কিন্তু কখনো মনোবল হারাইনি
★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম★
আস্ সালামু আলাইকুম
♦সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার যিনি আমাকে এই সুন্দর ধরণীর বুকে এখন পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন এবং আপনাদের সামনে আমার জীবনের কথাগুলো লিখার মতো শক্তি সামর্থ দান করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ্।
♥কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার জন্মদাতা ও জন্মদাত্রী পিতা-মাতার প্রতি যাদের উছিলায় আমি দুনিয়ার আলো বাতাস দেখতে পেয়েছি।
♥সেই সাথে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার প্রিয় মেন্টর, জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যিনি নিঃস্বার্থভাবে নিজের অত্যন্ত মূল্যবান সময়, মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে আমাদের বাস্তব জীবনের এই কণ্টকাকীর্ণ পথকে অত্যন্ত সুগম করার এক মহা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছে একটাই চাওয়া আল্লাহ্ যেন স্যারকে সুস্হতা ও নেক হায়াত দান করেন।
♦স্যারের নিজ উদ্যেগে গঠিত "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর মাধ্যমে আমি আমার নিজের জীবন থেকে নেয়া কিছু গল্প আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ্।
♦আমার পরিচিতি
আমি-আনোয়ার হোসেন।
আমার জন্ম ফেনী জেলার অন্তর্গত দাগণভূঁঞা উপজেলা উত্তর আলীপুর গ্রামে।
আমরা দুই ভাই, এক বোন।
ভাই বোনদের মাঝে আমি সবার বড়।
বর্তমানে আমি ওমান প্রবাসী, একসময় আমার বাবাও ছিলেন ওমান প্রবাসী।
♦বাবা ওমান এসেছিলেন ১৯৯২ সালে।
ওমান আসার আগে আমাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী বেকের বাজারে বাবার নিজস্ব একটি টেইলরিং শপ ছিলো।
দোকানে আয় রোজগার ভালোই ছিলো, তবুও সংসার চালিয়ে পেরে উঠতেন না।
কারণ, আমাদের পরিবারে আমরা মা-বাবা, ভাই-বোন ছাড়াও বাবার আরো তিন ভাই ছিলো বেকার।
যদিও ভাইদের মধ্যে বাবা ছিলেন মেঝ তবুও সংসারের হাল বাবাই প্রথম ধরেছিলেন।
তাছাড়া আমার দুই ফুফু তাদের স্বামী-সন্তান নিয়ে আমাদের বাড়ীতে নিয়মিত আসতেন এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে বেড়াতেন।
মোটকথা, বাবা সংসারের এই বেহাল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই বিদেশে পাড়ি জমান।
বাবা বিদেশ গেলেন সংসারের অভাব ঘুচাতে, কিন্তু অভাব যেন আরো জেঁকে বসলো আমাদের উপর।
তার কারণ, বাবা বিদেশ যাওয়ার আগে বাবাই সংসারের দায়িত্বগুলো পালন করতেন।
বাবার অবর্তমানে মাস শেষে চাচাদের কাছে টাকা পাঠাতেন ঠিকই কিন্তু কত পাঠাতেন কখন পাঠাতেন তা আমাদেরকে কোনোভাবেই জানতে দেওয়া হতোনা।
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ছিলো চিঠিপত্রের আদান-প্রদান তাও ছয় মাস এক বছরে একটি চিঠি আসতো, কখনো আবার তাও না।
চাচাদের কাছে কিছু আবদার করলে বলতো, তোদের বাবা টাকা পাঠায় না কোত্থেকে দেবো!
♦একটা সময় বাবা টাকা না পাঠানোর অজুহাতে আমাদের কে নানার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আমাদের জন্মের আগে নানা ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন, নানী বেঁচেছিলেন।
অন্যদিকে দাদা আশির দশকে মারা গেলেও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দাদু এখনো বেঁচে আছেন, যদিও অসুস্থ।
যাইহোক মূলকথায় আসি, নানু ছিলেন আমাদের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
♦আমার বাবা ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা ওমান ছিলেন।
বাবার অবর্তমানে এই ৯/১০ বছর আমার মা, আমি ও আমার ছোট ভাই ছোট বোন আমাদের মমতাময়ী নানু ও মামাদের আশ্রয়ে ছিলাম।
♥আমার জীবনে আমার নানুর অবদান অনস্বীকার্য, আল্লাহ্ আমার প্রাণপ্রিয় নানুকে বেহেশতের সর্বোচ্চ মাকাম জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন, আমীন।
নানুর সাথে আমার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে তার মধ্যে একটি স্মৃতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি...
তখন আমার বয়স ৬ অথবা ৭, তখনো সাঁতার শিখিনি তবে শিখার খুব আগ্রহ জাগতো মনে।
কেউ সাঁতার কাটলে পুকুর পাড় থেকে তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে।
সেদিন পুকুর পাড়ে কেউ ছিলো না, শুধু নানুই পুকুরে গোসল করছিলেন একা একা।
আমি পুকুর পাড় থেকে ভাবতে লাগলাম সাঁতার কাঁটা এ আবার এমন কঠিন কি!
সাহস করে পুকুরে লাফ দিলে এমনিতেই শিখে যাবো।
যেই ভাবনা সেই কাজ, নানুকেও কিছু বললাম না, দিলাম লাফ।
কিন্তু সাঁতার কাঁটা তো দূরের কথা বরং আমি ডুবে যাচ্ছি, এতক্ষন যদিও নানু অন্যমনস্ক হয়ে ছিলেন।
হঠাৎ পুকুরে আমার ঝাপটা ঝাপটিতে নানুর নজর পড়লো আমার দিকে।
তাড়াহুড়ো করে নানু অনেক কষ্টে আমাকে পাড়ে টেনে তুললেন।
এই পর্যায়ে আমি আর কিছুই বলছি না...
আশা করছি নানু আমার জন্য কেমন মানুষ ছিলেন আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
আপনাদের কাছে এইটুকুই চাইবো আপনারা আমার নানুর জন্য সবাই দোয়া করবেন।
♥আমার মায়ের জীবনটাও ছিলো অনেক সংগ্রামী!
আমরা যদিও নানার বাড়ীতে থাকতাম, আমার মা আমাদেরকে পিতৃভূমির সাথে সম্পৃক্ত রাখতে নানার বাড়ীর পাশের স্কুলে ভর্তি না করিয়ে ২ মাইল দূরে বাবার বাড়ির পাশের স্কুলে ভর্তি করান। এই দুই মাইল দূরের স্কুলে আমরা প্রতিদিন পায়েহেঁটেই আসা যাওয়া করতাম।
♦অবশেষে, ২০০১ সালে বাবা ওমান থেকে বাড়িতে এলেন ছুটিতে।
বাবার হাতে তেমন টাকা পয়সা ছিলোনা।
অন্যদিকে বাবার টাকায় তখন আমার চাচাদের জীবন বেশ ভালোই কাটছিলো।
বাবা যখন টাকার হিসাব চাইলেন, চাচাদের সাথে বাবার বাক-বিতন্ডা শুরু হলো।
এক পর্যায়ে চাচারা একজোট হয়ে বাবাকে ভিন্ন করে দিলো।
অসহায় বাবা, ঋণ করে আমাদের জন্য একটি টিনের ঘর করলেন।
তারপর বাবা ছুটি শেষে আবার ওমান চলে গেলেন।
ভালোই কাটছিলো আমাদের দিনগুলো।
২০০৬ সালে এস.এস.সি পরীক্ষা সম্পর্ণ করলাম।
২০০৬ সালেই আমার নানু মারা যান।
আমি পড়ালেখার পাশাপাশি ফেনীতে মামাতো ভাইয়ের কাঁচা ফুলের দোকানে সময় দিতাম।
ফুলের কাজগুলোও মোটামুটিভাবে আয়ত্ব করে নিলাম।
বাবা তখনো ওমান ছিলেন,
♦আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগে ০৯/০১/২০০৯ ইং তারিখে, কোনো এক অজানা স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমাকে বাবা ওমান নিয়ে এসেছিলেন।
তখনো জীবন-জীবিকার প্রয়োজনটা অতোটা বুঝে উঠার মতো বয়স ঠিক হয়ে উঠেনি!
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ওমান শহরে ২ বছর ৬ মাস কাটিয়ে আরবাবের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে দেশে চলে যাই।
♦পরবর্তীতে ২০১২ সালে মে মাসের ৬ তারিখে বাবার সহযোগিতায় ওমানে আমার বর্তমান কোম্পানি Majid Al Futtaim Carrefour এ জয়েন করি।
আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ ভালোই কাটছিলো দিনগুলো।
কিন্তু ২০১৬ সালে বাবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ ২৫ বছরের প্রবাস জীবন চুকিয়ে উনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবা দেশে চলে যেতে বাধ্য হন।
♦বাবা দেশে চলে যাওয়ার কিছুদিন আগে আমাদের টিনের ঘর ভেঙ্গে ৩ তলা ফাউন্ডেশন করে ৮ রুমের একটি ঘরের কাজ আরম্ভ করেছিলেন।
সেই ঘরের দুটি রুম ও ছাদের কাজ বাবা বাবা কমপ্লিট করতে পেরেছিলেন।
বাবা দেশে যাওয়ার পর প্রবাসে আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু কখনো মনোবল হারাইনি।
বাবার অবর্তমানে ওনার অসমাপ্ত ঘরের কাজগুলো ধীরে ধীরে আমি সম্পূর্ণ করি।
দেশে থাকা ছোট ভাইবোনের পড়ালেখা ও পরবর্তীতে ছোট ভাইকে Nipro JMI Pharma কোম্পানিতে চাকরি পেতে সহযোগিতা করি।
আমার বিবাহিত জীবনের আজ ৫ বছর হলো, বর্তমানে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দুটি কন্যা সন্তানও রয়েছে।
দুই বছর অতিবাহিত হলো আমার ছোট বোনকেও পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেয়া হয়।
আলহামদুলিল্লাহ্ বর্তমানে আমরা মা, বাবা, ভাই, বোন ও বৌ বাচ্চা নিয়ে আপনাদের দোয়ায় আমার একটি সুখের সংসার রয়েছে।
♥আজ আমি আমার কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি আমি প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের মাধ্যমে আরেকটি প্রাণের পরিবার পেয়েছি।
সেটি হচ্ছে স্যারের এই "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন"
যেখানে এসে আমি আজ লাখো লাখো প্রিয় ভাই বোনের দেখা পয়েছি, যারা সবাই প্রতিনিয়ত স্যারের মাধ্যমে নিজেদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে নিচ্ছে।
♥পরিশেষে, আমি আমার প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
তার পাশাপাশি গ্রুপের সকল দায়িত্বশীল থেকে শুরু করে ১ম থেকে ১৬ তম ব্যাচ পর্যন্ত সকল প্রাণপ্রিয় সদস্যদের প্রতি রইলো স্বশ্রদ্ধ সালাম ও আন্তরিক শুভকামনা।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৬৫
Date:-০৪ & ০৫/১১/২০২১ইং
আনোয়ার হোসেন
🇴🇲 সদস্য - NRB ওমান টিম।
🎗ব্যাচঃ ১৫
✍️ রেজি নাম্বারঃ ৭৪৫৯০
🇧🇩নিজ জেলা: ফেনী। উপজেলা- দাগণভূঁঞা।
🇴🇲বর্তমান অবস্থান: মাসকাট, ওমান।
রক্তের গ্রুপ : O পজেটিভ।
Whatsapp: +968 71566583
✉️ah650140@gmail.com
FB Link- https://www.facebook.com/profile.php?id=100004139653761
আমার উদ্যেগ- https://www.facebook.com/BekerBazarOnlineShopping/