে বলতো। কারণ সকলের কথার জবাব কাজের মাধ্যমে দিতে পারি। চাচী বলতো তোর বাবাকে কারখানা, ফ্যাক্টরি দিতে বলিস এ কথাগুলো আমাকে খুব তাড়না দিতো। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো আমার নিজস্ব কারখানা থাকবে, আমি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করবো। কিন্তু আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কিছু করতে হবে সেটা বুঝতাম না। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বুঝতে পারলাম আমার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করা দরকার। তারপরে ফ্রেন্ডস্ ফাউন্ডেশন নামে একটি সমিতি গঠন করি। পরবর্তীতে আরও দুটি সমিতি গঠন করি এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মানবতার পাথেয় নামে একটি সংগঠন তৈরি করি। অতঃপর ভাবলাম নিজস্ব প্রতিষ্টান পরিচালনার জন্য আমার অনেক অভিজ্ঞতা দরকার। এক বন্ধুর মাধ্যমে একটি কোম্পানিতে ১৫ মাস এবং আরেকটি কোম্পানিতে ৯ মাস সেলার হিসেবে কাজ করি। এবং পাশাপাশি অনেকগুলো ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনা করি।
কোম্পানি পরিচালনায় দক্ষ হওয়ার জন্য মাইক্রোসফট অফিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সেলস মার্কেটিং এবং বিভিন্ন ট্রেনিং ও বিজনেস এর প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। তারপরে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করি। দুটি প্রজেক্ট রেডি করি Similar Shop BD ও Kaca Bazar । দুটি প্রজেক্ট একসাথে চালানো অনেক অর্থের ব্যাপার, তাই Similar Shop BD নিয়ে কাজ শুরু করি। আমি চাই পরিবারও রিলেটিভ এর সহযোগিতা না নিয়ে আমার যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন।
গ্রুপে যুক্তঃ-
২০২০ সালের মার্চ মাসে ফেসবুকে Iqbal Bahar Zahid স্যারের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাই ভিডিও দেখে আমি খুবই আনন্দিত হই কারণ আমি আমার বিজনেস এর জন্য একজন মেন্টর খুজে পেয়েছি। ( আমি চাচ্ছিলাম এমন একজন লোক সে আমাকে বিজনেস এর A টু Z শিখাবে) অতঃপর নরসিংদীর Atik Hassan Chowdhury ভাইয়ের মাধ্যমে আজিবনের জন্য সদস্য হই।
অশেষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মেন্টর, আইডল জনাব iqbal bahar zahid স্যারের প্রতি, তিনি আমাদের জন্য তৈরি করেছেন এই ভালোবাসার প্রিয় প্ল্যাটফর্ম। উনার মহৎ উদ্যোগের জন্য আমরা পেয়েছি বিশাল এই পরিবার। এখানে পেয়েছি অসংখ্য ভালো মানুষের দেখা, অসংখ্য উদ্যোক্তাদের দেখা, নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সুযোগ, পেয়েছি জীবনের গল্প বলার সুযোগ। মূল্যবান সময় দিয়ে জীবনের গল্প পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পেইজ লিংক- https://www.facebook.com/104813055282513/posts/124550026642149/
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৫
Date:-০৪ & ০৫/১১/২০২১ইং
মোঃ ফাতিন রহমান
ব্যাচঃ ১১
রেজিঃ ২৫৪৩৬
জেলা ঃ পটুয়াখালী
বর্তমান ঠিকানা ঃ ওয়ারী জোন